ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন
# দারস তৈরী - সুরা আলে-ইমরান , আয়াতঃ ১৯-২২ # 📖 বই নোট: ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি # তাকওয়া সংক্রান্ত আয়াত # তাকওয়া সংক্রান্ত হাদিস # ত্বহারাত সংক্রান্ত মাসয়ালা
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰهِ الۡاِسۡلَامُ ۟ وَ مَا اخۡتَلَفَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡكِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡیًۢا بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّكۡفُرۡ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ فَاِنَّ اللّٰهَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ ﴿۱۹
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতানৈক্য করেছে, পরস্পর বিদ্বেষবশত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে, নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।
فَاِنۡ حَآجُّوۡكَ فَقُلۡ اَسۡلَمۡتُ وَجۡهِیَ لِلّٰهِ وَ مَنِ اتَّبَعَنِ ؕ وَ قُلۡ لِّلَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡكِتٰبَ وَ الۡاُمِّیّٖنَ ءَاَسۡلَمۡتُمۡ ؕ فَاِنۡ اَسۡلَمُوۡا فَقَدِ اهۡتَدَوۡا ۚ وَ اِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَیۡكَ الۡبَلٰغُ ؕ وَ اللّٰهُ بَصِیۡرٌۢ بِالۡعِبَادِ ﴿۲۰
যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বল, ‘তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ’? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি ফিরে যায়, তাহলে তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَكۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ النَّبِیّٖنَ بِغَیۡرِ حَقٍّ ۙ وَّ یَقۡتُلُوۡنَ الَّذِیۡنَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡقِسۡطِ مِنَ النَّاسِ ۙ فَبَشِّرۡهُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿۲۱
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে, আর মানুষের মধ্য থেকে যারা ন্যায়-পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে হত্যা করে, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।
اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۫ وَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ ﴿۲۲
এরাই তারা যাদের সমুদয় ‘আমাল দুনিয়া ও আখেরাতে নিষ্ফল হবে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
এই সূরার এক জায়গায় ‘‘আলে ইমরানের’’ কথা বলা হয়েছে। একেই আলামত হিসেবে এর নাম গণ্য করা হয়েছে।
প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু হয়ে চতুর্থ রুকূ’র প্রথম দু’ আয়াত পর্যন্ত চলেছে এবং এটি সম্ভবত বদর যুদ্ধের নিকটবর্তী সময়ে নাযিল হয়।
দ্বিতীয় ভাষণটি إِنَّاللَّهَاصْطَفَىآدَمَوَنُوحًاوَآلَإِبْرَاهِيمَوَآلَعِمْرَانَعَلَىالْعَالَمِينَ (আল্লাহ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদের সারা দুনিয়াবাসীর ওপর প্রাধান্য দিয়ে নিজের রিসালাতের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন।) আয়াত থেকে শুরু হয়ে ষষ্ঠ রুকূ’র শেষে গিয়ে শেষ হয়েছে। ৯ হিজরীতে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আগমনকালে এটি নাযিল হয়।
তৃতীয় ভাষণটি সপ্তম রুকূ’র শুরু থেকে নিয়ে দ্বাদশ রুকূ’র শেষ অব্দি চলেছে। প্রথম ভাষণের সাথে সাথেই এটি নাযিল হয়।
চতুর্থ ভাষণটি ত্রয়োদশ রুকূ’ থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। ওহোদ যুদ্ধের পর এটি নাযিল হয়।
এই বিভিন্ন ভাষণকে এক সাথে মিলিয়ে যে জিনিসটি একে একটি সুগ্রথিত ধারাবাহিক প্রবন্ধে পরিণত করেছে সেটি হচ্ছে এর উদ্দেশ্য, মূল বক্তব্য ও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্য ও একমুখীনতা। সূরায় বিশেষ করে দু’টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে।
একটি দল হচ্ছে, আহলী কিতাব (ইহুদী ও খৃস্টান) এবং দ্বিতীয় দলটিতে রয়েছে এমন সব লোক যারা মুহা¤ াদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের প্রতি ঈমান এনেছিল। সূরা বাকারায় ইসলামের বাণী প্রচারের যে ধারা শুরু করা হয়েছিল প্রথম দলটির কাছে সেই একই ধারায় প্রচার আরো জোরালো করা হয়েছে। তাদের আকীদাগত ভ্রষ্টতা ও চারিত্রিক দুষ্কৃতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে তাদেরকে জানানো হয়েছে যে, এই রসূল এবং এই কুরআন এমন এক দ্বীনের দিকে নিয়ে আসছে প্রথম থেকে সকল নবীই যার দাওয়াত দিয়ে আসছেন এবং আল্লাহর প্রকৃতি অনুযায়ী যা একমাত্র সত্য দ্বীন। এই দ্বীনের সোজা পথ ছে ে তোমরা যে পথ ধরেছো তা যেসব কিতাবকে তোমরা আসমানী কিতাব বলে স্বীকার করো তাদের দৃষ্টিতেও সঠিক নয়। কাজেই যার সত্যতা তোমরা নিজেরাও অস্বীকার করতে পারো না তার সত্যতা স্বীকার করে নাও।
দ্বিতীয় দলটি এখন শ্রেষ্ঠতম দলের মর্যাদা লাভ করার কারণে তাকে সত্যের পতাকাবাহী ও বিশ্বমানবতার সংস্কার ও সংশোধনের দায়িত্ব দান করা হয়েছে। এই প্রসংগে সূরা বাকারায় যে নির্দেশ শুরু হয়েছিল এখানে আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। পূর্ববর্তী উ¤ তদের ধর্মীয় ও চারিত্রিক অধপতনের ভয়াবহ চিত্র দেখিয়ে তাকে তাদের পদাংক অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। একটি সংস্কারবাদী দল হিসেবে সে কিভাবে কাজ করবে এবং যেসব আহলি কিতাব ও মুনাফিক মুসলমান আল্লাহর পথে নানা প্রকার বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করছে তাদের সাথে কি আচরণ করবে, তাও তাকে জানানো হয়েছে। ওহোদ যুদ্ধে তাঁর মধ্যে যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল তা দূর করার জন্যও তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এভাবে এ সূরাটি শুধুমাত্র নিজের অংশগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি এবং নিজের অংশগুলোকে একসূত্রে গ্রথিত করেনি বরং সূরা বাকারার সাথেও এর নিকট সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। এটি একেবারেই তার পরিশিষ্ট মনে হচ্ছে। সূরা বাকারার লাগোয়া আসনই তার স্বাভাবিক আসন বলে অনুভূত হচ্ছে।
একঃ এই সত্য দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে সূরা বাকারায় পূর্বাহ্নেই যেসব পরীক্ষা, বিপদ ুআপদ ও সংকট সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল তা পূর্ণ মাত্রায় সংঘটিত হয়েছিল। বদর যুদ্ধে ঈমানদারগণ বিজয় লাভ করলেও এ যুদ্ধটি যেন ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল মারার মতো ব্যাপার। এ প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষটি আরবের এমন সব শক্তিগুলোকে অক¯ াত না া দিয়েছিল যারা এ নতুন আন্দোলনের সাথে শত্রুতা পোষণ করতো। সবদিকে ফুটে উঠছিল ঝ ের আলামত। মুসলমানদের ওপর একটি নিরন্তর ভীতি ও অস্থিরতার অবস্থা বিরাজ করছিল। মনে হচ্ছিল, চারপাশের সারা দুনিয়ার আক্রমণের শিকার মদীনার এ ক্ষুদ্র জনবসতিটিকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলে দেয়া হবে। মদীনার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর এ পরিস্থিতির অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব প েছিল। মদিনা ছিল তো একটি ছোট্ট মফস্বল শহর। জনবসতি কয়েক শ’ ঘরের বেশী ছিল না। সেখানে হঠাৎ বিপুল সংখ্যক মুহাজিরের আগমন। ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তো এমনিতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর আবার এই যুদ্ধাবস্থার কারণে বা তি বিপদ দেখা দিল।
দুইঃ হিজরতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার আশপাশের ইহুদী গোত্রগুলোর সাথে যে চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন তারা সেই চুক্তির প্রতি সামান্যতমও স¤ ান প্রদর্শন করেনি। বদর যুদ্ধকালে এই আহলি কিতাবদের যাবতীয় সহানুভূতি তাওহীদ ও নবুয়াত এবং কিতাব ও আখেরাত বিশ্বাসী মুসলমানদের পরিবর্তে মূর্তিপূজারী মুশরিকদের সাথে ছিল। বদর যুদ্ধের পর তারা কুরাইশ ও আরবদের অন্যান্য গোত্রগুলোকে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে প্রতিশোধ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। বিশেষ করে বনী নাযির সরদার কা’ব ইবনে আশরাফ তো এ ব্যাপারে নিজের বিরোধমূলক প্রচেষ্টাকে অন্ধ শত্রুতা বরং নীচতার পর্যায়ে নামিয়ে আনে। মদিনাবাসীদের সাথে এই ইহুদীদের শত শত বছর থেকে যে বন্ধুত্ব ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক চলে আসিছিল তার কোন পরোয়াই তারা করেনি। শেষ যখন তাদের দুষ্কর্ম ও চুক্তি ভংগ সীমা ছা িয়ে যায় তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের কয়েক মাস পরে এই ইহুদী গোত্রগুলোর সবচেয়ে বেশী দুষ্কর্মপরায়ণ ‘বনী কাইনুকা’ গোত্রের ওপর আক্রমণ চালান এবং তাদেরকে মদীনার শহরতলী থেকে বের করে দেন। কিন্তু এতে অন্য ইহুদী গোত্রগুলোর হিংসার আগুন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। তারা মদিনার মুনাফিক মুসলমান ও হিযাজের মুশরিক গোত্রগুলোর সাথে চক্রান্ত করে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য চার দিকে অসংখ্য বিপদ সৃষ্টি করে। এমনকি কখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণ নাশের জন্য তাঁর ওপর আক্রমণ চালানো হয় এই আশংকা সর্বক্ষণ দেখা দিতে থাকে। এ সময় সাহাবায়ে কেরাম সবসময় সশস্ত্র থাকতেন। নৈশ আক্রমণের ভয়ে রাতে পাহারা দেয়া হতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম যদি কখনো সামান্য সময়ের জন্যও চোখের আ াল হতেন সাহাবায়ে কেরাম উদ্বেগ আকুল হয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হতেন।
তিনঃ বদরে পরাজয়ের পর কুরাইশদের মনে এমনিতেই প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল, ইহুদীরা তার ওপর কেরোসিন ছিটিয়ে দিল। ফলে এক বছর পরই মক্কা থেকে তিন হাজার সুসজ্জিত সৈন্যের একটি দল মদীনা আক্রমণ করলো। এ যুদ্ধটি হলো ওহোদ পাহা ের পাদদেশে। তাই ওহোদের যুদ্ধ নামেই এটি পরিচিত। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মদীনা থেকে এক হাজার লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বের হয়েছিল। কিন্তু পথে তিন’শ মুনাফিক হঠাৎ আলাদা হয়ে মদীনার দিকে ফিরে এলো। নবীর (সা.) সাথে যে সাত’শো লোক রয়ে গিয়েছিল তার মধ্যেও মুনাফিকদের একটি ছোট দল ছিল। যুদ্ধ চলা কালে তারা মুসলমানদের মধ্যে ফিত্না সৃষ্টি করার সম্ভাব্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালালো। এই প্রথমবার জানা গেলো, মুসলমানদের স্বগৃহে এত বিপুল সংখ্যক আস্তীনের সাপ লুকানো রয়েছে এবং তারা এভাবে বাইরের শক্রদের সাথে মিলে নিজেদের ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের ক্ষতি করার জন্য উঠে প ে লেগেছে।
চারঃ ওহোদের যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় যদিও মুনাফিকদের কৌশলের একটি ব অংশ ছিল তবুও মুসলমানদের নিজেদের দুর্বলতার অংশও কম ছিল না। একটি বিশেষ চিন্তাধারা ও নৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে যে দলটি এই সবেমাত্র গঠিত হয়েছিল, যার নৈতিক প্রশিক্ষণ এখনো পূর্ণ হতে পারেনি এবং নিজের বিশ্বাস ও নীতি সমর্থনে যার ল াই করার এই মাত্র দ্বিতীয় সুযোগ ছিল তার কাজে কিছু দুর্বলতা প্রকাশ হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তাই যুদ্ধের পর এই যাবতীয় ঘটনাবলীর ওপর বিস্তারিত মন্তব্য করা এবং তাতেই ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের মধ্যে যেসব দুর্বলতা পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটির প্রতি অংগুলি নির্দেশ করে তার সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। এ প্রসংগে একথাটি দৃষ্টি সমক্ষে রাখার উপযোগীতা রাখে যে, অন্য জেনারেলরা নিজেদের যুদ্ধের পরে তার ওপর যে মন্তব্য করেন এ যুদ্ধের ওপরে কুরআনের মন্তব্য তা থেকে কত বিভিন্ন!
৩:১৮ এই আয়াতে মহানবী (সাঃ) ও মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, কাফেরদের অবিশ্বাস ও মুশরিকদের অংশীবাদিতা যেন তোমাদেরকে নিজেদের বিশ্বাসের প্রতি সন্দিহান না করে। কারণ, প্রকৃত জ্ঞানী ও যুক্তিবাদী মানুষেরা আল্লাহর একত্বের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়াও তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে, বিশ্ব জগতের ব্যবস্থাপনা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং এ ক্ষেত্রে কোনো বা াবা ি লক্ষ্য করা যায়না। আর এ বিষয়টি নিজেই আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। অর্থাৎ আল্লাহ এ বিশ্ব জগতের যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন, যেমন- আকাশ,ভূমি,পাহা ,নদী,সাগর,উদ্ভিদ,পশু-পাখী ইত্যাদি-সবই একই ব্যবস্থার অধীনে পরিচালনা করছেন। আর এসবই কার্যত আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং ফেরেশতারাও আল্লাহর কর্মীবাহিনী হিসেবে জগত পরিচালনায় নিয়োজিত থেকে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
আল্লাহ্ নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন ঃ অর্থাৎ যে আল্লাহ বিশ্ব-জাহানের সমস্ত তত্ত্ব, সত্য ও রহস্যের প্রত্যক্ষজ্ঞান রাখেন, যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে আবরণহীন অবস্থায় দেখছেন এবং যার দৃষ্টিথেকে পৃথিবী ও আকাশের কোন একটি বস্তুও গোপন নেই-এটি তাঁর সাক্ষ্য এবং তাঁর চাইতে আর বেশী নির্ভরযোগ্য চাক্ষুষ সাক্ষ্য আর কে দিতে পারে? কারণ সমগ্র সৃষ্টিজগতে তিনি ছাড়া আর কোন সত্ত্বা খোদায়ী গুণে গুণান্বিত নয়। আর কোন সত্ত্বা খোদায়ী কর্তৃত্বের অধিকারী নয় এবং আর কারোর খোদায়ী করার যোগ্যতাও নেই।
ফেরেশতাদের সাক্ষ্যঃ আল্লাহ্র পর সবচেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে ফেরেশতাদের। কারণ তারা হচ্ছে বিশ্বরাজ্যের ব্যবস্থাপনা কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। তারা সরাসরি নিজেদের ব্যক্তিগত জ্ঞানের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এই বিশ্বরাজ্যে আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম চলে না এবং পৃথিবী ও আকাশের পরিচালনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছাড়া আর কোন সত্ত্বা এমন নেই যার কাছ থেকে তারা নির্দেশ গ্রহণ করতে পারে। ফেরেশতাদের পরে এই সৃষ্টি জগতে আর যারাই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে কম বেশী কিছুটা জ্ঞান রাখে, সৃষ্টির আদিআ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্তকার তাদের সবার সর্বস¤ ত সাক্ষ্য হচ্ছে এই যে, আল্লাহ একাই এই সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিক, পরিচালক ও প্রভু।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো, প্রথমত : বিশ্বজগতের শৃঙ্খলা ও বিভিন্ন সৃষ্টির মধ্যে সমন্বয় আল্লাহর একত্বের সুস্পষ্ট এবং সর্বোত্কৃষ্ট প্রমাণ। দ্বিতীয়ত: জ্ঞান তখনই উপকারী বা কল্যাণকর হয়,যখন তা মানুষকে আল্লাহমুখী করে। আর ঈমান তখনই গুরুত্ব পায় যখন তা হয় জ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক।
৩:১৯ঃ ১. অর্থাৎ আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য একটি মাত্র জীবন ব্যবস্থা ও একটি মাত্র জীবনবিধান সঠিক ও নির্ভুল বলে গৃহীত। সেটি হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে নিজের মালিক ও মাবুদ বলে স্বীকার করে নেবে এবং তাঁর ইবাদাত, বন্দেগী ও দাসত্বের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সোপর্দ করে দেবে। আর তাঁর বন্দেগী করার পদ্ধতি নিজে আবিষ্কার করবে না। বরং তিনি নিজের নবী-রসূলগণের মাধ্যমে যে হিদায়ত ও বিধান পাঠিয়েছেন কোনো প্রকার কমবেশী না করে তার অনুসরণ করবে। এই চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির নাম “ইসলাম” আর বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টার ও প্রভুর নিজের সৃষ্টিকুল ও প্রজা সাধারণের জন্য ইসলাম ছাড়া অন্যকোন কর্মপদ্ধতির বৈধতার স্বীকৃতি না দেয়াও পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত। মানুষ তার নির্বুদ্ধিতার কারণে নাস্তিক্যবাদ থেকে নিয়ে শিরক ও মূর্তিপূজা পর্যন্ত যে কোন মতবাদ ও যে কোন পদ্ধতির অনুসরণ করা নিজের জন্য বৈধ মনে করতে পারে কিন্তু বিশ্ব-জাহানের প্রভুর দৃষ্টিতে এগুলো নিছক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
২. আল্লাহর পক্ষথেকে দুনিয়ার যে কোন অঞ্চলে যে কোন যুগে যে নবীই এসেছেন, তাঁর দ্বীনই ছিল ইসলাম। দুনিয়ার যে কোন জাতির ওপর যে কিতাবই নাযিল হয়েছে, তা ইসলামেরই শিক্ষা দান করেছে। এই আসল দ্বীনকে বিকৃত করে এবং তার মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে যেসব ধর্ম মানুষের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে, তাদের জন্ম ও উদ্ভবের কারণ ও ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, লোকেরা নিজেদের বৈধ সীমা অতিক্রম নিজেদের খেয়াল খুশী মতো আসল দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস, মূলনীতি ও বিস্তারিত বিধান পরিবর্তন করে ফেলেছে। হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আঃ)'র যুগে,কিংবা অন্যান্য নবীদের যুগে মানুষের দায়িত্ব ছিল আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ হিসেবে তাদের বিশ্বাস করা, তাদের আনুগত্য করা এবং তাঁদের কাছে অবতীর্ণ বইয়ের প্রতিও ঈমান আনা। কিন্তু পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হবার পর ইসলামের নবীর প্রতি বিশ্বাস আনা ও এই ধর্মের বিধান মেনে চলা সবার দায়িত্ব হয়ে প ে। অথচ ধর্মীয় ও বর্ণ-বিদ্বেষের কারণে অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হয়নি এবং এই ধর্মকে সত্য বলে স্বীকারও করেনি।
৩. এই আয়াতে আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, যদি তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করতে চায়, তাহলে তারা যেন ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। কারণ,যে আল্লাহ তাদের কাছে ঈসা ও মুসা নবীকে পাঠিয়েছেন, তিনিই এখন মোহা¤ দ (সা.) কে নবী মনোনীত করে তাঁর আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে জানার পরও যদি তারা ঈমান না আনে তাহলে ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর শাস্তির জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ যে তাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত সময়ে মানুষের কর্মতৎপরতার হিসাব নেবেন সেটাও তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো, প্রথমত : অধিকাংশ মতবিরোধের উৎস হল হিংসা ও বিদ্বেষ। অজ্ঞতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে না জানার কারণে খুব কমই মতভেদ দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত : আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হল ইসলাম। তাই অন্যান্য ঐশী গ্রন্থের অনুসারী হবার দাবিদাররা যদি সত্যই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত হতে চায় তাহলে তাদেরকে এখন থেকে শুধু ইসলাম ধর্মই মেনে চলতে হবে।
৩:২০ অন্য কথায় এ বক্তব্যটিকে এভাবে বলা যায়, যেমন - “আমি ও আমার অনুসারীরা তো সেই নির্ভেজাল ইসলামের স্বীকৃতি দিয়েছি, যেটি আল্লাহর আসল দ্বীন ও জীবন বিধান। এখন তোমরা বলো, তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা দ্বীনের মধ্যেযে পরিবর্তন সাধন করেছো তা বাদ দিয়ে এই আসল ও প্রকৃত দ্বীনের দিকে কি তোমরা ফিরে আসবে? এরপর ইসলামের নবীকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলছেন,কাফের ও মুশরিকদের ঈমানদার করার জন্য অনর্থক তাদের সঙ্গে ঝগ া ও দ্বন্দ্বে যাবার মত কষ্ট করার দরকার নেই। কারণ,আপনার দায়িত্ব হল শুধু আল্লাহর বাণী জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া যাতে মানুষ সত্যকে বুঝতে পারে। তাই যার ইচ্ছা হবে সে নিজেই সত্যকে গ্রহণ করবে এবং যারা জেনে শুনেও যে কোন কারণে সত্য ধর্ম গ্রহণ করবে না তাদের সঙ্গে আলোচনা নিরর্থক। তাদের বিষয় আল্লাহর হাতে ছে ে দিন। আল্লাহ তার সৃষ্টির অবস্থা ভালভাবে দেখেন।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো, প্রথমত :উদ্ধত বা গোঁ াপন্থী লোকদের সাথে দ্বন্দ্ব-বিবাদ করা নয়,বরং যুক্তি তুলে ধরাই আমাদের দায়িত্ব। দ্বিতীয়ত :ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষ স্বাধীন এবং জোর করে কারো ধর্মীয় বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ। অবশ্য যারাই যে পথই বেছে নিক না কেন ঐ পথের ভালো বা মন্দ পরিণতি তাদেরকে ভোগ করতেই হবে।
৩:২১-২২ পূর্ববর্তী আয়াতে কাফের ও মুশরিকদের হিংসা ও বিদ্বেষের স্বরূপ তুলে ধরার পর এই দুই আয়াতে সত্য গোপন ও অবিশ্বাসের করুণ ও নোংরা পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আসলে মানুষ তাদের চিন্তা ও বিশ্বাস অনুসারে কাজ করে। যারা চিন্তাগত ক্ষেত্রে সত্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়,তারা সত্যের পক্ষে কাজ তো করেই না,বরং যারা সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে কাজ করছে তাদের সাথে বিরোধিতা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করে। এদের হাত নিরাপরাধ লোকদের রক্তে রঞ্জিত এবং এরা ন্যায় বিচারকামী মানুষের নেতাদেরকে হয় হত্যা করে কিংবা তাদের হত্যা করার অনুমতি দেয় অথবা তারা নিহত হলে খুশি হয়। এটা স্পষ্ট যে সত্যের বিরুদ্ধে চিন্তায় ও কাজে তাদের এই বিরোধীতার ফলে তারা যদি জীবনে কোন ভালো কাজ করেও থাকে তবুও তা হবে নিস্ফল। এদের অবস্থা হচ্ছে এমন লোকের মতো যে কিছুকাল কোন ব্যক্তির সেবকের কাজ করার পর ঐ ব্যক্তির সন্তানকেই হত্যা করে। নিঃসন্দেহে এমন নোংরা কাজ তার অতীতের সমস্ত ভালো কাজকে অর্থহীন ও নিস্ফল করে দেয়।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিক গুলো হলো, প্রথমত : সত্যকে গোপন রাখার জন্য কোন কোন মানুষ নবীকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তাই আমাদেরকেও বিকৃত চিন্তাধারার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। কারণ বিপজ্জনক কাজের মূল উৎস হলো বিকৃত বিশ্বাস । দ্বিতীয়ত : ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সত্যের পক্ষে আহবান জানানো এবং জাগরণ জরুরী। যদিও এর ফলে শহীদ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যেমন ইমাম হোসাইন বিন আলী ( আঃ ) ও তার সন্তানেরা সত্যের আহবানের কারণে শহীদ হবেন এটা নিশ্চিতভাবে জেনেও সত্যের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিলেন । তৃতীয়ত : কোন কোন পাপ বজ্রপাতের মতোই মানুষের পূণ্যের বাগানের সমস্ত গাছকে এক মুহূর্তের মধ্যেই ভস্মীভূত করে দেয়। তখন দুঃখ করার মতো অবকাশও থাকে না। #
সুত্রঃ তাফহীমুল কুরআন
লেখকঃ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রা:), অনুবাদঃ মাওলানা আব্দুর রহীম।
মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ হতে গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব উৎখাত করে আল্লাহর কর্তৃত্ব ও রাসূল (সা:) এর নেতৃত্বপ্রতিষ্ঠার জন্য যে সর্বাত্বক চেষ্টা ওপ্রচেষ্টা তাকে ইসলামী আন্দোলন বলে।
নীতি মানার যেটি অনুভূতি সেটি নৈতিকতা। মানবীয় চরিত্রের যে গুন যা তাকে সঠিক পথে চলতে উৎসাহিত করে।
যার উপর ভিত্তি করে কোন কিছু সংস্থাপিত হয়।
এটি মৌলিক মানবীয় চরিত্রের বিশুদ্ধরূপ। তরবারী সাধারন অবস্থায়, মৌলিক মানবীয় চরিত্র + তরবারী মুজাহিদের হাতে + ইসলামী নৈতিক চরিত্র।
ঈমানের বাস্তবরূপ, বৃক্ষ থেকে বীজ নির্ধারণ, আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য ও রাসূল (সা:) এর পূর্ণ অনুসরনই ইসলাম।
এর অর্থ ভয় করে বেঁচে থাকা। মনের সে অনুভূতি যা আল্লাহর প্রবল ভীতির সাথে সাথে দায়িত্বানুভূতি, জবাবদিহির যাবতীয় কাজে হালাল-হারাম বাছাই ও অনুভূতি জাগ্রত করবে।
তাকওয়া ৩প্রকার :
ইসলামী জীবনপ্রাসাদের সর্বোচ্চ পর্যায় — আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের প্রতি ত্রমন ভালাবাসা যা নিজেকে তাদের জন্য উৎসর্গ করতে শিখায়; তাকওয়া-সরকারী কর্মচারীর যথার্থ দায়িত্ব পালন।
ইহসান: শুধু দায়িত্ব পালন নয়, দেশের জন্য কষ্ট, ত্যাগ, কুরবানী স্বীকার, ইসলামের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মুহসিনপ্রয়োজন মারফাতের পথ-ত্র চার পর্যায় অতিক্রম করে তারপর অন্যথায় দুর্ঘটনা ঘটবে।
আল-বাকারাহঃ ১৭৭
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَكُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰكِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃِ وَ الۡكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰكِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّكٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۷﴾
১৭৭ - তোমরা নিজেদের মুখ পূর্ব দিকে কর কিংবা পশ্চিম দিকে এতে কোন কল্যাণ নেই বরং কল্যাণ আছে এতে যে, কোন ব্যক্তি ঈমান আনবে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও নাবীগণের প্রতি এবং আল্লাহর ভালবাসার্থে ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, মুসাফির ও যাচ্ঞাকারীদের এবং দাসত্বজীবন হতে নিস্কৃতি দিতে দান করবে এবং নামায কায়িম করবে ও যাকাত দিতে থাকবে, ওয়া‘দা করার পর স্বীয় ওয়া‘দা পূর্ণ করবে এবং অভাবে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে, এ লোকেরাই সত্যপরায়ণ আর এ লোকেরাই মুত্তাকী। (তাইসিরুল)
আল-বাকারাহঃ ২৫৫
اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُهٗ سِنَۃٌ وَّ لَا نَوۡمٌ ؕ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ ۚ وَ لَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوۡدُهٗ حِفۡظُهُمَا ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ ﴿۲۵۵﴾
আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সব কিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? স¤ ুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারেনা। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয়না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান। (আয়াতুল কুরসী) আল-বায়ান
আলে ইমরানঃ ১০২
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوااتَّقُوااللّٰهَحَقَّتُقٰتِهٖوَلَاتَمُوۡتُنَّاِلَّاوَاَنۡتُمۡمُّسۡلِمُوۡنَ﴿۱۰২﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না। আল-বায়ান
عَنْأَبِيهُرَيْرَةَرَضِيَاللهُعَنْهُقِيلَيَارَسُولَاللهِمَنْأَكْرَمُالنَّاسِقَالَأَتْقَاهُمْ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু’ (বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৬৯)।