logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

📚 অনুশীলনী -২০(অক্টোবর ২য় সপ্তাহঃ)

# দারস তৈরী - সূরা আল আহযাব (৩৫ নং আয়াত) # বই নোট: ইসলামী সংগঠন # বিভিন্ন রকমের দোয়া মুখস্ত #আক্বিকা সংক্রান্ত সম্পর্কিত মাসায়েল

দারস তৈরী - সূরা আল আহযাব (৩৫ নং আয়াত)

اِنَّ الۡمُسۡلِمِیۡنَ وَ الۡمُسۡلِمٰتِ وَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡقٰنِتِیۡنَ وَ الۡقٰنِتٰتِ وَ الصّٰدِقِیۡنَ وَ الصّٰدِقٰتِ وَ الصّٰبِرِیۡنَ وَ الصّٰبِرٰتِ وَ الۡخٰشِعِیۡنَ وَ الۡخٰشِعٰتِ وَ الۡمُتَصَدِّقِیۡنَ وَ الۡمُتَصَدِّقٰتِ وَ الصَّآئِمِیۡنَ وَ الصّٰٓئِمٰتِ وَ الۡحٰفِظِیۡنَ فُرُوۡجَهُمۡ وَ الۡحٰفِظٰتِ وَ الذّٰكِرِیۡنَ اللّٰهَ كَثِیۡرًا وَّ الذّٰكِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۳۵

(ইন্নাল মুসলিমি'না ওয়াল মুসলিমা-তি ওয়াল মু'মিনিনা ওয়াল মু'মিনা-তি, ওয়াল ক্বা-নিতিনা ওয়াল ক্বা-নিত্ব-তি, ওয়াস সাদিকিনা ওয়াস সাদিক্ব-তি, ওয়াস সাবিরিনা ওয়াস সাবিরি-তি, ওয়াল খাশি'ইনা ওয়াল খাশি'আ'-তি, ওয়াস সাদাক্বি-না, ওয়াল মুসাদ্দিক্বতি, ওয়াস সা'ইমিনা, ওয়াস ছ-ইমাতি, ওয়াল হাফিজি-না ফুরুজ্বাহুম, ওয়াল হাফিযাতি , ওয়া যা-কিরিনা-ল্লা-হা কা-সিরা ওয়ায যা-কিরা-তী, আ'আ দ্দাল্লা-হুলাহুম মাগফিরাতাওঁ ওয়া আজরান-আঁ আ'যি-মা। )

👉 বঙ্গানুবাদ

নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সওম পালনকারী পুরুষ সওম পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরণকারী নারী—তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।

আলোচ্য বিষয়

নামকরণ ও নাযিল হওয়ার সময়কাল

এ সূরাটির নাম ২০ আয়াতের (
یَحۡسَبُوۡنَ الۡاَحۡزَابَ لَمۡ یَذۡهَبُوۡا
) বাক্যটি থেকে গৃহীত হয়েছে। আল-আহযাব অর্থ "মহা-জোট" বা "সম্মিলিত বাহিনী"।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

এ সূরাটিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে:

  • আহযাব যুদ্ধ: এটি ৫ হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়।
  • বনী কুরাইযার যুদ্ধ: ৫ হিজরীর যিল্‌কাদ মাসে এটি সংঘটিত হয়।
  • হযরত যয়নবের (রা) সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে: এটি অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের যিল্‌কাদ মাসে।
এ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর মাধ্যমে সূরার নাযিল হওয়ার সময়-কাল যথাযথ ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়।

ঐতিহাসিক পটভূমি

তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত ওহোদ যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়োজিত তীরন্দাজদের ভুলে মুসলিম সেনাবাহিনী পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিলো। এ কারণে আরবের মুশরিক সম্প্রদায়, ইহুদি ও মুনাফিকদের স্পর্ধা ও দুঃসাহস বেড়ে গিয়েছিল। তাদের মনে আশা জেগেছিল, তারা ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নির্মূল করতে সক্ষম হবে। ওহোদের পরে প্রথম বছরে যেসব ঘটনা ঘটে তা থেকেই তাদের এ ক্রমবর্ধমান স্পর্ধা ও ঔদ্ধত্য আন্দাজ করা যেতে পারে।

ওহোদ যুদ্ধের পরে দু’মাসও অতিক্রান্ত হয়নি এমন সময় দেখা গেল যে, নজ‌দের বনী আসাদ গোত্র মদীনা তাইয়েবার ওপর আক্রমন করার প্রস্তুতি চালাচ্ছে। তাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবু সালামার সারীয়া * বাহিনী পাঠানো হলো। তারপর ৪ হিজরীর সফর মাসে আদাল ও কারাহ গোত্রদ্বয় তাদের এলাকায় গিয়ে লোকদেরকে দীন ইসলামের শিক্ষা দেবার জন্য নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কয়েকজন লোক চায়। নবী (সা) ছ’জন সাহাবীকে তাদের সংগে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রাজী’ (জেদ্দা ও রাবেগের মাঝখানে) নামক স্থানে পৌঁছে তারা হুযাইল গোত্রের কাফেরদেরকে এ নিরস্ত্র ইসলাম প্রচারকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। তাঁদের মধ্য থেকে চারজনকে তারা হত্যা করে এবং দু’জনকে (হজরত খুবাইব ইবনে আদী ও হযরত যায়েদ ইবনে দাসিন্নাহ) নিয়ে মক্কায় শত্রুদের হাতে বিক্রি করে দেয়। তারপর সেই সফর মাসেই আমের গোত্রের এক সরদারের আবেদনক্রমে রাসূলুল্লাহ (সা) আরো একটি প্রচার দল পাঠান। এ দলে ছিলেন চল্লিশ জন (অথবা অন্য উক্তি মতে ৭০ জন) আনসারি যুবক। তাঁরা নজদের দিকে রওনা হন। কিন্তু তাদের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। বনী সুলাইমের ‘উসাইয়া, বি’ল ও যাক্‌ওয়ান গোত্রত্রয় বি’রে মা’ঊনাহ নামক স্থানে অকস্মাত তাদেরকে ঘেরাও করে সবাইকে হত্যা করে ফেলে। এ সময় মদীনার বনী নাযীর ইহুদি গোত্রটি সাহসী হয়ে ওঠে এবং একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভংগ করতে থাকে। এমনকি চার হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে তারা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শহীদ করে দেয়ার ষরযন্ত্র করে। তারপর ৪ হিজরীর জমাদিউল আউয়াল মাসে বনী গাত্‌ফানের দু’টি গোত্র বনু সা’লাবাহ ও বনু মাহারিব মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি চালায়। তাদের গতিরোধ করার জন্য স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই তাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয়। এভাবে ওহোদ যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে মুসলমানদের ভাব মূর্তি ও প্রতাপে যে ধস নামে, ক্রমাগত সাত আট মাস ধরে তার আত্মপ্রকাশ হতে থাকে।

* সীরাতের পরিভাষায় “সারীয়া” বলা হয় এমন সামরিক অভিযানকে যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীক ছিলেন না। আর “গাযওয়া” বলা হয় এমন যুদ্ধ বা সমর অভিযানকে যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সশরীরে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

কিন্তু শুধুমাত্র মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিচক্ষণতা এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবন উৎসর্গের প্রেরণাই মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই আবস্থার গতি পাল্টে দেয়। আরবদের অর্থনৈতিক বয়কট মদীনাবাসীদের জন্য জীবন ধারণ কঠিন করে দিয়েছিল। আশেপাশের সকল মুশরিক গোত্র হিংস্র ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিল। মদীনার মধ্যেই ইহুদী ও মুশরিকরা ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে উঠছিল। কিন্তু এ মুষ্টিমেয় সাচ্চা মু’মিনগোষ্ঠী আল্লাহর রসূলের নেতৃত্বে একের পর এক এমন সব পদক্ষেপ নেয় যার ফলে ইসলামের প্রভাব প্রতিপত্তি কেবল বহাল হয়ে যায়নি বরং আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়।

আহ্‌যাব যুদ্ধের পূর্বের যুদ্ধগুলো

এর মধ্যে ওহোদ যুদ্ধের পরপরই যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয় সেগুলোই ছিল প্রাথমিক পদক্ষেপ। যুদ্ধের পরে ঠিক দ্বিতীয় দিনেই যখন বিপুল সংখ্যক মুসলমান ছিল আহত... তখন তিনি ইসলামের উৎসর্গীত প্রাণ সেনানীদের ডেকে বলেন, আমাদের কাফেরদের পশ্চাদ্ধাবন করা উচিত। কারণ মাঝ পথ থেকে ফিরে এসে তারা আমাদের ওপর আক্রমন চালাতে পারে। নবী করীমের (সা) এ অনুমান একদম সঠিক ছিল।

হাম্‌রাউল আসাদ অভিযান

তিনি তাদের পশ্চাদ্ধাবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সংগে সংগেই ৬৩০ জন উৎসর্গীত প্রাণ সাথী তাঁর সংগে যেতে প্রস্তুত হয়ে যান। মক্কার পথে হাম্‌রাউল আসাদ নামক স্থানে পৌঁছে তিন তিন দিন অবস্থান করেন। যেখানে একজন অমুসলিম শুভানাধ্যায়ীর কাছ থেকে জানতে পারেন আবু সুফিয়ান তার ২৯৭৮ জন সহযোগীকে নিয়ে মদীনা থেকে ৩৬ মাইল দূরে দওরুর রওহা নামক স্থানে অবস্থান করছিল। তারা যথার্থই নিজেদের ভুল উপলব্ধি করে আবার ফিরে আসতে চাচ্ছিল। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (স) একটি সেনা দল নিয়ে তাদের পেছনে ধাওয়া করে আসছেন একথা শুনে তাদের সব সাহস উবে যায়। এ কার্যক্রমের ফলে কুরাইশরা আগে বেড়ে যে হিম্মত দেখাতে চাচ্ছিল তা ভেঙে পড়ে...

বনী আসাদ আক্রমণ প্রতিরোধ

তারপর যখনই বণী আসাদ মদীনার ওপর নৈশ আক্রমণ করার প্রস্তুতি চালাতে থাকে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোয়েন্দারা যথাসময়ে তাদের সংকল্পের খবর তাঁর কানে পৌঁছিয়ে দেয়। তাদের আক্রমণ করার আগেই তিনি হযরত আবু সালামার... নেতৃত্বে দেড়শো লোকের একটি বাহিনী তাদের মোকাবিলা করার জন্য পাঠান। এ সেনাদল হঠাৎ তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। অসচেতন অবস্থায় তারা নিজেদের সবকিছু ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ফলে তাদের সমস্ত সহায়-সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয়।

বনী নাযীরকে বিতাড়ন

এরপর আসে বনী নাযীরের পালা। যেদিন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শহীদ করার ষরযন্ত্র করে এবং সে গোপন কথা প্রকাশ হয়ে যায় সেদিনই তিনি তাদেরকে নোটিশ দিয়ে দেন, দশ দিনের মধ্যে মদীনা ত্যাগ করো...। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদেরকে অভয় দিয়ে বলে যে, অবিচল থাকো এবং মদীনা ত্যাগ করতে অস্বীকার করো...। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নোটিশের মেয়াদ শেষ হবার সাথে সাথেই তাদের ঘেরাও করে ফেলেন, তাদের সহযোগীদের একজনেরও সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসার সাহস হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা এ শর্তে অস্ত্র সম্বরণ করে যে, তাদের প্রত্যেক তিন ব্যক্তি একটি উটের পিঠে যে পরিমাণ সম্ভব সহায়-সম্পদ বহন করে নিয়ে চলে যাবে এবং বাদবাকি সবকিছু মদীনায় রেখে যাবে। এভাবে মদীনার শহরতলীর সমস্ত মহল্লা... মুসলমানদের হাতে চলে আসে।

বনী গাত্‌ফানকে শায়েস্তা

তারপর তিনি বনী গাত্‌ফানের দিকে নজর দেন। তারা আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিল। তিনি চরশো সেনার একটি বাহিনী নিয়ে বের হয়ে পড়েন এবং যাতুর রিকা’ নামক স্থানে গিয়ে তাদেরকে ধরে ফেলেন। এ অতর্কিত হামলায় তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কোন যুদ্ধ ছাড়াই নিজেদের বাড়িঘর মাল-সামান সবকিছু ফেলে রেখে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

বদরের দ্বিতীয় যুদ্ধ (বা ছোট বদর)

এরপর ৪ হিজরীর শাবান মাসে তিনি আবু সুফিয়ানের চ্যালেঞ্জের জবাব দেবার জন্য বের হয়ে পড়েন। ... এ সিদ্ধান্ত আনুসারে নির্দিষ্ট দিনে তিনি দেড় হাজার সাহাবীদের নিয়ে বদরে উপস্থিত হন। ওদিকে আবু সুফিয়ান দু’হাজার সৈন্য নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু মার্‌রায্‌ মাহ্‌রান... থেকে সামনে অগ্রসর হবার হিম্মত হয়নি। নবী করীম সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আট দিন পর্যন্ত বদরে অপেক্ষা করেন। এ অন্তরবর্তীকালে ব্যবসায় করে মুসলমানরা বেশ দু’পয়সা কামাতে থাকে। এঘটনার ফলে ওহোদে মুসলমানদের যে প্রভাবহানি ঘটে তা আগের চাইতেও আরো কয়েক গুন বেড়ে যায়।

দূমাতুল জান্‌দাল অভিযান

আর একটি ঘটনা এ প্রভাব আরো বাড়িয়ে দেয়। আরব ও সিরিয়া সীমান্তে দূমাতুল জান্‌দাল (বর্তমান আল জওফ) ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান...। এ জায়গার লোকেরা কাফেলাগুলোকে বিপদগ্রস্ত এবং অধিকাংশ সময় লুন্ঠন করতো। নবী সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে এক হাজার সৈন্য নিয়ে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য নিজেই সেখানে যান। তারা তাঁর মোকাবিলা করার সাহস করেনি। লোকালয় ছেড়ে তারা পালিয়ে যায়। এর ফলে দক্ষিণ আরবের সমস্ত এলাকায় ইসলামের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়...

আহ্‌যাবের যুদ্ধ

এ অবস্থায় আহ্‌যাব যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এটি ছিল আসলে মদীনার এ শক্তিটিকে গুঁড়িয়ে দেবার জন্য আরবের বহুসংখ্যক গোত্রের একটি সম্মিলিত হামলা। এর উদ্যোগ গ্রহণ করে বনী নযীরের মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে খয়বরে বসতি স্থাপনকারী নেতারা। তারা বিভিন্ন এলাকা সফর করে কুরাইশ, গাতফান, হুযাইল ও অন্যান্য বহু গোত্রকে একএ হয়ে সম্মিলিতভাবে বিরাট বাহিনী নিয়ে মদীনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। এভাবে তাদের প্রচেষ্টায় ৫ হিজরীর শাওয়াল মাসে আরবের বিভিন্ন গোত্রের এক বিরাট বিশাল সম্মিলিত বাহিনী এ ক্ষুদ্র জনপদ আক্রমন করে। এতে যোগ দেয় উত্তর থেকে বনী নযীর ও বনী কাইনুকার ইহুদিরা... পূর্ব থেকে যোগ দেয় গাত্‌ফানের গোত্রগুলো... দক্ষিন থেকে এগিয়ে আসে কুরাইশ...। এদের সবার সম্মিলিত সংখ্যা দশ বারো হাজারের কম হবে না

...নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা তাইয়েবায় নির্লিপ্ত ও নিষ্ক্রিয় বসে ছিলেন না। বরং সংবাদদাতারা এবং সমস্ত গোত্রের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা ইসলামী আন্দোলনের সহযোগী ও প্রভাবিত লোকেরা তাঁকে দুশমনদের চলাফেরা ও প্রত্যেকটি গতিবিধি সম্পর্কে সর্বক্ষণ খবরাখবর সরবরাহ করে আসছিলেন। এ বিশাল বাহিনী তাঁর শহরে পৌঁছুবার আগেই ছ’দিনের মধ্যেই তিনি মদীনার উত্তর পশ্চিম দিকে পরিখা খনন করে ফেলেন এবং সাল্‌’আ পর্বতকে পেছনে রেখে তিন হাজার সৈন্য নিয়ে পরিখার আশ্রয়ে প্রতিরক্ষা যুদ্ধ পরিচালনা করতে প্রস্তুত হন। ...আসলে মদীনার বাইরে পরিখার মুখোমুখি হতে হবে, এটা কাফেররা ভাবতেই পারেনি। তাদের যুদ্ধের নীল নক্‌শায় আদতে এ জিনিসটি ছিলই না। কারণ আরববাসীরা এধরনের প্রতিরক্ষার সাথে পরিচিত ছিল না।

বনী কুরাইযার বিশ্বাসঘাতকতা

এরপর কাফেরদের জন্য শুধুমাত্র একটা পথই খোলা ছিল। তারা ইহুদি গোত্র বনী কুরাইযাকে বিশ্বাসঘাতকতায় উদ্বুদ্ধ করতে পারতো। এ গোত্রটির বসতি ছিল মদীনার দক্ষিণ পূর্ব কোণে। যেহেতু এ গোত্রটির সাথে মুসলমানদের যথারীতি মৈত্রী চুক্তি ছিল...। কাফেররা মুসলমানদের প্রতিরক্ষার এ দুর্বল দিকটি আঁচ করতে পারে। তাদের পক্ষ থেকে বনী নযীরের ইহুদি সরদার হুয়াই ইবনে আখতাবকে বনী কুরাইযার কাছে পাঠানো হয়। বনী কুরাইযাকে চুক্তি ভংগ করে দ্রুত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করানোই ছিল তার কাজ। ...শেষ পর্যন্ত ইহুদি জাতির চিরাচরিত ইসলাম বৈরী মানসিকতা নৈতিকতার মর্যাদা রক্ষার ওপর প্রাধান্য লাভ করে এবং বনী কুরাইযা চুক্তি ভংগ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারেও বেখবর ছিলেন না। তিনি যথা সময়ে এ খবর পেয়ে যান। সংগে সংগেই তিনি আনসার সরদারদেরকে (সা’দ ইবনে উবাদাহ, সা’দ ইবনে মু’আয, আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহ ও খাওয়াত ইবনে জুবাইর) ঘটনা তদন্ত করার এবং এ সংগে তাদের বুঝাবার জন্য পাঠান। ...সরদারগণ সেখানে পৌঁছে দেখেন বনি কুরাইযা তাদের নোংরা চক্রান্ত বাস্তবায়নে পুরোপুরি প্রস্তুত। তারা প্রকাশ্যে তাঁদেরকে জানিয়ে দেয় (••••••••) “আমাদের ও মুহাম্মাদের মধ্যে কোন অংগীকার ও পতিশ্রুতি নেই।” ...এ খবরটি অতি দ্রুত মদীনার মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ব্যপক অস্থিরতা দেখা দেয়। কারণ এখন তারা দু’দিক থেকেই ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল...। এর ফলে মুনাফিকদের তৎপরতা অনেক বেশী বেড়ে যায়।

গাত্‌ফানদের সাথে সন্ধির প্রস্তাব

এহেন নাজুক সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাত্‌ফানদের সাথে সন্ধির কথাবার্তা চালাতে থাকেন এবং তাদেরকে মদীনায় উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু যখন আনসার সরদার বৃন্দের (সা’দ ইবনে উবাদাহ ও সা’দ ইবনে মু’আয) সাথে তিনি চুক্তির এ শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেন তখন তাঁরা বলেন, “যদি আপনি আমাদের জন্য এ চুক্তি করতে এগিয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে তা খতম করে দিন...।” একথা বলে তাঁরা চুক্তিপত্রের খসড়াটি ছিঁড়ে ফেলে দেন, যার ওপর তখনো স্বাক্ষর করা হয়নি।

না’ঈম ইবনে মাস’উদের কৌশল

এ সময় গাত্‌ফান গোত্রের আশ্‌জা’ শাখার না’ঈম ইবনে মাস’উদ নামক এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আসেন। তিনি শত্রুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তিনি প্রথমে যান বনী কুরাইযার কাছে এবং তাদেরকে বলেন, কুরাইশ ও গাতফান তো অবরোধে বিরক্ত হয়ে এক সময় ফিরে যেতেও পারে... তোমরা ততক্ষণ যুদ্ধে অংশ নিয়ো না যতক্ষণ বাইর থেকে আগত গোত্রগুলোর মধ্য থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ লোককে তোমাদের কাছে যিম্মি হিসেবে না রাখে। ...এরপর তিনি কুরাইশ ও গাতফানের সরদারদের কাছে যান। তাদেরকে বলেন, বনী কুরাইযা কিছুটা শিথিল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তারা তোমাদের কাছে যদি যিম্মী হিসেবে কিছু লোক চায় তাহলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই...। এর ফলে সম্মিলিত জোটের লোকেরা বনী কুরাইযার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে। তারা কুরাইযার নেতৃবৃন্দের কাছে বার্তা পাঠায় যে, ...কালকে তোমরা ওদিক থেকে আক্রমণ করো...। বনী কোরাইযা জবাবে বলে পাঠায়, আপনারা যতক্ষণ যিম্মী স্বরূপ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমাদের হাওয়ালা করে না দেন ততক্ষণ আমরা যুদ্ধের বিপদের সম্মুখীন হতে পারি না। এ জবাব শুনে সম্মিলিত জোটের নেতারা না’ঈমের কথা সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করে। এভাবে এ যুদ্ধ কৌশল বড়ই সফল প্রমাণিত হয়।

* এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাহ বলেছিলেন ——عن أبي هريرة وجابر رضي الله عنهما أنَّ النبيَّ -صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم- قالَ: «الْحَرْبُ خَدْعَةٌ». [صحيح] - [متفق عليه] -অর্থাৎ জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, “যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।

অবরোধের সমাপ্তি

এখন অবরোধ কাল ২৫ দিন থেকেও দীর্ঘ হতে চলছিল। শীতের মওসুম চলছিল। ...এ অবস্থায় এক রাতে হঠাৎ ভয়াবহ ধূলিঝড় শুরু হয়। এ ঝড়ের মধ্যে ছিল শৈত, বজ্রপাত ও বিজলী চমক এবং অন্ধকার ছিল এত গভীর যে নিজের হাত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। প্রবল ঝড়ে শত্রুদের তাঁবুগুলো তছনছ হয়ে যায়। ...রাতের অন্ধকারেই প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহের পথ ধরে। সকালে মুসলমানরা জেগে ওঠে ময়দানে একজন শত্রুকেও দেখতে পায়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ময়দান শত্রুশূন্য দেখে সংগে সংগেই বলেনঃ

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمَ الْأَحْزَابِ:
«الْآنَ نَغْزُوهُمْ، وَلَا يَغْزُونَنَا، نَحْنُ نَسِيرُ إِلَيْهِمْ»

সুলায়মান ইবন সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ আহযাব (খন্দকের) যুদ্ধের দিনে বলেন, “এখন থেকে আমরা তাদের ওপর অভিযান চালাব; তারা আর আমাদের ওপর অভিযান চালাবে না, বরং আমরা-ই তাদের দিকে অগ্রসর হব।

বনী কুরাইযার যুদ্ধ

খন্দক থেকে গৃহে ফিরে আসার পর যোহরের সময় জিব্রীল (আ) এসে হুকুম শুনালেন, এখনই অস্ত্র নামিয়ে ফেলবেন না। বনী কুরাইযার ব্যাপারটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ...এ হুকুম পাওয়ার সাথে সাথেই তিনি ঘোসণা করে দিলেন, “যে ব্যক্তিই শ্রবণ ও অনুগত্যের ওপর অবিচল আছো সে আসরের নামাজ ততক্ষন পর্যন্ত পড়ো না যতক্ষণ না বনী কুরাইযার আবাসস্থলে পৌঁছে যাও।” ...দু’তিন সপ্তাহের বেশী তারা অবরোধের কঠোরতা বরদাশ্‌ত করতে পারলো না। অবশেষে তারা এ শর্তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আত্মসমর্পণ করলো যে, আওস গোত্রের সরদার হযরত সা’দ ইবনে মু’আয (রা) তাদের জন্য যা ফায়সালা করবেন উভয় পক্ষ তাই মেনে নেবে।

...হযরত সা’দ মাত্র এই কিছুদিন আগেই দেখেছিলেন, দু’টি ইহুদি গোত্রকে মদীনা থেকে বের হয়ে যাবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল এবং তারা কিভাবে আশপাশের সমস্ত গোত্রকে উত্তেজিত করে দশ বারো হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণ করতে এসেছিল। ...তাই তিনি ফায়সালা দিলেন:

  • বনী কুরাইযার সমস্ত পুরুষদেরকে হত্যা করা হোক,
  • নারী ও শিশুদেরকে গোলামে পরিণত করা হোক এবং
  • তাদের সমুদয় ধন-সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হোক।
এ ফায়সালাটি বাস্তবায়িত করা হলো। ...সেখানে তারা দেখলো, আহযাব যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য এ বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠীটি ১৫ শত তলোয়ার, ৩ শত বর্ম, ২ হাজার বর্শা এবং ১৫ শত ঢাল গুদামজাত করে রেখেছে।

সামাজিক সংস্কার

ওহোদ যুদ্ধ ও আহযাব যুদ্ধের মাঝখানের এ দু’টি বছর যদিও এমন সংকট এবং গোলযোগে পরিপূর্ণ ছিল... তারপরও এ সমগ্র সময়-কালে নতুন মুসলিম সমাজ গঠন এবং জীবনের প্রতিটি বিভাগে সংস্কার ও সংশোধনের কাজ অব্যাহতভাবে চলছিল। এ সময়েই:

  • মুসলমানদের বিয়ে ও তালাকের আইন প্রায় পূর্ণতা লাভ করেছিল।
  • উত্তরাধিকার আইন তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
  • মদ ও জুয়াকে হারাম করা হয়েছিল।
  • অর্থ ও সমাজ ব্যবস্থার অন্যান্য বহু দিকে নতুন বিধি প্রয়োগ করা হয়েছিল।

দত্তক প্রথা সংস্কার

এ প্রসংগে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনযোগ্য ছিল দত্তক গ্রহন। আরবের লোকেরা যে শিশুকে দত্তক বা পালিত পুত্র বা কন্যা হিসেবে গ্রহণ করতো তাকে একেবারে তাদের নিজেদের গর্ভজাত সন্তানের মত মনে করতো। সে উত্তরাধিকার লাভ করতো। তার সাথে দত্তক মাতা ও বোনেরা ঠিক তেমনি খোলামেলা থাকতো... তার সাথে দত্তক পিতার কন্যার এবং পিতার মৃত্তুর পর তার বিধিবা স্ত্রীর বিবাহ ঠিক তেমনি অবৈধ মনে করা হতো...।

এ রীতিটি বিয়ে তালাক ও উত্তরাধিকারের যেসব আইন সূরা বাকারাহ ও সূরা নিসায় আল্লাহ বর্ণনা করেছেন তার সাথে পদে পদে সংঘর্ষশীল ছিল। আল্লাহর আইনের দৃষ্টিতে যারা উত্তরাধিকারের প্রকৃত হকদার ছিল এ রীতি তাদের অধিকার গ্রাস করে... এ আইনের দৃষ্টিতে যে সমস্ত পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিয়ে হালাল ছিল এ রীতি তা হারাম করে দিতো। ...এসব কারনে ইসলামের বিবাহ, তালাক ও উত্তরাধিকার আইন এবং যিনা হারাম হবার আইনের দাবী হচ্ছে এই যে, দত্তককে প্রকৃত সন্তানের মতো মনে করার ধারণাকে পুরোপুরি উচ্ছেদ করতে হবে।

১. আয়াতের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই আয়াতটি এমন সময়ে নাযিল হয় যখন মুসলিম নারীরা নবী (সা.)-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, কেন কুরআন সবসময় পুরুষদের সম্বোধন করে কথা বলে। জবাবে আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন, যেখানে প্রতিটি গুণের ক্ষেত্রেই পুরুষ (যেমন: مسلمين/মুসলিমিন) এবং নারী (যেমন: مسلمات/মুসলিমাত) উভয়কেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলামে নারী ও পুরুষের আধ্যাত্মিক মূল্য ও পুরস্কারের ক্ষেত্রে যে কোনো ভেদাভেদ নেই, তা অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সূরা আল-আহযাবের ৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পুরুষ ও নারীর অনেকগুলো গুণের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে এই গুণাবলী সম্পন্ন নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার রয়েছে। এই গুণগুলোর মধ্যে আছে মুসলিম ও মু'মিন, অনুগত, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, বিনয়ী, দানশীল, রোযাদার এবং পবিত্রতা রক্ষাকারী হওয়া, এবং আল্লাহর বেশি বেশি যিকির করা। আয়াতের ব্যাখ্যা مسلمين و مسلمات (মুসলিম ও মুসলিমাত): যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলে।
مؤمنين و مؤمنات (মুমিন ও মুমিনাত): যারা ঈমান এনেছে এবং মনেপ্রাণে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে।
قانتين و قانتات (ক্বানিত ও ক্বানিতাত): যারা আল্লাহর প্রতি অনুগত ও বাধ্য।
صادقين و صادقات (সাদিক ও সাদিকাত): যারা সর্বদা সত্য কথা বলে।
صابرين و صابرات (সাবির ও সাবিরাত): যারা ধৈর্য ধারণ করে।
خاشعين و خاشعات (খাসি ও খাসিয়াত): যারা আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে।
متصدقين و متصدقات (মুতাصدদিক ও মুতাصدদিকাত): যারা দানশীল।
صائمين و صائمات (সায়িম ও সায়িমাত): যারা রোজা রাখে।
حافظين فروجهم و حافظات (হাফিজু ফুরুজিহিম ওয়া হাফিজাত): যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে।
ذاكرين الله كثيرا و ذاكرات (যাকি'রিনাল্লাহা কাছি'রুন ওয়া যাকি'রাত): যারা বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে।
এই আয়াতটি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, যেখানে বলা হয়েছে যে এই সমস্ত নেক আমলগুলো আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান এবং এর জন্য তিনি ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান রেখেছেন।

২. দশটি যুগল গুণের ব্যাখ্যা

আয়াতে উল্লেখিত দশটি গুণকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: বিশ্বাস (ঈমান), ইবাদত ও নৈতিকতা (আমল), এবং বিশেষ মর্যাদা (সংযম ও যিকির)

ক. বিশ্বাসের ভিত্তি (ঈমান ও ইসলাম)

গুণাবলী আরবি (পুরুষ/নারী) বিস্তারিত ব্যাখ্যা
ইসলাম গ্রহণকারী مسلمين و مسلمات 'ইসলাম' শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে বাহ্যিকভাবে যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো মেনে চলে, যেমন: শাহাদাহ্, সালাত, সাওম, যাকাত ইত্যাদি। এটি বাহিরের কর্মকাণ্ডকে নির্দেশ করে।
ঈমান আনয়নকারী مؤمنين و مؤمنات 'ঈমান' শব্দের অর্থ বিশ্বাস। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যারা অন্তরে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, ফেরেশতা, কিতাব, আখেরাত এবং তাকদীরের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এটি অন্তরের সত্যতা ও বিশ্বাসকে নির্দেশ করে। (ইসলাম হলো দেহ এবং ঈমান হলো আত্মা)।

খ. ইবাদত ও নৈতিকতা (আমল ও চরিত্র)

গুণাবলী আরবি (পুরুষ/নারী) বিস্তারিত ব্যাখ্যা
অনুগত قانتين و قانتات 'ক্বুনূত' অর্থ স্থিরতা ও পূর্ণ আনুগত্য। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যারা কেবল আদেশ মান্যই করে না, বরং ইবাদত ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে অবিচল ও দৃঢ় থাকে। বিশেষত, সালাত ও অন্যান্য ইবাদতে বিনম্র ও মনোযোগী হওয়া।
সত্যবাদী صادقين و صادقات 'সিদক' অর্থ সত্যবাদিতা। এই সত্যবাদিতা কেবল কথা বলার ক্ষেত্রে নয়, বরং কাজে-কর্মে, চুক্তিতে, নিয়তে—সর্বক্ষেত্রে সত্যবাদী হওয়া। এরা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে এবং মিথ্যা থেকে দূরে থাকে।
ধৈর্যশীল صابرين و صابرات 'সবর' অর্থ ধৈর্য। এই গুণের তিনটি স্তর: আল্লাহর আনুগত্যের ওপর অবিচল থাকা, পাপকাজ থেকে দূরে থাকতে অবিচল থাকা, এবং বিপদ-মুসিবতে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকা।
বিনয়ী خاشعين و خاشعات 'খুশু' অর্থ বিনয় ও নম্রতা। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যারা আল্লাহর সামনে দাঁড়ায় বা তাঁর যিকির করে তখন তাদের মন আল্লাহর মহত্ত্বের সামনে ঝুঁকে যায়। এটি মূলত সালাতে বা আল্লাহর ইবাদতে অন্তরের একাগ্রতা ও ভয়ভীতিকে নির্দেশ করে।
দানশীল متصدقين و متصدقات 'সদকা' অর্থ দান। যারা কেবল ফরয যাকাত আদায় করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর পথে দান করে। এর মাধ্যমে তাদের সম্পদ ও অন্তর পবিত্র হয়।
রোযাদার صائمين و صائمات 'সওম' অর্থ বিরত থাকা। যারা কেবল রমজানে নয়, বরং নফল রোযা পালনের মাধ্যমে নিজেদের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।

গ. বিশেষ গুণাবলী (সংযম ও যিকির)

গুণাবলী আরবি (পুরুষ/নারী) বিস্তারিত ব্যাখ্যা
পবিত্রতা রক্ষাকারী حافظين فروجهم و حافظات এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে (ফুরুজ) হেফাযত করে। অর্থাৎ, সকল প্রকার অবৈধ যৌনাচার, দৃষ্টির পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং পোশাকের শালীনতা বজায় রেখে নিজেদের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করে।
বেশি বেশি যিকিরকারী ذاكرين الله كثيرا و ذاكرات 'যিকির' অর্থ স্মরণ। এটি কেবল মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ নয়, বরং জীবনের সকল অবস্থায় (দাঁড়ানো, বসা, শোয়া) আল্লাহকে স্মরণ করা। এর দ্বারা আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সবসময় তাঁর উপস্থিতি অনুভব করা বোঝানো হয়।

৩. প্রতিদান

আয়াতের শেষে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন:
"এদের সকলের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা (মাগফিরাত) এবং মহাপুরস্কার (আজরে আযীমা)।"

  • ক্ষমা (মাগফিরাত): অতীতের সমস্ত পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।
  • মহাপুরস্কার (আজরে আযীমা): জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং সেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি (রিদ্বা) লাভ করা।

এই আয়াতটি মূলত মুসলিম উম্মাহকে একটি বার্তা দেয় যে, আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভ বা আধ্যাত্মিক সফলতা নারী বা পুরুষের লিঙ্গভেদের ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে তারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে উল্লেখিত দশটি গুণাবলী কতটা আন্তরিকতার সাথে অর্জন করতে পেরেছে তার ওপর।

আল্লাহর কৃতিত্ব ও পুরষ্কার — সূরা আল-আহযাব (৩৩:৩৫) ও সম্পর্কিত রেফারেন্স

সূরা আল-আহযাব — ৩৩:৩৫ (আরবি)

إِنَّ ٱلْمُسْلِمِينَ وَٱلْمُسْلِمَٰتِۦ وَٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِۦ وَٱلْقَٰنِتِينَ وَٱلْقَٰنِتَٰتِۦ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِۦ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِۦ وَٱلْخَٰشِعِينَ وَٱلْخَٰشِعَٰتِۦ وَٱلْمُتَصَدِّقِينَ وَٱلْمُتَصَدِّقَٰتِۦ وَٱلصَّٰئِمِينَ وَٱلصَّٰئِمَٰتِۦ وَٱلْحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَٱلْحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرًاۢ وَٱلذَّٰكِرَٰتِۦ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

বাংলা (সংক্ষিপ্ত অনুবাদ):
নিশ্চয়ই (আল্লাহ) মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনীত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোযাদার পুরুষ ও নারী, যারা তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে এবং যারা বিতারণে আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে — তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা এবং মহা প্রতিদান প্রস্তুত করেছেন।

সূত্র: আল-কোরআন 33:35.

সম্পর্কিত আয়াতসমূহ (আরবি + বাংলা)

সূরা আল-বাকারা — ২:১৭৭

لَيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ...

বাংলা (সংক্ষিপ্ত): ধর্মের মর্যাদা কেবল আঙ্গিক নয়; বরং যে বিশ্বাস রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয়, ধৈর্য ধারণ করে — তাদেরই প্রকৃত ধার্মিকতা।

সূত্র: আল-বাকারা 2:177.

সূরা অন-নিসা — ৪:১২৪

وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَـٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا

বাংলা (সংক্ষিপ্ত): যে-ই আদর্শ কর্ম করে, পুরুষ হোক বা নারী এবং সে যদি ঈমানদার হয় — তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং এক বিন্দুতে ও অন্যমায় হবে না।

সূত্র: আন-নিসা 4:124.

সূরা আন-নাহল — ১৬:৯৭

مَنِ ٱعْمَلَ صَٰلِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةً طَيِّبَةً ...

বাংলা (সংক্ষিপ্ত): যে-ই শুভ কাজ করবে, পুরুষ বা নারী — এবং সে যদি ঈমানদার হয়, আমরা তাকে জীবনের ভাল মুহূর্ত দেব এবং উত্তম প্রতিদান দেব।

সূত্র: আন-নাহল 16:97.

আহজাব (খন্দক) যুদ্ধকে সংক্রান্ত বচন — হাদিস (আরবি + বাংলা)

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ يَوْمَ الْأَحْزَابِ: «الْآنَ نَغْزُوهُمْ، وَلَا يَغْزُونَنَا، نَحْنُ نَسِيرُ إِلَيْهِمْ»

বাংলা অনুবাদ: সুলায়মান ইবন সুরাদ (রাঃ) বর্ণনা করেন — রাসূলুল্লাহ ﷺ আহজাব যুদ্ধে বললেন, “এখন থেকে আমরা তাদের ওপর অভিযান চালাব; তারা আমাদের ওপর আর অভিযান চালাবে না; বরং আমরা তাদের দিকে যাব।”

হাদিস সূত্র: Sahih al-Bukhari, Al-Maghazi (Book of Military Expeditions), Hadith No. 4109.

তাফসীর/উৎস (সংক্ষিপ্ত রেফারেন্স)

  • Ibn Kathir — Tafsir (Surah Al-Ahzab 33:35)। (দেখুন: Tafsir Ibn Kathir ও অনলাইন অনুবাদ)।
  • Maʿārif al-Qur'ān এবং অনলাইন কোরআন-টেক্সট/টাফসীর স্ত্রোতসমূহ (quran.com, quranx)।
  • হাদিস রেফারেন্স: Sahih al-Bukhari (Al-Maghazi) — Hadith No. 4109 (Sulaiman bin Surd narration)।

🔼


বই নোটঃ ইসলামী সংগঠন

লেখক: এ. কে. এম. নাজির আহমেদ

প্রকাশনায়: আধুনিক প্রকাশনী

ভূমিকা: এই বইটিতে ২৩টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ইসলামী সংগঠনের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

ইসলামী সংগঠন: সংগঠন শব্দের সাধারণ অর্থ সংঘবদ্ধ করণ। এর বিশেষ অর্থ দলবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ জীবন। ইকামতে দ্বীনের কাজে আঞ্জাম দেয় যে সংগঠন, তাকেই বলা হয় ইসলামী সংগঠন।

ইসলামী সংগঠনের গুরুত্ব:

  • মুমীনদের সংঘবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে।
  • এককভাবে জীবন যাপনের অধিকার কারও নেই।
  • ইসলামী সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া জাহেলিয়াতে প্রত্যাবর্তন করার শামিল।
  • সংঘবদ্ধ জীবন যাপন জান্নাত প্রাপ্তির অন্যতম পূর্বশর্ত।
  • সংগঠন না থাকলে ইসলাম গৌরবে টিকে থাকতে পারে না।

সংগঠনের উপাদান

সংগঠনের সাধারণ উপাদান ৩টি:

  1. নেতৃত্ব
  2. কর্মীবাহিনী
  3. সংগঠন পরিচালনা

ইসলামী সংগঠনের মূল উপাদান তিনটি:

  1. ইসলামী নেতৃত্ব
  2. ইসলামী কর্মীবাহিনী
  3. ইসলামী সংগঠন পরিচালনা পদ্ধতি

ইসলামী নেতৃত্ব:

যেই নেতৃত্ব ইসলামের আলোকে আত্মগঠন করে শুধুমাত্র দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মনিয়োগ ও কর্মীবাহিনী পরিচালনা করে, সেই নেতৃত্বই ইসলামী নেতৃত্ব।

ইসলামী কর্মীবাহিনী:

যেই কর্মীবাহিনী দুনিয়াবী কোনো স্বার্থে জড়িত না হয়ে কেবল আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী নেতৃত্বের অধীন সময়, শক্তি ও অর্থের কুরবানী দিতে থাকেন, তাই ইসলামী কর্মীবাহিনী।

ইসলামী সংগঠনের লক্ষ্য ও নেতৃত্ব কাঠামো

ইসলামী সংগঠনের লক্ষ্য:

আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান রাসূলের পন্থায় মানব সমাজে কায়েম করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।

ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্ব কাঠামো:

  • মুসলমানদের আমীর হবেন একজন।
  • মুসলমানগণ তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করবেন। তাদের স্বাধীন মতের ভিত্তিতে।

ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন:

  • জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব
  • উন্নত আমল
  • সাহসিকতা
  • সমানুবর্তিতা
  • সাংগঠনিক প্রজ্ঞা
  • প্রেরণা সৃষ্টির যোগ্যতা
  • সুভাষণ
  • নথিপত্র সংরক্ষণের পারদর্শিতা
  • হিসাব সংরক্ষণের পারদর্শিতা

ইসলামী নেতৃত্বের প্রধান ভূমিকা:

  • তাযকিয়া (আত্মশুদ্ধি)
  • উখুয়াত সৃষ্টি (ভ্রাতৃত্ব)
  • ত্যাগের অনুপ্রেরণা সৃষ্টি
  • কর্মীদের মাঝে ইনসাফ সৃষ্টি
  • বিপদ মুসিবতে ধৈর্য অবলম্বনের তালীম
  • আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকেই সকল তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু রূপে উপস্থাপন

অন্যান্য বিষয়াবলী:

  • ইসলামী নেতৃত্বের জবাবদিহী
  • ইসলামী সংগঠনে আনুগত্য
  • ইসলামী সংগঠনে পদলোভীর স্থান
  • ইসলামী সংগঠনে পরামর্শ
  • ইসলামী সংগঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
  • ইসলামী সংগঠনে এহতেছাব (জবাবদিহিতা)

ইসলামী সংগঠনে কর্মী পরিচালনা

  1. আদর্শের আলোকে মন মানসিকতা গঠন
  2. ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা
  3. ইসলামী বুনিয়াদী নির্দেশগুলি নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ
  4. মর্ম উপলব্ধি করে নিয়মিত আল কোরআন ও আল হাদীস অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধকরণ
  5. জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ে উৎসাহ যোগান
  6. আত্মসমালোচনায় উদ্বুদ্ধকরণ
  7. দাওয়াতী কাজে উদ্বুদ্ধকরণ
  8. দাওয়াতী কাজে সহযোগিতা দান
  9. দাওয়াতী কাজের রিপোর্ট গ্রহণ
  10. ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর জন্য উদ্বুদ্ধকরণ (আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়)
  11. সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করণ
  12. সময় সচেতনতা সৃষ্টি
  13. পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করণ
  14. কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দান
  15. সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ
  16. দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করণ
  17. কাজে তদারক
  18. কাজের রিপোর্ট গ্রহণ
  19. রিপোর্ট পর্যালোচনা
  20. সমাজ কর্মীরূপে ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করণ
  21. ব্যাপক পরিচিতি অর্জনে উদ্বুদ্ধ করণ
  22. স্ব-চালিত কর্মীদের আত্মগঠনে উদ্বুদ্ধ করণ
  23. নতুন কর্মী গঠনের জন্য কর্মীকে উদ্বুদ্ধ করণ
  24. সংগঠনের বক্তব্য যথাসম্ভব শীঘ্র যোগাযোগ করা
  25. পরামর্শ শ্রবণ
  26. অগ্রসর কর্মীকে সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দান

ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের আত্মগঠন

  1. আল্লাহর দিকে আহ্বান
  2. একাগ্রতা সহকারে সালাত আদায়
  3. আল-কোরআন অধ্যয়ন
  4. আল-হাদীস অধ্যয়ন
  5. সহায়ক সাহিত্য অধ্যয়ন
  6. রাত্রি জাগরণ (তাহাজ্জুদ/ইবাদত)
  7. আল্লাহর পথে অর্থ দান
  8. সকল কাজে আল্লাহকে স্মরণ
  9. রাসূলের প্রতি দুরুদ পড়া
  10. আত্মসমালোচনা
  11. মৌলিক মানবীয় গুণ অর্জন
  12. পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টকারী কাজ বর্জন:
    • অশালীন ও অশোভন কথাবার্তা
    • গীবত (পরনিন্দা)
    • আন্দাজ অনুমান (ধারণা)
    • হিংসা
    • রাগ
    • অহংকার

ইসলামী সংগঠনের কর্মী গঠন ও মান উন্নয়ন

ইসলামী সংগঠনের কর্মী গঠন:

  • সাহচর্য দান
  • অন্তদ্বন্দ্ব নিরসন
  • মানসিক দৃঢ়তা অর্জনে সহযোগিতা দান:
    • সাংগঠনিক পরিবেশ অর্পণ
    • ছোটখাট দায়িত্ব অর্পণ
    • অর্থদানে উদ্বুদ্ধ করণ
    • প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দান
    • আহবান জ্ঞাপনের দায়িত্ব অর্পণ
    • কাজের রিপোর্ট গ্রহণ

ইসলামী সংগঠনে কর্মীর মান উন্নয়ন:

  • সাপ্তাহিক সভা
  • সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শিবির
  • দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শিবির
  • বক্তৃতা অনুশীলন চক্র
  • ব্যক্তিগত আলাপ, জিজ্ঞাসা ও পরামর্শ দান

ইসলামী সংগঠনে সংহতি ও রাসূল (সা:) এর সংগঠনের পর্যায়

ইসলামী সংগঠনে সংহতি বিনষ্টের কারণ:

  • ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত লক্ষ সম্পর্কে অস্পষ্টতা
  • ইসলামী সংগঠনের বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে অন্দনাঙ্গ ধারণা
  • ইসলামী আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে সংশয়
  • বিপদ মুসিবত সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব
  • অগ্রাধিকার নির্ধারণে অক্ষমতা
  • মানসিক ভারসাম্যহীনতা
  • ত্বরা প্রবণতা (তাড়াহুড়া)
  • অতি আশা
  • চরম পন্থার প্রতি ঝোঁক
  • অহংকার
  • অভিমান
  • মুখোশ পরা দুশমনের ভূমিকা

রাসূল (সা:) কতৃক পরিচালিত সংগঠনের ক্রমবিকাশ ও প্রতিষ্ঠা লাভের চারটি পর্যায়:

  1. অংকুর বের করা
  2. শক্তি অর্জন করা
  3. মোটা তাজা হওয়া
  4. কাণ্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া।

অন্যান্য বিষয়: ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের পরীক্ষা, ইসলামী সংগঠনে বায়তুল মাল, ইসলামী সংগঠন ও ইকামতে দ্বীন ইত্যাদি। (বইটিতে ২৩টি বিষয় আলোচিত হয়েছে)

নোট প্রস্তুতকারীঃ ডা.ইবনে আসাদ আল মামুন- উপজেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য- প্রশিক্ষণ বিভাগ- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী- কালিহাতি উপজেলা শাখা

Top


মুখস্থঃ


🌿 কল্যাণমূলক ছোট ছোট দোয়া সমূহ

১️⃣ اللّهُمَّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।
রেফারেন্স: সহীহ মুসলিম 598

২️⃣ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণ: রাব্বি যিদনী ইলমা
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
রেফারেন্স: সূরা ত্বাহা ২০:১১৪

৩️⃣ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
রেফারেন্স: সূরা আল-বাকারা ২:২০১

৪️⃣ اللّهُمَّ ارْزُقْنِي حُبَّكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মারযুকনি হুব্বাক
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে আপনার ভালোবাসা দান করুন।
রেফারেন্স: তিরমিজি 3490

৫️⃣ اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুঃখ ও দুশ্চিন্তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
রেফারেন্স: সহীহ বুখারী 6369

৬️⃣ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
উচ্চারণ: রাব্বিশরাহলি সদরি
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমার অন্তর উন্মুক্ত করে দিন।
রেফারেন্স: সূরা ত্বাহা ২০:২৫

৭️⃣ اللّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআলনি মিনাত্তাওয়াবীন
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
রেফারেন্স: তিরমিজি 3598

৮️⃣ رَبِّ يَسِّرْ وَلَا تُعَسِّرْ
উচ্চারণ: রাব্বি ইয়াসসির ওয়ালা তু’আসসির
অর্থ: হে আমার প্রভু! কাজ সহজ করে দিন, কঠিন করবেন না।
রেফারেন্স: ইবন হিব্বান 970

৯️⃣ اللّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আ’ফিয়া
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সুস্থতা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
রেফারেন্স: আবু দাউদ 5074

🔟 رَبِّ زِدْنِي شُكْرًا
উচ্চারণ: রাব্বি যিদনী শুকরা
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমার কৃতজ্ঞতা বৃদ্ধি করুন।
রেফারেন্স: দুআ সমূহ, আল-আযকার আন-নববী

১১️⃣ اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইহফাযনি মিন বাইনি ইয়াদাইয়া
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার সামনে থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
রেফারেন্স: মুসলিম 2714

১২️⃣ اللّهُمَّ ارْحَمْنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মারহামনি
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার প্রতি দয়া করুন।
রেফারেন্স: তিরমিজি 3524

১৩️⃣ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ
উচ্চারণ: রাব্বি আওযিঅনি আন আশকুরা নিয়মাতাক
অর্থ: হে আমার প্রভু! আপনি যে নিয়ামত দিয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ হতে আমাকে শক্তি দিন।
রেফারেন্স: সূরা নামল ২৭:১৯

১৪️⃣ اللّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَّقِينَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআলনি মিনাল মুত্তাক্বীন
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে পরহেজগারদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
রেফারেন্স: আল-আযকার আন-নববী

১৫️⃣ رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: রাব্বি নাজ্জিনি মিনাল কওমিজ যালিমিন
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে জালিম জাতি থেকে রক্ষা করুন।
রেফারেন্স: সূরা কাসাস ২৮:২১

১৬️⃣ اللّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকাওয়াল জান্নাহ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করছি।
রেফারেন্স: ইবন মাজাহ 3846

১৭️⃣ اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ سُوءِ الْخُلُقِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন সুই’ল খুলুক
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট খারাপ চরিত্র থেকে আশ্রয় চাই।
রেফারেন্স: আবু দাউদ 1549

১৮️⃣ اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকর
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় চাই।
রেফারেন্স: আবু দাউদ 5090

১৯️⃣ رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً
উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা রাহমাহ
অর্থ: হে আমার প্রভু! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে দয়া দান করুন।
রেফারেন্স: সূরা কাহফ ১৮:১০

২০️⃣ اللّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআল খাইরা উমরি আখিরাহু
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জীবনের শেষ অংশটুকু উত্তম করে দিন।
রেফারেন্স: হাকিম, মুস্তাদরাক ১/৭১২

🔼


মাসআলাঃ আক্বিকা সংক্রান্তঃ Source

আকীকা কাকে বলে ও প্রাক-ইসলামী যুগে আকীকা

আকীকা শব্দের অর্থ কাটা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যে প্রাণীকে জবাই করা হয় তাকে আকীকা বলে। চাই তা ছেলে হোক বা মেয়ে। কেননা, এ প্রাণীর হলক তথা গলা কাটা করা হয়।

প্রাক-ইসলামী যুগে আকীকা :

আকীকার প্রথা জাহেলী যুগ থেকেই চালু ছিল। মাওয়ারদী বলেন, ‘আকীকা বলা হয় ওই ছাগলকে ইসলাম পূর্বযুগে আরবা যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে জবাই করত।’

অলীউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, ‘জেনে রাখুন, আরবরা তাদের সন্তানের আকীকা করতো। আকীকা তাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছিল। এতে ছিল ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই তা অব্যাহত রাখেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর প্রমাণ আমরা দেখতে আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণিত হাদীসে। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমার বাবা বুরাইদাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

كُنَّا فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِذَا وُلِدَ لِأَحَدِنَا غُلاَمٌ ذَبَحَ شَاةً وَلَطَخَ رَأْسَهُ بِدَمِهَا ، فَلَمَّا جَاءَ اللَّهُ بِالإِسْلاَمِ كُنَّا نَذْبَحُ شَاةً ، وَنَحْلِقُ رَأْسَهُ وَنُلَطِّخُهُ بِزَعْفَرَانٍ .

‘জাহেলী যুগে আমাদের নিয়ম ছিল, যখন আমাদের কারো পুত্র সন্তান জন্ম নিতো, সে একটি ছাগল জবাই করতো এবং এর রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দিতো। কিন্তু আল্লাহ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেন, তখন আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম এবং তার মাথা নেড়ে করতাম আর তার তাকে জাফরান দিয়ে মাখিয়ে দিতাম।’ [আবূ দাউদ : ২৮৪৩; বাইহাকী : ১৯৭৬৬; মুস্তাদরাক : ৭৫৯৪]

মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেন, তা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,

وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا .

‘জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭]

আল্লামা সুয়ূতী রহ. উল্লেখ করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর আকীকা করেন। তিনি বলেন, ‘ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে ইবন আসাকির বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুবলেন,

لما ولد النبي صلى الله عليه و سلم عق عنه عبد المطلب وسماه محمدا فقيل له ما حملك على أن سميته محمدا ولم تسمه باسم آبائه فقال أردت أن يحمده الله في السماء ويحمده الناس في الأرض

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জন্মগ্রহণ করেন, আব্দুল মুত্তালিব তার আকীকা করেন এবং তার নাম রাখেন মুহাম্মদ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কিসে আপনাকে তাঁর নাম বাবা-দাদার নামের সঙ্গে না মিলিয়ে রেখে মুহাম্মদ রাখতে? তিনি বললেন, আমি চেয়েছি যাতে তার প্রশংসা আল্লাহ করেন আসমানে আর মানুষে করে যমীনে।’ [শাহরহুয যারকানী আলা মুয়াত্তা মালেক, পৃ. ৫৫৮; ইবন আব্দিল বার, আল-ইস্তিয়াব।]

তেমনি মূসা আলাইহিমুস সালামের শরীয়তেও আকীকার প্রচলন ছিল। হাদীসে যেমন বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

‘ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০; মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭।]

আকীকার বিধান

আকীকার বিধান প্রবর্তিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম ও উক্তি- উভয়প্রকার হাদীসের মাধ্যমে। এ সম্পর্কে অনেক ‘আছার’ও বর্ণিত হয়েছে অনেক। নিচে এর কিছু তুলে ধরা হচ্ছে :

প্রথমত. সুন্নাহ কাওলী বা মৌখিক হাদীস :

১. সালমান বিন আমের দাব্বী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

مَعَ الْغُلَامِ عَقِيقَةٌ فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا وَأَمِيطُوا عَنْهُ الْأَذَى

‘পুত্র সন্তানের সঙ্গে আকীকা রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো এবং তার থেকে কষ্ট দূর করো।’ [বুখারী : ৫০৪৯; তিরমিযী : ১৫১৫; মুসনাদ আহমদ : ১৭৯০৭।]

২. সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى

‘প্রত্যেক শিশুই তার আকীকা জরুরী। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য জবাই করা হবে এবং তার মাথা নেড়ে করা হবে আর নাম রাখা হবে। [আবূ দাউদ : ২৮৪০; মুসনাদ আহমদ : ২০০৯৫।]

৩. উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি,

عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ .

‘ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা করা যাবে)।’ [আবূ দাউদ : ২৮৩৬; মুসনাদ আহমদ : ২৭৪০৯।]

৪. উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, উত্তরে তিনি বলেন,

عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ وَاحِدَةٌ وَلاَ يَضُرُّكُمْ ذُكْرَانًا كُنَّ أَمْ إِنَاثًا .

‘ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা দেয়া যাবে) আর ওই ছাগলগুলো পাঠা হোক বা পাঠ তাতে তোমাদের কোনো অসুবিধা নাই।’ [তিরমিযী : ১৫৯৯; মুসনাদ আহমদ : ২৭৩৭৩।]

৫. হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা তাঁকে অবহিত করেছেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنِ الْغُلامِ شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

‘পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল।’ [ইবন হিব্বান : ৫৩১০; ইবন আবী শাইবা : ২৪৭২৯।]

৬. একই হাদীসের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,

عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ ، أَنَّهُمْ دَخَلُوا عَلَى حَفْصَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَسَأَلُوهَا عَنِ العَقِيقَةِ ، فَأَخْبَرَتْهُمْ أَنَّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهَا ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُمْ عَنِ الغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ ، وَعَنِ الجَارِيَةِ شَاةٌ .

‘ইউসুফ বিন মাহাক থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার কাছে গেলেন এবং তাঁকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে জানালেন যে, তিনি তাঁকে এ মর্মে অবহিত করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ছেলে হলে সমবয়সী দু’টি ছাগল ও মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ১৫১৩।]

৭. আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

الْعَقِيقَةُ حَقٌّ ، عَنِ الْغُلامِ : شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ : شَاةٌ .

‘পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে প্রায় সমবয়সী দু’টি ছাগল হক এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি।’ [আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ৩৩৫৩; মুসনাদ আহমদ : ২৭৫৮২।]

৮. ইয়াযীদ বিন আব্দুল্লাহ মুযানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يُعَقُّ عَنِ الْغُلاَمِ ، وَلاَ يُمَسُّ رَأْسُهُ بِدَمٍ .

‘পুত্র সন্তানের পক্ষে আকীকা করা হবে আর তার মাথায় রক্ত স্পর্শ করা হবে না।’ [ইবন মাজা : ৩১৬৬; আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ১১০৮।]

৯. আমর বিন শুয়াইব তার বাবা আর বাবা তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,

أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِتَسْمِيَةِ الْمَوْلُودِ يَوْمَ سَابِعِهِ وَوَضْعِ الأَذَى عَنْهُ وَالْعَقِّ .

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখা, তার আবর্জনা দূর করা (তথা নেড়ে করা) ও আকীকার নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ২৮৩২।]

১০. ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إذا كان يوم سابعه فأهريقوا عنه دما وأميطوا عنه الأذى وسموه .

‘যখন তার (নবজাতকের জন্মের) সপ্তম দিন আসবে, তখন তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো আর তার আবর্জনা (মাথার চুল) দূর করো এবং তার নাম রাখো।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল আওসাত : ১৮৮৩।]

১১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেন, তা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,

وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا.

‘জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭।]

১২. হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ .

‘ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০; মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭।]

দ্বিতীয়ত. সুন্নাহ ফি‘লী বা কর্মগত হাদীস :

১. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ ، وَالْحُسَيْنِ بِكَبْشَيْنِ كَبْشَيْنِ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জন্য দু’টি দু’টি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা করেন।’ [নাসায়ী : ১২১৯।]

২. আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য আকীকা করেছেন।’ [মু‘জামুল কাবীর : ২৫১০; নাসায়ী : ৪২১৩; মুসনাদ আহমদ : ২৩০৫১।]

৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَسَمَّاهُمَا وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِمَا الأَذَى.

‘(জন্মের) সপ্তম দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের আকীকা দিয়েছেন, তাঁদের নাম রেখেছেন এবং তাঁদের মাথা থেকে কষ্ট (চুল) দূর করেছেন।’ [বাইহাকী : ১৯০৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৩১১।]

৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ شَاتَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِ الأَذَى. وَقَالَ : اذْبَحُوا عَلَى اسْمِهِ وَقُولُوا بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ لَكَ وَإِلَيْكَ هَذِهِ عَقِيقَةُ فُلاَنٍ.

‘হাসান ও হুসাইনের (জন্মের) সপ্তম দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি ছাগল দিয়ে আকীকা দেন এবং তার মাথার কষ্ট দূর করার নির্দেশ দেন। আর তিনি বলেন, ‘তাঁর (আল্লাহর) নামে জবাই করো এবং বলো, বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ, আপনার কাছে অমুকের জন্য এ আকীকা।’ [বাইহাকী : ১৯৭৭২; মুসনাদ আবী ইয়া‘লা : ৪৫২১।]

৫. আব্দুল্লাহ ইবন উমরা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَّ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ عَنْ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا كَبْشَيْنِ اثْنَيْنِ مِثْلَيْنِ مُتَكَافِئَيْنِ.

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন- উভয়ের প্রত্যেকের জন্যই প্রায় একইরকম সমবয়সী দুটি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা দেন।’ [হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৯০।]

৬. আলী বিন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ بِشَاةٍ وَقَالَ يَا فَاطِمَةُ احْلِقِى رَأْسَهُ وَتَصَدَّقِى بِزِنَةِ شَعْرِهِ فِضَّةً . قَالَ فَوَزَنَتْهُ فَكَانَ وَزْنُهُ دِرْهَمًا أَوْ بَعْضَ دِرْهَمٍ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকীকা দিলেন এবং বললেন, ‘হে ফাতেমা, এর তার মাথার চুল ফেলে দাও এবং তার চুলের ওজনে রুপা সদকা করো। তিনি বলেন, অতপর ফাতেমা তা পরিমাপ করলো, এর ওজন হলো এক দিরহাম বা এক দিরহামের কিছু পরিমাণ।’ [তিরমিযী : ১৬০২; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৮৯।]

উপরের হাদীসগুলোতে থেকে আমরা যেমন জানলাম, শিশু জন্মের সপ্তম দিনে তার মাথা নেড়ে (টাক) করতে বলা হয়েছে। তবে কাযা‘ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আর তা হলো, ‘বাচ্চার মাথা এমনভাবে নেড়ে করা যে তার মাথার বিভিন্ন স্থান অমুণ্ডিত থাকে’। [ইবনুল আছীর, নিহায়া : কাযা‘ অধ্যায়।]

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى عَنِ الْقَزَعِ. قَالَ قُلْتُ لِنَافِعٍ وَمَا الْقَزَعُ قَالَ يُحْلَقُ بَعْضُ رَأْسِ الصَّبِىِّ وَيُتْرَكُ بَعْضٌ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযা‘ থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, নাফে‘কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাযা‘ কী? তিনি বললেন, বাচ্চার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডানো আর কিছু অমুণ্ডিত রাখা’। [মুসলিম : ৩৯৫৯; বুখারী : ৫৪৬৫; ইবন মাজা : ৩৬২৭; আহমদ : ৪৯২৮।]

উদ্দেশ্য, নেড়ে করতে হবে পুরো মাথা জুড়ে। কারণ, মাথার কিছু অংশ নেড়ে করা আর কিছু না করা ইসলামী ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী, যার মাধ্যমে একজন মুসলিম অন্য জাতি-গোষ্ঠী থেকে এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী হয়। এই কাযা‘র মাধ্যমে মূলত কাফেরদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন হয়। আর তাদের সাদৃশ্য ধারণ জায়িয নয়।

হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ থেকে বর্ণিত, মুয়াবিয়া বিন সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যে বছর হজ করেন, তিনি মিম্বরে বসলেন, আমার ভৃত্যের হাতে থাকা চুল থেকে একগুচ্ছ চুল নিলেন এবং বললেন,

يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَنْهَى عَنْ مِثْلِ هَذِهِ وَيَقُولُ إِنَّمَا هَلَكَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ حِينَ اتَّخَذَ هَذِهِ نِسَاؤُهُمْ.

হে মদীনাবাসী, কোথায় তোমাদের আলিমগণ? (তিনি কি তোমাদের বারণ করেননি?) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘বনী ইসরাঈল ধ্বংস হয়েছিল যখন তাদের নারীরা এটাকে (কাযা‘) ধারণ করেছিল।’ [মুসলিম : ৫৭০০; বুখারী : ৩৪৬৮; আবূ দাউদ : ৪১৬৯।]

(এ থেকে বুঝা যায়, মাথার চুল কিছু মুণ্ডানো আর কিছু রেখে দেওয়া তাদের শরীয়তে হারাম ছিল।)

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى صَبِيًّا قَدْ حُلِقَ بَعْضُ شَعَرِهِ وَتُرِكَ بَعْضُهُ فَنَهَى عَنْ ذَلِكَ وَقَالَ : احْلِق ُوا كُلَّهُ ، أَوِ اتْرُكُوا كُلَّهُ.

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুকে দেখলেন তার (মাথার) কিছু চুল নেড়ে করা হয়েছে আর কিছু অবশিষ্ট রাখা হয়েছে। তাকে দেখে তিনি এ থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, তোমরা (মাথা) পুরোটাই মুণ্ডাও অথবা পুরোটাই অমুণ্ডিত রাখো।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬১৫; আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ১৯৫৬৪১।]

আকীকার গোস্ত ব্যবহার

প্রথম. আকীকার গোস্ত ব্যবহার

আকীকার পশু যবেহ করার পর এর ব্যবহার ঠিক কুরবানীর পশুর মতোই। ফলে তা তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একভাগ পরিবার, একভাগ সাদাকা ও একভাগ হাদিয়ার জন্য।

ইমাম নাববী রহ. বলেন,

[ ويستحب أن يأكل منها ويتصدق ويهدي كما قلنا في الأضحية ]

‘মুস্তাহাব হলো আকীকার গোস্ত থেকে (নিজেরা) খাওয়া, (গরীবদের মাঝে) সদকা করা এবং (বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে) হাদিয়া পাঠানো। যেমন আমরা বলেছি এসেছি কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে।’ [নাসায়ী : ৪২২৯; শরহু মা‘আনিল আছার : ১০১৫।]

অধিকাংশ আলেম আবার আকীকার গোস্ত কাঁচা সদকা না করে তা রান্না করে সদকা করা এবং রান্নার তা গরীবদের কাছে তা পাঠিয়ে দেয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে যদি না পাঠিয়ে তাদেরকে বাড়িতে এনে দাওয়াত করে খাওয়ানো তাহলে সেটা আরও উত্তম। যদি আকীকার গোস্ত দিয়ে দাওয়াতের আয়োজন করা হয়, তাহলে তাতে ধনী-গরীব, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-প্রতিবেশী সবাইকে শরীক করতে যাবে। এক কথায় তিনি যেভাবে চান এটাকে কাজে লাগাবেন।

প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবন সীরীন রহ. বলেন,

[ إصنع بلحمها كيف شئت ]

‘আকীকার গোস্ত যেভাবে ইচ্ছে কাজে লাগাতে পারেন।’ [আল-মাজমূ‘ : ৮/৪৩০।]

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর সঙ্গে রান্নার কথাও যোগ করেন।

[ فقد قيل له : تطبخ العقيقة ؟ قال : نعم . قيل له : يشتد عليهم طبخها . قال : يتحملون ذلك ].

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আকীকার গোস্ত কি রান্না করা হবে? তিনি বললেন, ‘হ্যা’। তাকে বলা হলো, তাদের জন্য এটা রান্না করা কঠিন হবে। তিনি বললেন, ‘তারা সেটা সহ্য করবে।’

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,

[وهذا لأنه إذا طبخها فقد كفى المساكين والجيران مؤنة الطبخ وهو زيادة في الإحسان وفي شكر هذه النعمة ، ويتمتع الجيران والأولاد والمساكين بها هنيئة مكفية المؤنة فإن من أهدي إليه لحم مطبوخ مهيأ للأكل مطيب كان فرحه وسروره به أتم من فرحه بلحم نيء يحتاج إلى كلفة وتعب ].

‘এটা এজন্য যে, তিনি যখন গোস্ত রান্না করে দেবেন, গরীব, মিসকিন ও প্রতিবেশিদের আর রান্নার কষ্ট ও খরচটুকু বহন করতে হবে না। একটি ভালো কাজে তা নতুন মাত্রা যোগ করবে। নিয়ামতের শুকরিয়ায় এটি অতিরিক্ত হিসেবে বরিত হবে। প্রতিবেশি, সন্তানাদি ও অভাবীরা এর মাধ্যমে আরও বেশি আনন্দিত হবে। কারণ যদি কাউকে রান্না করা এবং খাবারের জন্য একেবারে প্রস্তুত কোনো গোস্ত কাউকে দেওয়া হয় তবে তিনি ওই গোস্ত পাওয়া থেকে অবশ্যই অধিক খুশি হবেন, যাতে পাকানো ও রান্নার কষ্ট সহ্য করার প্রয়োজন রয়েছে।’ [তুহফাতুল মাওদূদ : ৫৯-৬০।]

ইমাম মালিক রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তার সন্তানের আকীকা করেন। তিনি আকীকা কীভাবে করেছেন আমাদের জন্য তার বিবরণ দিয়েছেন। তদীয় ‘মাবসূত’ গ্রন্থে তিনি লিখেন,

عققت عن ولدي وذبحت ما أريد أن أدعو إليه إخواني وغيرهم ، وهيأت طعامهم ، ثم ذبحت شاة العقيقة فأهديت منها للجيران ، وأكل منها أهل البيت ، وكسروا ما بقي من عظامها فطبخت ، فدعونا إليها الجيران فأكلوا وأكلنا ، قال مالك : فمن وجد سعة فأحب له أن يفعل هذا ومن لم يجد فليذبح عقيقة ثم ليأكل وليطعم منها

‘আমি আমার সন্তানের আকীকা দিয়েছি। প্রথমে যেসব ভাই ও অন্যদের দাওয়াত দিয়েছি তাদের যা খাওয়াবার ইচ্ছে করেছি তা জবাই করলাম। তারপর তাদের খাবার প্রস্তুত করলাম। এরপর আকীকার ছাগল জবাই করলাম। তা থেকে প্রতিবেশিদের হাদিয়া দিলাম। পরিবারের লোকেরা গোস্ত খেল। হাড়-হাড্ডি যা অবশিষ্ট ছিল সেগুলো টুকরো করে রান্না করলাম। তারপর প্রতিবেশিদের আবার সেগুলো খাওয়ার দাওয়াত দিলাম। তারা খেল আর আমরাও খেলাম। মালিক রহ. বলেন, অতএব যার অর্থের প্রাচুর্য রয়েছে, আমি চাই তিনি এমন করবেন। আর যার নাই, তিনি আকীকা জবাই করবেন এবং সেখান থেকে খাবেন ও খাওয়াবেন।’ [আল-মুনতাকা : ৩/১০৪।]

দ্বিতীয়. আকীকার চামড়া ও এর বর্জ্যসংক্রান্ত বিধান

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর মতে আকীকার চামড়া, মাথা এবং ইত্যাকার অংশগুলো বিক্রি করা হবে তারপর তার মূল্য সাদাকা করা হবে। আকীকার বর্জ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

الجلد والرأس والسقط يباع ويتصدق به

‘চামড়া, মাথা এবং বর্জ্য বিক্রি করা হবে এবং তা সদকা করা হবে।’ [তুহফাতুল মাওদূদ : ৭০; কাশশাফুল কিনা‌ : ৩/৩১।]

এদিকে ইমাম মালিক রহ.-এর যে কোনো অংশ বিক্রির বিপক্ষে। তিনি বলেন,

ولا يباع من لحمها شيء ولا جلدها

‘আকীকার গোস্ত বা চামড়ার কোনো অংশই বিক্রি করা হবে না।’ [আল-মুয়াত্তা বিহামিশিল মুনতাকা : ৩/১০৩।]

ইবন রুশদ বলেন,

وأما حكم لحمها وجلدها وسائر أجزائها فحكم لحم الضحايا في الأكل والصدقة ومن البيع

‘আকীকার গোস্ত, চামড়া এবং এর যাবতীয় অংশের বিধান খাওয়া, সদকা করা ও বেচার দিক থেকে কুরবানীর পশুর মতোই।’ [বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১৩৭৭।]

এককথায় আকীকার গোস্ত ও এর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার তেমনি যেমন কুরবানীর পশুর গোস্ত ও তার অন্যান্য অংশের ব্যবহার করতে হয়।

আকীকা সংক্রান্ত আরও কিছু মাসআলা :

# অধিকাংশ আলিমের মতে আকীকা সুন্নত। তবে কেউ কেউ আকীকা ওয়াজিব বলেছেন।

# জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা দেয়াটাই সুন্নতের পূর্ণ আনুগত্যের দাবী। তবে এরপরেও যে কোনো সময় আকীকা দেয়া যাবে। কারণ, হাদীসে সপ্তম দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে তা হবে না- এমন কিছু বলা হয়নি।

# ছেলের আকীকা হিসেবে দুটি এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল জবাই করা সুন্নত। তবে কষ্টসাধ্য হলে একটি ছাগল দিয়েও ছেলের আকীকা দেয়া যাবে। কারণ, উভয় ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্বকে তাঁর রাসূলের সুন্নতের রঙ্গে রাঙাবার এবং সকল অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকবার তাওফীক দিন। আমীন।

এক নজরে আকিকা

আকিকা একটি নিশ্চিত সুন্নত, যা সন্তানের জন্মের সপ্তম, চতুর্দশ বা একবিংশ দিনে করা হয়। এর জন্য ছাগল বা ভেড়া জবাই করা হয়, যার গোশত ও চামড়া সাধারণত বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া, শিশুর নামকরণ করা হয় এবং তার চুল মুণ্ডন করে ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রূপা দান করা হয়।

আকিকার গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
সুন্নাত: আকিকা একটি নিশ্চিত সুন্নত, যা পালন করা জরুরি।
সুরক্ষা: হাদীস অনুযায়ী, শিশু তার আকিকার মাধ্যমে বন্ধক থাকে, তাই আকিকা করা হলে শিশু বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
নামকরণ: সপ্তম দিনে শিশুর নাম রাখা ও মাথা মুণ্ডন করা হয়।
দান: শিশুর মাথার চুলের ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রূপা দান করা সুন্নাহ।

আকিকার সময়
সাধারণত শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা দেওয়া হয়।
তবে এটি চতুর্দশ বা একবিংশ দিনেও দেওয়া যায়।
সামর্থ্য না থাকলে পরেও যেকোনো সময় দেওয়া যেতে পারে।

আকিকার পশু
আকিকার জন্য ছাগল বা ভেড়া জবাই করা হয়।
গরু বা অন্য বড় পশু দিয়েও আকিকা করা যায়, তবে এক্ষেত্রে একটি পশুর অংশ একজনের জন্য যথেষ্ট নয়।
পশুর বয়স কোরবানির পশুর মতো হতে হয়; অর্থাৎ ছাগলের জন্য কমপক্ষে এক বছর হতে হবে।

গোশত বন্টন
আকিকার গোশত ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোরবানির পশুর মতোই ব্যবহৃত হয়।
পশুর গোশত রান্না করে বা কাঁচাও দান করা যেতে পারে।
গোশত বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং গরিবদের মধ্যে বন্টন করা হয়।
গোশত বিক্রি করা যায় না এবং এটি পারিশ্রমিক হিসেবেও দেওয়া যাবে না।

কে আকিকা করবে?
সাধারণত সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বে থাকা বাবা আকিকা করবেন।
বাবার সামর্থ্য না থাকলে মা বা অন্য কোনো আত্মীয় আকিকা করতে পারেন।

🔼

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM