logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

📚 অনুশীলনী -১৬(আগষ্ট-৩য় সপ্তাহঃ)

# দারস তৈরী - সূরা আল হুজরাত ১ম রুকু # বই নোট: ইসলাম পরিচিতি # আনুগত্য সংক্রান্ত আয়াত # আনুগত্য সংক্রান্ত হাদিস #আক্বিকা সংক্রান্ত সম্পর্কিত মাসায়েল

দারস তৈরী - সূরা আল হুজরাত ১ম রুকু

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌۭ ١ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَرْفَعُوٓا۟ أَصْوَٰتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ ٱلنَّبِىِّ وَلَا تَجْهَرُوا۟ لَهُۥ بِٱلْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَـٰلُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ ٢ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَٰتَهُمْ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمْتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌۭ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ ٣ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَآءِ ٱلْحُجُرَٰتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ ٤ وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا۟ حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًۭا لَّهُمْ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٥ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَإٍۢ فَتَبَيَّنُوٓا۟ أَن تُصِيبُوا۟ قَوْمًۢا بِجَهَـٰلَةٍۢ فَتُصْبِحُوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَـٰدِمِينَ ٦ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ ٱللَّهِ ۚ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِى كَثِيرٍۢ مِّنَ ٱلْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ ٱلْإِيمَـٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِى قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ ٱلْكُفْرَ وَٱلْفُسُوقَ وَٱٱلْعِصْيَانَ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلرَّٰشِدُونَ ٧ فَضْلًۭا مِّنَ ٱللَّهِ وَنِعْمَةًۭ ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ ٨ وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱقْتَتَلُوا۟ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَهُمَا ۖ فَإِنۢ بَغَتْ إِحْدَىٰهُمَا عَلَى ٱلْأُخْرَىٰ فَقَـٰتِلُوا۟ ٱلَّتِى تَبْغِى حَتَّىٰ تَفِىٓءَ إِلَىٰٓ أَمْرِ ٱللَّهِ ۚ فَإِن فَآءَتْ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَهُمَا بِٱلْعَدْلِ وَأَقْسِطُوٓا۟ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ ٩ إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌۭ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ١٠ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا يَسْخَرْ قَوْمٌۭ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُوا۟ خَيْرًۭا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌۭ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًۭا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا۟ بِٱلْأَلْقَـٰبِ ۖ بِئْسَ ٱلِٱسْمُ ٱلْفُسُوقُ بَعْدَ ٱلْإِيمَـٰنِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ١١ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱجْتَنِبُوا۟ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱٱلظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ ٱلظَّنِّ إِثْمٌۭ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا۟ وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًۭا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٢ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَـٰكُم مِّن ذَكَرٍۢ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَـٰكُمْ شُعُوبًۭا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا۟ ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌۭ ١٣

👉 বঙ্গানুবাদ

  1. মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের চেয়ে অগ্রগামী হয়োনা এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
  2. হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উচু করো না এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলো না যেরুপ তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয় যে; তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।
  3. যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে তাদের কন্ঠ নিচু রাখে তারাই সে সব লোক আল্লাহ যাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
  4. হে নবী, যারা আপনাকে ঘরের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ।
  5. যদি তারা আপনার বের হয়ে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করত তবে তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতো। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
  6. হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো **ফাসেক** তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে তাহলে তা **অনুসন্ধান** করে দেখ। এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোনো গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।
  7. ভালো করে জেনে রাখ আল্লাহর রাসূল তোমাদের মাঝে রয়েছেন। তিনি যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তোমাদের কতা মেনে নেন তবে তোমরাই অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের কাছে পছন্দনীয় করে দিয়েছেণ। পক্ষান্তরে **কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে ঘৃনিত** করে দিয়েছেন।
  8. আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে এসব লোকই সৎপথের অনুগামী। আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী।
  9. যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে **মীগোস্তা** করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে **ন্যায়ানুগ পন্থায় মীগোস্তা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে**। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন।
  10. মুমিনরা তো **পরস্পর ভাই-ভাই**। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীগোস্তা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
  11. মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে **উপহাস** না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি **দোষারোপ করো না** এবং একে অপরকে **মন্দ নামে ডেকো না**। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
  12. মুমিনগণ, তোমরা অনেক **ধারণা থেকে বেঁচে থাক**। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় **সন্ধান করো না**। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে **নিন্দা (গীবত)** না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার গোস্ত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
  13. হে মানব, আমি তোমাদেরকে **এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি** করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা **পরস্পরে পরিচিতি হও**। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই **সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার**। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।

আলোচ্য বিষয়

নামকরণ ও নাযিল হওয়ার সময়কাল
  • নামকরণঃ **৪র্থ আয়াত** থেকে গৃহীত।
  • নাযিল হওয়ার সময়কালঃ এ সুরা বিভিন্ন পরিবেশ ও ক্ষেত্রে নাযিল হওয়া হুকুম আহকাম ও নির্দেশ সমূহের সমষ্টি, যা **মাদানী যুগের শেষ পর্যায়ে** নাজিলকৃত।
আলোচ্য বিষয়বস্তু ও শিষ্টাচার

এ সুরার বিষয়বস্তু হলো মুসলমানদেরকে এমন **আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরন শিক্ষা দেয়া** যা তাদের ঈমানসুলভ স্বভাব-চরিত্র ও ভাবমূর্তির উপযুক্ত ও মানানসই।

  • প্রথম পাঁচ আয়াতে: **আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে আদব কায়দা** শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
  • নির্দেশ: প্রতিটি খবর বিশ্বাস করা এবং সে অনুযায়ী কর্মকান্ড করে বসা ঠিক নয়। (**সংবাদের সত্যতা যাচাই**)
  • নির্দেশ: মুসলমানদের দুটি দল যদি কোনো সময় **সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে অন্য মুসলমানদের কর্মনীতি**।
  • খারাপ বিষয় থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ:
    • একে অপরকে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা
    • বদনাম উপহাস করা
    • উপনামে ডাকা
    • গোপন বিষয় খোজাখুজি
    • বদধারণা করা
    • গীবত করা
  • মূলকথা: ঈমানের মৌখিক দাবী প্রকৃত জিনিস নয় বরং সরল মনে আল্লাহ ও রাসূলকে মানা, কার্যত অনুগত থাকা এবং কুরবানী।
ঘটনা ও প্রেক্ষাপট

৪র্থ আয়াত সম্পর্কে ঘটনা (আদব-শিষ্টাচার):

বনী তামিম গোত্রের কিছু লোক রাসূল (সা:) এর নিকট উপস্থিত হলে হযরত আবু বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:) এর মধ্যে শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয়ের **কন্ঠস্বর উচু হয়ে যায়** (বুখারী)। এছাড়া কিছু বেদুঈন সাহাবী হুজরার বাইরে থেকে উচ্চস্বরে রাসূল (সা:)-কে ডাকতেন, যার প্রেক্ষাপটে এই আয়াতগুলো নাযিল হয়।

৬ষ্ঠ আয়াত সম্পর্কে ঘটনা (সংবাদ যাচাই):

বনী মুস্তালিক গোত্রের সরদার হারেস ইবনে মেরাব যাকাত দিতে সম্মত হলে রাসূল (সা:) **ওলীদ ইবনে ওকবা**-কে দুত হিসেবে প্রেরণ করেন। ওলীদ পুরাতন শত্র“তার সন্দেহে ফিরে এসে রাসূল (সা:)-কে জানান যে তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে এবং তাকে হত্যার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (সা:) পরে খালিদ ইবনে ওলীদ-কে পাঠিয়ে জানতে পারেন সংবাদটি মিথ্যা। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে **ফাসেক ব্যক্তির সংবাদ যাচাই** করার নির্দেশ দিয়ে আয়াত নাযিল হয়।


বিস্তারিত ব্যাখ্যা

১. আল্লাহ ও রাসূলের চেয়ে অগ্রগামী না হওয়া (আয়াত ১)
  • মৌলিক দাবী: নিজের মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে কখনো **আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের চেয়ে অগ্রাধিকার** দেবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বদা আগে দেখতে হবে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ কী।
  • আইনের উৎস: আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবই সর্বপ্রথম উৎস এবং তারপরই রাসূলের সুন্নাত। নিজের **ইজতিহাদ ও মতামতকে** আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের ওপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না।
  • দায়িত্বশীলতা: এই নির্দেশ শুধু ব্যক্তিগত নয়, মুসলমানদের **সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র** (সরকার, বিচারালয়, পার্লামেন্ট) সবকিছুর জন্য প্রযোজ্য।
২. রাসূলের (সা:) মজলিসের আদব (আয়াত ২-৩)
  • কণ্ঠস্বর: নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে **উঁচু না করা** এবং উচ্চস্বরে কথা না বলা।
  • গুরুত্ব: রাসূলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে সামান্য শিথিলতায় সারা জীবনের সঞ্চিত পুজি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। রাসূলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মূলত **আল্লাহর প্রতি সম্মান** প্রদর্শন।
  • তাকওয়া: যারা কণ্ঠ নিচু রাখে, তারাই সে সব লোক আল্লাহ যাদের অন্তরকে **তাকওয়ার জন্য যাচাই** করে নিয়েছেন।
  • বর্তমান প্রয়োগ: নবীর অবর্তমানে তাঁর **হাদীস বা কুরআনের আলোচনা** হয়, এমন মাহফিলেও শিষ্টতা বজায় রাখা আবশ্যক। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের সাথেও এই আদব রক্ষা করতে হয়।
৩. অনুমতি ও ধৈর্য (আয়াত ৪-৫)
  • নির্বোধের কাজ: হুজরার (ঘর) বাইরে থেকে **উচ্চস্বরে ডাকাডাকি** করা কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক।
  • শিষ্টাচার: ধৈর্য ধরে রাসূল (সা:)-এর বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ছিল উত্তম।
  • শিক্ষা: কারো ঘরে প্রবেশের আগে **ফোন করে বা অনুমতি নিয়ে যাওয়া** এবং অনুমতি না পেলে বা বেরিয়ে না আসলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা।
৪. সংবাদের সত্যতা যাচাই (আয়াত ৬)
  • ফাসেক: যদি কোনো **ফাসেক** (অবাধ্য, নির্ভরযোগ্য নয় এমন ব্যক্তি) কোনো খবর নিয়ে আসে, তবে তা **যাচাই করা** আবশ্যক।
  • পরিণাম: যাচাই না করে কাজ করলে **না জেনে শুনেই কোনো গোষ্ঠীর ক্ষতি** করে বসতে পারে, যার জন্য পরে লজ্জিত হতে হবে।
  • জারহ ও তা'দীল: এই নীতির ভিত্তিতেই হাদীস শাস্ত্রবিদগণ **'জারহ ও তা'দীল'** (বর্ণনাকারীর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই) নীতি উদ্ভাবন করেছেন।
৫. মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও ভ্রাতৃত্ব (আয়াত ৭-১০)
  • রাসূলের নেতৃত্ব: রাসূল (সা:) যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সাহাবীদের কথা মেনে নিতেন তবে তারা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তেন। আল্লাহ তাদের মধ্যে **ঈমানকে প্রিয়** ও কুফরী-পাপাচারকে ঘৃনিত করে দিয়েছেন।
  • মীগোস্তা: মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হলে অন্য মুমিনদের দায়িত্ব হলো **ন্যায়ের ভিত্তিতে মীগোস্তা** করে দেওয়া। আক্রমণকারী দল বাড়াবাড়ি করলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে।
  • ভ্রাতৃত্ব: **মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই**। তাই ভাইদের মধ্যে মীগোস্তা করা ও আল্লাহকে ভয় করা অপরিহার্য।
৬. সামাজিক কুফল থেকে আত্মরক্ষা (আয়াত ১১-১২)
  • উপহাস ও মন্দ নামে ডাকা: কেউ যেন কাউকে **উপহাস** না করে। একে অপরকে **দোষারোপ** করো না এবং **মন্দ নামে ডেকো না**। এগুলো ঈমানের পরে ফাসেকী কাজ।
  • বদধারণা: অনেক **ধারণা থেকে বেঁচে থাকা** উচিত, কারণ কিছু ধারণা গোনাহ।
  • গোপন বিষয় সন্ধান (তাজাসসুস): **গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না**।
  • গীবত (নিন্দা): কারও পশ্চাতে **নিন্দা (গীবত) করো না**। এটিকে মৃত **ভ্রাতার গোস্ত ভক্ষণ** করার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
৭. মানবজাতির সৃষ্টি ও তাকওয়া (আয়াত ১৩)
  • সৃষ্টি: মানবজাতিকে **এক পুরুষ ও এক নারী (আদম ও হাওয়া)** থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
  • উদ্দেশ্য: বিভিন্ন **জাতি ও গোত্রে বিভক্ত** করার উদ্দেশ্য হলো যেন তারা **পরস্পরে পরিচিতি** লাভ করে, অহংকার করার জন্য নয়।
  • মর্যাদার মাপকাঠি: আল্লাহর কাছে **সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত সেই, যে সর্বাধিক পরহেযগার (তাকওয়াবান)**। বংশ, সম্পদ বা রঙের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।
সুত্রঃ আরমানের খেরোখাতা

Top


বই নোটঃ ইসলাম পরিচিতি

লেখক: সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী

<

মূল: রিসালাতে দীনিয়াত - প্রথম প্রকাশ - ১৯৩২ সালে

প্রকাশনায়: আধুনিক প্রকাশনী

বইটিকে মোট সাতটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে

অধ্যায়সমূহ:

ইসলাম, ঈমান ও আনুগত্য, নবুয়াত, ঈমানের বিবরণ, ইবাদাত, দ্বীন ও শরীয়াত


ইসলাম

  • ইসলাম নামকরণ কেন
  • ইসলাম শব্দটির অর্থ
  • ইসলামের তাৎপর্য
  • কুফরের তাৎপর্য
  • কুফরের অনিষ্টকারিতা
  • ইসলামের কল্যাণ

ঈমান ও আনুগত্য

  • আনুগত্যের জন্য জ্ঞান ও প্রত্যয়ের প্রয়োজন
  • ঈমানের পরিচয়
  • জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম
  • ঈমান বিল-গায়েব

নবুয়াত

  • পয়গাম্বরীর মূলতত্ত্ব
  • পয়গাম্বরের পরিচয়
  • পয়গাম্বরের আনুগত্য
  • পয়গাম্বরগণের প্রতি ঈমানের আবশ্যকতা
  • পয়গাম্বরীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
  • হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর নবুয়াত
  • নবুয়াতে মুহাম্মাদীর প্রমাণ
  • খতমে নবুয়াত
  • খতমে নবুয়াতের প্রমাণ

ঈমানের বিবরণ

  • আল্লাহর প্রতি ঈমান
  • 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-র অর্থ
  • 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-র প্রকৃত তাৎপর্য
  • মানব জীবনে তাওহীদ বিশ্বাসের প্রভাব
  • আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
  • আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান
  • আল্লাহর রাসুলদের প্রতি ঈমান
  • আখেরাতের উপর ঈমান
  • আখেরাত বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা
  • আখেরাত বিশ্বাসে সত্যতা
  • কালেমায়ে তাইয়েবা

ইবাদাত

  • ইবাদাতের তাৎপর্য
  • সালাত
  • সওম
  • যাকাত
  • হজ্জ
  • ইসলামের সহায়তা

দ্বীন ও শরীয়াত

  • দ্বীন ও শরীয়াতের পার্থক্য
  • শরীয়াতের বিধান জানার মাধ্যম
  • ফিকাহ
  • তাসাউফ

শরীয়াতের বিধি-বিধান

  • শরীয়াতের নীতি
  • চতুর্বিদ অধিকার
  • আল্লাহর অধিকার
  • নিজস্ব অধিকার
  • বান্দাদের অধিকার
  • আল্লাহর সৃষ্টির অধিকার
  • বিশ্বজনীন ও স্থায়ী বিধান

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ

# ইসলাম

ইসলাম নামকরণ কেন

দুনিয়ায় যত রকম ধর্ম রয়েছে তার প্রত্যেকটির নামকরণ হয়েছে কোন বিশেষ ব্যক্তির নামে।... নামের দিক দিয়ে ইসলামের রয়েছে একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। কোন বিশেষ ব্যক্তি অথবা জাতির সাথে তার নামের সংযোগ নেই। বরং 'ইসলাম' শব্দটির অর্থের মধ্যে আমরা একটি বিশেষ গুণের পরিচয় পাই, সেই গুণই প্রকাশ পাচ্ছে এ নামে। নাম থেকেই বুঝা যায় যে, ইসলাম কোন এক ব্যক্তির আবিষ্কার নয়, কোন এক জাতির মধ্যে এ ধর্ম সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম কোন বিশেষ ব্যক্তি, দেশ অথবা জাতির সম্পত্তি নয়। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইসলামের গুণরাজি সৃষ্টি করা

মুসলিম

প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক কওমের যারা ইসলাম মেনে চলেন তাদেরকে বলা হয় মুসলিম। যেসব খাঁটি ও সৎলোকের মধ্যে উপরোক্ত গুণ পাওয়া গেছে, তাঁরা ছিলেন 'মুসলিম'। এ ধরনের লোক আজো রয়েছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।

ইসলাম শব্দটির অর্থ

আরবী ভাষায় 'ইসলাম' বলতে বুঝায় আনুগত্য ও বাধ্যতা। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তাঁর বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়া এ ধর্মের লক্ষ্য বলেই এর নাম হয়েছে 'ইসলাম'।

ইসলামের তাৎপর্য

এখানে ২ টি দৃষ্টিভংগী আলোচনা করা হয়েছে, যেমন-

দৃষ্টিকোণ-১: ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক- সবাই সৃষ্টি/জন্মগতভাবে মুসলিম।

দৃষ্টিকোণ-২: যারা তাদের স্রষ্টাকে চিনেছে, তাকেই তাদের একমাত্র মনিব ও মালিক বলে মেনে নিয়েছে এবং মালিক এর নির্ধারিত কাজ পদ্ধতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করেছে। দুনিয়ার বুকে তারা হচ্ছে আল্লাহর খলীফা (প্রতিনিধি)।

কুফরের তাৎপর্য

'কুফর' শব্দটির আসল অর্থ হচ্ছে কোন কিছু ঢেকে রাখা বা গোপন করা। এ ধরনের লোককে 'কাফের' (গোপনকারী) বলা হয়, কারণ সে তার আপন স্বভাবের উপর ফেলেছে অজ্ঞতার পর্দা। সে পয়দা হয়েছে ইসলামী স্বভাব নিয়ে। তার সারা দেহ ও দেহের প্রতিটি অংগ কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী স্বভাবের উপর। তার পারিপার্শ্বিক সারা দুনিয়া চলছে ইসলামের পথ ধরে। কিন্তু তার বুদ্ধির উপর পড়েছে পর্দা। সারা দুনিয়ার এবং তার নিজের সহজাত প্রকৃতি সরে গেছে তার দৃষ্টি থেকে। সে এ প্রকৃতির বিপরীত চিন্তা করেছে। তার বিপরীতমুখী হয়ে চলবার চেষ্টা করেছে। এখন বুঝা গেল, যে মানুষ কাফের, সে কত বড় বিভ্রান্তিতে ডুবে আছে।

কুফরের অনিষ্টকারিতা

  • 'কুফর' হচ্ছে এক ধরনের মূর্খতা, বরং কুফরই হচ্ছে আসল মূর্খতা।
  • কুফর একটি যুলুম, বরং সবচেয়ে বড় যুলুমই হচ্ছে এ কুফর। (যুলুম হচ্ছে কোন জিনিস থেকে তার সহজাত প্রকৃতির খেলাপ কাজ যবরদস্তি করে আদায় করে নেয়া।)
  • 'কুফর' কেবল যুলুমই নয়, বিদ্রোহ, অকৃতজ্ঞতা ও নেমকহারামিও বটে।
  • কখনো মনে করা যেতে পারে না যে, কুফরী করে মানুষ আল্লাহর কোন অনিষ্ট করতে পারছে।
  • কুফর ও নাফরমানীর অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে এই যে, এর ফলে মানুষ চিরকালের জন্য ব্যর্থ ও হতাশ হয়ে যায়

ইসলামের কল্যাণ

ইসলামের পথ ধরলে যে যে কল্যাণ লাভ করা যায়।

  • সে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্যের অধিকারী হয়ে থাকে।
  • এ শ্রেণীর লোক জ্ঞান ও যুক্তির প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সঠিক পথ অবলম্বন করবে
  • অনুরূপভাবে ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যবিধ শাখায় মুসলিম তার গবেষণা ও কর্মতৎপরতার দিক দিয়ে কাফেরের পিছনে পড়ে থাকবে না, কিন্তু দু'জনের দৃষ্টিভংগি হবে স্বতন্ত্র
  • মুসলিম প্রত্যেক জ্ঞানের চর্চা করবে নির্ভুল দৃষ্টিভংগি নিয়ে, তার সামনে থাকবে এক নির্ভুল লক্ষ্য এবং সে পৌঁছবে এক নির্ভুল সিদ্ধান্তে
  • ইতিহাসে: মানব জাতির অতীত দিনের পরীক্ষা থেকে সে গ্রহণ করবে শিক্ষা, খুঁজে বের করবে জাতিসমূহের উত্থান-পতনের সঠিক কারণ, অনুসন্ধান করবে তাদের তাহযীব তামাদ্দুনের কল্যাণকর দিক। ইতিহাসে বিবৃত সৎ মানুষদের অবস্থা আলোচনা করে সে উপকৃত হবে। যেসব কারণে অতীতের বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে, তা থেকে বেঁচে থাকবে।
  • অর্থনীতি ক্ষেত্রে: অর্থ উপার্জন ও ব্যয়ের এমন অভিনব পন্থা সে খুঁজে বের করবে, যাতে সকল মানুষের কল্যাণ হতে পারে, কেবল একজনের কল্যাণ ও অসংখ্য মানুষের অকল্যাণ তার লক্ষ্য হবে না।
  • রাজনীতি ক্ষেত্রে: তার পরিপূর্ণ মনোযোগ থাকবে এমন এক লক্ষ্য অর্জনের দিকে যাতে দুনিয়ায় শান্তি, ন্যায়-বিচার, সততা ও মহত্বের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কোন ব্যক্তি বা দল আল্লাহর বান্দাহদেরকে নিজের বান্দায় পরিণত করতে না পারে, শাসন ক্ষমতা ও সম্পূর্ণ শক্তিকে আল্লাহর আমানত মনে করা হয় এবং তা ব্যবহার করা হয় আল্লাহর বান্দাহদের কল্যাণে।
  • আইনের ক্ষেত্রে: সে বিবেচনা করবে, যাতে ন্যায় ও সুবিচারের সাথে মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং কোন প্রকারে কারুর উপর অন্যায় যুলুম হতে না পারে।

# ঈমান ও আনুগত্য

আনুগত্যের জন্য জ্ঞান ও প্রত্যয়ের প্রয়োজন

সবার আগে মানুষের প্রয়োজন
  1. আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে পূর্ণ প্রত্যয়/ জ্ঞান লাভ করা
  2. আল্লাহর গুণরাজী সম্পর্কে জ্ঞান
  3. আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন যাপন করার সঠিক পন্থা কি?
  4. আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধী পথে চলার ও তাঁর পসন্দ মতো বিধানের আনুগত্য না করার পরিনাম কি?

ঈমানের পরিচয়

ঈমান ও ইসলামের দিক দিয়ে বিচার করলে গোটা মানব সমাজ কে চার শ্রেনীতে ভাগ করা যায়ঃ
  1. যাদের ভিতরে ঈমান রয়েছে এবং তাদের ঈমান তাদেরকে আল্লাহর আদেশ- নিষেধ এর পূর্ণ অনুগত করে দেয়।
  2. যাদের ভিতরে ঈমান রয়েছে এবং তাদের ঈমান এতটা শক্তিশালী নয় যে, তা তাদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর আজ্ঞাবহ করে তুলবে ।
  3. যাদের ভিতরে ঈমান নেই, কিন্তু প্রকাশ্যে তারা এমন সব কাজ করে, যা আল্লাহর আইন মুতাবেক মনে হয়।
  4. যাদের ভিতরে ঈমান নেই, এবং কর্মের দিক দিয়েও যারা দুর্জন ও দুষ্কৃতিকারী।

নোট প্রস্তুতকারীঃ ডা.ইবনে আসাদ আল মামুন- উপজেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য- প্রশিক্ষণ বিভাগ- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী- কালিহাতি উপজেলা শাখা

Top


মুখস্থঃ


আনুগত্য: আয়াত মুখস্থ , সুরা আন নিসা-৫৯

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَٰزَعْتُمْ فِى شَىْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

বাংলা উচ্চারণ

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ আতী‘উল্লা-হা ওয়া আতী‘উর রাসূল ওয়ালিউল আমরি মিনকুম; ফাইন্ তানা-যা‘তুম ফী শাইয়িন ফারুদ্দূহু ইলাল্লা-হি ওয়ার রাসূলি ইন কুন্তুম তূ’মিনূনা বিল্লা-হি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরি; যা-লিকা খাইরুওঁ ওয়া আহ্সানু তা’ওয়ীলা-।

বাংলা অর্থ

হে মুমিনগণ! তোমরা **আল্লাহর আনুগত্য** করো, **রাসূলের আনুগত্য** করো এবং **তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী (উলুল আমর)** তাদের আনুগত্য করো। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে **আল্লাহ ও রাসূলের** (অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর) দিকে ফিরে যাও; যদি তোমরা **আল্লাহ ও শেষ দিনের** উপর বিশ্বাস রাখো। এটাই উত্তম এবং পরিণতির দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ।

আনুগত্য: হাদিস মুখস্থ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুগত্যের অপরিহার্যতা

مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ، وَمَنْ يُطِعِ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي، وَمَنْ يَعْصِ الْأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي

বাংলা অর্থ

"যে আমার আনুগত্য করল, সে অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্য হল, সে অবশ্যই আল্লাহর অবাধ্য হলো। এবং যে আমিরের (শাসকের বা দায়িত্বশীলের) আনুগত্য করল, সে অবশ্যই আমার আনুগত্য করল; আর যে আমিরের অবাধ্য হলো, সে অবশ্যই আমার অবাধ্য হলো।"

রেফারেন্স:

  • সহীহ বুখারী: হাদীস নং - ৭১৩৭ (Kitab Al-Ahkam - কিতাবুল আহকাম, অধ্যায়: আল্লাহর বাণী: 'রাসূলের আনুগত্য কর')
  • সহীহ মুসলিম: হাদীস নং - ১৮৩৫

এই হাদীসটি **আল্লাহ, রাসূল এবং মুসলিম সমাজের দায়িত্বশীলদের** প্রতি আনুগত্যের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে।

Top


মাসআলাঃ আক্বিকা সংক্রান্তঃ Source

আকীকা কাকে বলে ও প্রাক-ইসলামী যুগে আকীকা

আকীকা শব্দের অর্থ কাটা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যে প্রাণীকে জবাই করা হয় তাকে আকীকা বলে। চাই তা ছেলে হোক বা মেয়ে। কেননা, এ প্রাণীর হলক তথা গলা কাটা করা হয়।

প্রাক-ইসলামী যুগে আকীকা :

আকীকার প্রথা জাহেলী যুগ থেকেই চালু ছিল। মাওয়ারদী বলেন, ‘আকীকা বলা হয় ওই ছাগলকে ইসলাম পূর্বযুগে আরবা যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে জবাই করত।’

অলীউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, ‘জেনে রাখুন, আরবরা তাদের সন্তানের আকীকা করতো। আকীকা তাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছিল। এতে ছিল ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই তা অব্যাহত রাখেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর প্রমাণ আমরা দেখতে আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণিত হাদীসে। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমার বাবা বুরাইদাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

كُنَّا فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِذَا وُلِدَ لِأَحَدِنَا غُلاَمٌ ذَبَحَ شَاةً وَلَطَخَ رَأْسَهُ بِدَمِهَا ، فَلَمَّا جَاءَ اللَّهُ بِالإِسْلاَمِ كُنَّا نَذْبَحُ شَاةً ، وَنَحْلِقُ رَأْسَهُ وَنُلَطِّخُهُ بِزَعْفَرَانٍ .

‘জাহেলী যুগে আমাদের নিয়ম ছিল, যখন আমাদের কারো পুত্র সন্তান জন্ম নিতো, সে একটি ছাগল জবাই করতো এবং এর রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দিতো। কিন্তু আল্লাহ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেন, তখন আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম এবং তার মাথা নেড়ে করতাম আর তার তাকে জাফরান দিয়ে মাখিয়ে দিতাম।’ [আবূ দাউদ : ২৮৪৩; বাইহাকী : ১৯৭৬৬; মুস্তাদরাক : ৭৫৯৪]

মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেন, তা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,

وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا .

‘জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭]

আল্লামা সুয়ূতী রহ. উল্লেখ করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর আকীকা করেন। তিনি বলেন, ‘ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে ইবন আসাকির বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুবলেন,

لما ولد النبي صلى الله عليه و سلم عق عنه عبد المطلب وسماه محمدا فقيل له ما حملك على أن سميته محمدا ولم تسمه باسم آبائه فقال أردت أن يحمده الله في السماء ويحمده الناس في الأرض

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জন্মগ্রহণ করেন, আব্দুল মুত্তালিব তার আকীকা করেন এবং তার নাম রাখেন মুহাম্মদ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কিসে আপনাকে তাঁর নাম বাবা-দাদার নামের সঙ্গে না মিলিয়ে রেখে মুহাম্মদ রাখতে? তিনি বললেন, আমি চেয়েছি যাতে তার প্রশংসা আল্লাহ করেন আসমানে আর মানুষে করে যমীনে।’ [শাহরহুয যারকানী আলা মুয়াত্তা মালেক, পৃ. ৫৫৮; ইবন আব্দিল বার, আল-ইস্তিয়াব।]

তেমনি মূসা আলাইহিমুস সালামের শরীয়তেও আকীকার প্রচলন ছিল। হাদীসে যেমন বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

‘ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০; মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭।]

আকীকার বিধান

আকীকার বিধান প্রবর্তিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম ও উক্তি- উভয়প্রকার হাদীসের মাধ্যমে। এ সম্পর্কে অনেক ‘আছার’ও বর্ণিত হয়েছে অনেক। নিচে এর কিছু তুলে ধরা হচ্ছে :

প্রথমত. সুন্নাহ কাওলী বা মৌখিক হাদীস :

১. সালমান বিন আমের দাব্বী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

مَعَ الْغُلَامِ عَقِيقَةٌ فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا وَأَمِيطُوا عَنْهُ الْأَذَى

‘পুত্র সন্তানের সঙ্গে আকীকা রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো এবং তার থেকে কষ্ট দূর করো।’ [বুখারী : ৫০৪৯; তিরমিযী : ১৫১৫; মুসনাদ আহমদ : ১৭৯০৭।]

২. সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى

‘প্রত্যেক শিশুই তার আকীকা জরুরী। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য জবাই করা হবে এবং তার মাথা নেড়ে করা হবে আর নাম রাখা হবে। [আবূ দাউদ : ২৮৪০; মুসনাদ আহমদ : ২০০৯৫।]

৩. উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি,

عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ .

‘ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা করা যাবে)।’ [আবূ দাউদ : ২৮৩৬; মুসনাদ আহমদ : ২৭৪০৯।]

৪. উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, উত্তরে তিনি বলেন,

عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ وَاحِدَةٌ وَلاَ يَضُرُّكُمْ ذُكْرَانًا كُنَّ أَمْ إِنَاثًا .

‘ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা দেয়া যাবে) আর ওই ছাগলগুলো পাঠা হোক বা পাঠ তাতে তোমাদের কোনো অসুবিধা নাই।’ [তিরমিযী : ১৫৯৯; মুসনাদ আহমদ : ২৭৩৭৩।]

৫. হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা তাঁকে অবহিত করেছেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنِ الْغُلامِ شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

‘পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল।’ [ইবন হিব্বান : ৫৩১০; ইবন আবী শাইবা : ২৪৭২৯।]

৬. একই হাদীসের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,

عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ ، أَنَّهُمْ دَخَلُوا عَلَى حَفْصَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَسَأَلُوهَا عَنِ العَقِيقَةِ ، فَأَخْبَرَتْهُمْ أَنَّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهَا ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُمْ عَنِ الغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ ، وَعَنِ الجَارِيَةِ شَاةٌ .

‘ইউসুফ বিন মাহাক থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার কাছে গেলেন এবং তাঁকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে জানালেন যে, তিনি তাঁকে এ মর্মে অবহিত করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ছেলে হলে সমবয়সী দু’টি ছাগল ও মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ১৫১৩।]

৭. আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

الْعَقِيقَةُ حَقٌّ ، عَنِ الْغُلامِ : شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ : شَاةٌ .

‘পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে প্রায় সমবয়সী দু’টি ছাগল হক এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি।’ [আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ৩৩৫৩; মুসনাদ আহমদ : ২৭৫৮২।]

৮. ইয়াযীদ বিন আব্দুল্লাহ মুযানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يُعَقُّ عَنِ الْغُلاَمِ ، وَلاَ يُمَسُّ رَأْسُهُ بِدَمٍ .

‘পুত্র সন্তানের পক্ষে আকীকা করা হবে আর তার মাথায় রক্ত স্পর্শ করা হবে না।’ [ইবন মাজা : ৩১৬৬; আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ১১০৮।]

৯. আমর বিন শুয়াইব তার বাবা আর বাবা তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,

أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِتَسْمِيَةِ الْمَوْلُودِ يَوْمَ سَابِعِهِ وَوَضْعِ الأَذَى عَنْهُ وَالْعَقِّ .

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখা, তার আবর্জনা দূর করা (তথা নেড়ে করা) ও আকীকার নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ২৮৩২।]

১০. ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إذا كان يوم سابعه فأهريقوا عنه دما وأميطوا عنه الأذى وسموه .

‘যখন তার (নবজাতকের জন্মের) সপ্তম দিন আসবে, তখন তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো আর তার আবর্জনা (মাথার চুল) দূর করো এবং তার নাম রাখো।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল আওসাত : ১৮৮৩।]

১১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেন, তা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,

وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا.

‘জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭।]

১২. হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ .

‘ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০; মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭।]

দ্বিতীয়ত. সুন্নাহ ফি‘লী বা কর্মগত হাদীস :

১. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ ، وَالْحُسَيْنِ بِكَبْشَيْنِ كَبْشَيْنِ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জন্য দু’টি দু’টি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা করেন।’ [নাসায়ী : ১২১৯।]

২. আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য আকীকা করেছেন।’ [মু‘জামুল কাবীর : ২৫১০; নাসায়ী : ৪২১৩; মুসনাদ আহমদ : ২৩০৫১।]

৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَسَمَّاهُمَا وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِمَا الأَذَى.

‘(জন্মের) সপ্তম দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের আকীকা দিয়েছেন, তাঁদের নাম রেখেছেন এবং তাঁদের মাথা থেকে কষ্ট (চুল) দূর করেছেন।’ [বাইহাকী : ১৯০৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৩১১।]

৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ شَاتَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِ الأَذَى. وَقَالَ : اذْبَحُوا عَلَى اسْمِهِ وَقُولُوا بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ لَكَ وَإِلَيْكَ هَذِهِ عَقِيقَةُ فُلاَنٍ.

‘হাসান ও হুসাইনের (জন্মের) সপ্তম দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি ছাগল দিয়ে আকীকা দেন এবং তার মাথার কষ্ট দূর করার নির্দেশ দেন। আর তিনি বলেন, ‘তাঁর (আল্লাহর) নামে জবাই করো এবং বলো, বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ, আপনার কাছে অমুকের জন্য এ আকীকা।’ [বাইহাকী : ১৯৭৭২; মুসনাদ আবী ইয়া‘লা : ৪৫২১।]

৫. আব্দুল্লাহ ইবন উমরা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَّ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ عَنْ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا كَبْشَيْنِ اثْنَيْنِ مِثْلَيْنِ مُتَكَافِئَيْنِ.

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন- উভয়ের প্রত্যেকের জন্যই প্রায় একইরকম সমবয়সী দুটি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা দেন।’ [হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৯০।]

৬. আলী বিন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ بِشَاةٍ وَقَالَ يَا فَاطِمَةُ احْلِقِى رَأْسَهُ وَتَصَدَّقِى بِزِنَةِ شَعْرِهِ فِضَّةً . قَالَ فَوَزَنَتْهُ فَكَانَ وَزْنُهُ دِرْهَمًا أَوْ بَعْضَ دِرْهَمٍ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকীকা দিলেন এবং বললেন, ‘হে ফাতেমা, এর তার মাথার চুল ফেলে দাও এবং তার চুলের ওজনে রুপা সদকা করো। তিনি বলেন, অতপর ফাতেমা তা পরিমাপ করলো, এর ওজন হলো এক দিরহাম বা এক দিরহামের কিছু পরিমাণ।’ [তিরমিযী : ১৬০২; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৮৯।]

উপরের হাদীসগুলোতে থেকে আমরা যেমন জানলাম, শিশু জন্মের সপ্তম দিনে তার মাথা নেড়ে (টাক) করতে বলা হয়েছে। তবে কাযা‘ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আর তা হলো, ‘বাচ্চার মাথা এমনভাবে নেড়ে করা যে তার মাথার বিভিন্ন স্থান অমুণ্ডিত থাকে’। [ইবনুল আছীর, নিহায়া : কাযা‘ অধ্যায়।]

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى عَنِ الْقَزَعِ. قَالَ قُلْتُ لِنَافِعٍ وَمَا الْقَزَعُ قَالَ يُحْلَقُ بَعْضُ رَأْسِ الصَّبِىِّ وَيُتْرَكُ بَعْضٌ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযা‘ থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, নাফে‘কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাযা‘ কী? তিনি বললেন, বাচ্চার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডানো আর কিছু অমুণ্ডিত রাখা’। [মুসলিম : ৩৯৫৯; বুখারী : ৫৪৬৫; ইবন মাজা : ৩৬২৭; আহমদ : ৪৯২৮।]

উদ্দেশ্য, নেড়ে করতে হবে পুরো মাথা জুড়ে। কারণ, মাথার কিছু অংশ নেড়ে করা আর কিছু না করা ইসলামী ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী, যার মাধ্যমে একজন মুসলিম অন্য জাতি-গোষ্ঠী থেকে এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী হয়। এই কাযা‘র মাধ্যমে মূলত কাফেরদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন হয়। আর তাদের সাদৃশ্য ধারণ জায়িয নয়।

হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ থেকে বর্ণিত, মুয়াবিয়া বিন সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যে বছর হজ করেন, তিনি মিম্বরে বসলেন, আমার ভৃত্যের হাতে থাকা চুল থেকে একগুচ্ছ চুল নিলেন এবং বললেন,

يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَنْهَى عَنْ مِثْلِ هَذِهِ وَيَقُولُ إِنَّمَا هَلَكَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ حِينَ اتَّخَذَ هَذِهِ نِسَاؤُهُمْ.

হে মদীনাবাসী, কোথায় তোমাদের আলিমগণ? (তিনি কি তোমাদের বারণ করেননি?) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘বনী ইসরাঈল ধ্বংস হয়েছিল যখন তাদের নারীরা এটাকে (কাযা‘) ধারণ করেছিল।’ [মুসলিম : ৫৭০০; বুখারী : ৩৪৬৮; আবূ দাউদ : ৪১৬৯।]

(এ থেকে বুঝা যায়, মাথার চুল কিছু মুণ্ডানো আর কিছু রেখে দেওয়া তাদের শরীয়তে হারাম ছিল।)

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى صَبِيًّا قَدْ حُلِقَ بَعْضُ شَعَرِهِ وَتُرِكَ بَعْضُهُ فَنَهَى عَنْ ذَلِكَ وَقَالَ : احْلِق ُوا كُلَّهُ ، أَوِ اتْرُكُوا كُلَّهُ.

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুকে দেখলেন তার (মাথার) কিছু চুল নেড়ে করা হয়েছে আর কিছু অবশিষ্ট রাখা হয়েছে। তাকে দেখে তিনি এ থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, তোমরা (মাথা) পুরোটাই মুণ্ডাও অথবা পুরোটাই অমুণ্ডিত রাখো।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬১৫; আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ১৯৫৬৪১।]

আকীকার গোস্ত ব্যবহার

প্রথম. আকীকার গোস্ত ব্যবহার

আকীকার পশু যবেহ করার পর এর ব্যবহার ঠিক কুরবানীর পশুর মতোই। ফলে তা তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একভাগ পরিবার, একভাগ সাদাকা ও একভাগ হাদিয়ার জন্য।

ইমাম নাববী রহ. বলেন,

[ ويستحب أن يأكل منها ويتصدق ويهدي كما قلنا في الأضحية ]

‘মুস্তাহাব হলো আকীকার গোস্ত থেকে (নিজেরা) খাওয়া, (গরীবদের মাঝে) সদকা করা এবং (বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে) হাদিয়া পাঠানো। যেমন আমরা বলেছি এসেছি কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে।’ [নাসায়ী : ৪২২৯; শরহু মা‘আনিল আছার : ১০১৫।]

অধিকাংশ আলেম আবার আকীকার গোস্ত কাঁচা সদকা না করে তা রান্না করে সদকা করা এবং রান্নার তা গরীবদের কাছে তা পাঠিয়ে দেয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে যদি না পাঠিয়ে তাদেরকে বাড়িতে এনে দাওয়াত করে খাওয়ানো তাহলে সেটা আরও উত্তম। যদি আকীকার গোস্ত দিয়ে দাওয়াতের আয়োজন করা হয়, তাহলে তাতে ধনী-গরীব, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-প্রতিবেশী সবাইকে শরীক করতে যাবে। এক কথায় তিনি যেভাবে চান এটাকে কাজে লাগাবেন।

প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবন সীরীন রহ. বলেন,

[ إصنع بلحمها كيف شئت ]

‘আকীকার গোস্ত যেভাবে ইচ্ছে কাজে লাগাতে পারেন।’ [আল-মাজমূ‘ : ৮/৪৩০।]

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর সঙ্গে রান্নার কথাও যোগ করেন।

[ فقد قيل له : تطبخ العقيقة ؟ قال : نعم . قيل له : يشتد عليهم طبخها . قال : يتحملون ذلك ].

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আকীকার গোস্ত কি রান্না করা হবে? তিনি বললেন, ‘হ্যা’। তাকে বলা হলো, তাদের জন্য এটা রান্না করা কঠিন হবে। তিনি বললেন, ‘তারা সেটা সহ্য করবে।’

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,

[وهذا لأنه إذا طبخها فقد كفى المساكين والجيران مؤنة الطبخ وهو زيادة في الإحسان وفي شكر هذه النعمة ، ويتمتع الجيران والأولاد والمساكين بها هنيئة مكفية المؤنة فإن من أهدي إليه لحم مطبوخ مهيأ للأكل مطيب كان فرحه وسروره به أتم من فرحه بلحم نيء يحتاج إلى كلفة وتعب ].

‘এটা এজন্য যে, তিনি যখন গোস্ত রান্না করে দেবেন, গরীব, মিসকিন ও প্রতিবেশিদের আর রান্নার কষ্ট ও খরচটুকু বহন করতে হবে না। একটি ভালো কাজে তা নতুন মাত্রা যোগ করবে। নিয়ামতের শুকরিয়ায় এটি অতিরিক্ত হিসেবে বরিত হবে। প্রতিবেশি, সন্তানাদি ও অভাবীরা এর মাধ্যমে আরও বেশি আনন্দিত হবে। কারণ যদি কাউকে রান্না করা এবং খাবারের জন্য একেবারে প্রস্তুত কোনো গোস্ত কাউকে দেওয়া হয় তবে তিনি ওই গোস্ত পাওয়া থেকে অবশ্যই অধিক খুশি হবেন, যাতে পাকানো ও রান্নার কষ্ট সহ্য করার প্রয়োজন রয়েছে।’ [তুহফাতুল মাওদূদ : ৫৯-৬০।]

ইমাম মালিক রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তার সন্তানের আকীকা করেন। তিনি আকীকা কীভাবে করেছেন আমাদের জন্য তার বিবরণ দিয়েছেন। তদীয় ‘মাবসূত’ গ্রন্থে তিনি লিখেন,

عققت عن ولدي وذبحت ما أريد أن أدعو إليه إخواني وغيرهم ، وهيأت طعامهم ، ثم ذبحت شاة العقيقة فأهديت منها للجيران ، وأكل منها أهل البيت ، وكسروا ما بقي من عظامها فطبخت ، فدعونا إليها الجيران فأكلوا وأكلنا ، قال مالك : فمن وجد سعة فأحب له أن يفعل هذا ومن لم يجد فليذبح عقيقة ثم ليأكل وليطعم منها

‘আমি আমার সন্তানের আকীকা দিয়েছি। প্রথমে যেসব ভাই ও অন্যদের দাওয়াত দিয়েছি তাদের যা খাওয়াবার ইচ্ছে করেছি তা জবাই করলাম। তারপর তাদের খাবার প্রস্তুত করলাম। এরপর আকীকার ছাগল জবাই করলাম। তা থেকে প্রতিবেশিদের হাদিয়া দিলাম। পরিবারের লোকেরা গোস্ত খেল। হাড়-হাড্ডি যা অবশিষ্ট ছিল সেগুলো টুকরো করে রান্না করলাম। তারপর প্রতিবেশিদের আবার সেগুলো খাওয়ার দাওয়াত দিলাম। তারা খেল আর আমরাও খেলাম। মালিক রহ. বলেন, অতএব যার অর্থের প্রাচুর্য রয়েছে, আমি চাই তিনি এমন করবেন। আর যার নাই, তিনি আকীকা জবাই করবেন এবং সেখান থেকে খাবেন ও খাওয়াবেন।’ [আল-মুনতাকা : ৩/১০৪।]

দ্বিতীয়. আকীকার চামড়া ও এর বর্জ্যসংক্রান্ত বিধান

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর মতে আকীকার চামড়া, মাথা এবং ইত্যাকার অংশগুলো বিক্রি করা হবে তারপর তার মূল্য সাদাকা করা হবে। আকীকার বর্জ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

الجلد والرأس والسقط يباع ويتصدق به

‘চামড়া, মাথা এবং বর্জ্য বিক্রি করা হবে এবং তা সদকা করা হবে।’ [তুহফাতুল মাওদূদ : ৭০; কাশশাফুল কিনা‌ : ৩/৩১।]

এদিকে ইমাম মালিক রহ.-এর যে কোনো অংশ বিক্রির বিপক্ষে। তিনি বলেন,

ولا يباع من لحمها شيء ولا جلدها

‘আকীকার গোস্ত বা চামড়ার কোনো অংশই বিক্রি করা হবে না।’ [আল-মুয়াত্তা বিহামিশিল মুনতাকা : ৩/১০৩।]

ইবন রুশদ বলেন,

وأما حكم لحمها وجلدها وسائر أجزائها فحكم لحم الضحايا في الأكل والصدقة ومن البيع

‘আকীকার গোস্ত, চামড়া এবং এর যাবতীয় অংশের বিধান খাওয়া, সদকা করা ও বেচার দিক থেকে কুরবানীর পশুর মতোই।’ [বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১৩৭৭।]

এককথায় আকীকার গোস্ত ও এর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার তেমনি যেমন কুরবানীর পশুর গোস্ত ও তার অন্যান্য অংশের ব্যবহার করতে হয়।

আকীকা সংক্রান্ত আরও কিছু মাসআলা :

# অধিকাংশ আলিমের মতে আকীকা সুন্নত। তবে কেউ কেউ আকীকা ওয়াজিব বলেছেন।

# জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা দেয়াটাই সুন্নতের পূর্ণ আনুগত্যের দাবী। তবে এরপরেও যে কোনো সময় আকীকা দেয়া যাবে। কারণ, হাদীসে সপ্তম দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে তা হবে না- এমন কিছু বলা হয়নি।

# ছেলের আকীকা হিসেবে দুটি এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল জবাই করা সুন্নত। তবে কষ্টসাধ্য হলে একটি ছাগল দিয়েও ছেলের আকীকা দেয়া যাবে। কারণ, উভয় ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্বকে তাঁর রাসূলের সুন্নতের রঙ্গে রাঙাবার এবং সকল অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার থেকে দূরে থাকবার তাওফীক দিন। আমীন।

এক নজরে আকিকা

আকিকা একটি নিশ্চিত সুন্নত, যা সন্তানের জন্মের সপ্তম, চতুর্দশ বা একবিংশ দিনে করা হয়। এর জন্য ছাগল বা ভেড়া জবাই করা হয়, যার গোশত ও চামড়া সাধারণত বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া, শিশুর নামকরণ করা হয় এবং তার চুল মুণ্ডন করে ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রূপা দান করা হয়।

আকিকার গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
সুন্নাত: আকিকা একটি নিশ্চিত সুন্নত, যা পালন করা জরুরি।
সুরক্ষা: হাদীস অনুযায়ী, শিশু তার আকিকার মাধ্যমে বন্ধক থাকে, তাই আকিকা করা হলে শিশু বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
নামকরণ: সপ্তম দিনে শিশুর নাম রাখা ও মাথা মুণ্ডন করা হয়।
দান: শিশুর মাথার চুলের ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রূপা দান করা সুন্নাহ।

আকিকার সময়
সাধারণত শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা দেওয়া হয়।
তবে এটি চতুর্দশ বা একবিংশ দিনেও দেওয়া যায়।
সামর্থ্য না থাকলে পরেও যেকোনো সময় দেওয়া যেতে পারে।

আকিকার পশু
আকিকার জন্য ছাগল বা ভেড়া জবাই করা হয়।
গরু বা অন্য বড় পশু দিয়েও আকিকা করা যায়, তবে এক্ষেত্রে একটি পশুর অংশ একজনের জন্য যথেষ্ট নয়।
পশুর বয়স কোরবানির পশুর মতো হতে হয়; অর্থাৎ ছাগলের জন্য কমপক্ষে এক বছর হতে হবে।

গোশত বন্টন
আকিকার গোশত ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোরবানির পশুর মতোই ব্যবহৃত হয়।
পশুর গোশত রান্না করে বা কাঁচাও দান করা যেতে পারে।
গোশত বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং গরিবদের মধ্যে বন্টন করা হয়।
গোশত বিক্রি করা যায় না এবং এটি পারিশ্রমিক হিসেবেও দেওয়া যাবে না।

কে আকিকা করবে?
সাধারণত সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বে থাকা বাবা আকিকা করবেন।
বাবার সামর্থ্য না থাকলে মা বা অন্য কোনো আত্মীয় আকিকা করতে পারেন।

Top

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM