ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন
# দারস তৈরী - সুরা আল ইনফিতার # বই নোট: সত্যের সাক্ষ্য # বাইয়াত সংক্রান্ত আয়াত # বাইয়াত সংক্রান্ত হাদিস # নামায সংক্রান্ত সম্পর্কিত মাসায়েল
১) إِذَا ٱلسَّمَآءُٱنفَطَرَتْ ২) وَإِذَا ٱلْكَوَاكِبُٱنتَثَرَتْ ৩) وَإِذَا ٱلْبِحَارُ فُجِّرَتْ ৪) وَإِذَا ٱلْقُبُورُ بُعْثِرَتْ ৫) عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ ৬) يَٰٓأَيُّهَا ٱلْإِنسَٰنُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ ٱلْكَرِيمِ ৭) ٱلَّذِى خَلَقَكَ فَسَوَّىٰكَ فَعَدَلَكَ ৮) فِىٓ أَىِّ صُورَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ ৯) كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِٱلدِّينِ ১০)وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَٰفِظِينَ ১১)كِرَامًا كَٰتِبِينَ ১২)يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ ১৩)إِنَّ ٱلْأَبْرَارَ لَفِى نَعِيمٍ ১৪)وَإِنَّ ٱلْفُجَّارَ لَفِى جَحِيمٍ ১৫)يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ ٱلدِّينِ ১৬)وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَآئِبِينَ ১৭)وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا يَوْمُ ٱلدِّينِ ১৮)ثُمَّ مَآ أَدْرَىٰكَ مَا يَوْمُ ٱلدِّينِ ১৯)يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْـًٔا وَٱلْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّهِ
১) যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, ২) যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, ৩) যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে, ৪) এবং যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে, ৫) তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। ৬) হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? ৭) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। ৮) যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। ৯) কখনও বিভ্রান্ত হয়ো না; বরং তোমরা দান-প্রতিদানকে মিথ্যা মনে কর। ১০) অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। ১১) সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। ১২) তারা জানে যা তোমরা কর। ১৩) সৎকর্মশীলগণ থাকবে জান্নাতে। ১৪) এবং দুষ্কর্মীরা থাকবে জাহান্নামে; ১৫) তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে। ১৬) তারা সেখান থেকে পৃথক হবে না। ১৭) আপনি জানেন, বিচার দিবস কি? ১৮) অতঃপর আপনি জানেন, বিচার দিবস কি? ১৯) যেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কৃত হবে আল্লাহর।
সূরা আল-ইনফিতার (سورة الانفطار) হলো পবিত্র কোরআনের ৮২তম সূরা, যার অর্থ "বিদীর্ণ হওয়া"। এই সূরায় কিয়ামত বা বিচার দিবসের বিভীষিকা এবং আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব ও মানুষের অবাধ্যতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নামকরণ: প্রথম বাক্যের ইনফিতার শব্দটিকে নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, যার অর্থ ফেটে যাওয়া। সাধারণত অধিকাংশ সূরার মত এখানে চিহ্নস্বরূপ এই নামকরণ করা হয়েছে।
নাযিলের সময়কাল: মক্কী সূরা এবং প্রাথমিক অবস্থায় অবতীর্ণ। মক্কাবাসীদেরকে আখিরাত সম্পর্কে সচেতন করা প্রথম যুগের অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য: সূরাটির বিষয়বস্তু আখিরাত। হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণিত একটি হাদিস, ‘যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিনটি নিজের চোখে দেখতে চায় সে যেন সূরা তাকভীর, সূরা ইনফিতার ও সূরা ইনশিকাক প ে নেয়।’
এই সূরায় প্রথমে কিয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং সে সময়ে দুনিয়ায় কৃত ভালো ও মন্দ সকল কর্ম প্রত্যেকেই দেখবে। তারপর মানুষের সৃষ্টি এবং সকল সৃষ্টির মধ্যে অনন্য বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞান-যোগ্যতা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বদানের পরও তার রবকে ভুলে থাকার কারণ যে আখিরাতে অবিশ্বাস সেটি ব্যক্ত করা হয়েছে।
মানুষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, সম্মানিত লেখকবৃন্দ তার গতিবিধি, চালচলন ও কর্মকান্ড সব লিপিবদ্ধ করছেন এবং নেককারদের শুভ পরিণতি ও বদকারদের কঠিন শাস্তির কথা এই সূরায় বলা হয়েছে। সেদিনে কোন সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না।
কিয়ামতের বিভীষিকা: এই সূরার শুরুতে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, নক্ষত্ররাজি খসে প বে এবং সমুদ্রগুলো উত্তাল হয়ে উঠবে।
আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব: সূরাটিতে আল্লাহ তা'আলার কুদরত ও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলা হয়েছে, যিনি মানুষকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য পথপ্রদর্শক প্রেরণ করেছেন।
মানুষের অবাধ্যতা: সূরাটিতে মানুষের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে অবাধ্যতা করে, তাদের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রতিদান ও শাস্তি: কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার কর্মফল অনুযায়ী প্রতিদান বা শাস্তি দেওয়া হবে, এই বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
শুভ ও অশুভ পরিণাম: সূরাটিতে ভালো ও মন্দের দুটি পথ এবং তাদের পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যারা সৎকর্ম করে, তারা পুরষ্কার লাভ করবে এবং যারা অসৎকর্ম করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।
সারসংক্ষেপে, সূরা আল-ইনফিতার কিয়ামত ও বিচার দিবস, আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব, মানুষের অবাধ্যতা এবং প্রতিদান ও শাস্তির বিষয়ে আলোকপাত করে।
ব্যাখ্যা: প্রথম তিনটি আয়াতে কিয়ামত দিনের প্রাথমিক অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কুরআন মজিদে বিভিন্ন জায়গায় কিয়ামতের বর্ণনা রয়েছে। বর্তমানে যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার ভিত্তিতে এ বিশ্বজাহান পরিচালিত হচ্ছে, আল্লাহপাক নিজেই একদিন তা ভেঙ্গে দেবেন।
হাদিসে সিঙ্গায় তিনটি ফুৎকারের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ফুৎকারে এক প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প, তা কোন এক নির্দিষ্ট এলাকায় নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপী সংঘটিত হবে। এখানে বলা হয়েছে যে আকাশ ফেটে যাবে, তারকাসমূহ বিক্ষিপ্ত হয়ে প বে এবং সমুদ্রসমূহ ফেটে যাবে। কোথাও বলা হয়েছে সমুদ্রসমূহে আগুন জ্বলতে থাকবে।
কোথাও বলা হয়েছে পাহাড়সমূহ ধূলা পশমের মত উ তে থাকবে। মোট কথা পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল, সাগর-মহাসাগর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এ জমীন এক সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। মনে হবে যেন একটি দস্তরখানা বিছায়ে দেয়া হয়েছে।
পরবর্তী ফুৎকারে সব মানুষ কবর থেকে উঠে আসবে এবং সে তখন সামনের ও পেছনের ঘটে যাওয়া সকল কৃতকর্ম জানতে পারবে। অর্থাৎ সে তার জীবদ্দশায় ভালো-মন্দ যা করেছে তা যেমন জানতে পারবে তেমনি মৃত্যুর পরে তার রেখে আসা আমলের দ্বারা অন্যান্যরা প্রভাবিত হলে তারও ছওয়াব ও গুনাহের সে ভাগীদার হবে।
৬-১২ আয়াতে মানুষের সুন্দর গঠন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের সুসামঞ্জ্যকরণ ও বিভিন্ন আকৃতিতে সৃষ্টির বিষয় উল্লেখ করে তার মধ্যে সম্বিত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ময়ের গর্ভে পিতার শুক্রকীট নিক্ষেপ এবং ক্রমবিকাশের মাধ্যমে মানবশিশুর জন্ম আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। মানবশিশুর বে ে উঠা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংযোজন, প্রাণের সঞ্চার আল্লাহর ইচ্ছার ফলেই সম্ভব হয়।
তারপর মানুষের আকার-আকৃতি, চেহারা, কন্ঠস্বর, এমন কী বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপের ভিন্নতাসহ প্রত্যেককে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি আল্লাহপাকের অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই পরিচায়ক। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ এ দুনিয়ায় আসবে কারো সাথে কারো কোন মিল হবে না; সবাই স্বতন্ত্র দৈহিক কাঠামো, রুচি-পছন্দ নিয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করবে-এ সব চিন্তা করলে আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত না হয়ে উপায় থাকে না।
কিন্তু মানুষ উল্টো তাঁর নাফরমানিতেই লিপ্ত রয়েছে। আল্লাহর ভাষায় এর মূলে কারণ একটিই এবং তা হলো আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাস। অথচ মানুষের ভালো-মন্দ সকল কাজই আল্লাহর নিযুক্ত ফেরেশতা কর্তৃক রেকর্ডভুক্ত হচ্ছে এবং তাঁরা হলেন সম্মানিত, অর্থাৎ তাঁরা এমন নন যে, কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা ঘুষ-দুর্নীতির বিনিময়ে মিথ্যা লেখার মত তাঁরা নন।
তাঁদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, তাঁরা দুনিয়ার সরকারসমূহের ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের মত নন যারা হাজারো চেষ্টা করেও অনেক সময় প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হন। আল্লাহর ফেরেশ্তারা সকল বিষয়ে জ্ঞাত; কোন কিছুই তাঁদের অগোচরে নয়।
পৃথিবীতে মানুষের আচার-আচরণ, চাল-চলন ও কর্মকান্ডে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি আখিরাতে তাদের পরিণতিও ভিন্ন হবে। এখানে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেছেন যে, বর্তমান দুনিয়ায় যারা নেক কাজ করবে তারা আখিরাতে পরমানন্দে থাকবে; পক্ষান্তরে পাপীদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ আযাব। যারা জাহান্নামে যাবে কখনই সেখান থেকে তারা সরে প তে পারবে না। সেদিনের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আল্লাহপাক বলেছেন, আখিরাতে কোন সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না।
অতীতকালে মানুষের একটি ধারণা ছিল যে, নবী-রসূল বা আল্লাহর নেক বান্দারা বা তাদের উপাস্য দেবতারা সুপারিশ করে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দিবে। এ ভ্রান্তি বর্তমানেও রয়েছে, যার কারণে মানুষ বিভিন্ন মাজার ও দরবারে ঘুরাঘুরি করে। এখানে বলা হয়েছে, কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফয়সালা সেদিন একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে।
অবশ্য শিরকমিশ্রিত শাফায়াতের পরিবর্তে ইসলাম আমাদের সম্মুখে তাওহীদভিত্তিক সুপারিশের ধারণা প্রদান করেছে। সুপারিশ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার জন্য সুপারিশ পছন্দ করবেন কেবল তিনিই সুপারিশ করতে পারবেন। আল্লাহর ওপর প্রভাব বিস্তার করে বা সুপারিশের মাধ্যমে কাউকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে নেয়ার ক্ষমতা সেদিন কারো থাকবে না।
আল্লাহপাকের ক্ষমা করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে সেদিন কিছু লোককে তিনি সুপারিশ করার সুযোগ দান করবেন (নবী-রসূল ও নেক বান্দারা) এবং এর মাধ্যমে তিনি তাঁর নেক বান্দাদের মর্যাদা উচ্চে তুলে ধরবেন ও কিছু গোনাহগার বান্দাকে শাস্তি থেকে রেহাই দান করবেন।
শিক্ষা: আখিরাতের প্রতি ঈমান আনায়নই এই সূরার মৌলিক শিক্ষা। সমাজে জুলুম-নির্যাতন ও নানাবিধ পাপাচারের মূল কারণ আখিরাতে অবিশ্বাস। প্রথমত কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে; এরপর মানুষের সৃষ্টি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন যে, আল্লাহর নাফরমানির পেছনে পরকাল অবিশ্বাস ছা া আর কোন কারণ নেই।
আল্লাহপাক আমাদেরকে পরকাল বিশ্বাসের মাধ্যমে সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (র:)
সাক্ষ্য: নিজে যা জানে তা অন্যের কাছে বলা বা যথাযথভাবে প্রকাশ করার নামই সাক্ষ্য।
সত্যের সাক্ষ্য: আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে, উদ্ভাসিত হয়েছে, তার সত্যতা দুনিয়ার সামনে এমনভাবে প্রকাশ করা যাতে দ্বীনের যথার্থতা প্রমাণিত হয়, এটাই সত্যের সাক্ষ্য।
সাক্ষ্যদানের প্রকারভেদ: ২ প্রকার
নবী (সা:) এর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে সত্য এসে পৌঁছেছে তা বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষের কাছে সহজবোধ্য করাকে মৌখিক সাক্ষ্য বলে। দাওয়াতের সকল পদ্ধতি প্রয়োগ ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল উপাদান ব্যবহার করে ইসলামকে একমাত্র সঠিক পরিপূর্ণ বিধান হিসাবে প্রমাণ এবং প্রতিষ্ঠিত বাতিল মতাদর্শের দোষ ক্রটি তুলে ধরা।
যা মুখে বলা হয় তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের সামনে তার সত্যতা প্রমাণ, সৌন্দর্য্য ও কল্যানকারীতা প্রদর্শন করা।
সাক্ষ্য দানের পূর্ণতা: আল্লাহর দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে মানতে পারলেই দ্বীনের পূর্ণ সাক্ষ্য প্রদান হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকলে দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে মানা সম্ভব নয়। সুতরাং শুধুমাত্র দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সাক্ষ্যদানের পূর্ণতা সম্ভব।
---সত্যের সাক্ষ্য না দিলে দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি হয়। দায়িত্ব পালন না করার কারণে পরকালে কঠিনতম শাস্তি ভোগ করতে হবে।
---চিন্তার ক্রটি: অন্যান্য জাতি পার্থিব যেসব সমস্যাকে মূল সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব দেয় আমরাও সেসব বিষয়কে একই ভাবে গুরুত্ব দিই। যেমন: সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলিম।
সঠিক চিন্তা: যাবতীয় সমস্যার উৎস মূল দায়িত্ব তথা সত্যের সাক্ষ্যদান হতে বিমুখতার পরিণতি। কারণ এ দায়িত্ব পালন না করার কারণেই অন্যেরা এসব সমস্যার সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে। যেমন: যে সংখ্যালঘু মুসলিম জাতি সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে সংখ্যাগুরুত্বে পরিণত হয়েছে।
যাবতীয় সমস্যা সমাধানের পথ হচ্ছে যথাযথভাবে সত্যের সাক্ষ্য পেশ করা।
আসল সমস্যা: দুনিয়ায় মুসলিম হিসাবে প্রতিনিধিত্বের দাবী ইসলামের, বাস্তবে ইসলাম বিরোধী মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করি।
মুসলমানদের দুনিয়ায় ব্যর্থতার কারণ: ইসলামের লেবেল খুলে দিয়ে কুফরী গ্রহণ করলে দুনিয়াবী জিন্দেগী চাকচিক্যময় হত। কিন্তু নাম ও কর্ম সংঘাত হওয়ায় উন্নতিও বন্ধ।
---দ্বীনের একাধিক দল গঠনের আশংকা: আপাতদৃষ্টিতে ইসলামী দল বেশি হলে বিশৃংখলা দেখা দিবে।
নবী করীম সা: পরিচালিত সংগঠনই শুধুমাত্র “আল জামায়াত” হিসাবে দাবী করতে পারে। অন্য কোন দলকে “আল জামায়াত” বলা যাবে না। সুতরাং দ্বীনের জন্য একাধিক দল গঠনে বাধা নেই।
ফলাফল: নিষ্ঠার সাথে সবাই কাজ করলে লক্ষ্য যেহেতু একই সেহেতু মাঝপথে মিলিত হবে।
اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِكُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য।
﴾ۙقُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُكِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۲
অর্থ: বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’।
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَكَ اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰهَ ؕ یَدُ اللّٰهِ فَوۡقَ اَیۡدِیۡهِمۡ ۚ فَمَنۡ نَّكَثَ فَاِنَّمَا یَنۡكُثُ عَلٰی نَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِمَا عٰهَدَ عَلَیۡهُ اللّٰهَ فَسَیُؤۡتِیۡهِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا
অর্থ: আর যারা তোমার কাছে বাই‘য়াত গ্রহণ করে, তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাই‘য়াত গ্রহণ করে; আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর; অতঃপর যে কেউ ওয়াদা ভঙ্গ করলে তার ওয়াদা ভঙ্গের পরিণাম বর্তাবে তারই উপর। আর যে আল্লাহকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করবে অচিরেই আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার দেবেন।
لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰهُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَكَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّكِیۡنَۃَ عَلَیۡهِمۡ وَ اَثَابَهُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا
অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল; অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কী ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ إِذَا جَآءَكَ ٱلْمُؤْمِنَـٰتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰٓ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِٱللَّهِ شَيْـًۭٔا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَـٰدَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَـٰنٍۢ يَفْتَرِينَهُۥ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِى مَعْرُوفٍۢ ۙ فَبَايِعْهُنَّ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُنَّ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ
অর্থ: হে নবী, যখন মুমিন নারীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বাইআত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তারা জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না। তখন তুমি তাদের বাইআত গ্রহণ কর এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ كُنَّا نُبَايِعُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَيُلَقِّنُنَا فِيمَا اسْتَطَعْتَ
অর্থ: ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ মর্মে বায়'আত গ্রহণ করতাম যে, আমরা তাঁর কথা শুনব এবং আমল করব। আর তিনি আমাদেরকে এরূপ শিক্ষা দিতেন যে তোমরা তোমাদের সাধ্যমত দীনের কাজ করবে।
عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ بَايَعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَقَالَ لِي " يَا سَلَمَةُ أَلاَ تُبَايِعُ ". قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ بَايَعْتُ فِي الأَوَّلِ. قَالَ " وَفِي الثَّانِي ".
অর্থ: সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বৃক্ষের নিচে বায়আত (বায়আতে রিদওয়ান) গ্রহণ করেছিলাম। পরে তিনি আমাকে বললেনঃ হে সালামা! তুমি বায়'আত গ্রহণ করবে না? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো প্রথমবার বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি বললেনঃ দ্বিতীয়বারও গ্রহণ কর।