ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন
নামকরনঃ সুরার প্রথম আয়াতের زِلْزَالَهَ থেকে এর নামকরন করা হয়েছে। ‘যালযালাহু’ মানে হচ্ছে, প্রচণ্ডভাবে জোরে জোরে ঝাড়া দেয়া, ভূকম্পিত হওয়া।
নাযিলের সময়কালঃ মদীনায় অবতীর্ণ (মতভেদ)। এই সূরার মাক্কী ও মাদানী হওয়ার ব্যাপারে উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর কেউ বলেন, এটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার ফযীলতে বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনটিও সহীহ নয়। এটি একটি মক্কী সূরা। এর বক্তব্য বিষয় ও বর্ণনাভংগী থেকে অনুভূত হবে, এটি মক্কায় প্রাথমিক যুগে এমন সময় নাযিল হয় যখন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে ইসলামের বুনিয়াদি আকিদা ও বিশ্বাস মানুষের সামনে পেশ করা হচ্ছিল।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ এর বিষয়বস্তু মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং সেখানে দুনিয়ায় করা সমস্ত কাজের হিসেব মানুষের সামনে এসে যাওয়া। সর্বপ্রথম তিনটি ছোট ছোট বাক্যে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর মানুষের দ্বিতীয় জীবনের সূত্রপাত কিভাবে হবে এবং মানুষের জন্য তা হবে কেমন বিস্ময়কর। তারপর দু’টি বাক্যে বলা হয়েছে, মানুষ এই পৃথিবীর বুকে অবস্থান করে নিশ্চিন্তে সব রকমের কাজ করে গেছে। সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি যে, এই নিষ্প্রাণ জিনিস কোনদিন তার কাজকর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহর হুকুমে সেদিন সে কথা বলতে থাকবে। প্রত্যেকটি লোকের ব্যাপারে সে বলবে, কোন সময় কোথায় সে কি কাজ করেছিল। তারপর বলা হয়েছে, সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে দলে দলে আসতে থাকবে। তাদের কর্মকাণ্ড তাদেরকে দেখানো হবে। এমন পূর্ণাংগ ও বিস্তারিতভাবে এই কর্মকাণ্ড পেশ করা হবে যে, সামান্য বালুকণা পরিমাণ নেকী বা পাপও সামনে এসে যাবে।
আয়াতের ব্যাখ্যাঃ
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَ
১. যখন প্রবল কম্পনে যমীন প্রকম্পিত করা হবে। ‘যালযালাহু’ মানে হচ্ছে, প্রচণ্ডভাবে জোরে জোরে ঝাড়া দেয়া, ভূকম্পিত হওয়া। অর্থাৎ, এর অর্থ হল ভূমিকম্পের কারণে সারা পৃথিবী কেঁপে উঠবে। আর সমস্ত বস্তু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। এই অবস্থা তখন হবে, যখন শিঙ্গায় প্রথমবার ফুৎকার করা হবে।
وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا
২. আর যমীন তার ভার বের করে দেবে। মাটির নিচে যত লোক দাফন আছে, তাদেরকে পৃথিবীর ভার বা বোঝা বলা হয়েছে। মাটি তাদেরকে কিয়ামতের দিন বের করে উপরে ফেলবে। অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুমে সকলে জীবিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে। আর এরূপ হবে শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুৎকারের পর।
وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا
৩. আর মানুষ বলবে, এর কী হল? মানুষ অর্থ প্রত্যেকটি মানুষ হতে পারে। কারণ পুনরায় জীবন লাভ করে চেতনা ফিরে পাবার সাথে সাথেই প্রত্যেক ব্যক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়া এটিই হবে যে, এসব কি হচ্ছে? আবার মানুষ অর্থ আখেরাত অস্বীকারকারী মানুষও হতে পারে। কারণ যে বিষয়কে অসম্ভব মনে করতো তা তার সামনে ঘটে যেতে থাকবে এবং সে এসব দেখে অবাক ও পেরেশান হবে। তবে ঈমানদারদের মনে এ ধরনের বিস্ময় থাকবে না।
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
৪. সেদিন যমীন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে,
(১) যমীন কি জানিয়ে দেবে এ নিয়ে তাফসীরবিদদের মধ্যে কয়েকটি মত রয়েছে। সম্ভবত সব কয়টি মতই এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে।
এক. ইয়াহইয়া ইবনে সালাম বলেন, এর অর্থ, যমীন তার থেকে যা যা বের করে দিল (সম্পদরাজি) তা জানিয়ে দিবে। এর সমর্থনে একটি হাদীসে এসেছে, “কোন মানুষের জীবন যদি কোন সুনির্দিষ্ট স্থানে অবসান হওয়ার কথা থাকে তখন আল্লাহ তার জন্য সেখানে যাওয়ার একটি প্রয়োজন তৈরী করে দেন। তারপর যখন সে স্থানে পৌঁছে তখন তাকে মৃত্যু দেয়া হয়। তারপর যমীন কিয়ামতের দিন বলবে, হে রব! এটা তুমি আমার কাছে আমানত রেখেছিলে।” [ইবনে মাজাহ: ৪২৬৩]
দুই. ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ আয়াতের অর্থ, আগের আয়াতে যে বলা হয়েছে মানুষ প্রশ্ন করবে, যমীনের কি হল? এর জওয়াব যমীনই দিবে যে, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে।
তিন. আবু হুৱায়ারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এর অর্থ, যমীন তার মধ্যে কৃত ভাল-মন্দ যাবতীয় কর্মকাণ্ডের হিসাব দাখিল করবে। যমীনের ওপর যা কিছু ঘটে গেছে তার সবকিছু সে কিয়ামতের দিন বলে দেবে। [কুরতুবী]
بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا
৫. কারণ আপনার রব তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন।
অর্থাৎ, মাটিকে কথা বলার শক্তি আল্লাহই সেদিন দান করবেন। অতএব এটা কোন আশ্চর্যজনক কথা নয়। যেমন সেদিন মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহ বাকশক্তি দান করবেন, ঠিক মাটিও আল্লাহর হুকুমে কথা বলবে।
یَوۡمَئِذٍ یَّصۡدُرُ النَّاسُ اَشۡتَاتًا ۬ۙ لِّیُرَوۡا اَعۡمَالَهُمۡ
৬. সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখান যায়।
এর অর্থ, মানুষ সেদিন হাশরের মাঠ থেকে তাদের আমল অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে; তাদের কেউ জান্নাতে যাবে, কেউ যাবে জাহান্নামে।
এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, বিগত হাজার হাজার বছরে সমস্ত মানুষ যে যেখানে মরেছিল সেখান থেকে অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থেকে দলে দলে চলে আসতে থাকবে।
অর্থাৎ তাদের আমল তাদেরকে দেখানো হবে। প্রত্যেকে দুনিয়ায় কি কাজ করে এসেছে তা তাকে বলা হবে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কাফের-মুমিন, সৎকর্মশীল-ফাসেক, আল্লাহর হুকুমের অনুগত-নাফরমান সবাইকে অবশ্যই তাদের আমলনামা দেয়া হবে।
يَصْدُر শব্দের অর্থ হল, বের হবে, ফিরে যাবে। অর্থাৎ, কবর থেকে বের হয়ে হিসাবের ময়দানের দিকে অথবা হিসাব শেষে জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে ফিরে যাবে। أشتَاتا শব্দের অর্থ হল, ভিন্ন ভিন্ন; অর্থাৎ, দলে দলে। কিছু লোক ভয়শূন্য হবে, কিছু ভয়ে ভীত হবে। কিছু লোকের রঙ গৌরবর্ণের হবে; যেমন জান্নাতীদের হবে। আবার কিছু লোকের রঙ কাল বর্ণের হবে; যা তাদের জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন হবে।
সূরা আল-হাক্কাহ (১৮-৩৭)
یَوۡمَئِذٍ تُعۡرَضُوۡنَ لَا تَخۡفٰی مِنۡكُمۡ خَافِیَۃٌ ﴿۱۸﴾
সেদিনটিতে তোমাদেরকে পেশ করা হবে। তোমাদের কোন গোপনীয় বিষয়ই আর সেদিন গোপন থাকবে না।
فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ فَیَقُوۡلُ هَآؤُمُ اقۡرَءُوۡا كِتٰبِیَهۡ ﴿ۚ۱۹﴾
সে সময় যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখো।
اِنِّیۡ ظَنَنۡتُ اَنِّیۡ مُلٰقٍ حِسَابِیَهۡ ﴿ۚ۲۰﴾
আমি জানতাম, আমাকে হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে।
فَهُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ ﴿ۙ۲۱﴾
তাই সে মনের মত আরাম আয়েশের মধ্যে থাকবে।
فِیۡ جَنَّۃٍ عَالِیَۃٍ ﴿ۙ۲۲﴾
উন্নত মর্যাদার জান্নাতে।
قُطُوۡفُهَا دَانِیَۃٌ ﴿۲۳﴾
যার ফলের গুচ্ছসমূহ নাগালের সীমায় অবনমিত হয়ে থাকবে।
كُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا هَنِیۡٓـئًۢا بِمَاۤ اَسۡلَفۡتُمۡ فِی الۡاَیَّامِ الۡخَالِیَۃِ ﴿۲৪﴾
(এসব লোকদের কে বলা হবে:) অতীত দিনগুলোতে তোমরা যা করে এসেছো তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো।
وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِشِمَالِهٖ ۬ۙ فَیَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُوۡتَ كِتٰبِیَهۡ ﴿ۚ۲۵﴾
আর যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেয়া হবে সে বলবে: হায়! আমার আমলনামা যদি আমাকে আদৌ দেয়া না হতো।
وَ لَمۡ اَدۡرِ مَا حِسَابِیَهۡ ﴿ۚ۲۶﴾
এবং আমার হিসেব যদি আমি আদৌ না জানতাম তাহলে কতই না ভাল হত।
یٰلَیۡتَهَا كَانَتِ الۡقَاضِیَۃَ ﴿ۚ۲۷﴾
হায়! আমার সেই মৃত্যুই (যা দুনিয়াতে এসেছিলো) যদি চূড়ান্ত হতো।
مَاۤ اَغۡنٰی عَنِّیۡ مَالِیَهۡ ﴿ۚ۲۸﴾
আজ আমার অর্থ-সম্পদ কোন কাজে আসলো না।
هَلَكَ عَنِّیۡ سُلۡطٰنِیَهۡ ﴿ۚ۲۹﴾
আমার সব ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছে।
خُذُوۡهُ فَغُلُّوۡهُ ﴿ۙ۳۰﴾
(আদেশ দেয়া হবে) পাকড়াও করো ওকে আর ওর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও।
ثُمَّ الۡجَحِیۡمَ صَلُّوۡهُ ﴿ۙ۳۱﴾
তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো।
ثُمَّ فِیۡ سِلۡسِلَۃٍ ذَرۡعُهَا سَبۡعُوۡنَ ذِرَاعًا فَاسۡلُكُوۡهُ ﴿ؕ۳۲﴾
এবং সত্তর হাত লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলো।
اِنَّهٗ كَانَ لَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ الۡعَظِیۡمِ ﴿ۙ۳۳﴾
সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করতো না।
وَ لَا یَحُضُّ عَلٰی طَعَامِ الۡمِسۡکِیۡنِ ﴿ؕ۳۴﴾
এবং দুস্থ মানুষের খাদ্য দিতে উৎসাহিত করতো না।
فَلَیۡسَ لَهُ الۡیَوۡمَ هٰهُنَا حَمِیۡمٌ ﴿ۙ۳۵﴾
তাই আজকে এখানে তার সমব্যথী কোন বন্ধু নেই।
وَّ لَا طَعَامٌ اِلَّا مِنۡ غِسۡلِیۡنٍ ﴿ۙ۳۶﴾
আর কোন খাদ্যও নেই ক্ষত নিঃসৃত পূঁজ-রক্ত ছাড়া।
لَّا یَاۡكُلُهٗۤ اِلَّا الۡخَاطِـُٔوۡنَ ﴿۳۷﴾
যা পাপীরা ছাড়া আর কেউ খাবে না।
সূরা আল-ইনশিকাক (৬-১৫)
یٰۤاَیُّهَا الۡاِنۡسَانُ اِنَّكَ كَادِحٌ اِلٰی رَبِّكَ كَدۡحًا فَمُلٰقِیۡهِ ۚ﴿۶﴾
হে মানুষ! তুমি কঠোর পরিশ্রম করতে করতে তোমার রবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো, পরে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে।
فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ﴿۷﴾
তারপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হয়েছে,
فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا ۙ﴿۸﴾
তার কাছ থেকে হালকা হিসেব নেয়া হবে।
وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ مَسۡرُوۡرًا ؕ﴿۹﴾
এবং সে হাসিমুখে নিজের লোকজনের কাছে ফিরে যাবে।
وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ وَرَآءَ ظَهۡرِهٖ ﴿ۙ۱۰﴾
আর যার আমলনামা তার পিছন দিক দেয়া হবে।
فَسَوۡفَ یَدۡعُوۡا ثُبُوۡرًا ﴿ۙ۱۱﴾
সে মৃত্যুকে ডাকবে।
وَّ یَصۡلٰی سَعِیۡرًا ﴿ؕ۱۲﴾
এবং জ্বলন্ত আগুনে গিয়ে পড়বে।
اِنَّهٗ كَانَ فِیۡۤ اَهۡلِهٖ مَسۡرُوۡرًا ﴿ؕ۱۳﴾
সে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ডুবে ছিল।
اِنَّهٗ ظَنَّ اَنۡ لَّنۡ یَّحُوۡرَ ﴿ۚۛ۱۴﴾
সে মনে করেছিল, তাকে কখনো ফিরতে হবে না।
بَلٰۤی ۚۛ اِنَّ رَبَّهٗ كَانَ بِهٖ بَصِیۡرًا ﴿ؕ۱৫﴾
না ফিরে সে পারতো কেমন করে? তার রব তার কার্যকলাপ দেখছিলেন।
অপরাধীদেরকে ঘিরে আনা হবে
কিয়ামতের দিন শরীর প্রকম্পিত হওয়ার মতো অবস্থা দেখে মানুষ ভয়ে এমনই দিশেহারা হয়ে পড়বে যে, তারা কিছুতেই স্মরণ করতে পারবে না পৃথিবীতে জীবিত থাকা কালে তারা কত দিন জীবিত ছিল। পরকালের সূচনা এবং তার দীর্ঘতা দেখে পৃথিবীর শত বছরের হায়াতকে তারা মনে করবে বোধ হয় এই ঘন্টাখানেক পৃথিবীতে ছিলাম। ইসলামী বিধান যারা মানেনি তারা সেদিন পৃথিবীতে কত হায়াত পেয়েছিল তা ভুলে যাবে। এ ভুলে যাওয়া কোন স্বাভাবিকভাবে ভুলে যাওয়া নয় বরং ভয়ে আতঙ্কে ভুলে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন-
یَّوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ وَ نَحۡشُرُ الۡمُجۡرِمِیۡنَ یَوۡمَئِذٍ زُرۡقًا ﴿۱۰۲﴾ۚۖ
অপরাধীদেরকে এমনভাবে ঘিরে আনবো যে তাদের চক্ষু আতংকে বিষ্ফোরিত হয়ে যাবে। তারা পরস্পর ফিসফিস করে বলাবলি করবে, আমরা পৃথিবীতে বড় জোর দশদিন মাত্র সময় কাটিয়েছি। (সূরা ত্ব-হা-১০২)
মহান আল্লাহ সেদিন মানুষকে প্রশ্ন করবেন-
قٰلَ كَمۡ لَبِثۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ عَدَدَ سِنِیۡنَ ﴿۱۱۲﴾
তোমরা পৃথিবীতে কতদিন ছিলে?
قَالُوۡا لَبِثۡنَا یَوۡمًا اَوۡ بَعۡضَ یَوۡمٍ فَسۡـَٔلِ الۡعَآدِّیۡنَ ﴿۱۱۳﴾
উত্তরে তারা বলবে একদিন বা তার চেয়ে কম সময় আমরা পৃথিবীতে ছিলাম। (সূরা মুমিনুন-১১২-১১৩)
আল্লাহর কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে-
وَ یَوۡمَ تَقُوۡمُ السَّاعَۃُ یُقۡسِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ۬ۙ مَا لَبِثُوۡا غَیۡرَ سَاعَۃٍ ؕ كَذٰلِكَ كَانُوۡا یُؤۡفَكُوۡنَ ﴿۵۵﴾
যখন সে সময়টি এসে পড়বে, তখন অপরাধীগণ শপথ করে বলবে যে পৃথিবীতে আমরা এক ঘন্টার বেশি ছিলাম না। (সূরা রূম-৫৫)
﴿فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ﴾
৭) তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখে নেবে
﴿وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ﴾
৮) এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে৷
ذَرَّةٍ অর্থ বিন্দু, সরিষাদানা, ছোট্ট পিপীলিকা। এর দ্বারা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছোট্ট বস্ত্তর উপমা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পাপ বা পূণ্য যত ছোটই হৌক না কেন ক্বিয়ামতে বিচারের দিন তা দেখা হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ ... (নিসা ৪/৪০)।
فَاَمَّا مَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُهٗ ۙ﴿۶ فَهُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ ؕ﴿۷ وَاَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَازِیۡنُهٗ ۙ﴿۸ فَاُمُّهٗ هَاوِیَۃٌ ؕ﴿۹
সেদিন সব আমল ওযন করা হবে। যার ওযন ভারী হবে, সে জান্নাতী হবে। আর যার ওযন হালকা হবে, সে জাহান্নামী হবে (ক্বারে‘আহ ১০১/৬-৯)।
প্রত্যেকটি সামান্যতম সৎকাজ বা অসৎকাজের হিসাব অবশ্যই হবে। তাই কোন ছোট সৎকাজকে ছোট মনে করে ত্যাগ করা উচিত নয় এবং ছোট গোনাহকেও অবহেলা করা উচিত নয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো-তা এক টুকরা খেজুর দান করার বা একটি ভালো কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন” [বুখারী: ৬৫৪০]
“কোন সৎকাজকেও সামান্য মনে করো না, যদিও তা পানিচ্ছু ব্যক্তিকে পানি দেওয়া বা ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা হয়” [আহমাদ, বুখারী, মুসলিম]
“হে মুসলিম মেয়েরা! কোন প্রতিবেশী সামান্য উপহারকেও তুচ্ছ মনে করবে না” [বুখারী: ৬০১৭]
“ছোট গোনাহ থেকে দূরে থাকো। আল্লাহর দরবারে সেগুলোরও হিসাব হবে।” [ইবনে মাজাহ: ৪২৪৩]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস: আয়াত ﴿فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ...﴾-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘অনন্য ও সারগর্ভ আয়াত’ বলেছেন।
কাফিরদের সৎকর্ম
কাফিররা আখেরাতে তাদের সৎকর্মের কোন প্রতিদান পাবে না। দুনিয়াতেই তারা তার প্রতিদান পেয়ে যাবে—যেমন ধন-সম্পদ, সন্তানাদি ও সুখ-সমৃদ্ধি। ক্বিয়ামতের দিন তাদের আমল ধূলিকণায় পরিণত করা হবে। (ফুরক্বান ২৫/২৩)
কারণ কুফরী তাদের সব আমল বিনষ্ট করে দেবে। তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তবে তাদের শাস্তির তারতম্য হতে পারে। যেমন আবু ত্বালিবের শাস্তি হালকা করা হয়েছিল।
সংগৃহিতঃ
তাফসীরে যাকারিয়া, আহসানুল বয়ান ও তাফহীমুল কুর’আন থেকে নেয়া।
সাইয়েদ আবুল আলা মাওদুদী (রহঃ) নোটপ্রস্তুতকারী : তাজুল ইসলাম তাইমী’
১ম পয়েন্ট । তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা
প্রথমেই পরিষ্কার বার্তা :
এটি কুরআনের ভূমিকা নয়—তাফসিরগ্রন্থ তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা৷
১। তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা: কুরআন পাঠকের সংকট @@ ২। সংকট উত্তরণের উপায় @@ ৩। কুরআনের মুল আলোচ্য@@ ৪। ইসলামী দাওয়াতের সূচনা পর্ব @@ ৫। ইসলামী দাওয়াতের দ্বিতীয় অধ্যায় @@ ৬। ইসলামী দাওয়াতের তৃতীয় অধ্যায় @@ ৭। কুরআনের বণর্নাভংগী @@ ৮। এহেন বিন্যাসের কারণ @@ ৯। কুরআন কিভাবে সংকলিত হলো @@ ১০। কুরআন অধ্যায়নের পদ্ধতি @@ ১১। কুরআনের প্রাণসত্তা অনুধাবন @@ ১২। কুরআনী দাওয়াতের বিশ্বজনীনতা @@ ১৩। পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান @@ ১৪। বৈধ মতপার্থক্য @@
লেখার মূল লক্ষ্য দু’টি:
১. কুরআন বুঝার প্রাথমিক খোরাক :
কুরআন বুঝতে হলে কিছু প্রাথমিক সত্য আগে জানা দরকার৷ তা না হলে পাঠের মাঝপথে মনে আসবে সংশয়, আর থেমে যাবে হৃদয় দিয়ে অনুধাবনের পথ৷ বহু মানুষ বছরের পর বছর কেবল বাইরের কথা পড়ে যায়, ভেতরের আলোয় পৌঁছায় না৷
২. জিজ্ঞাসু মনের প্রথম আলাপন:
যে প্রশ্নগুলো কুরআন পড়ার শুরুতেই মনে জাগে, লেখক তাদের আগে থেকেই সামনে এনে জবাব দিয়েছেন৷ এসব প্রশ্ন তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ৷
কুরআন পাঠকের সংকট :
“যে দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তুতি নিয়ে সাধারণ বই পড়া হয়, সেই মানসিকতা নিয়ে কুরআনের দরজায় এলে—কুরআন পাঠ নয়, বরং আত্মিক বিভ্রান্তিই বেশি হয়।”
• পাঠক কুরআনকে সাধারণ বইয়ের মতো অধ্যায়ভিত্তিক ও ধারাবাহিক মনে করে পড়তে যান৷
• কিন্তু কুরআনের রচনাশৈলী, ভাষা ও উপস্থাপন একেবারে ভিন্ন হওয়ায় তারা বিভ্রান্ত হন৷
• কুরআনের মূল উদ্দেশ্য, কেন্দ্রীয় বার্তা ও প্রসঙ্গ না জানায় তারা তা ধরতে পারেন না৷
• ফলে তারা খণ্ড খণ্ড তত্ত্ব পেলেও কুরআনের সামগ্রিক দিক ও প্রাণসত্তা থেকে বঞ্চিত হন৷
• এই বিভ্রান্তি থেকেই অনেকের মনে সন্দেহ, বিকৃত ব্যাখ্যা ও ভুল সিদ্ধান্ত জন্ম নেয়৷
• মূল সংকট কুরআনের নয়, বরং পাঠকের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তুতির অভাবে৷
বিস্তারিত :
১. সাধারণ বই-পাঠের মানসিকতা বনাম বাস্তবতা :
পাঠক কুরআনকেও সাধারণ পাঠ্যবইয়ের মতো অধ্যায়-অনুচ্ছেদ ভিত্তিক পাবে বলে ধরে নেয়৷ ভাবেন, ধারাবাহিকভাবে জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো সাজানো থাকবে—যেমন আইন, নীতি, ইতিহাস ইত্যাদি।
বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন : কুরআনে বিষয়বস্তু একাধারে আকীদা, শরীয়াহ, ইতিহাস, উপদেশ, ভয়, সুসংবাদ, যুক্তি—সব একত্র৷ এক প্রসঙ্গের মাঝে অন্য প্রসঙ্গ ঢুকে পড়ে; বর্ণনা ও শব্দবিন্যাসেও আসে বৈচিত্র্য৷
২. পাঠকের হতাশা ও বিভ্রান্তি:
সুবিন্যস্ত সূচিপত্র না পেয়ে পাঠক ভাবেন—এটি অগোছালো, খণ্ডিত বক্তব্যের সমষ্টি৷ সন্দেহবাদীরা এখানেই কুরআনের বিরুদ্ধে আপত্তির ভিত্তি তৈরি করে৷
৩. ব্যাতিক্রম রচনাশৈলী :
কুরআনের ভাষা, বিশ্লেষণপদ্ধতি, শব্দের গভীরতা, প্রেক্ষাপট ইত্যাদি সাধারণ পাঠ্যশাস্ত্র থেকে আলাদা৷ দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতির কারণে পাঠক আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থ ধরতে ব্যর্থ হয়৷
৪. ফলাফল:
কেউ কেবল কিছু বিচ্ছিন্ন নসিহত ও উপদেশ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে৷ কেউবা ভুল পটভূমির কারণে অর্থবিকৃতি ও চিন্তার বিচ্যুতিতে পড়ে৷
৫. মূল সংকট:
কুরআন বোঝার আগে প্রয়োজন যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাষা ও বর্ণনা পদ্ধতির বোধ৷ এগুলো ছাড়া কুরআনের হৃদয় ছুঁয়ে দেখা সম্ভব নয়৷
❑ ৪টি প্রশ্ন আগে বুঝতে হবে :
১. সংকট কী? — কুরআন পাঠকের সংকট হচ্ছে কুরআন বুঝতে গিয়ে সংশয় ও সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া৷
২. সংকট কেন এবং কোথা থেকে তৈরি হয়েছে? — মৌলিক ধারণার অভাবে৷
৩. সংকট কিসের উপর ভিত্তি করে? — কুরআনের পরিচয় ও মুহাম্মদ (সা.) এর দাওয়াত সম্পর্কে ভুল দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে৷
৪. সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কেমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন? — নিজস্ব চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে কুরবানী দিয়ে কুরআন ও রাসূলের (সা.) দাওয়াত অনুযায়ী দেখা৷
❖ কুরআন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা :
কুরআন কোনো প্রচলিত গ্রন্থ নয়; এটি এক অভিনব, স্বতন্ত্র ও সর্বযুগোপযোগী কিতাব। প্রচলিত বইয়ের কাঠামো ও মানদণ্ডে কুরআনকে বিচার করলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়৷
❖ কুরআন অনুধানের পূর্বশর্ত :
কুরআনের প্রকৃত পরিচয় ও তার উপস্থাপক রাসূল (সা.)-এর দাওয়াতকে গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে৷ বিশ্বাস না থাকলেও কুরআনের বক্তব্য বোঝার জন্য এর মূল দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিতে হয়৷
সূত্রসমূহ :
কুরআনের মূল বিষয়বস্তু :
মানুষের কল্যাণ কিসে—এই প্রশ্নের যথার্থ ও জাজ্জ্বল্যমান সত্যভিত্তিক উত্তর৷
কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় :
মানুষ যে মতবাদ ও কর্মনীতি গ্রহণ করেছে তা ভুল; সত্য হলো আল্লাহর দেওয়া দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি৷
চূড়ান্ত লক্ষ্য :
• মানুষকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি গ্রহণে আহ্বান৷
• আল্লাহর হেদায়াত স্পষ্টভাবে তুলে ধরা৷
মানব সমাজের সমস্যা :
অনুমাননির্ভরতা, প্রাকৃতিকতা ও শয়তানী প্রবৃত্তির কারণে মানুষ সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে৷ সত্য বিকৃতির কাজ মানুষ নিজেরাই করে এসেছে৷
তিনটি মূল বিষয় :
১. বিষয়বস্তু: মানব কল্যাণের সত্য অনুসন্ধান৷
২. আলোচ্য বিষয়: সত্য-মিথ্যার বিভ্রান্তি দূরীকরণ৷
৩. লক্ষ্য ও বক্তব্য: সত্য পথে আহ্বান৷
কুরআনের আলোচনার বিষয়সমূহ :
• আকাশ-পৃথিবীর গঠন
• মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া
• পূর্ববর্তী জাতির ইতিহাস
• জাতির আকীদা, নৈতিকতা, কর্মের সমালোচনা
• অতিপ্রাকৃত বিষয়াবলীর ব্যাখ্যা
বিষয়ভিত্তিক আলোচনা
উদ্দেশ্য:
আলোচনার বৈশিষ্ট্য:
কুরআন নাযিলের পদ্ধতি
দাওয়াতের শুরু: মক্কা ও নিজ জাতি থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে প্রসারিত করা হয়।
৪র্থ পয়েন্ট। ইসলামী দাওয়াতের সূচনা পর্ব (মক্কী দাওয়াতের প্রথম ৪-৫ বছর):
৫ম পয়েন্ট। দাওয়াতের দ্বিতীয় অধ্যায় (প্রায় ৯ বছর)
দ্বিতীয় অধ্যায় (প্রায় ৯ বছর):
৬ষ্ঠ পয়েন্ট। দাওয়াতের তৃতীয় অধ্যায়
তৃতীয় অধ্যায় (মদীনী পর্ব – ১০ বছর):
৮ম পয়েন্ট। এহেন বিন্যাসের কারণ
আয়াত বিন্যাসে নবী ﷺ-র ভূমিকা:
১১ তম পয়েন্ট। কুরআনের প্রাণসত্তা অনুধাবন
১৩ তম পয়েন্ট। পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান
১৪ তম পয়েন্ট। বৈধ মতপার্থক্য
মতপার্থক্যের দুই ধরণ এবং কুরআনের রায়:
কুরআন এই ধরনের মতবিরোধ, দলাদলি ও ফেরকাবন্দির কঠোর নিন্দা করে।
কুরআন কী চাইছে?:
আল ইমরান-১০৪: وَلۡتَكُنۡ مِّنۡكُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰۴ (১০৪) তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে সফলকাম।
ইউসূফ-১০৮: قُلۡ هٰذِهٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِكِیۡنَ ﴿۱۰۸ ১০৮. বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও । আর আল্লাহ কতই না পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।
আন নাহল-১২৫, اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّكَ بِالۡحِكۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡهُمۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِهٖ وَ هُوَ اَعۡلَمُ ۱۲۵- بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সুন্দরভাবে। তোমার রাব্ব ভাল করেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী এবং কে সৎ পথে আছে।
হামীম আস সাজদাহ-৩৩ وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۳۳ আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’?
মায়েদা-৬৭ : یٰۤاَیُّهَا الرَّسُوۡلُ بَلِّغۡ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ مِنۡ رَّبِّكَ ؕ وَ اِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿۶۷ হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর, যদি না কর তাহলে তুমি তাঁর বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করলে না। মানুষের অনিষ্ট হতে আল্লাহ্ই তোমাকে রক্ষা করবেন, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে কক্ষনো সৎপথ প্রদর্শন করবেন না।
দাওয়াত সংক্রান্ত ১টি হাদীস মুখস্ত, عَن حُذَيفَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَاباً مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ فَلا يُسْتَجَابُ لَكُمْ رواه الترمذي، وَقالَ حديث حسن (১৬০৪) হুযাইফাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না হলে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে দু’আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না। (আহমাদ, তিরমিযী ২১৬৯, সহীহুল জামে ৭০৭০)<