logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

📚 অনুশীলনী -১২ (জুন- ৩য় সপ্তাহঃ )ঃ

# দারস তৈরী - সূরা বাকারা ( ১৫৩-১৫৬ নং আয়াত) # বই নোট: ইসলাম ও জাহেলিয়াত # তাকওয়া সংক্রান্ত আয়াত # তাকওয়া সংক্রান্ত হাদিস # ঈদ সম্পর্কিত মাসায়েল

দারস তৈরী - সূরা বাকারা ( ১৫৩-১৫৬ নং আয়াত)


يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٥٣
وَلَا تَقُولُوا۟ لِمَن يُقْتَلُ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمْوَٰتٌۢ ۚ بَلْ أَحْيَآءٌۭ وَلَـٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ ١٥٤
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍۢ مِّنَ ٱلْخَوْفِ وَٱلْجُوعِ وَنَقْصٍۢ مِّنَ ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِ ۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٥٥
ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَـٰبَتْهُم مُّصِيبَةٌۭ قَالُوٓا۟ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦

১৫৩. ‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ওসালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ইআল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।
১৫৪. আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়,তাদেরকে তোমরা ‘মৃত’ বলো না। তারা তোআসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবনকরতে পার না।
১৫৫. এবং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভীতিপ্রদপরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জানও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে পরীক্ষাকরবো।
১৫৬, এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে,তাদেরকে সুসংবাদ দাও।

নামকরণঃ
আল বাকারা নামে সুরাটির নামকরন করাহয়েছে অর্থাৎ এটি ঐ সুরা যাতে বনী ঈসরাইলের গাভি কুরবানীর ঘটনা বর্ণনাকরা হয়েছে।

নাযিলের সময়কালঃ
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্তিরপর তের বছর মাক্কায় ইসলামের দাওয়াত পেশকরেন তার দাওয়াতে সাড়া দিয়ে সত্য-সন্ধানী কিছু লোক তাঁর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়কিন্তু মুশরিক নেতাদের অত্যাচারের ভয়ে মক্কার অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেনি। অন্য দিকে ইয়াসরিবের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের একটি বড় অংশ ইসলাম গ্রহণ করে ইয়াসরিবে ইসলামী দাওয়াতের প্রসার ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এমনি অবস্থায় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহ রাব্বুল‘আলামীন নবী (সাঃ) ও সাহাবীদের ইয়াসরিবে হিজরাত করার নির্দেশ দেন। তিনি ইয়াসরিব পৌঁছে একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলেন আর সেই রাষ্ট্রের নাম হয় তখন থেকেআল মাদিনা।
মাদানী যুগের একেবারে শুরুর দিকে সূরাবাকারার অধিকাংশ আয়াত নাজিল হয়। মাদানী যুগের শেষ দিকে যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিলো সুদ নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত এই আয়াতগুলোকেও এই সূরায় শামিল করা হয়। আবার, যেই আয়াতগুলো দিয়ে এই সূরাটির সমাপ্তি টানা হয়েছে সেই আয়াতগুলো মাক্কী যুগের শেষভাগে মিরাজের সময় নাজিল হয়েছিলো। বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্যের কারণে সেই আয়াতগুলো এই সূরায় সংযুক্ত করা হয়। হিজরাতের পূর্বে দাওয়াতি তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে মুশরিকদের মধ্যে। হিজরাতের পর দাওয়াতি তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে ইয়াহুদিদের মধ্যে।ইসলামী দাওয়াত মাদানী যুগে প্রবেশ করার পর মুনাফিকদের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে। এদের কেউ কেউ ইসলামের সত্যতা স্বীকার করতো,কিন্তু এর প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে দ্বন্দ্ব- প্রতিদ্বন্দ্বে নিয়োজিত হতে তারা প্রস্তুতছিলো না। এদের কেউ কেউ ইসলাম ও জাহিলিয়াতের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলো। এদের কেউ কেউ আসলে ইসলামকে অস্বীকারই করতো, কিন্তু ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলিমদের দলে প্রবেশ করতো। এদের কেউ কেউ একদিকে মুসলিমদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতো, অন্যদিকে ভালো সম্পর্ক রাখতো ইসলামের দুশমনদের সাথে। শেষাবধি যারাই বিজয়ী হোক না কেন, এতে যেনো তাদের স্বার্থ হানি না ঘটে সেই বিষয়ে তারা ছিলো খুবই সজাগ।

ব্যাখ্যাঃ

১৫৩ নাম্বার আয়াতঃ

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٥٣


“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। অবশ্যই আল্লাহ সবর অবলম্বন কারীদের সঙ্গে আছেন।”সমাজ-সভ্যতার ইসলাহ করতে অগ্রসর হলে যে রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে সেই কথা জানিয়ে দেন। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার আহ্বান জানান।সবর অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। মুমিনদেরকে এই গুণ গুণান্বিত হওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল‘আলামিন বারবার তাকিদ করেছেন। আল হাদিসেও এই বিষয়ে তাকিদ রয়েছে। রোগ-ব্যাধির কষ্ট সহ্য করার নাম সবর। দুঃখ-বেদনায় ভেঙে না পড়ার নাম সবর। রূঢ় ও আচরণে উত্তেজিত না হওয়ার নাম সবর।মিথ্যা প্রচারণার মুখে অবিচলিত থাকার নাম সবর।ভীতিপ্রদ পরিস্থিতিতেও সঠিক পথে দৃঢ়পদ থাকার নাম সবর।লক্ষ্য হাসিলের জন্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার নাম সবর।লক্ষ্য অর্জন বিলম্বিত হচ্ছে দেখে হতাশ না হওয়ার নাম সবর।ইত্যাদি।
মুদ্দাস্সিরের ২ ও ৩ নাম্বার আয়াতেঃ ۳)قُمۡ فَاَنۡذِرۡ ۪ۙ﴿۲ وَ رَبَّكَ فَكَبِّرۡ ۪(উঠুন, অতঃপর সতর্ক করুন।-২; ৩. আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন।)
মুযাম্মিলের ১০ নাম্বার আয়াতেঃ وَ اصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ اهۡجُرۡهُمۡ هَجۡرًا جَمِیۡلًا ﴿۱۰ ১০. আর লোকে যা বলে, তাতে আপনি ধৈর্য ধারণ করুন এবং সৌজন্যের সাথে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।)
মা‘আরিজের ৫ নাম্বার আয়াতেঃ فَاصۡبِرۡصَبۡرًاجَمِیۡلًا﴿۵- . কাজেই আপনি ধৈর্য ধারণ করুন পরম ধৈর্য।
ইউনুসের ১০৯ নম্বর আয়াতেঃ وَ اتَّبِعۡ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡكَ وَ اصۡبِرۡ حَتّٰی یَحۡكُمَ اللّٰهُ ۚۖ وَ هُوَ خَیۡرُ الۡحٰكِمِیۡنَ ﴿۱۰۹ আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুতঃ তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।
তা-হা-এর ১৩০ নম্বর আয়াতেঃ فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِهَا ۚ وَ مِنۡ اٰنَآیِٔ الَّیۡلِ فَسَبِّحۡ وَ اَطۡرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرۡضٰی ﴿۱۳۰- ১৩০. কাজেই তারা যা বলে, সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করুন এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে আপনার রব-এর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং রাতে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, এবং দিনের প্রান্তসমূহেও, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন।
আহকাফের ৩৫ নম্বর আয়াতেঃ فَاصۡبِرۡ كَمَا صَبَرَ اُولُوا الۡعَزۡمِ مِنَ الرُّسُلِ وَ لَا تَسۡتَعۡجِلۡ لَّهُمۡ ؕ كَاَنَّهُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَ مَا یُوۡعَدُوۡنَ ۙ لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا سَاعَۃً مِّنۡ نَّهَارٍ ؕ بَلٰغٌ ۚ فَهَلۡ یُهۡلَكُ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ﴿۳۵- ৩৫. অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন যেমন ধৈর্য ধারণ করেছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। আর আপনি তাদের জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা যেদিন তারা দেখতে পাবে, সেদিন তাদের মনে হবে, তারা যেন দিনের এক দণ্ডের বেশী দুনিয়াতে অবস্থান করেনি। এ এক ঘোষণা, সুতরাং পাপাচারী সম্প্রদায়কেই কেবল ধ্বংস করা হবে।
এ হচ্ছে সবর অবলম্বনের তাকিদ সংবলিতবহুসংখ্যক আয়াতের মাত্র কয়েকটি। আবু সায়িদ আল খুদরী রাঃ হতে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সবরের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আরকিছু কাউকে দেয়া হয়নি।”( সহীহ বুখারী মুসলিম )
সূরা আয যুমারের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন বলেন,
قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّكُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰهِ وَاسِعَۃٌ ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَهُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ﴿۱۰﴾
১০. বলুন, হে আমার মুমিন বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর। যারা এ দুনিয়াতে কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, ধৈর্যশীলদেরকেই তো তাদের পুরস্কার পূর্ণরূপে দেয়া হবে বিনা হিসেবে।
“সবর অবলম্বনকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে।” এই আয়াতের শেষাংশে- ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ ا কথাটি জুড়ে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সবর নামক গুণটির মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন।অন্য দিকে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে তিনি মুমিনদের মনে নিশ্চিন্ততার আমেজ সৃষ্টি করেছেন।
আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার অনুশীলন মুমিনদের মাঝে অনুপম নৈতিক শক্তি সৃষ্টি করে। সেই জন্য নবুওয়াত প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই জিবরিল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পাঠিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সালাত আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। বহু আয়াতেআল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সালাতের তাকিদদিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতটিতেও আমরা একই রূপ তাকিদ দেখতে পাই।

“সবর অবলম্বনকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে।” এই আয়াতের শেষাংশে- ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ ا কথাটি জুড়ে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সবর নামক গুণটির মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে তিনি মুমিনদের মনে নিশ্চিন্ততার আমেজ সৃষ্টি করেছেন।

আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার অনুশীলন মুমিনদের মাঝে অনুপম নৈতিক শক্তি সৃষ্টি করে। সেই জন্য নবুওয়াত প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই জিবরিল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পাঠিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সালাত আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। বহু আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সালাতের তাকিদ দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতটিতেও আমরা একই রূপ তাকিদ দেখতে পাই।

আল বাকারা- ১৫৪ নম্বর আয়াতঃ

وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰكِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴

“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে  তোমরা **‘মৃত’ বলো না। তারা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।**”

আল্লাহর পথে নিহত হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় **শাহাদাত** বলা হয়। যিনি আল্লাহর পথে নিহত হন, তাঁকে বলা হয় **শহীদ**। শাহাদাত বরণ মৃত্যু বটে, কিন্তু অসাধারণ মৃত্যু, মহিমান্বিত মৃত্যু। সেই জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন শহীদদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করতে নিষেধ করেছেন।

সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ - ১৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন শহীদদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ

وَلَا تَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمْوَٰتًۢا ۚ بَلْ أَحْيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ١٦٩ فَرِحِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا۟ بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ١٧٠۞ يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضْلٍۢ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ١٧١

“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করোনা। বরং তারা জীবিত। তাদের রবের কাছ থেকে তারা রিজিক পাচ্ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা কিছু দিয়েছেন, তাতে তারা খুশি ও তৃপ্ত। আর তারা এই বিষয়েও নিশ্চিত, যেই সব মুমিন তাদের পেছনে এখনো দুনিয়ায় রয়ে গেছে, তাদের জন্য কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই। তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করে আনন্দিত এবং তারা জানতে পেরেছে, অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের পুরস্কার নষ্ট করেন না।”

শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “জান্নাতে প্রবেশ করার পর দুনিয়ার সমস্ত সামগ্রী তার জন্য নির্ধারিত হলেও কোন ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না। কিন্তু শহীদ এর ব্যতিক্রম। তাকে যেই মর্যাদা দেয়া হবে তা দেখে সে দশবার পৃথিবীতে এসে শহীদ হওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করবে।” শাহাদাত লাভের পর পরই যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের সান্নিধ্যে এমনভাবে সমাদৃত হন, তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলা আসলেই শোভনীয় নয়।

আল বাকারা ১৫৫ নম্বর আয়াতঃ

وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡبِشَیۡءٍمِّنَالۡخَوۡفِوَالۡجُوۡعِوَنَقۡصٍمِّنَالۡاَمۡوَالِوَالۡاَنۡفُسِوَالثَّمَرٰتِؕوَبَشِّرِالصّٰبِرِیۡنَ﴿۱۵۵

“এবং আমি অবশ্যই ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।”

এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন তাঁর একটি শাশ্বত বিধানের কথা মুমিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি হচ্ছে : যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের প্রতি নিখাদ ঈমান আনার ঘোষণা দেবেন, তাঁদেরকে তিনি অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন। এ ছাড়াও-

সূরা আনকাবুতের ২ ও ৩ঃ

أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن يُتْرَكُوٓا۟ أَن يَقُولُوٓا۟ ءَامَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ ٢ وَلَقَدْ فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ وَلَيَعْلَمَنَّ ٱلْكَـٰذِبِينَ ٣

২. মানুষ কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করেই ছে ে দেয়া হবে?

৩. তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; অতঃপর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যেবাদী।

সূরা মুহাম্মাদের ৩১ঃ

وَ لَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتّٰی نَعۡلَمَ الۡمُجٰهِدِیۡنَ مِنۡكُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ ۙ وَ نَبۡلُوَا۠ اَخۡبَارَكُمۡ ﴿۳۱

আমি তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি জেনে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ আর ধৈর্যশীলদেরকে, আর তোমাদের অবস্থা যাচাই করতে পারি।

সূরা আলে ইমরানের ১৪২ঃ

اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡكُمۡ وَ یَعۡلَمَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۴۲

১৪২. তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর কে ধৈর্যশীল তা এখনো প্রকাশ করেননি?

সূরা আত্ তাওবা-র ১৬ঃ

اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَكُوۡا وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡكُمۡ وَ لَمۡ یَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ لَا رَسُوۡلِهٖ وَ لَا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَلِیۡجَۃً ؕ وَ اللّٰهُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۶﴾

- নিশ্চয় তিনিই আল্লাহ, আসমান ও যমীনের মালিকানা তাঁরই, তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। আর আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই।

সূরা আল বাকারার ২১৪ঃ

اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِكُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِكُمۡ ؕ مَسَّتۡهُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلُ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰهِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰهِ قَرِیۡبٌ ﴿۲۱۴﴾

(২১৪) তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা এমনি এমনিই বেহেশত প্রবেশ করবে; যদিও পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদের অবস্থা এখনো তোমরা প্রাপ্ত হওনি? দুঃখ-দারিদ্র্য ও রোগ-বালাই তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। তারা এতদূর বিচলিত হয়েছিল যে, রসূল ও তাঁর প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারিগণ বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’ জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

সূরা আলে ইমরানের ১৪৬ঃ

وَ كَاَیِّنۡ مِّنۡ نَّبِیٍّ قٰتَلَ ۙ مَعَهٗ رِبِّیُّوۡنَ كَثِیۡرٌ ۚ فَمَا وَهَنُوۡا لِمَاۤ اَصَابَهُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ مَا ضَعُفُوۡا وَ مَا اسۡتَكَانُوۡا ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۴۶﴾

(১৪৬) কত নবী যুদ্ধ করেছেন। তাদের সাথে ছিল বহু রববানী (আল্লাহভক্ত) লোকও। আল্লাহর পথে তাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল, তাতে তারা হীনবল হয়নি, দুর্বলও হয়নি এবং নত হয়নি। বস্তুতঃ আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।

এ হচ্ছে পরিক্ষা সম্পর্কিত বহুসংখ্যক আয়াতের মাত্র কয়েকটি।

ঈমানের দাবি হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত হওয়া এবং এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে যত প্রকারের বাধাই আসুক না কেন তার মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকা। এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে মুমিনদেরকে অনিবার্যভাবে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, কখনো কখনো অবস্থা এমন সঙ্গিন হতে পারে যে অনাহারে থাকতে হবে, কখনো কখনো বাগ-বাগিচা, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, ঘরদোরের ওপর হামলা হতে পারে, কখনো কখনো ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে আপনজন ও সহকর্মীদের কেউ কেউ প্রাণ হারাতে পারেন এবং কখনো কখনো আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন সব কঠিন পরিস্থিতিতেও যাঁরা সবর অবলম্বন করতে পারবেন, তাঁদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষাঃ

  • সমাজ ও সভ্যতার ইসলাহ বা পরিশুদ্ধি করতে গেলে মুমিনদেরকে অবশ্যই বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে। এমতাবস্থায় তাঁদেরকে **সবর ও সালাতের** মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকতে হবে।
  • আল্লাহর পথে যাঁরা **শহীদ হন তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না।**
  • আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে মুমিনদেরকে **পরীক্ষা করবেন**। এমতাবস্থায় যাঁরা দৃঢ়তা-অটলতা-অবিচলতা অবলম্বন করবেন, তাঁদের জন্যই রয়েছে আল্লাহর বিপুল অনুগ্রহ ও রাহমাত।

Top


বই নোটঃ ইসলাম ও জাহেলিয়াত

 সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (র:)


বই পরিচিতি: ১৯৪১ সালে ২৩শে ফেব্রুয়ারীতে ইসলামী কলেজের মসলিসে ইসলামীয়াতে প্রদত্ত ভাষণ

ভূমিকা: আচরণের সাধারণ নীতি:

  • কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, আচরণ, ব্যবহারের পূর্বেই তার সম্পর্কে **ধারণা নেয়া**।
  • ব্যক্তি বা বস্তুর অভ্যন্তরীণ নির্ভুল জ্ঞান লাভ করা সম্ভব না হলে **বাহ্যিক নিদর্শন সমূহ** থেকে ধারণা গ্রহণ করতে হবে।
  • নির্ধারিত ধারণার ভিত্তিতে **ভালোবাসা, ভয়, সম্মান, উপেক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিত্যাগ** ইত্যাদি হয়ে থাকে।
  • প্রাপ্ত জ্ঞান বা ধারণা যত নির্ভুল হবে আচরণ বা ব্যবহার তত নির্ভুল হবে।

জ্ঞানের সাধারণ উৎস: যে কোন বিষয়ে জ্ঞান লাভের উৎস - ৩ টি।

  1. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পর্যবেক্ষণ,
  2. আন্দাজ, অনুমান বা অমূলক ধারণা,
  3. নির্ভূল বিজ্ঞান।

মানব জীবনের মৌলিক সমস্যা:

১. মানব মনের স্বাভাবিক প্রশ্ন:

  • ক) নিজ সত্ত্বা সম্পর্কিত প্রশ্ন।
  • খ) মানব সমাজ সম্পর্কিত প্রশ্ন।
  • গ) বিশ্ব প্রকৃতি ও বস্তু জগৎ সম্পর্কিত প্রশ্ন।

২. মানব মন ও প্রশ্নের উত্তর:

  • সকল মানুষের মনে এর উত্তর বিদ্যমান তবে সকলের কাছে এর দার্শনিক উত্তর নাও থাকতে পারে।
  • চিন্তা সংগঠিত বা অসংগঠিত হতে পারে এবং এর ভিত্তিতে কর্ম সম্পাদিত হয়।
  • মানুষের সকল কর্ম তার একটি **চিন্তা বা দর্শনের প্রতিফলন**।

৩. উত্তরের গুরুত্ব:

  • উত্তরের গুরুত্ব ব্যক্তি, দল বা জাতির জন্যে সমান।
  • এর ভিত্তিতে সমাজ, রাষ্ট্র বা সভ্যতার জন্য **বিধান কর্মসূচী** রচিত হয়।
  • এর ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যায়ন নির্ধারণ জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের বাস্তব রূপ হবে।
  • চিন্তা ও দর্শন থেকে যেমন বাস্তব রূপায়ন হয় তেমনি বাস্তব আচরণ থেকে চিন্তা বা দর্শন পাওয়া যায়।

৪. প্রশ্নপত্রের উত্তরের উৎস:

  • যেহেতু প্রশ্নগুলো ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে নয় এ কারণে কোথাও উত্তর সুনির্দিষ্টভাবে লেখা নেই যে জন্মর পরপরই নিজ যোগ্যতা বলে বুঝে নিবে।
  • উত্তর এমন সহজ ও সুস্পষ্ট নয় যে প্রত্যেকে তা সহজেই জেনে যাবে।
  • এ সকল পন্থায় প্রাপ্ত উত্তরসমূহ কি কি?

৫. উত্তর নির্ধারণের উপায়:

  • নিজের **বাহ্যেন্দ্রিয়ের** উপর নির্ভর করা এবং তদলব্দ জ্ঞানের ভিত্তিতে উত্তর নির্ধারণ।
  • ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ এবং এর সাথে **অনুমান ধারণা যোগ** করে একটি নীতি ঠিক করা।
  • আল্লাহ প্রেরিত **নবীগণ প্রকৃত সত্য জানা দাবী** করে উক্ত প্রশ্নাবলীর যে উত্তর দিয়েছেন তা গ্রহণ করা।

উত্তরের বিভিন্নতার প্রভাবঃ

উত্তর লাভের জন্য আজ পর্যন্ত ব্যবহৃত পন্থা তিনটি। প্রত্যেকটির উত্তর স্বতন্ত্র **আচরণ নীতি, নৈতিক আদর্শ** স্বতন্ত্র, সাহিত্য সাংস্কৃতির ব্যবস্থাও স্বতন্ত্র।

নির্ভেজাল ও শিরক মিশ্রিত জাহেলিয়াতের পার্থক্যঃ

  • শিরকে পূজা মানত অর্ঘ্য ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আধিক্য, নির্ভেজালে এসবের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু **নৈতিক চরিত্র ও কর্মের ক্ষেত্রে কোন তফাৎ নেই**।
  • শিরকের শিক্ষা, শিক্ষাদর্শন, সাহিত্য, রাজনীতির জন্য পৃথক কোন মূলনীতি নেই। তাই নির্ভেজাল থেকে তা গ্রহণ করে।
  • মুশরিক কল্পনা বিলাসী। নির্ভেজাল বাস্তব কর্মী।
  • শিরকের রাজ্যে রাজা ও ধর্মীয় নেতাগণ খোদার আসনে। বংশ এবং শ্রেণী প্রধানের উপর এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত।
  • নির্ভেজালের রাজত্বে পরিবার পূজা, বংশপূজা, জাতি পূজা, একনায়কতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ শ্রেণী সংগ্রামে পরিগ্রহ হয়।

বৈরাগ্যবাদ:

বাস্তব পর্যবেক্ষণের সাথে আন্দাজ অনুমানের সংমিশ্রণে মানব জীবনের মৌলিক প্রশ্নসমূহের যে সব উত্তর ঠিক হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল **বৈরাগ্যবাদ**।

বৈশিষ্ট্য:

  1. পৃথিবী এবং মানুষের শারীরিক স্বত্ত্বা স্বয়ং মানুষের জন্য একটি শাস্তি কেন্দ্র বিশেষ আর মানুষের আত্নাকে দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদীর ন্যায় পিঞ্জিরাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
  2. ইন্দ্রিয়ের সকল প্রয়োজন ও বাসনা বন্দী খানার শৃংখলের ন্যায়।
  3. মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় প্রকৃতিগত বিভিন্ন প্রয়োজনকে কঠোরভাবে অবদমিত করা, স্বাদ আস্বাদন পরিহার করা এবং **দেহ মনের কঠোর কৃচ্ছ সাধন**।
  4. স্রষ্টার অস্তিত্ব ও অন্যান্য মৌলিক ব্যাপারে এর সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই কার্যত নিরব।

সর্বেশ্বরবাদ:

অবাস্তব আন্দাজ অনুমান ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের ফলে তৃতীয় যে মতটির সৃষ্টি হচ্ছে তা হচ্ছে **সর্বেশ্বরবাদ**।

বৈশিষ্ট্য:

  1. বিশ্বপ্রকৃতির আলাদা কোন সত্তা নেই। মূলত একটি সত্তাই সমস্ত বস্তুজগতের মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশমান।

ইসলাম:

**মানুষ ও বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্নসমূহের যে জওয়াব আল্লাহ প্রেরিত নবীগণ দিয়েছেন তা আন্তরিকতা সহকারে পূর্ণ রূপে গ্রহণ করার নামই ইসলাম।**

নির্ভুল পথ লাভের সাধারণ নিয়ম:

১. পথ অনুসন্ধান:

  • কোন অপরিচিত স্থানে পরিভ্রমণ।
  • কোন রূপ অভিজ্ঞতা না থাকলে অন্য কারো নিকট হতে জিজ্ঞাসা।
  • পথ নির্দেশ লাভ ও সে স্থানে ভ্রমণ।

২. বৈজ্ঞানিক পন্থা:

  • এক্ষেত্রে **পূর্ণ অভিজ্ঞতার পূর্ণ দাবীদার** খোজা।
  • দাবীদার বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কিনা তা যাচাই করা।
  • দাবীদারের নেতৃত্বে পথ চলা।
  • বাস্তব অভিজ্ঞতার দাবী প্রমাণ।

মানুষ ও বিশ্ব সম্পর্কে নবীর মত:

  1. বিশ্বজাহান সৃষ্টি ও পরিচালনা করেন **মহান আল্লাহ**।
  2. মানব সৃষ্টি ও তার অবস্থান।
  3. মানুষের পারস্পরিক আচরণ ও বস্তুসামগ্রী ব্যবহার নীতি।
  4. আল্লাহর বিধান প্রদর্শনের দায়িত্ব **রাসূল সা: এর উপর**।
  5. মানুষের মর্যাদা ও দায়িত্ব।
  6. পরকালীন জীবন ও জবাবদিতা।

মানুষের তৎকালীন সাফল্য দুটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল:

  1. মানুষ নিজের বুদ্ধি, বিবেক, প্রতিভার নির্ভুল প্রয়োগের মাধ্যমে **আল্লাহ তায়ালাকে প্রকৃত ও একমাত্র ব্যবস্থাপক ও আইন রচয়িতা** এবং তার নিকট হতে প্রাপ্ত শিক্ষা ও বিধানকে যথার্থ আল্লাহর বিধান হিসেবে জানতে পারলো কি না?
  2. এ নিগূঢ় সত্য জেনে নেওয়ার পর পথ নির্বাচনের স্বাধীনতা থাকা সত্বেও মানুষ নিজের আন্তরিক ইচ্ছা ও আগ্রহ সহকারে আল্লাহ তায়ালার বাস্তব প্রভূত্ব ও শরীয়তী বিধানের কাছে **মাথা নত করলো কিনা?**

ইসলামী মতবাদ:

  1. বৈজ্ঞানিক, নির্ভুল ও **পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা**।
  2. ফিতরাতের বিধান এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা উত্তরন।
  3. পার্থিব জীবনে এর ফলাফল:
    • ক) ব্যক্তিগত জীবনে দায়িত্বশীলতা ও উন্নত নৈতিকতা।
    • খ) বৈষম্যহীন ও নিরপরাধ সমাজ ব্যবস্থা।
    • গ) ইসলামের সার্বজনীনতা ও সরলতা।
    • ঘ) রাষ্ট্রব্যবস্থার বুনিয়াদ **মানব প্রভুত্বের উপর নয়, আল্লাহর প্রভুত্বের উপর**।
    • ঙ) সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আত্মপূজার পরিবর্তে **আনুগত্য**।
    • চ) বাস্তব অভিজ্ঞতা ও আহবান।

নবীদের উপস্থাপিত পথে পরিচালনা করতে হবে। সুতরাং **নবীদের আনীত পথ তথা ইসলাম সঠিক পথ এবং এটাই একমাত্র অনুসরণীয়।**

Top


মুখস্থঃ তাকওয়া সংক্রান্ত আয়াত- (Go)

তাকওয়া সংক্রান্ত ১টি হাদীস মুখস্ত (Go)

Top


মাসয়ালা:ঈদ সম্পর্কিত মাসায়েল

আল্লাহর জিকির ও তাঁর বড়ত্বের ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রথম ও প্রধান আমল হলো **ঈদের নামাজ**।

ঈদের নামাজ কাদের ওপর ওয়াজিব

মাসায়ালা:

যাদের ওপর **জুমার নামাজ ফরজ**, তাদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, যেসব মুসলিম পুরুষ, জামাতে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে তাদের ঈদের নামাজ প তে হবে। (আলমুহিতুল বুরহানি ২/৪৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৫)

নারীদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। অনুরূপ এমন অসুস্থ পুরুষ, যে ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে না, তার ওপরও ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। (কিতাবুল আছল ১/৩২৩; মাবসুত, সারাখসি ২/৪০; আলমুহিতুল বুরহানি ২/৪৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭)

মুসাফির তথা যে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিমি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে— এমন ব্যক্তির ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি ঈদের নামাজ প ে তা হলে তা সহিহ হবে এবং এর সওয়াবও পাবে। (আততাজরিদ, কুদুরি ২/৯৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭)

ঈদের নামাজের ওয়াক্ত

ঈদের নামাজের ওয়াক্ত হচ্ছে— সূর্য উদিত হয়ে (নামাজের) নিষিদ্ধ সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে **জাওয়াল তথা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে প ার আগ পর্যন্ত**।—এই সময়ের মধ্যেই ঈদের নামাজ প তে হবে। জাওয়ালের পর আর ঈদের নামাজ সহিহ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৩৫)

ঈদুল আজহার নামাজ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর দেরি না করে একটু **তা াতা ি প া মুস্তাহাব**। যাতে কুরবানির কাজ দ্রুত শুরু করা যায়। আর ঈদুল ফিতরের নামাজও ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর যথাসম্ভব তা াতা ি আদায় করে নেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, বর্ণনা ৫৬৫১; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৬৭;)

ঈদের নামাজের স্থান

ঈদের নামাজ **ঈদগাহে ও খোলা মাঠে প া সুন্নত**। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদিন সবাই ঈদের নামাজ ঈদগাহে প তেন।

  • হজরত আবু সাঈদ খুদরি (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন (ঈদের নামাজের জন্য) **ঈদগাহে যেতেন**। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৯৬৫)
  • হযরত আলী (র) বলেন, দুই ঈদে (ঈদের নামাজের জন্য) **খোলা মাঠে যাওয়া সুন্নত**। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি, হাদিস ৪০৪০)

মাঠে ঈদের নামাজ প ার ব্যবস্থা থাকলে **বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের জামাত করবে না**। তবে কোথাও বিনা জরুরতে এমনটি করা হলে ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরে ঈদগাহ কম, বিধায় অধিকাংশ মসজিদে ঈদের জামাত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়া বা বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে মসজিদে ঈদের নামাজ প লে সুন্নতের খেলাফ হবে না।

ওজরের সময় মসজিদে পড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত আবু হুরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—কোনো এক ঈদের দিন বৃষ্টি তাদের পেয়ে বসে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে **মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন**। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৫৩)

ঈদের নামাজে তায়াম্মুম

নামাজে শরিক হওয়ার আগমুহূর্তে কারও ওজু না থাকলে এবং **ওজু করতে গেলে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে**।

  • হজরত আব্দুর রহমান ইবনুল কাসিম (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— (ঈদের নামাজ) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে **তায়াম্মুম করে নামাজ প ে নেবে**। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৯)
  • হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ) বলেন— ঈদ ও জানাজার ক্ষেত্রে (ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায়) **তায়াম্মুম করা যাবে**। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৮) -কিতাবুল আছল ১/৩২০; আলমুহিতুল বুরহানি ২/৫০২

Top

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM