ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন
# নামকরনঃ # নাযিল হবার সময়কাল # শানে নুযূলঃ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
. قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
. الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
. وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
. وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
. وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
. إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
. وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
. أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
১. নিশ্চিত ভাবেই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা।
২. যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী ও নম্র।
৩. যারা বাজে বা বেহুদা কথা কাজ থেকে দুরে থাকে।
৪. যারা তাজকিয়া বা পরিশুদ্ধির ব্যাপারে কর্মতৎপর হয়।
৫. এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।
৬. তবে তাদের স্ত্রীদের ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
৭. তবে যদি কেউ তাদের ছাড়া অন্য কাউকে (যৌন ক্ষুধা মেটাবার জন্য) কামনা করে তবে তারা হবে সীমালংঘনকারী। এবং যারা তাদের আমানতসমূহ এবং ওয়াদাচুক্তির (অঙ্গীকার) রক্ষনাবেক্ষন করে।
৮. এবং যারা তাদের নামাযসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষন করে।
৯. তারাই (এসব গুনের অধিকারী) উত্তরাধিকার লাভ করবে
১০. তারা উত্তরাদিকার হিসাবে ফিরদাউস পাবে এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।
নামকরনঃ
সুরার নামকরন দুই ভাবে হয়ে থাকে-
বহুল আলোচিত শব্দ (শব্দ ভিত্তিক). যেমন- নাস, ফালাক
বিষয়ভিত্তিকঃ যেমন- সুরা ফাতেহা, ইখলাস
এ সুরাটি ১ম আয়াতের আল মুমিনুন শব্দ থেকে নামকরন করা হয়েছে।
নাযিল হবার সময়কাল ও মূল বিষয়বস্তুঃ
সুরাটি মক্কী, হিজরতের পূর্বে নাজিল হয়েছে। তবে ঠিক কোন সময়ে নাজিল হয়েছে তা সঠিক ভাবে বলা যায় না। বর্ণনাভঙ্গি ও বিষয়বস্তু হতে প্রতিয়মান হয় যে, এ সুরা রাসুল করীম (সঃ) এর মক্কী জীবনের মাঝামাঝি সময়ে নাজিল হয়েছিল। এ সুরার মুল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে রসুলের আনুগত্য করার আহ্বান। সুরার প্রথমে এ আলোচনা করা হয়েছে যে, নবীর অনুসারী মুমিনদের কতিপয় গুনাবলী রয়েছে, এই বিশেষ গুণাবলী অর্জনকারীরাই সফলকাম। ইহকালে ও পরকালে তারাই সাফল্য লাভকরবে। পরে এ সুরায় মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তরের কথা আলোচনা করা হয়েছে এবং স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম তিনি তোমাদেরকে পরকালে তার সামনে হাজির করতেও সক্ষম। তিনি তোমাদের হিসাব-কিতাব নিবেন। এ সুরায় আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তেমনিভাবে বিভিন্ন উম্মতের কথা উল্লেখ করে তাদের পরিনতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যেন দুনিয়াবাসী নবী করীম (সঃ) এর আনুগত্য করে, আল্লার বিধানকে মেনে নেয়, তারই ইবাদত করে। আল্লাহর ও তার রসুলের আনুগত্য না করলে কেউ মুক্তি পাবে না এসব বিষয়গুলিই এ সুরায় আলোচনা করা হয়েছে।
সুরা আল মুমিনুনের ফজিলতঃ
হযরত উমর (রাঃ) বলেন রসুল (সঃ) এর প্রতি যখন অহি নাজিল হত তখন মৌমাছির গুঞ্জনের ন্যায় আওয়াজ শুনা যেত। একদিন তাঁর কাছে এমনি আওয়াজ শুনে আমরা অহি শুনার জন্য থেমে গেলাম। অহির বিশেষ এ অবস্থার শেষ হলে নবী করীম (সঃ) কেবলামুখী হয়ে বসে পড়লেন এবং দোয়া করতে লাগলেন
اَللّهُمَّزِدْنَاوَلَاتَنْقُصْنَاوَأَكْرِمْنَاوَلَاتُهِنَّاوَأَعْطِنَاوَلَاتَحْرِمْنَاوَآثِرْنَاوَلَاتُؤْثِرْعَلَيْنَاوَاَرْضِنَاوَارْضَعَنَّا
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে বেশী দাও কম দিওনা। আমাদের সম্মান বৃদ্ধি কর- লাঞ্ছিত করো না। আমাদেরকে দান কর-বঞ্চিত করো না। আমাদেরকে অন্যের উপর অধিকার দাও অন্যদেরকে আমাদের উপর অগ্রাধিকার দিয়ো না, আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাক এবং আমাদেরকে তোমার সন্তুষ্ট কর।”(তিরমিজি) এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ এক্ষণে দশটি আয়াত নাযিল হয়েছে। কেউ যদি এ আয়াতগুলো পুরোপুরি পালন করে, তবে সে সোজা জান্নাতে যাবে। এরপর তিনি সুরা মুমিনুনের প্রথম দশটি আয়াত পাঠ করে শোনালেন। (আহমাদ)
ইমাাম নাসায়ী তফসীর অধ্যায়ে ইয়াযিদ ইবনে কাবনুস বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করা হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র কিরূপ ছিল? তিনি বললেন তার চরিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে অতঃপর তিনি এই দশটি আয়াত তেলাওয়াত করে বললেনঃ এগুলোই ছিল রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চরিত্র ও অভ্যাস। (ইবনে কাসীর)
শানে নুযূল/পটভূমিঃ
অত্র সুরা বিশেষ করে তেলাওয়াতকৃত আয়াতগুলো নাজিলের মক্কার কাফেররা যেমন ছিল ইসলামের চরম বিরোধী তেমনি পার্থিব উপকরণ সব ছিল তাদের হাতের মুঠোয় (বাণিজ্য)। অপরদিকে মুসলমানদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। (আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানগত)
এই অবস্থায় কাফেররা নিজেদের অধিক সফল এবং মুসলমানদের ব্যর্থ মনে করত। তখন মুমিনদের প্রকৃত সফলতার ঘোষণা দিয়ে এ আয়াতগুলি নাজিল করেন।
প্রকৃত সফলতার অর্থঃ তাফসীর কারকগণ ব্যাখ্যা করেছেন কোন একটি সুন্দর দালানে এক ব্যক্তি ৫দিন থাকতে পারবে এবং যদি কুড়েঘরে থাকে তবে সারাজীবন থাকতে পারবে- এক্ষেত্রে একজন বুদ্ধিমান কোনটি বেছে নেবে।
অথচ আখেরাতে চিরজীবনের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ
অর্থঃ নিশ্চিত ভাবে সফলকাম হয়েছে মুমিনরা।
এখানে মুমিন বলতে তারা যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান এনে তার আনীত বিধান মেনে নিয়েছে এবং তার দেখানো জীবনপদ্ধতি অনুসরন করেছে।
“নিশ্চিতভাবেই সফলতা লাভ।”
দিয়ে বাক্য শুরু করার তাৎপর্য বুঝতে হলে নাজিলের পরিবেশকে সম্মুখে রাখা দরকার।
কাফিরদের ইসলাম বিরোধীতা।
সামাজিক ও আর্থিক উন্নতি।
মুসলমানদের সামাজিক ও আর্থিক পশ্চাতপদতা।
আল্লাহ যখন এই মুসলমানদেরই সফল বললেন তখন বোঝা যায় আল্লাহর নিকট সফলতার মানদন্ড ঈমান অর্থ নয়। প্রকৃত সাফল্য আখেরাত। (পূর্ব দ্রষ্টব্য)
আল কোরআনে সাফল্যঃ ব্যবস্থা-পত্র
অর্থঃ যে নিজেকে পাপ থেকে পবিত্র রেখেছে সেই সফল।
সফলতা লাভের জায়গা আখেরাত-
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا (১৬) وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى (১৭)
অর্থাৎ (হে মানুষ) তোমরা দুনিয়াকেই পরকালের উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছ। অথচ দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের জীবন অতি উত্তম এবং স্থায়ী। (সুরা আ’লা: ১৬,১৭)
আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তায়লা সেসব মুমিনকে সাফল্য দান করার ওয়াদা করেছেন। যারা আয়াতে উল্লিখিত সাতটি গুনে গুনান্বিত। পরকালের পূর্ণাঙ্গ সাফল্য এবং দুনিয়ার সম্ভাব্য সাফল্য সবই এই ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত।
সর্বপ্রথম গুন হলো ঈমানদার হওয়া। কিন্তু এটা একটা বুনিয়াদী ও মৌলিক বিষয় বিধায় এটাকে এই সাতটি গুনের মধ্যে শামিল না করে পর পর সাতটি গুন বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রথম গুনঃ
অর্থ্যাৎ ‘যারা তাদের নামাযে বিনয়ী ও নম্র।”
الَّذِينَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
নামাযে খুশু বলতে বিনয় ও নম্র হওয়া বুঝায়। খশুর আভিধানিক অর্থ স্থিরতা। শরীয়তের পরিভাষায় এর মানে অন্তরে স্থিরতা থাকা। অর্থ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর কল্পনা অন্তরে ইচ্ছাকৃত ভাবে না করা এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা।
দিলের খুশু হয় তখন যখন কারো ভয়ে বা দাপটে দিল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। আর দেহের খুশু এভাবে প্রকাশ পায় যে, কারো সামনে গেলে তার মাথা নিচু হয়ে যায়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির হয়ে পড়ে, চোখের দৃষ্টি নত হয়ে আসে, গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে যায়।
হাদীসে হযরত আবু যার (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন- নামাযের সময় আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না নামাযী অন্যদিকে ভ্রুক্ষেপ করে। যখন সে অন্যকোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। (নাসায়ী) (আবু দাউদ)
শরীয়তে বর্ণিত নামাযের নিয়ম নীতি নামাযে খুশু পয়দা করতে সাহায্য করে।
যেসব কাজ নামাযে খুশু সৃষ্টিতে বাধা দেয়ঃ
নামাযে খুশু সৃষ্টির জন্য যা করতে হবেঃ
দ্বিতীয় গুনঃ
‘যারা বেহুদা কাজ ও কথা থেকে দুরে থাকে।’
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
اللَّغْوُ বলা হয় এমন প্রতিটি কাজ এবং কথাকে যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন ও নিস্ফল। যেসব কথা এবং কাজের কোনই ফল নেই।
اللَّغْوُ “এর অর্থ উচ্চস্তরের গুনাহ যাতে ধর্মীয় উপকার তো নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন-
مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُه مَا لَا يَعْنِيْهِ
“মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে তখন ইসলাম সৌন্দর্যমন্ডিত হয়।(তিরমিজি)।” আল্লাহ বলেন-
وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
অর্থ্যাৎ- “যখন এমন কোন জায়গা দিয়ে তারা চলে যেখানে বাজে কথা হতে থাকে অথবা বাজে কাজের মহড়া চলে তখন তারা ভদ্রভাবে সে জায়গা অতিক্রম করে চলে যায়।” ( ফুরকান-৭২)
তৃতীয় গুনঃ
“যারা যাকাত বা পরিশুদ্ধির ব্যাপারে কর্মতৎপর হয়।
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
যাকাত দেয়া বা যাকাতের পথে কর্মতৎপর সক্রিয় হওয়ার মধ্যে অর্থের দিক দিয়ে বিকট পার্থক্য বিদ্যমান।
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে কুরআনের
বিশেষ ধরনের অর্থের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটা বলার পেছনে তাৎপর্য আরবী ভাষায় যাকাত শব্দের দুটি অর্থ বিদ্যমান
এই দুটি ধারনা মিলিয়ে যাকাতের পরিপূর্ণ ধারনা সৃষ্টি হয়। তারপর এই শব্দটি, ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত হলে এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়-
যদি বলা হয় তবে এর অর্থ হবে তারা সম্পদ পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যে সম্পদের একটি অংশ নেয়।
কিন্তু যদি বলা হয় তবে তার অর্থ হবে তারা পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা তাযকিয়ার কাজ করছে। এ অবস্থায় ব্যাপারটি শুধুমাত্র আর্থিক যাকাত আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং এর অর্থ ব্যাপক হবে। যেমনঃ
উপরোক্ত প্রত্যেকটি দিকের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত এর ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়া এর অর্থ কেবল নিজেরই জীবনের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। না বরং নিজের চারপাশের জীবনের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়বে।
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى (১৫) قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى (১৪)
অর্থ্যাৎঃ “কল্যাণ ও সফলতা লাভ করল সে, যে পবিত্রতার কাজ করলো এবং নিজের রবের নাম উচ্চারণ করে নামায পড়লো।” (সুরা আ’লা:১৪,১৫)
আল্লাহ বলেন-
وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (১০) قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (৯)
“সফলকাম হলো সে, যে নিজের নফসকে পবিত্র বা তাযকিয়া করলো। আর ব্যর্থ হলো সে যে নিজেকে কলুষিত করল।” (সুরা আশ শামস:৯,১০)
এ আয়াতে গোটা সমাজ জীবনের কথা বলা হয়েছে।
চতুর্থ গুণঃ
‘যারা লজ্জাস্থানের হেফাজত করেন।’
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
তবে তাদের স্ত্রীদের এবং মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না করলে তারা তিরস্কৃত হবে না। তবে কেউ যদি এদের ছাড়া অন্য কাউকে কামনা তবে এক্ষেত্রে তারা হবে সীমালংঘনকারী।
লজ্জাস্থান হেফাজত করার দুটি অর্থ হতে পারে।
এটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। “লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।” বাক্য থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করার জন্য।
লজ্জাস্থানের সাধারণ হুকুম থেকে দু’ধরনের লোককে বাদ দেয়া হয়েছে।
এ বাক্যটি উপরোক্ত দুটি পন্থা ছাড়া কামনা চরিতার্থ করার যাবতীয় পথ অবৈধ করেছে। হারাম উপায়গুলি-
উপরোক্ত সবকিছুই সীমালংঘনের মধ্যে গণ্য হবে।
৫ম ও ৬ষ্ঠ গুনঃ
‘যারা তাদের আমানতসমূহ এবং ওয়াদা বা প্রতিশ্রতি রক্ষা করে।’
وَالَّذِينَهُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
আমানত প্রত্যাপর্ন করাঃ
আমানত শব্দের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। আভিধানিক অর্থে এমন একটি বিষয় শামিল যার দায়িত্ব কোন ব্যক্তি বহন করে এবং সে বিষয়ে কোন ব্যক্তির উপর আস্থা রাখা যায় ও ভরসা করা যায়। বিধায় আমানত শব্দটি বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত।
দু’ধরনের আমানত সংক্রান্ত কথা-
১) হক্কুল্লাহঃ
২) হক্কুল ইবাদঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَ نْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদরে হাতে ফেরত দেবার দিচ্ছেন (সূরা নিসা:৫৮)
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِيْمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ لَا
“তার ঈমান নেই যার আমানতদারী নেই।” (আহমাদ)
তাছাড়া মোনাফেকের যে চারটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ১) ‘কোন আমানত তার কাছে সোপর্দ করা হলে সে তার খেয়ানত করে।’ (বুখারী)
وَإِذَا اوْتُمِنَ خَانَ.
অঙ্গীকার পূর্ণ করাঃ
অঙ্গীকার বলতে প্রথমত, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বুঝায় যা কোন ব্যাপারে উভয়পক্ষ অপরিহার্য করে নেয়। এরুপ চুক্তি পূর্ণ করা ফরজ।
দ্বিতীয় প্রকার অঙ্গীকারকে ওয়াদা বলা হয় অর্থ্যাৎ এক তরফাভাবে একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার বা কোন কাজ করে দেয়ার অঙ্গীকার করা।
হাদীসে আছে, “ওয়াদাও এক প্রকার কসম”
সপ্তম গুনঃ
“যারা তাদের নামায সমূহকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে।”
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
এখানে পাঁচওয়াক্ত নামায মুস্তাহাব বা আউয়াল ওয়াক্তে যথাযথভাবে পাবন্দী সহকারে আদায় করা বুঝায়।
এখানে নামায সমূহের সংরক্ষণ বলতে নামাযের বাইরের এবং ভেতরের যাবতীয় নিয়মনীতি যথাযথভাবে পালন করা। অর্থ্যাৎ আরকান-আহকাম পালন।
কোরআনে এসেছে:
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
“নামায নিশ্চয়ই মানুষকে অশ্লীল, অপকর্ম থেকে বিরত রাখে।”(সূরা আনকাবুত:৪৫)
. الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থঃ তারাই (এসবগুনের অধিকারীগণই) উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা উত্তরাধিকার হিসেবে ফেরদাউস পাবে এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।
এখানে উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে এজন্য যে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারদের নিশ্চিত প্রাপ্য। এবং গুণের অধিকারীদেরও জান্নাতে প্রবেশ সুনিশ্চিত।
সফলকাম ব্যক্তিদের গুনাবলী পুরোপুরি উল্লেখ করার পর এই বাক্যে আরও ইঙ্গিত আছে যে পূর্ণাঙ্গ সফল জান্নাতী ব্যক্তি।
الْفِرْدَوْس শব্দটি এমন একটি বাগানের জন্য বলা হয়ে থাকে যার চারিদিকে পাচিল দেয়া থাকে। বাগানটি বিস্তৃত হয়। মানুষের আবাস গৃহের সাথে সংযুক্ত হয় এবং সব ধরনের ফল বিশেষ করে আঙ্গুর পাওয়া যায়। কোন কোন ভাষায় এর অর্থের মধ্যে এ কথাও বোঝায় যে এখানে বাছাই করা গৃহপালিত পশু পাখি পাওয়া যায়।
কুরআনে বিভিন্ন সমষ্টিকে ফিরদাউস বলা হয়েছে।
“তাদের আপ্যায়নের জন্য ফিরদৌসের বাগানগুলি আছে।”
এ থেকে মনের মধ্যে এ ধারনা জন্মে যে ফিরদৌস একটা বড় জায়গা, যেখানে অসংখ্য বাগ বাগিচা উদ্যান রয়েছে।
শিক্ষাঃ
লেখক:অধ্যাপক গোলাম আযম
প্রকাশক: আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম। বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামী।
ইসলামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের আমীর ছিলেন ১৯৬৯-২০০০ সাল পর্যন্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- বি এ, এম এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) এবং কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" আন্দোলনের একজন অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত জি এস ছিলেন, এবং তমুদ্দিন মজলিশ এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার দাবীতে স্মারকলিপি পেশ করেন। দ্বীন প্রচারের জন্য অসংখ্য বই লিখেছেন। তিনি ২৩ অক্টোবর ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলন আম্বিয়ায়ে কেরামদের পরিচালিত আন্দোলনকে অনুসরণ করেই চলেছে।
মানবিক দুর্বলতার কারণে ব্যক্তির নিষ্ক্রিয়তা থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা মূলক বই এটি।
কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন ১৯৯৭ সালের ২৫-২৭ ডিসেম্বর জামেয়া ইসলামিয়া (তামিরুল মিল্লাত) টঙ্গীতে- অধ্যাপক গোলাম আযম তৎকালীন আমীর জা.ই.বা প্রদত্ত ভাষণ।
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামষ্টিক জীবনের সকল ক্ষেত্রের জন্য আল্লাহ তা'আলা যে বিধান রচনা করেছেন, রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে তাই পাঠিয়েছেন। এই বিধানসমূহ রাসূল (সাঃ) ও তার প্রতি যারা ঈমান আনে তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে চালু করার দায়িত্ব দিয়েছেন। যাকে খিলাফতের দায়িত্ব বলা হয়। আল্লাহর পক্ষ তার বিধানকে কায়েম করার চেষ্টাই হলো খলিফার কাজ। যুগে যুগে নবী রাসূলগণ এ কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ/ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণা হলো নবী-রাসূলগণ।
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে বাধ্য করেননি তার বিধান মেনে চলতে। ফলে সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজের মনগড়া বিধান চালু করে। কারণ বিধান শূন্য কোন সমাজ চলতে পারে না। যখনই নবীগণ দেশবাসীকে আল্লাহর বিধান কবুলের দাওয়াত দেন, তখন এই সুবিধাবাদী মহল বিরোধিতা করেছে। হক ও বাতিলের এই সংঘর্ষের নামই ইসলামী আন্দোলন। আইন চালু করতে গিয়ে স্বার্থবাদীদের কে পরাস্ত করতে পারলেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
রুকনিয়াতের মান কমার আসল কারণ ২ টি।
وَ لَنَبۡلُوَنَّكُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵
- আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।
দুনিয়ার জীবনের বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট মুসিবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। তবে সকলের পরীক্ষা এক হয় না। যার দুর্বলতা যেদিকে তার পরীক্ষাও সেদিকেই হয়। সচেতন রুকন তা টের পেয়ে সাবধান হয়ে যান। আর আল্লাহর দরবারে ধরণা দেন, যাতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন। আর অসচেতন রুকনগণ মুসীবতকে দ্বীনের কাজ না করার অজুহাত মনে করে। ফলে রুকনিয়াতের নিম্নতম মানও রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়ে ইস্তফা দেন বা বাতিল করা হয়।
আল্লাহর পক্ষ থেকে কেন পরীক্ষা করা হয়ঃ
সূরা আন নূরঃ৫৫
وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡكُمۡ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ كَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ ۪ وَ لَیُمَكِّنَنَّ لَهُمۡ دِیۡنَهُمُ الَّذِی ارۡتَضٰی لَهُمۡ وَ لَیُبَدِّلَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ اَمۡنًا ؕ یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِكُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا ؕ وَ مَنۡ كَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ﴿۵۵﴾
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।
পরীক্ষায় যারা টিকে তাঁরাই আন্দোলনের যোগ্য বিবেচিত হয়। যারা ছাটাই হয় তাঁরা অযোগ্য। রুকনিয়াত মূলতবী করে ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। সংশোধন না হলে ইস্তফা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় অথবা বাতিল করা হয়।
ত্রুটি মুক্ত থাকার গুরুত্ব উপলব্ধির তাগিদ এভাবে দেয়া হয়। আমানতদারীর দাবী পূরণে অক্ষম হলেও ছাটাই করা হয়।
রুকনিয়াতের আসল চেতনার অভাবেই রুকনিয়াতের মান কমে যায়।
আসল চেতনা ৫ টিঃ
ফরজ, ওয়াজিব মানা ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের সর্বনিম্ন স্তর এটি। যা রুকন হওয়ার শর্ত। সুতরাং রুকনের মানকে বড়জোড় কামিল মুমিনের নিম্নতম মান বলা যায়। অনেকের নিকট রুকন হওয়া অনেক কঠিন বিষয় হলেও প্রকৃত পক্ষে তা কামিল মুমিনের সর্বনিম্ন স্তর মাত্র।
আত্ম সমালােচনার সময় খেয়ালে আনতে হবে যে, আমার যাবতীয় কর্মকান্ডে দুনিয়ার জীবনের চেয়ে দ্বীনকে প্রাধান্য দিচ্ছি কিনা। পরীক্ষার স¤ ুখীন হলে দায়িত্বশীল, দ্বীনি ভাইদের জানিয়ে দোয়া চাইতে হবে। পরীক্ষায় সবর করতে হবে, আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। ইখলাসের সাথে দ্বীনি দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সূরা হজ্জঃ শেষ আয়াত
وَجَاهِدُوۡا فِی اللّٰهِ حَقَّ جِهَادِهٖؕ هُوَ اجۡتَبٰىكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَیۡكُمۡ فِی الدِّیۡنِ مِنۡ حَرَجٍؕ مِلَّۃَ اَبِیۡكُمۡ اِبۡرٰهِیۡمَ ؕ هُوَ سَمّٰىكُمُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ۬ مِنۡ قَبۡلُ وَفِیۡ هٰذَا لِیَكُوۡنَ الرَّسُوۡلُ شَهِیۡدًا عَلَیۡكُمۡ وَتَكُوۡنُوۡا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِۚۖ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّكٰوۃَ وَاعۡتَصِمُوۡا بِاللّٰهِؕ هُوَ مَوۡلٰىكُمۡۚ فَنِعۡمَ الۡمَوۡلٰى وَنِعۡمَ النَّصِیۡرُ﴿۷۸﴾
আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে এবং এ কিতাবেও। যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী!
সূরা নিসাঃ আয়াত ৫৯
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَاَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡكُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡهُ اِلَی اللّٰهِ وَالرَّسُوۡلِ اِنۡ كُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِكَ خَیۡرٌ وَّاَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا﴿۵۹﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।
যারা ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা বিপদকে অগ্রাহ্য করে ইসলামী আন্দোলনের পথে মজবুত হয় টিকে থাকে তারা আল্লাহর বাছাইয়ে গন্য। যারা দুর্বলতার শিকার তারা ছাঁটাইয়ের অন্তর্ভুক্ত। বাছাইয়ের চেতনা জাগ্রত থাকলে এই গৌরব থেকে বঞ্চিত হবে না নিশ্চয়। তাই ছাটাই থেকে হেফাজতের দোয়া করতে হবে।
কুরআনের বিভিন্ন সূরাতে ঈমানদার ও সৎকর্মশীল আল্লাহর বান্দাদের যে সব গুনের বিবরণ দেয়া হয়েছে এর দ্বারা এক দিকে সর্বসাধারনকে চিন্তার আহবান করা হয়েছে। যারা রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়ে এমন গুণাবলীর অধিকারী হয়েছে তাঁদের প্রশংসা করতে বাধ্য তোমরা।
মানবিক গুণাবলীর অধিকারীদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া খুব স্বাভাবিক। রুকনদের মান এ পর্যায়ে পৌঁছালে জনগণের আশা, আস্থার সঞ্চার হবে যে, জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তাঁদের কল্যাণ নিশ্চিত।
উপরের এই ৫ টি চেতনা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আগানো সহজ হবে। এ তরক্কীর শেষ নেই। রোকন এর দায়িত্ব নিজ চেষ্টায় অবিরাম উন্নত করার সাধনা করা। অনেক লোককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। উদাহরণ : ইঞ্জিন ও বগি।
চেতনা জাগ্রত থাকলে উভয় দায়িত্বই যোগ্যতার সাথে পালন করা সম্ভব।
রুকনদের মান উন্নত হলে তারা হবে কর্মীদের আদর্শ। অন্যথায় কর্মীদের অগ্রগতির পথে বাধা বলে গন্য হবে। রকন সংগঠনের সম্পদে পরিনত হলেই আন্দোলনের অগ্রগতি সম্ভব। রুকনিয়াতের মান সম্পর্কে সচেতন থাকলেই সংগঠনের জন্য সময়, শ্রম ও অর্থব্যয় যথার্থ ভাবে সফল হবে।
জামায়াতে ইসলামীতে রোকন হওয়ার জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। ফলে কেউ আবেগের বশবর্তি হয়ে নয় বরং স্বজ্ঞানে চেষ্টার মাধ্যমে রোকন হতে হয়। এ অব্যাহতি চাওয়ার অর্থ হল এর দায়িত্ববোধ, মর্যাদা, চেতনাবোধ থেকে বঞ্চিত। আবার আল্লাহর পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে তারা ছাঁটাই হন। ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনের জন্য এই সংগঠনে যোগদান করে কিন্তু যদি কেউ এই কাজের জন্য আরও উন্নত সংগঠনে যোগদানের জন্য পদত্যাগ করলে তা দোষের না হলেও ব্যক্তিগত দুর্বলতা থেকে সংগঠন ত্যাগ করা হাদিসের মত অনুযায়ী তিনি ইসলামের রশি গলা থেকে ছুড়ে ফেলেন।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আমরা দ্বীন কায়েমের আন্দোলনের শরিক আছি। তাই আমাদের শুকরিয়া আদায় করতে হবে, আর দোয়া করতে হবে এই পথে অবিচল থাকার জন্য।
আলে-ইমরান-১০৩
وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡكُمۡ اِذۡ كُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِكُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ كُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَكُمۡ مِّنۡهَا ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ ﴿১০৩﴾
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।
আলে-ইমরান-১০৪
وَلۡتَكُنۡ مِّنۡكُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَیَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَیَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ﴿১০৪﴾
আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।
আস সফ- ৪
اِنَّا للّٰہَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ صَفًّا کَاَنَّہُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ
বস্তুত আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা শিশাঢালা প্রাচীর।
باب وُجُوبِ الطَّهَارَةِ لِلصَّلاَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ بْنُ هَمَّامٍ، حَدَّثَنَا مَعْمَرُ بْنُ رَاشِدٍ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، أَخِي وَهْبِ بْنِ مُنَبِّهٍ قَالَ هَذَا مَا حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَذَكَرَ أَحَادِيثَ مِنْهَا وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ ".
৪৩০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুত্রে কয়েকটি হাদীস বর্ননা করেছেন। (তন্মধ্যে একটিতে তিনি বলেন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারোর উযূ (ওজু/অজু/অযু) ভেঙ্গে গেলে তার সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হয় না উযূ করার পূর্ব পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম- ইফাবা)
ক- ত্বহারাতের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচয়:
ত্বহারাতের শাব্দিক অর্থ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জন করা।
আর পরিভাষায় শরীরে বিদ্যমান যেসব অপবিত্রতার কারণে সালাত ও এ জাতীয় ইবাদাত পালন করা নিষিদ্ধ, তা দূর করাকে ত্বহারাত বলে।
খ- পানির প্রকারভেদ:
পানি তিন প্রকার।
প্রথম প্রকার পবিত্র পানি: আর তা হলো পানি তার সৃষ্টিগত স্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্যমান থাকা। আর তা হলো যে পানি দ্বারা অপবিত্রতা ও শরীরের পবিত্র অঙ্গের আপতিত নাজাসাত দূর করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَيُنَزِّلُ عَلَيۡكُم مِّنَٱ لسَّمَآءِ مَآءٗ لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ﴾ [الانفال: ١١]
“এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন।” [সূরা আনফাল, আয়াত: ১১]
দ্বিতীয় প্রকার পবিত্র পানি: যে পানি নাজাসাত ছাড়াই রঙ বা স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ধরণের পানি নিজে পবিত্র; তবে এর যে কোনো একটি গুণাবলী পরিবর্তন হওয়ার কারণে এর দ্বারা অপবিত্রতা দূর করা যাবে না।
তৃতীয় প্রকার অপবিত্র পানি: যে পানি অল্প বা বেশি নাজাসাতের কারণে এর যে কোনো একটি গুণ পরিবর্তন হয়ে গেছে।
অপবিত্র পানি পবিত্র হয়ে যাবে, তার পরিবর্তনের কারণ নিজে নিজে দূর হলে বা উক্ত পানি শুকিয়ে ফেললে অথবা এর সাথে এতটুকু পরিমাণ পানি মিশানো; যাতে পরিবর্তনের কারণ দূরীভূত হয়ে যায়।
যখন কোনো মুসলিম পানির অপবিত্রতা বা পবিত্রতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে তখন সে তার নিশ্চিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে পবিত্রতা অর্জন করবে। আর তা হলো, পবিত্র বস্তুসমূহের আসল হচ্ছে পবিত্র থাকা।
যখন কোনো পানি, যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় আর যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় না এমন কোনো পানির সাথে সন্দেহে নিপতিত করবে তখন তা বাদ দিয়ে তায়াম্মুম করবে।
যখন কোনো পবিত্র কাপড়, অপবিত্র বা হারাম কাপড়ে সাথে সন্দেহে নিপতিত করবে তখন ইয়াকীনের ওপর ভিত্তি করবে এবং সে কাপড় দ্বারা কেবল একটি সালাত আদায় করবে।
পবিত্রতার প্রকারভেদ
শরী‘আতে পবিত্রতা দু’প্রকার। অপ্রকাশ্য বা আত্মিক এবং প্রকাশ্য বা বাহ্যিক পবিত্রতা। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছোট বড় নাপাকী ও নাজাসাত থেকে পবিত্র করাকে বাহ্যিক পবিত্রতা বলে। আর পাপ-পঙ্কিলতা থেকে অন্তর পবিত্র করাকে অপ্রকাশ্য বা অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা বলে।
প্রকাশ্য পবিত্রতাই ফিকহের বিষয়; যা সালাতে বাহ্যিকভাবে উদ্দেশ্য। এটি আবার দু’প্রকার: হাদাস (অদৃশ্যমান নাপাকী) থেকে পবিত্রতা ও খাবাস (দৃশ্যমান নাপাকী) থেকে পবিত্রতা। হাদাস থেকে পবিত্রতা তিনভাবে অর্জিত হয়: ১. বড় পবিত্রতা, তা গোসলের মাধ্যমে। ২. ছোট পবিত্রতা, তা অযুর মাধ্যমে। ৩. আর এ দু’টি ব্যবহার করতে অক্ষম তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করবে। অনুরূপভাবে খাবাস থেকে পবিত্রতাও তিনভাব অর্জিত হয়: গোসল, মাসেহ ও পানি ছিটানো।
পানির পাত্র সংক্রান্ত বিধি-বিধান
পানির পাত্রের পরিচয়:
ক. শাব্দিক পরিচিতি:
পানির পাত্রকে আরবীতে (الآنية) ‘আনিয়া’ বলা হয়। যে শব্দটি (إناء) ‘ইনা’ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ আহার কিংবা পান-পাত্র। শব্দটির বহুবচনের বহুবচন হলো (أوان)। আরবী ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ হচ্ছে, (ظرف) ‘যারফ’ ও (ماعون) মা‘উন।
ফকীহগণ শাব্দিক অর্থেই এটাকে ব্যবহার করেছেন।
খ- পাত্রের প্রকারভেদ:
সত্তাগত দিক থেকে পাত্র কয়েক প্রকার। যথাঃ
গ- পাত্রের শর‘ঈ হুকুম:
সোনা, রূপা ও রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য সব পাত্র ব্যবহার করা বৈধ; চাই তা মূল্যবান হোক বা অল্প মূল্যের হোক। কেননা হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
َلاَ تَشْرَبُوا فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلاَ تَأْكُلُوا فِي صِحَافِهَا ، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَنَا فِي الآخِرَةِ
“তোমরা সোনা ও রুপা পাত্রে পান করবে না। আর এসব পাত্রে খানা খাবে না। এগুলো দুনিয়াতে তাদের (অমুসলিমের) জন্য আর আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাতে।”[১]
যে সব পাত্র ব্যবহার করা হারাম তা অন্যান্য উদ্দেশ্যে গ্রহণ করাও হারাম। যেমন, বাদ্যযন্ত্র গানের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান। কেননা হাদীসটি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
তবে এটা জানা আবশ্যক যে, সন্দেহের কারণে কোনো পাত্র অপবিত্র হবে না; যতক্ষণ নিশ্চিতভাবে অপবিত্র হওয়া জানা না যাবে। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।
অমুসলিমদের পাত্র বলতে বুঝানো হচ্ছে:
এসব পাত্রের শর‘ঈ হুকুম হলো এগুলো অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হলে তা ব্যবহার করা জায়েয। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।
অমুসলিমের জামা কাপ ড় পবিত্র, যতক্ষণ তা অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হয়।
যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ সেসব মারা গেলে সেসবের মৃত চাম া দাবাগাত (প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার উপযোগী) করলে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে।
আর যেসব প্রাণীর জীবিত অবস্থায় কোনো অংশ বিচ্ছেদ করা হয়েছে তা মৃত-প্রাণীর মতোই অপবিত্র। তবে জীবিত অবস্থায় পশম, পালক, চুল ও লোম নেওয়া হলে তা পবিত্র।
খাবার ও পানীয় পাত্র ঢেকে রাখা সুন্নত। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَأَوْكِسِقَاءَكَ وَاذْكُرِاسْمَ اللَّهِ، وَخَمِّرْإِنَاءَكَ وَاذْكُرِاسْمَ اللَّهِ، وَلَوْتَعْرُضُ عَلَيْهِ شَيْئًا
“তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ বন্ধ রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। সামান্য কিছু দিয়ে হলেও তার উপর দিয়ে রেখে দাও।”[২]
[১] সহীহ বুখারী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ৫১১০; সহীহ মুসলিম, লিবাস ওয়ায-যিনা, হাদীস নং ২০৬৭; তিরমিযী, আশরিবা, হাদীস নং ১৮৭৮; নাসাঈ, আয-যিনা, হাদীস নং ৫৩০১; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭২৩; ইবন মাজাহ, আশরিবা, হাদীস নং ৩৪১৪; আহমদ, ৫/৩৯৭; আদ-দারেমী, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২১৩০।
[২] সহীহ বুখারী, বাদউল খালক, হাদীস নং ৩১০৬; সহীহ মুসলিম, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২০১২; তিরমিযী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ১৮১২; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭৩১; আহমদ, ৩/৩০৬; মালেক, আল-জামে‘, হাদীস নং ১৭২৭।
ইস্তিঞ্জা: ইস্তিঞ্জা হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা।
ইস্তিজমার: আর ইস্তিজমার হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা কাগজ বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দূর করা।
পেশাব পায়খানায় প্রবেশের সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা এবং এ দো‘আ প ড়া,
بِسْمِ اللَّهِ، أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
“বিসমিল্লাহ, আমি মন্দকাজ ও শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি”।[১]
আর বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দিয়ে বের হওয়া এবং এ দো‘আ প ড়া,
غُفْرَانَكَ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِي
“ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং স্বস্তি দান করেছেন”।[২]
[১] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৫।
[২] হাদীসের প্রথম অংশটুকু আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৩০। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আর দ্বিতীয় অংশটুকু ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৩০১। আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন।
ক- পরিচিতি: সরল পথ, সৃষ্টিগত স্বভাব। যেসব গুণাবলী মানুষের জীবনে থাকা অত্যাবশ্যকীয় সেগুলোকে স্বভাবজাত সুন্নাত বলে।
খ- স্বভাবজাত সুন্নাতসমূহ:
ক- অযুর পরিচিতি: শরী‘আতের নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী পবিত্র পানি চার অঙ্গে ব্যবহার করা।
খ- অযুর ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস অযুর ফযীলত প্রমাণ করে। তিনি বলেছেন,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
“ তোমাদের যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অযু করে এ দো‘আ পাঠ করবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহা¤ াদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।”[১]
অযুতে অপচয় না করে উত্তমরূপে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করলে কিয়ামতের দিন অযুকারীর হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকা আবশ্যক করবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ
“কিয়ামতের দিন আমার উ¤ তকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বা ড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।”[২]
গ- অযুর শর্তাবলী:
অযুর শর্তাবলী দশটি। সেগুলো হলো:
ঘ- অযু ফরয হওয়ার কারণ:
হাদাস বা সাধারণ অপবিত্রতা পাওয়া গেলে অযু ফরয হয়।
ঙ- অযুর ফরযসমূহ:
অযুর ফরয ছয়টি:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ٦﴾ [المائدة: ٦]
“ হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬]
চ- অযুর সুন্নতসমূহ:
অযুর সুন্নতসমূহের অন্যতম হলো:
ছ- অযুর মাকরূহসমূহ:
অযুর মাকরূহসমূহের অন্যতম হলো:
مَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَظَلَمَ
“অতঃপর যে ব্যক্তি এর অধিক করে সে অবশ্যই জুলুম ও অন্যায় করে।”[৩]জ- অযু ভঙ্গের কারণসমূহ:
অযু ভঙ্গের কারণ সাতটি, সেগুলো হলো:
[১] সহীহ মুসলিম, ত্ববহারাত, হাদীস নং ২৩৪; তিরমিযী, ত্বহারাত, হাদীস নং ৫৫; নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪৮; ইবন মাজাহ, তাহারাত ও এর সুন্নাতসমূহ, হাদীস নং ৪৭০; মুসনাদ আহমদ, ৪/১৫৩।
[২] সহীহ বুখারী, অযু, হাদীস নং ১৩৬; সহীহ মুসলিম, ত্বহারাত, হাদীস নং ২৪৬; ইবন মাজাহ, যুহুদ, হাদীস নং ৪৩০৬; মুসনাদ আহমদ, ২/৪০০; মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৬০।
[৩] সুনান নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪০; আবু দাউদ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৩৫।
ক- গোসলের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি: দ াম্মা যোগে (الغُسل) গুসল অর্থ পানি, ফাতহা যোগে (الغَسل) গাসল অর্থ গোসল করা আর কাসরা যোগে (الغِسل) গেসল অর্থ পরিস্কার করার উপাদান। শরী‘আতের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মাথার অগ্রভাগ থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত সারা শরীরে পবিত্র পানি প্রবাহিত করা। এতে নারী ও পুরুষ সবাই সমান, তবে হায়েয ও নিফাসের গোসলের সময় রক্তের চিহ্ন পুরোপুরিভাবে দূর করতে হবে যাতে রক্তের দুর্গন্ধ দূর হয়।
খ- গোসল ফরয হওয়ার কারণসমূহ:
গোসল ফরয হওয়ার কারণ ছয়টি:
গ- ইসলামে মুস্তাহাব গোসলসমূহ:
ঘ- গোসলের শর্তাবলী:
গোসলের শর্তাবলী সাতটি:
ঙ- গোসলের ওয়াজিবসমূহ:
গোসলের ওয়াজিব হলো বিসমিল্লাহ বলা, ভুলে গেলে এ ওয়াজিব রহিত হয়ে যায়, ইচ্ছাকৃত বাদ দিলে ওয়াজিব ছুটে যাবে।
চ- গোসলের ফরযসমূহ:
নিয়ত করা, সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা, মুখ ও নাকে পানি প্রবেশ করানো। পানি পৌঁছল কিনা এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা হলেই যথেষ্ট হবে।
কেউ সুন্নাত বা ফরয গোসলের নিয়ত করলে এক নিয়ত অন্য নিয়াতের জন্য যথেষ্ট হবে।
জানাবাত ও হায়েযের গোসল একই নিয়াতে যথেষ্ট হবে।
ছ- গোসলের সুন্নাতসমূহ:
১- বিসমিল্লাহ বলা।
২- গোসলের শুরুতে শরীরে বিদ্যমান অপবিত্রতা বা ময়লা দূর করা।
৩- পাত্রে হাত ঢুকানোর পূর্বে দুহাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
৪- গোসলের শুরুতে অযু করা।
৫- ডান দিক থেকে শুরু করা।
৬- ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
৭- সারা শরীরে হাত মর্দন করা।
৮- গোসল শেষে দুপা অন্য স্থানে সরে ধৌত করা।
জ- গোসলের মাকরূহসমূহ:
গোসলে নিম্নোক্ত কাজ করা মাকরূহ:
ঝ- জুনুবী বা ব ড় অপবিত্র ব্যক্তির জন্য যেসব কাজ করা হারাম:
ক- নাজাসাত (নাপাকী) এর শাব্দিক ও শর‘ঈ অর্থ:
নাজাসাতের শাব্দিক অর্থ ময়লা, যেমন বলা হয় نجسالشيءنجسا বস্তুটি ময়লা হয়েছে। আবার বলা হয়, تنجسالشيء: صارنجسا: تلطخبالقذر অর্থাৎ ময়লা মাখিয়ে দেওয়া। শরী‘আতের পরিভাষায় ‘নাজাসাত’ হলো, নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়লা যা সালাত ও এ জাতীয় ইবাদাত করতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন, পেশাব, রক্ত ও মদ।
খ- নাজাসাতের ধরণ:
নাজাসাত দু’ধরণের:
সত্তাগত বা প্রকৃত নাজাসাত হলো কুকুর ও শূকর ইত্যাদি। এসব নাজাসাত ধৌত করা বা অন্য কোনো উপায়ে কখনো পবিত্র হয় না।
আর হুকমী তথা বিধানগত নাজাসাত হলো ঐ নাপাকী যা পবিত্র স্থানে পতিত হয়েছে।
গ- নাজাসাতের প্রকারভেদ:
নাজাসাত তিন প্রকার। যথা:
যার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ:
১- যেসব নাজাসাত অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত, সেগুলো হলো:
২- যেসব জিনিস অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন তা হলো:
৩- যেসব নাজাসাত অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মার্জনা করা হয়েছে, অর্থাৎ দোষমুক্ত। সেগুলো হলো:
গোসল, পানি ছিটিয়ে দেওয়া, ঘর্ষণ ও মুছে ফেলার মাধ্যমে নাজাসাত পবিত্র করা যায়।
[১] মযী হলো: স্বচ্ছ, পাতলা, পিচ্ছিল পানি, যা যৌন উত্তেজনার শুরুতে বের হয় কিন্তু চরম পুলক অনুভব হয় না, তীব্র বেগে বের হয় না ও বের হওয়ার পর কোনো ক্লান্তি আসে না। অনেক সময় এ পানি বের হওয়ার বিষয়টি অনুভব করা যায় না। -অনুবাদক।
[২] অদী হলো: পেশাবের আগে পরে নির্গত রস। -অনুবাদক।
ক- তায়াম্মুমের শাব্দিক অর্থ: ইচ্ছা করা, কামনা করা, মনস্থ করা।
খ- তায়াম্মুমের পারিভাষিক অর্থ: পবিত্র মাটি দ্বারা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মুখ ও দু হাত মাসাহ করা।
আল্লাহ এ উম্মতের জন্য যেসব বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা দান করেছেন তায়াম্মুম সেসব বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। এটি পানির পরিবর্তে পবিত্র হওয়ার মাধ্যম।
প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দুহাত মাটিতে মারবে, অতঃপর এর দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ধারাবাহিক ও বিরতিহীনভাবে মাসাহ করবে।
কারো হাড় ভেঙ্গে গেলে বা শরীরে ক্ষত বা জখম হলে পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা করলে ও কষ্ট হলে তবে ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম করবে এবং বাকী অংশ ধুয়ে ফেলবে। কেউ পানি ও মাটি কোনটিই না পেলে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই সালাত আদায় করে নিবে। তাকে উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।
সব ধরণের পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে না ফেলা পর্যন্ত তার উপর মাসাহ করা জায়েয, এতে মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক বা জানাবত তথা বড় নাপাকী লাগুক।