logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

📚 অনুশীলনী -০১: জানুয়ারী-১ম সপ্তাহঃ

# দারস তৈরী - সূরা বাকারা ( আয়াত ২৫৫) # বই নোট: গঠনতন্ত্র # তাওহিদ সংক্রান্ত আয়াত # তাওহিদ সংক্রান্ত হাদিস # নামাজের প্রকারভেদ ও মাসয়ালা

দারস তৈরী - সূরা বাকারা ( আয়াত ২৫৫)

آيَةُ الكُرسِيّ — আয়াতুল কুরসী (البقرة: 255)

اللَّهُ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ

বাংলা অনুবাদ: আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বজাগ্রত। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা আচ্ছন্ন করতে পারে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করতে পারে? তিনি জানেন তাদের সামনে যা আছে এবং তাদের পেছনে যা আছে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, তবে যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁকে ক্লান্ত করে না। আর তিনি সর্বোচ্চ, মহান।

اللَّهُ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ

বাংলা অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

ব্যাখ্যা: এ অংশে তাওহীদের মৌলিক ঘোষণা বিতরণ করা হয়েছে।

কুরআন রেফারেন্স:
﴿وَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٞ وَٰحِدٞ لَّآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحْمَـٰنُ ٱلرَّحِيمُ﴾ (البقرة: 163)
বাংলা অর্থ: “আর তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ; তিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই; তিনি পরম দয়ালু, পরম করুণাময়।”

হাদীস রেফারেন্স:
قال رسول الله ﷺ: «أفضل ما قلت أنا والنبيون من قبلي: لا إله إلا الله وحده لا شريك له...» (جامع الترمذي، كتاب الدعوات، حديث 3585)
বাংলা অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “সবচেয়ে উত্তম কথা যা আমি ও পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছি তা হলো: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ…’।”

ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُ

বাংলা অর্থ: তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর অভিভাবক।

ব্যাখ্যা: আল-হাই্য্যু মানে চিরঞ্জীব; আল-কাইয়্যুম মানে সবকিছুর ধারক ও রক্ষক।

কুরআন রেফারেন্স:
﴿هُوَ ٱلۡحَيُّ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ فَٱدۡعُوهُ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ﴾ (غافر: 65)
বাংলা অর্থ: “তিনিই চিরঞ্জীব; তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই; তাই তাকে একনিষ্ঠভাবে ডাক।”


সুরা আল বাকারা, নামকরনঃ
সূরা আল বাকারার নামকরণ করা হয়েছে 'বাকারাহ' শব্দটি থেকে, যার অর্থ গাভী। এই নামকরণ করা হয়েছে কারণ এই সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে হযরত মুসা (আ.)-এর সময়ের বনী ইসরাঈলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

সূরা আল বাকারার নামকরণের প্রেক্ষাপট:
সূরা আল বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে বনী ইসরাঈল জাতির এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আল্লাহ তা'আলা তাদের একটি গাভী জবাই করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হওয়ার কারণে, সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে "আল বাকারাহ" (অর্থ: গাভী)। কুরআনের অন্যান্য সূরার মতো, আল বাকারার নামকরণও একটি বিশেষ ঘটনার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা এই সূরার বিষয়বস্তুকে নির্দেশ করে। সুতরাং, সূরা আল বাকারার নামকরণ "আল বাকারাহ" মূলত বনী ইসরাঈলের সেই গাভী জবাই করার ঘটনার সাথে সম্পর্কিত।

সূরা বাকারার শানে নুযুল (নাযিলের প্রেক্ষাপট):
বেশ বিস্তৃত এবং এর মধ্যে বিভিন্ন ঘটনা ও প্রেক্ষাপট অন্তর্ভুক্ত। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, বিধি-বিধান, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি আচরণ, পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী, এবং ইহুদি ও মুনাফিকদের কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়েছে।

আয়াতুল কুরসী নাজিলের প্রেক্ষাপট — (শানে নুযুল )

আয়াতুল কুরসী (সূরা আল-বাকারাহ ২:২৫৫) নাজিলের সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট “প্রেক্ষাপট” (শানে নুযুল) — সহীহ হাদীসে উল্লেখ নেই।

📌 তবে আলেমরা ব্যাখ্যা করেছেন:

এটি সূরা আল-বাকারার মাঝামাঝি অংশে এসেছে — এখানে আল্লাহর একত্ব, সর্বশক্তিমত্তা, ইলম (জ্ঞান), কুদরতের (ক্ষমতা) পূর্ণ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

মুফাসসিরগণ বলেন, এ আয়াত নাজিল হয়েছে আল্লাহর তাওহীদকে প্রতিষ্ঠা ও সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য।

কুরআনে এটি “আল্লাহর সিফাতুল উলুহিয়্যাত” (গুণাবলী) কে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করেছে।

তাই আয়াতুল কুরসীকে “আযমুল আয়াহ” (কুরআনের সবচেয়ে মহিমান্বিত আয়াত) বলা হয়।

📖 ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেছেন:

“এই আয়াত এমন সময় নাজিল হয়েছে, যখন মুমিনদের হৃদয়ে আল্লাহর মহিমা, জ্ঞান ও ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন ছিল।”
(আল-জামি’ লি আহকামিল কুরআন — تفسير القرطبي، খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৭৬)

📖 ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন:

“এখানে আল্লাহর তাওহীদ, তাঁর সিফাত এবং জাহের-বাতেন সব কিছুর উপর তাঁর কুদরতের বর্ণনা আছে।”
(تفسير ابن كثير — খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৭৬)

➡️ অর্থাৎ, আয়াতুল কুরসীর জন্য নির্দিষ্ট কোনো “ঘটনা” বা “ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল” হওয়ার বর্ণনা নেই; বরং এটি একটি সাধারণ কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ সিফাতি আয়াত, যা মুসলমানদের ঈমানকে শক্তিশালী করার জন্য নাজিল হয়েছে।

সূরা বাকারার বৈশিষ্ট সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
  • মদিনায় অবতীর্ণ: সূরা আল-বাকারার অধিকাংশ আয়াত মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে, যেখানে মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সমস্যা ও জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
  • ইসলামের মৌলিক শিক্ষা: এই সূরায় তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, ইবাদত, হালাল-হারাম, পারস্পরিক সম্পর্ক, ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
  • বিধি-বিধান: এতে সালাত, যাকাত, সাওম, হজ, বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিভিন্ন বিধি-বিধান আলোচনা করা হয়েছে।
  • পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী: হযরত মুসা (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.) সহ বিভিন্ন নবীর কাহিনী ও তাদের উ¤ তের প্রতি আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশনার বর্ণনা রয়েছে।
  • মুনাফিক ও ইহুদিদের কার্যকলাপ: মদিনার ইহুদি ও মুনাফিকদের আচরণ এবং তাদের প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ আয়াতও এই সূরায় অন্তর্ভুক্ত।
  • গাভীর ঘটনা: সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে 'বাকারাহ' (অর্থ গাভী), যা হযরত মুসা (আ.) এর সময়ের বনী ইসরাঈলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনার সাথে সম্পর্কিত।
  • দীর্ঘতম সূরা: এটি কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা এবং এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও বিধি-বিধান রয়েছে।
  • সূরা বাকারার আয়াতগুলো নাজিলের প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়।

আয়াতুল কুরসী থেকে শিক্ষা

  1. তাওহীদ প্রতিষ্ঠা
  2. আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই — এটি আমাদের ঈমানের মূলভিত্তি
  3. আল্লাহ চিরঞ্জীব ও সর্বকর্তৃত্বশীল
  4. তিনি কখনো নিদ্রিত হন না, সবসময় জাগ্রত থাকেন
  5. আল্লাহ সব কিছুর মালিক
  6. আসমান-জমিন ও এর ভেতরে যা কিছু আছে সবই তাঁর মালিকানায়
  7. সুপারিশ শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতিতে
  8. কিয়ামতের দিনে কারো শাফায়াত কার্যকর হবে না, যদি না আল্লাহ অনুমতি দেন
  9. আল্লাহর জ্ঞানের সীমাহীনতা
  10. তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছু জানেন; মানুষ কেবল তাঁর ইচ্ছামত সামান্যই জানতে পারে।
  11. আল্লাহর কুরসীর ব্যাপকতা
  12. তাঁর কুরসী আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে।
  13. আল্লাহর জন্য কোনো কিছুই কঠিন নয়
  14. আসমান ও জমিনের হেফাজত তাঁকে ক্লান্ত করে না
  15. আল্লাহর উচ্চ মর্যাদা ও মহিমা
  16. তিনি সর্বোচ্চ (আল-আলী), সর্বমহান (আল-আযীম)

Top


বই নোট-গঠনতন্ত্রঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

 ভূমিকাঃ


 যেহেতু
  • মহান আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত কোন ইলাহ নাই এবং নিখিল বিশ্বের সর্বত্র আল্লাহ তা’য়ালার প্রবর্তিত প্রাকৃতিক আইনসমুহ একমাত্র তাহারই বিচক্ষণতা ও শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্যদান করিতেছে
  • আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে তাঁহার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন।
  • আল্লাহ তা’য়ালা সত্যের নির্দেশনাসহ ‍যুগে যগে নবী-রাসুলগনকে প্রেরণ করিয়াছেন।
  • বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. আল্লাহ তা’য়ালার সর্বশেষ নবী ও রাসুল এবং আল্লাহ তা’য়ালার প্রেরিত আল কুআন ও রাসুল সা. এর সুন্নাহই হইতেছে বিশ্বমানবতার অনুসরণীয় আদর্শ;।
  • মানুষকে তাহার পার্থিব জীবনকে ভাল-মন্দ কাজের পুঙ্খানো পুঙ্খানো হিসাব দিতে হইবে এবং বিচারের পর জান্নাত অথবা জাহান্নাম রুপে ইহার যথাযথ ফলাফল ভোগ করিতে হইবে।
  • আল্লাহ তা’য়ালার সস্তুটি অর্জণ করিয়া জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাত এবং জান্নাতের অনন্ত সুখ ও অনাবিল শান্তি লাভের মধ্যেই মানব জীবনের প্রতৃত সাফল্য নিহিত।
 সেহেতু
  • এই সকল মৌলিক বিশ্বাস ও চেতনার ভিত্তিতে শোষণমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হইল।
 ধারাঃ০১ - নামকরণ: এই সংগঠনের নাম হইবে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
 ধারাঃ০২ - ঈমান ও আক্বীদা: কুরআন ও সহীহ হাদীসে নির্দেশিত ঈমান ও আক্বীদাহই জামায়াতে ইসলামীর অনুসারীগন পোষণ করিয়া থাকেন। তাহার মুল কথা হইলোঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত কোন ইলাহ নাই মুহাম্মদ সা. আল্লাহ তা’য়ালার রাসুল।
ঈমান ও আক্বীদার প্রথমাংশ হলোঃ আল্লাহ তা’য়ালার একমাত্র ইলাহ হওয়া। অর্থাৎ-
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহাকেও সাহায্যকারী মনে না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহাকেও কল্যাণকামী মনে না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহারও নিকট প্রার্থনা না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহারও নিকট মাথানত না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহাকেও ক্ষমতার মালিক মনে না করা।
ঈমান ও আক্বীদার দ্বিতিয়াংশ হলো- “মুহামদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার রাসুল। অর্থাৎ
  • আল্লাহর রাসুল সা. এর হিদায়াত ও আইন বিধানকে দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহন করা।
  • যে কোন কাজে রাসুল সা. এর আদেশ ও নিষেধকে যথেষ্ট মনে করা।
  • রাসুল সা. ব্যতিত আর কাউকে নেতা না মানা ।
  • আল্লাহর কিতাব ও রাসুল সা. এর সুন্নাহই একমাত্র উৎস মনে করা।
  • সকল কিছুর উর্দ্ধে রাসুল সা. এর ভালবাসা।
  • রাসুল সা. কে সত্যের মাপকাঠি মনে করা।
  • রাসুল সা. ব্যতিত আর কারো আনুগত্য না করা ।
ধারাঃ০৩ - উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ “বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিকগনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন”

ধারাঃ০৪ - স্থায়ী কর্মনীতি
  • কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন কিংবা কোন কর্মপন্থা গ্রহনের সময় জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল সা. এর নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিবে।
  • উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন কোন উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবেনা যাহা সততা ও বিশ্বাস পরায়নতার পরিপন্থি কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফাসাদ তৈরি হয়।
  • বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উহার বাঞ্চিত সংশোধন ও সংস্কার কার্যকর করিবার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করিবে। অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মানবিক, নৈতিক চরিত্রের সংশোধন এবং বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করিবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুকুলে জনমত গঠন করিবে।

ধারাঃ ০৫ - তিন দফা দাওয়াত

  • সাধারণভাবে সকল মানুষ ও বিশেষভাবে মুসলিমদের প্রতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার দাসত্ব ও রাসুল সা. এর আনুগত্য করিবার আহবান।
  • ইসলাম গ্রহনকারী ও ঈমানের দাবীদার সকল মানুষের প্রতি বাস্তব জীবনে কথা ও কাজের মিল গরমিল পরিহার করিয়া খাঁটি ও পূর্ণ মুসলিম হওয়ার আহবান।
  • সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুবিচারপূর্ণ শাসন ক্বায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহবান।

ধারাঃ ০৬ - স্থায়ী কর্মসূচী

  • দাওয়াত ও দাবলীগ (চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পূনর্গঠন)
  • তানযিম ও তারবিয়াত (সংগঠন ও প্রশিক্ষণ)
  • ইসlahে মু’য়াসারা (সমাজ সংস্কার ও সমাজসেবা)
  • ইসlahে হুকুমত(রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন)

ধারাঃ ০৭ - রুকন হইবার শর্তাবলী

  • ব্যক্তিগত জীবনে ফরজ ওয়াজীবসমূহ যথাযথভাবে আদায় করেন এবং কবীরা গুনাহ হইত বিরত থাকেন।
  • উপার্জনেরে এমন কোন পন্থা অবলম্বন না করেন যাহা আল্লাহ তা’য়ালার নাফরমানির পর্যায়ে পড়ে।
  • হারাম পথে অর্জিত কিংবা হকদারের হক নষ্ট করা কোন সম্পদ বা সম্পত্তি তাঁহার দখলে থাকিরে তাহা পরিত্যাগ করেন বা হক্বদারকে ফেরত দেন।
  • মৌলিক মানবীয় গুনাবলী অর্জনের বিচারে আশাব্যাঞ্জক অবস্থানে রয়েছেন।
  • এমন কোন পার্টি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পর্ক না রাখেন যাহার মুলনীতি, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ইসলামের ঈমান ও আক্বীদা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কর্মনীতির পরিপন্থি।
  • জামায়াতের সাংগঠনিক দায়িত্বশীলগনের দৃষ্টিতে রুকন হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হইবেন।

ধারাঃ ০৯ - রুকনদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ক) জামায়াতে শামিল হওয়ার পর প্রত্যেক রুকন নিজের জীবনে পরিবর্তনের জন্য যেসব বিষয়ে সর্বদা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করিবেন-

  • দ্বীন সম্পর্কে অন্তত এতটুকু জ্ঞান অর্জন করিতে হইবে যাহাতে তিনি ইসলাম ও জাহেলিয়াতের পার্থক্য বুঝতে পারিবেন এবং আল্লাহ তাৎয়ালার নির্ধারিত শরীয়তের সীমা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হইবেন।
  • নিজের ঈমান-আক্বীদা, চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি-কাজ-কর্মকে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক গড়িয়া লইবেন। নিজ জীবনের উদ্দেশ্য, মূল্যমান, পছন্দ-অপছন্দ, এবং আনুগত্যের কেন্দ্রবিন্দু সবকিছুকে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তোষের অনুকুলে আনয়ন করিবেন এবং স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্মপূজা পরিহার করিয়া নিজেকে সম্পূর্ণরুপে আল্লাহ তা’য়ালার বিধানের একান্ত অনুসারী ও অধীন বানাইয়া লইবেন।
  • আল্লাহ তা’য়ালার কিতাব ও রাসুল সা. এর সুন্নাতের বিপরীত সকল প্রকার জাহিলি নিয়ম-প্রথা ও রসম-রেওয়াজ এবং ‍কুসংস্কার হইতে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র করিবেন এবং ভিতর ও বাহিরকে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী গড়িয়া তুলিতে অধিকতর প্রচেষ্টা চালাইবেন।
  • আত্মম্বরিতা ও পার্থিব স্বার্থের ভিত্তিতে যেসব হিংসা-বিদ্বেষ, ঝোক-প্রবণতা, ঝগড়া-ঝাটি ও বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হইয়া থাকে এবং দ্বীন ইসলামে যেসব বিষয়ের কোন গুরুত্ব নাই তাহা হইতে 자신의 অন্তর ও জীবনকে পবিত্র রাখিবেন।
  • ফাসিক ও আল্লাহ বিমূখ লোকদের সহিত দ্বীনের প্রয়োজন ব্যতিত সকল বন্ধুত্ব-ভালবাসা পরিহার করিয়া চলিবেন এবং নেক লোকদের সহিত দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করিবেন।
  • সকল কাজ আল্লাহভীতি, আল্লাহ তা’য়ালা ও রাসুল মুহাম্মদ সা. এর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, সততা ও ন্যায় পরায়ণতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করিবেন।
  • নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও পারিপার্শ্বিক এলাকার লোকদের মধ্যে দ্বীনি ভাবধারা প্রচার ও প্রসার এবং দ্বীনের স্বাক্ষ্যদানের যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন।
  • দ্বীন ক্বায়েমের উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করিয়া সকল চেষ্টা-সাধনা নিয়ন্ত্রিত করিবেন এবং জীবন ধারনের প্রকৃত প্রয়োজন ব্যতিত এই উদ্দেশ্যর দিকে পরিচালিত করে না এমন সকল প্রকার তৎপরতা হতে নিজেকে বিরত রাখিবেন।
  • দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকিবেন।

(খ) প্রত্যেক রুকন পরিচিতদের মধ্যে এবং উহার বাইরে যেখানে পৌঁছিতে পারেন ইসলামের ঈমান ও আক্বীদা এবং জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য লক্ষ্য সবিস্তারে বর্ণনা করিবেন। যাহারা এই প্রচেষ্টা চালাইবার প্রস্তুত হইবেন, তাহাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর রুকন হওয়ার আহ্বান জানাইবেন।

ধারাঃ ১০ - মহিলা রুকনদের দায়িত্ব ও কর্তব্য‌

জামায়াতে ইসলামীর মহিলা রুকনগন তাহাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ০৯ ধারায় উল্লেখিত সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিতে হইবে। অবশ্য তাহাদিগকে নিম্নলিখিত কর্তব্যের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবেঃ

  • 자신의 স্বামী, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, এবং পরিচিত ও অপরিচিত অন্যান্য মহিলাদের ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত পেশ করিবেন।
  • নিজের সন্তান-সন্ততির অন্তরে ঈমানের আলো সৃষ্টি করিতে এবং তাহাদিগকে ইসলামের অনুসারী বানাইতে চেষ্টা করিবেন।
  • তাঁহার স্বামী, সন্তান, পিতা ও ভাই-বোন যদি জামায়াতে শামিল হইয়া থাকেন, আন্তরিকতার সহিত তাহাদিগকে সাহসী ও আশাবাদী করিয়া তুলিবেন। জামায়াতের কাজে যথাসম্ভব তাহাদিগকে সহযোগীতা করিবেন এবং এই পথে কোন বিপদ আসিয়া পড়িলে র্ধৈয ও দৃঢ়তা অবলম্বন করিবেন।
  • তাঁহার স্বামী, পিতা-মাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এবং পরিবারের কোন সদস্য যদি ইসলাম পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকেন তবে ধৈর্য সহকারে তাঁহাদের সংশোধনের চেষ্টা করিবেন।

ধারাঃ ১৩ - জামায়াতের সাংগঠনিক স্তরঃ

  • কেন্দ্রীয় সংগঠন
  • জেলা/মহানগরী সংগঠন
  • উপজেলা/থানা সংগঠন
  • ইউনিয়ন/পৌরসভা সংগঠন
  • ওয়ার্ড সংগঠন
  • ইউনিট সংগঠন

ধারাঃ ১৪ - কেন্দ্রীয় সংগঠন

  1. আমীরে জামায়াত
  2. কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলন
  3. জাতীয় কাউন্সিল
  4. কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা
  5. কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ
  6. কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ

ধারাঃ ৬৭ - বায়তুল মালের আয়ের উৎস

  • জামায়াতের বায়তুল মালের আয়ের উৎস হইবেঃ
  • রুকন, কর্মী, সহযোগী ও সুধীদের নিকট হইতে প্রাপ্ত।
  • ক. মাসিক এয়ানত।
  • খ. যাকাত-উশর।
  • গ. এককালীন দান।
  • অধস্তন সংগঠন হইতে প্রাপ্ত নির্ধারিত মাসিক আয় ।
  • জামায়াতের নিজস্ব প্রকাশনীর মুনাফা।

ধারাঃ ৭২ - নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়

একটি পদ নির্বাচন বা নিযুক্তকালে নিম্নোক্ত গুণাবলীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে:

  • দ্বীনি ইলম, আল্লাহভীতি, আনুগত্য, আমানতদারীতা, দেশপ্রেম, অনড় মনোবল, কর্মে দৃঢ়তা, দূরদৃষ্টি, বিশ্লেষণ শক্তি, উদ্ভাবনি শক্তি, প্রশস্তচিন্তা, সুন্দর ব্যবহার, মেজাজের ভারসাম্য, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, সাংহঠনিক শৃংখলা বিধানের যোগ্যতা।
  • প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পদের জন্য আকাঙ্ক্ষিত হওয়া বা চেষ্টা করা উক্ত পদে নির্বাচিত বা নিযুক্ত হওয়ার জন্য অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।

গঠনতন্ত্র রচনা সম্পর্কিত তথ্যঃ

  • গঠনতন্ত্র গৃহীত হয় ১৯৭৯ সনের ২৬ মে কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলনে।
  • গঠনতন্ত্র কার্যকর করা হয় ১৯৭৯ সনের ২৮ মে।
  • গঠনতন্ত্র প্রথম প্রকাশঃ মে ১৯৮০ ইং
  • সর্বশেষ সংশোধনীঃ ২২তম সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • সর্বশেষ প্রকাশঃ জানুয়ারী ২০২০ ইং ৮০তম মুদ্রণ।
  • মোট ধারাঃ ৭৭
  • মোট পরিশিষ্টঃ ১১

মুখস্থঃ তাওহিদ সংক্রান্ত আয়াত- আয়াতুল কুরসি (Go)

তাওহিদ সংক্রান্ত ১টি হাদীস মুখস্ত

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ وَأَبِي ظَبْيَانَ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ.

৭৩৭৬. জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না। [৬০১৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭২)

Top


মাসয়ালা: বিভিন্ন নামাজ সংক্রান্তঃ

নামাজের মাসয়ালাগুলো মূলত ফরয (বাধ্যতামূলক), ওয়াজিব (অপরিহার্য), সুন্নাত (সুন্নত) এবং নফল (ঐচ্ছিক) এই চার প্রকারের নামাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে ফরয ও ওয়াজিব নামাজ আবশ্যকীয়, আর সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করলে সওয়াব পাওয়া যায়, না করলে গুনাহ হয় না। প্রত্যেক প্রকার নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম, শর্ত ও পদ্ধতি রয়েছে যা মেনে নামাজ আদায় করতে হয়।

নামাজের প্রকারভেদ ও মাসয়ালা

ফরয নামাজ:

ইসলামের পাঁচটি দৈনিক ফরয নামাজ (ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা) আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। এই নামাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হয় এবং এগুলো বাদ দেওয়া জায়েজ নয়।

ওয়াজিব নামাজ:

ফরযের কাছাকাছি কিছু নামাজ, যেমন বিতর নামাজ, ওয়াজিব হিসেবে গণ্য হয়। এগুলোকেও নিয়মিত আদায় করতে হয়।

সুন্নাত নামাজ:

ফরয নামাজের আগে-পরে আদায় করা হয়। এটি দুই প্রকার:

  • সুন্নতে মুয়াক্কাদা (আদায় করা উচিত)
  • সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (আদায়ে উৎসাহিত করা হয়েছে, তবে বাধ্যতামূলক নয়)

নফল নামাজ:

ঐচ্ছিক নামাজ যা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সময়ে আদায় করা হয়। যেমন: তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন নামাজ।

সাধারণ মাসয়ালা

  • পবিত্রতা: নামাজ আদায়ের জন্য শরীর ও কাপড় পবিত্র হওয়া এবং নামাজের স্থান পবিত্র থাকা আবশ্যক। এছাড়াও ওযু ও গোসলের মাধ্যমে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া জরুরি।
  • শর্ত: নামাজ শুরুর আগে কেবলামুখী হওয়া, সতর ঢাকা, নামাজের সময় হওয়া ও নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
  • ফরজ: নামাজ সহীহ হওয়ার জন্য ১৩টি ফরজ রয়েছে, যার মধ্যে ৬টি নামাজের বাইরে এবং ৭টি নামাজের ভিতরে।
  • ওয়াজিব: নামাজের ১৪টি ওয়াজিব রয়েছে যা আদায় করা উচিত, না করলে সাজদা সাহু দিতে হয়।
  • কিরাত: নফল নামাজে সাধারণত আস্তে কেরাত পড়া হয়, তবে তারাবীহ ও খুসুফ নামাজ এর ব্যতিক্রম।

গুরুত্বপূর্ণ দিক

  • জামাতের নামাজ: নফল নামাজ সাধারণত একা আদায় করা হয়, তবে জামাতে পড়ার কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন তারাবীহ ও বেতরের নামাজ।
  • নামাজের ভুল: ইমামের ভুল হলে মুক্তাদী লোকমা দিয়ে তা সংশোধন করতে পারেন। তবে তা কখন করা হলো, তার ওপর নির্ভর করে নামাজ সহীহ হবে কি না।

নামায সংক্রান্ত মাসআলা

নামাজের মাসআলা বা নামাজের নিয়মকানুন ইসলামিক শরিয়তে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নামাজের মৌলিক বিষয়, যেমন - ওযু, কিবলামুখী হওয়া, নামাজের নিয়ত, রুকু, সিজদা, শেষ বৈঠক এবং সালাম ফেরানো সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

  • ওযু: নামাজের পূর্বে অবশ্যই ওযু করা ফরজ।
  • কিবলামুখী হওয়া: নামাজের জন্য কিবলামুখী হওয়া ফরজ।
  • নিয়ত: প্রত্যেক নামাজের জন্য নিয়ত করা সুন্নত।
  • রুকু: রুকুতে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও "সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম" তিনবার পড়া সুন্নত।
  • সিজদা: সিজদার সময় কপাল, নাক, উভয় হাত, উভয় হাঁটু ও পায়ের আঙ্গুল জমিনে রাখা ফরজ।
  • শেষ বৈঠক: তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া শেষে সালাম ফেরানো হয়।
  • সালাম ফেরানো: প্রথমে ডান দিকে, পরে বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” বলা হয়।

সালাতের ফরয (১৩ টি)

সালাত শুরুর পূর্বে ৭টি আহকাম এবং সালাতের মধ্যে ৬টি আরকান রয়েছে। এগুলোকে সালাতের ফরজ বলা হয়।

সালাতের আহকাম (৭টি)

  • শরীর পবিত্র হওয়া: গোসল, অযু বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন।
  • কাপড় পবিত্র হওয়া: পরিচ্ছদ পরিষ্কার রাখা। (সূরা মুদ্দাসসির: ৪)
  • জায়গা পবিত্র হওয়া: অন্তত নামাজ পড়ার স্থানের ন্যূনতম অংশ (দুই পা, দুই হাত, হাঁটু ও কপাল) পবিত্র হতে হবে।
নামাজের সাথে সাথে সুন্নত ও নফল নামাজ পড়ারও বিধান রয়েছে।

সালাতের ফরয

সালাতের ফরজ হল ১৩ টিঃ যেগুলোর কোন একটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিলে সালাত / নামাজ আদায় শুদ্ধ হবে না। অর্থাৎ সালাত শুরুর পূর্বে ৭টি আহকাম (أحكام) আর সালাতের মধ্যে ৬টি আরকান (اركان) রয়েছে সেগুলোকে সালাত বা নামাজের ফরজ বলা হয়।

সালাতের আহকাম ও আরকান কী?

সালাত শুরুর পূর্বের ফরজসমূহকে আহকাম, অন্যদিকে যে ফরজ কাজগুলো সালাতের মধ্যে আদায় করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আরকান বলা হয়। প্রথমে আমরা সালাত / নামাজের আহকাম সম্পর্কে আলোচনা করা হল:

ক) সালাতের আহকামসমূহ (أحكام):

আহকাম শব্দটি বহুবচন, একবচনে হুকুম। যে ফরজ কাজগুলো নামাজ শুরু করার আগেই করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আহকাম বলা হয়। সালাতের আহকাম মোট সাতটি। নিম্নে সালাত / নামাজের আহকামসূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হল:

  • ১) শরীর পবিত্র হওয়া: সালাত নামাজ আদায় করার জন্য শরীর পাক-পবিত্র হতে হবে। গোসল, অযু বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। শরীর পবিত্র হওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, সালাত / নামাজ আদায়কারীর শরীর পবিত্র হওয়া। (বুখারি, হাদিস নং ২৯৬)। পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সালাত / নামাজ শুদ্ধ হবে না। (বুখারি, হাদিস নং ৬৪৪০)।
  • ২) কাপড় পবিত্র হওয়া: সালাত/ নামাজ আদায়কারীর কাপড় পবিত্র হতে হবে। অর্থাৎ কাপড় বা পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন: وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – “তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ।” (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪:৪)।
  • ৩) জায়গা পবিত্র হওয়া: যে স্থানে সালাত পড়া হবে সেটি পবিত্র হতে হবে। ন্যূনতম স্থান হলো দুই পা, দুই হাত, হাঁটু ও কপাল রাখার জায়গা। আল্লাহ বলেন: وَطَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآٮِٕفِيْنَ – “আমার গৃহকে পবিত্র রাখ।” (সূরা আল বাকারাহ ২:১২৫)।
  • ৪) সতর ঢেকে রাখা: নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হলো নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। নারীর সতর হলো মুখ, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীর। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ২/৪৫১, বাদায়ে ১/৪৭৭)।
  • ৫) কিবলা মুখী হওয়া: কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ বলেন: فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ – “মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও।” (সূরা আল বাকারাহ ২:১৪৯-১৫০)।
  • ৬) ওয়াক্ত অনুযায়ী সালাত আদায় করা: সালাতের ওয়াক্ত না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ বলেন: إِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا – “নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা আন নিসা ৪:১০৩)।

সালাতের সময়

  • ১. ফজরের নামাজের সময়: সুবেহ সাদেক (পূর্বদিগন্তে শুভ্রতা দেখা যাওয়া) থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।
  • ২. যোহরের সময়: সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
  • ৩. আসরের সময়: যোহরের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
  • ৪. মাগরিবের সময়: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে শফকে আহমার শেষ হওয়া পর্যন্ত। শফকে আহমার হলো সূর্যাস্তের সময় পশ্চিম আকাশে যে লাল আভা থাকে।
  • ৫. এশার সময়: মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সুবেহ সাদেক হওয়া পর্যন্ত। কিছু ইমামদের মতে এশার সময় মধ্যরাতে শেষ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “এশার নামাজের সময় মধ্যরাত পর্যন্ত।” (মুসলিম)।

বর্তমান যুগে ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে নামাজের সময় সহজেই নির্ণয় করা যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পূর্বে মাত্র এক রাকাত নামাজ পেল, সে ওই নামাজ পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম)। তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো নামাজ ভুলে গেল, ¯রণ হলে তা আদায় করে নেবে।” (বুখারী ও মুসলিম)।

সালাতের মাকরূহ সময়

সালাত / নামাজের মাকরূহ সময় তিনটি, অর্থাৎ এই সময়গুলোতে নামাজ পড়া নিষেধ:

  • ১) সূর্যোদয়ের পর থেকে এশরাকের আগ পর্যন্ত: সূর্য উঠার শুরু থেকে হলুদ আলো পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সময়। ফকিহদের মতে সূর্য ওঠার পর প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত নামাজ পড়া যাবে না।
  • ২) সূর্য যখন মাথার ওপরে: সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে থাকে তখন নামাজ পড়া নিষেধ। আরবিতে একে ‘জাওয়াল’ বলা হয়। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়লেই জোহরের সময় শুরু হয়। সতর্কতার জন্য সূর্য মাথার ওপরে উঠার পাঁচ মিনিট আগে ও পাঁচ মিনিট পর পর্যন্ত নামাজ থেকে বিরত থাকা উত্তম।
  • ৩) সূর্য ডোবার সময়: সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে ডুবতে শুরু করে অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সময়। সাহাবি উকবা বিন আমের আল জুহানি (রাঃ) বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের তিন সময়ে নামাজ ও মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন— সূর্য উঠার সময়, সূর্য যখন মাথার ওপরে, এবং সূর্য ডোবার সময়।” (বুখারী ৫৫১, মুসলিম ১১৮৫)।

এ তিন সময় নামাজ পড়া নিষেধ হওয়ার কারণ হলো, সূর্য পূজারিরা এই সময়ে সূর্যকে সেজদাহ করত। তাহলে মুসলিমদের নামাজ তাদের অনুকরণ বলে মনে হতে পারে। তাই শরিয়ত এই সময়ে সব ধরনের সালাত ও সেজদাহ নিষিদ্ধ করেছে। মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানাভী (রহ.) বলেন: “এ তিন সময়ে নামাজ তো দূরের কথা, এমনকি তিলাওয়াতে সেজদাহ করাও নিষেধ। জানাজার নামাজ ও দাফনও নিষেধ। তবে জরুরি হলে জানাজা পড়ানো ও দাফন করা যাবে।”

নিয়ত করা: সালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত

নিয়ত ছাড়া সালাত বা নামাজ সহিহ হবে না। ফরজ সালাত হলে কোন সময়ের সালাত, তা নির্দিষ্ট করা আবশ্যক। যেমন -যুহরের অথবা আসরের সালাত। সেরূপ ওয়াজিব নামাজ হলে তাও নির্দিষ্ট করা জরুরি, যেমন সালাতুল বিতর বা সালাতুল ঈদ ইত্যাদি।

কিন্তু নফল সালাতে নির্দিষ্ট করে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। তখন শুধু সালাতের নিয়ত করলেই হবে। কেননা ফরজ ও ওয়াজিব সালাত সালাতের সময় বা প্রকার হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন, তাই তা নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হয়। (বুখারি, হাদিস নং ১, আল আশবাহ: ১/৪৩)।

জামাতে সালাত হলে মুক্তাদিদের ইমামের অনুসরণের নিয়ত করা আবশ্যক। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআন আল কারীমে বলেন:

وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّكٰوۃَ وَ ذٰلِكَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ ؕ﴿۵
তাহারা তো আদিষ্ট হইয়াছিল আল্লাহ্র আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হইয়া একনিষ্ঠ ভাবে তাঁহার ইবাদত করিতে এবং সালাত কায়েম করিতে ও যাকাত দিতে, ইহাই সঠিক দ্বীন।

(সূরা আল বাইয়্যিনাহ, সূরা নম্বর: ৯৮, আয়াত নম্বর: ৫)

খ) সালাতের আরকানসমূহ (اركان)ঃ

যে ফরজ কাজগুলো সালামের মধ্যে আদায় করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আরকান বলা হয়। সালাত / নামাজের আরকান ৬ টি। সেগুলো হল:
১) তাকবিরে তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা:
তাহরীমা অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর জিকির দ্বারা নামাজ আরম্ভ করা। যেমন আল্লাহু আকবার। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৩৮)। নিয়ত আর তাকবিরে তাহরীমার মাঝে কোনো অন্য কাজ না করা। যেমন খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি। (আল আশবাহ ১/৫৮)। তাহরিমার ব্যাপারে শর্ত হলো, তা রুকুর জন্য ঝুঁকে পড়ার আগে দাঁড়ানো অবস্থায় করা। (বুখারি, হাদিস নং ৭১৫)। আর নিয়ত তাকবিরে তাহরিমার পরে না করা। (বুখারি, হাদিস নং ৭১৫)
তাকবির আল্লাহু আকবার এমনভাবে বলা, যাতে নিজে শুনতে পায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআন আল কারীমে বলেন,
( وَرَبَّكَ فَكَبِّرْۙ ) এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (সূরা মুদ্দাসসির, সূরা নাম্বারঃ ৭৪, আয়াত নাম্বারঃ ৩)
মূলতঃ তাকবীরে তাহরীমা (অর্থাৎ প্রথম তাকবীর) নামাযের শর্তসমূহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু নামাযের আভ্যন্তরিন কার্যাবলীর সাথে সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত, তাই সেটিকে নামাযের ফরয সমূহের মধ্যেও গণ্য করা হয়েছে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৩ পৃষ্ঠা)
  • (ক) মুক্তাদী -তাকবীরে তাহরীমা” এর শব্দ أَلله ইমামের সাথে বললো, কিন্তু اَكْبَر ইমামের পূর্বে শেষ করে নিলো তবে তার নামায হবে না। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা)
  • (খ) ইমামকে রুকূতে পেল, আর সে তাকবীরে তাহরীমা বলতে বলতে রুকূতে গেলো অর্থাৎ তাকবীর এমন সময় শেষ হলো যে, হাত বাড়ালে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, এমতাবস্থায় তার নামায হবে না। (খুলাসাতুল ফতোওয়া, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা) (অর্থাৎ এ সময় ইমামকে রুকূতে পাওয়া অবস্থায় নিয়মানুযায়ী প্রথমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে নিন এরপর أَللهُ اَكْبَر বলে রুকূ করুন। ইমামের সাথে যদি সামান্যতম মুহুর্তের জন্যও রুকূতে অংশগ্রহণ করতে পারেন তবে আপনার রাকাত মিলে গেলো আর যদি আপনি রুকূতে যাওয়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যান তবে রাকাত পাওয়া হলো না।
  • (গ) যে ব্যক্তি তাকবীর উচ্চারণে সক্ষম নয় যেমন- বোবা বা অন্য যে কোন কারণে যার বাকশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে, তার জন্য মুখে তাকবীর উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়, তার অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা)
  • (ঘ) اَلله শব্দকে اٰلله অর্থাৎ আলিফকে টেনে বা اَكْبَر কে اٰكْبَر অর্থাৎ আলিফকে টেনে বা اَكْبَر কে اَكْبَار অর্থাৎ ب কে টেনে পড়লো তবে নামায হবে না বরং যদি এগুলোর ভুল অর্থ জেনে বুঝে বলে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা) নামাযীর সংখ্যা বেশি হওয়া অবস্থায় পিছনে আওয়াজ পৌঁছানোর জন্য যেসব মুকাব্বিরগণ তাকবীর বলে থাকেন, সেসব মুকাব্বিরদের অধিকাংশই জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আজকাল اكْبَرْ কে اَكْبَار অর্থাৎ اْ কে দীর্ঘ টান দিয়ে বলতে শুনা যায়। এর ফলে তাদের নিজের নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায় এবং তার আওয়াজে সে সব লোক নামাযের রুকন আদায় করে (অর্থাৎ কিয়াম থেকে রুকূতে যায়, রুকূ থেকে সিজদাতে যায় ইত্যাদি) তাদের নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায়। এ জন্য না শিখে কখনো মুকাব্বির হওয়া উচিত নয়।
  • (ঙ) প্রথম রাকাতের রুকূ পাওয়া গেলো, তাহলে ‘তাকবীরে ঊলা’ বা প্রথম তাকবীরের সাওয়াব পেয়ে গেলো। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
২) কিয়াম বা দাঁড়িয়ে সালাত নামাজ আদায় করা:
নারী এবং পুরুষ উভয়কে দাঁড়িয়ে সালাত / নামাজ আদায় করতে হবে। তবে অসুস্থ হলে বসে এবং বসতে অক্ষম হলে শুয়ে ইশারায় সালাত পড়তে হবে। কিয়ামের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যায়
  • (ক) কিয়ামের নিম্নতম সীমা হচ্ছে যে, হাত বাড়ালে হাত যেন হাঁটু পর্যন্ত না পৌঁছে আর পূর্ণাঙ্গ কিয়াম হচ্ছে সোজা হয়ে দাঁড়ান। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
  • (খ) ততটুকু সময় পর্যন্ত কিয়াম করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত কিরাত পাঠ করা হবে। যতটুকু পরিমাণ কিরাত পড়া ফরয ততটুকু পরিমাণ দাঁড়ানোও ফরয। যতটুকু পরিমাণ ওয়াজীব ততটুকু পরিমাণ কিরাত ওয়াজীব এবং যতটুকু পরিমাণ কিরাত সুন্নাত ততটুকু পরিমাণ দাঁড়ান সুন্নাত। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
  • (গ) ফরয, বিতর, দুই ঈদ এবং ফযরের সুন্নাতে দাঁড়ানো ফরয। যদি সঠিক কারণ (ওজর) ব্যতীত কেউ এসব নামায বসে বসে আদায় করে, তবে তার নামায হবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
  • (ঘ) দাঁড়াতে শুধু একটু কষ্টবোধ হওয়া কোন ওযরের মধ্যে পড়ে না বরং কিয়াম ঐ সময় রহিত হবে যখন মোটেই দাঁড়াতে পারে না অথবা সিজদা করতে পারে না অথবা দাঁড়ানোর ফলে বা সিজদা করার কারণে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হয় অথবা দাঁড়ানোর ফলে প্রস্রাবের ফোটা চলে আসে অথবা এক চর্তুাংশ সতর খুলে যায় কিংবা কিরাত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অক্ষম হয়। এমনি দাঁড়াতে পারে কিন্তু তাতে রোগ বৃদ্ধি পায় বা দেরীতে সুস্থ হয় বা অসহ্য কষ্ট অনুভব হয় তাহলে এ সকল অবস্থায় বসে পড়ার অনুমতি রয়েছে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
  • (ঙ) যদি লাঠি দ্বারা খাদিমের সাহায্যে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয় তবে এ অবস্থায়ও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
  • (চ) যদি শুধুমাত্র এতটুকু দাঁড়াতে পারে যে, কোন মতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতে পারবে তবে তার জন্য ফরয হচ্ছে দাঁড়িয়ে “ ْ” বলা। এরপর যদি দাঁড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে বসে বসে নামায আদায় করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৯ পৃষ্ঠা)
  • (ছ) সাবধান! কিছু লোক সামান্য কষ্টের (আঘাতের) কারণে ফরয নামায বসে আদায় করে, তারা যেন শরীয়াতের এ আদেশের প্রতি মনোযোগ দেয় যে, দাঁড়িয়ে আদায় করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যত ওয়াক্ত নামায বসে বসে আদায় করা হয়েছে সবগুলো পুনরায় আদায় করে দেওয়া ফরয। অনুরূপভাবে এমনি দাঁড়াতে পারে না, তবে লাঠি বা দেয়াল কিংবা মানুষের সাহায্যে দাঁড়ানো সম্ভব ছিলো কিন্তু বসে বসে পড়েছে তাহলে তাদের নামাযও হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নেয়া ফরয। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৬৪ পৃষ্ঠা) ইসলামী বোনদের জন্যও একই আদেশ। তারাও শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত বসে বসে নামায আদায় করতে পারবে না। অনেক মসজিদে বসে নামায আদায় করার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক বৃদ্ধলোক দেখা গেছে এতে বসে ফরয নামায আদায় করে থাকে, অথচ তারা পায়ে হেঁটে মসজিদে এসেছে, নামাযের পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাবার্তাও বলে, এমন সব বৃদ্ধ লোক যদি শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত বসে নামায আদায় করে থাকে তবে তাদের নামায হবে না।
  • (জ) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও নফল নামায বসে আদায় করতে পারবে, তবে দাঁড়িয়ে আদায় করা উত্তম। যেমনিভাবে- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর رضى الله عنه থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ্ ইরশাদ করেন: বসে নামায আদায়কারী দাঁড়িয়ে আদায়কারীর অর্ধেক (অর্থাৎ অর্ধেক সাওয়াব পাবে) । (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা) অবশ্য অসুবিধার (অক্ষমতার) কারণে বসে পড়লে সাওয়াবে কম হবে না। বর্তমানে সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে.
৩) কিরাত পড়াঃ
কুরআন আল কারীমের কিছু অংশ পাঠ করা। কিরাত পড়া বিষয়ে বিস্তারিত বলা যায়
  • (ক) কিরাত হলো, সমস্ত অক্ষরসমূহ তার মাখরাজ (উচ্চারণের স্থান থেকে) আদায় করার নাম, যেন প্রত্যেক অক্ষর অন্য অক্ষর থেকে পৃথকভাবে বুঝা যায় ও উচ্চারণও বিশুদ্ধ হয়। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
  • ((খ) নীরবে পড়ার ক্ষেত্রে এতটুকু আওয়াজে পড়া আবশ্যক যে, যেন নিজে শুনতে পায়। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৭১ পৃষ্ঠা)
  • ((গ) আর যদি অক্ষরগুলো বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছে, কিন্তু এত নিম্নস্বরে পড়েছে যে, নিজের কানেও শুনেনি অথচ এ সময় কোন অন্তরায় যেমন হৈ চৈও ছিলো না, আবার কান ভারী (অর্থাৎ বধির)ও নয় তবে তার সালাত / নামায হলো না। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
  • ((ঘ) যদিও নিজে শুনাটা জরুরী তবে এটার প্রতিও এতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক যে, নীরবে কিরাত পড়ার নামাযগুলোতে যেন কিরাতের আওয়াজ অন্যজনের কানে না পৌঁছে, অনুরূপভাবে তাসবীহ সমূহ আদায় কালেও এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
  • ((ঙ) নামায ব্যতীত যেসব স্থানে কিছু বলা বা পড়াটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানেও এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য যে, কমপক্ষে এমন আওয়াজ হয় যেন নিজে শুনতে পায়। যেমন ্ তালাক দেয়া, গোলাম আযাদ করা অথবা জন্তু যাবেহ করার জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া ত্আালার নাম নেয়া। এসব ক্ষেত্রে এতটুকু আওয়াজ আবশ্যক যেন নিজের কানে শুনতে পায়। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা) দরূদ শরীফ ইত্যাদি ওযীফা সমূহ পড়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজ হওয়া উচিত যেন নিজে শুনতে পায়, তবেই পাঠ করা হিসেবে গণ্য হবে।
  • ((চ) শুধুমাত্র বড় এক আয়াত পাঠ করা ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে ফরয, আর বিতর, সুন্নাত ও নফলের প্রত্যেক রাকাতে ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী সকলের উপর ফরয। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ২২৬ পৃষ্ঠা)
  • ( (ছ) মুক্তাদির জন্য নামাযে কিরাত পড়া জায়েয নেই। না সূরায়ে ফাতিহা, না অন্য আয়াত, না নীরবে কিরাতের নামাযে, না উঁচু আওয়াজের কিরাতের নামাযে। ইমামের কিরাতই মুক্ততাদীর জন্য যথেষ্ট। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২২৭ পৃষ্ঠা)
  • ( (জ) ফরয নামাযের কোন রাকাতে কিরাত পড়লো না বা শুধু এক রাকাতে পড়লো তবে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
  • ((ঝ) ফরয নামাযগুলোতে ধীরে ধীরে, তারাবীতে মধ্যম গতিতে ও রাতের নফল নামাযে তাড়াতাড়ি কিরাত পড়ার অনুমতি রয়েছে। তবে এমনভাবে পড়তে হবে যেন কিরাতের শব্দ সমূহ বুঝে আসে অর্থাৎ কমপক্ষে মদের (দীর্ঘ করে পড়ার) যতটুকু সীমা কারীগণ নির্ধারণ করেছেন ততটুকু যেন আদায় হয়, নতুবা হারাম হবে। কেননা তারতীল (অর্থাৎ থেমে থেমে) সহকারে কুরআন তিলাওয়াতের আদেশ রয়েছে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৬৩ পৃষ্ঠা) বর্তমানে অধিকাংশ হাফিয সাহেবগণ এভাবে পড়ে থাকেন যে, মদ সমূহের আদায়তো দূরের কথা আয়াতের শেষের দু’একটি শব্দ যেমন- يَعْلَمُوْن/ تَعْلَمُوْن ছাড়া বাকী কোন শব্দই বুঝা যায় না। এক্ষেত্রে অক্ষরসমূহের উচ্চারণ শুদ্ধ হয় না বরং দ্রুত পড়ার কারণে অক্ষরগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সংমিশ্রণ হয়ে যায় আর এভাবে দ্রুত পড়ার কারণে গর্ববোধ করা হয় যে, অমূখ হাফিয সাহেব খুব তাড়াতাড়ি পড়ে থাকেন! অথচ এভাবে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা হারাম ও শক্ত হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৮৬, ৮৭ পৃষ্ঠা)
৪) রুকূ করাঃ
এতটুকু ঝুঁকা যাতে হাত বাড়ালে হাত উভয় হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এটা রুকূর নিম্নতম পর্যায়। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা) আর পূর্ণাঙ্গ রুকূ হচ্ছে পিঠকে সমান করে সোজাসুজি বিছিয়ে দেয়া। (তাহতাবীর পাদটিকা, ২২৯ পৃষ্ঠা) , রাসূলুল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া ত্আালা বান্দার ঐ নামাযের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যাতে রুকূ ও সিজদা সমূহের মাঝখানে পিঠ সোজা করা হয় না।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদীস নং ১০৮০৩)
৫) সিজদা করাঃ
  • (ক) নবী করীম ﷺ বলেন, আমাকে হুকুম করা হয়েছে সাতটি হাঁড় দ্বারা সিজদা করার জন্য। ঐ সাতটি হাড় হলো মুখ (কপাল) ও উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাতা আরও হুকুম হয়েছে যে, কাপড় ও চুল যেন সংকুচিত না করি।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা)
  • (খ) প্রত্যেক রাকাতে দুইবার সিজদা করা ফরয। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা)
  • (গ) সিজদাতে কপাল জমিনের উপর ভালভাবে স্থাপন করা আবশ্যক। ভালভাবে স্থাপনের অর্থ হচ্ছে; জমিনের কাঠিন্যতা ভালভাবে অনুভূত হওয়া। যদি কেউ এভাবে সিজদা করে যে, কপাল ভালভাবে জমিনে স্থাপিত হয়নি তাহলে তার সিজদা হয়নি। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা)
  • (ঘ) কেউ কোন নরম বস্তু যেমন ঘাস (বাগানের সতেজ ঘাস), তুলা অথবা কার্পেট ইত্যাদির উপর সিজদা করলো, যদি এমতাবস্থায় কপাল ভালভাবে স্থাপিত হয় অর্থাৎ কপালকে এতটুকু চাপ দিলো যে, এরপর আর চাপা যায় না, তাহলে তার সিজদা হয়ে যাবে, অন্যথায় হবে না। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)।
৬) শেষ বৈঠকে বসাঃ
শেয বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয় তাকেই বলে শেষ বৈঠক। ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা। একে কা’দায়ে আখিরা বলা হয়।
শেষ বৈঠকে বসা (যে বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত / নামাজ শেষ করা হয় তাকেই বলে শেষ বৈঠক) ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত / নামাজ শেষ করা। অর্থাৎ নামাযের রাকাত সমূহ পূর্ণ করার পর সম্পূর্ণ তাশাহহুদ অর্থাৎ (আততাহিয়াত) পর্যন্ত পড়তে যত সময় লাগে এতক্ষণ পর্যন্ত বসা ফরয। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা)
চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে চতুর্থ রাকআতের পর কেউ ভুলে কা’দা করলো না, তাহলে পঞ্চম রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে যখনই মনে পড়বে তৎক্ষণাৎ বসে যাবে আর যদি পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে ফেলে অথবা ফজরের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে বসলো না তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নিলো কিংবা মাগরিবে তৃতীয় রাকাতে না বসে চতুর্থ রাকাতের সিজদা করে নিলো, তবে এসব অবস্থায় ফরয বাতিল হয়ে যাবে। মাগরিব ব্যতীত অন্যান্য নামাযে আরো এক রাকাত মিলিয়ে নামায শেষ করবেন। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
খুরুজে বিসুনইহী (সালামের মাধ্যমে সালাত / নামাজ শেষ করা)ঃ
অর্থাৎ কা’দায়ে আখিরাহ্ এরপর সালাম বা কথাবার্তা ইত্যাদি এমন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করা যা নামায ভঙ্গ করে দেয়। তবে সালাম ব্যতীত অন্য কোন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করে নামায শেষ করলে ঐ নামায পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজীব। আর যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে এ ধরণের কোন কাজ করা হয় তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৮৬ পৃষ্ঠা)।
পরিশেষে বলা যায় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূল কে যেভাবে সালাত / নামাজ আদায় করার শিক্ষা দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ্ ﷺ যেভাবে সালাত / নামাজ আদায় করেছেন তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরামদের সালাত / নামাজ আদায় করা শিখিয়েছেন আমরা সকলেই যেন সেভাবে খুশু খুযুর সাথে সালাত / নামাজ আদায় করতে পারি, আমীন।

Top

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM