ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন
# দারস তৈরী - সূরা আন-নাস (سورة الناس), # বই নোট: ইকামাতে দ্বীন # ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ সংক্রান্ত আয়াত # ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ সংক্রান্ত হাদিস #তাহারাত সংক্রান্ত সম্পর্কিত মাসায়েল
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيم ১.ِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ২. مَلِكِ النَّاسِ ৩. إِلَٰهِ النَّاسِ ৪. مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ৫. الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ৬. مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
দয়াময়, পরম করুনাময় আল্লাহর নামে (১) কুল আউযু বিরাব্বিন নাস। (অর্থ: বলো, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।) (২) মালিকিন নাস। (অর্থ: যিনি মানুষের অধিপতি।) (৩) ইলাহিন নাস। (অর্থ: যিনি মানুষের উপাস্য।) (৪) মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্না-স। (অর্থ: কুমন্ত্রণাদাতা শয়তানের অনিষ্ট থেকে, যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়।) (৫) আল্লাযি ইউয়াস ডিসু ফি সুদুরিন নাস। (অর্থ: যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়।) (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস। (অর্থ: জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।)
সূরা আন-নাস (আরবি: سورة الناس) নামকরণ করা হয়েছে "নাস" (الناس) শব্দটি থেকে, যার অর্থ "মানুষ" বা "মানবজাতি"।
সূরা ফালাক ও সূরা নাস একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। এই দুই সূরা নাজিলের প্রেক্ষাপট হলো:
এই সূরাটি পড়লে **অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাজতে থাকা** যায়। এই দুই সূরাকে একত্রে **মুআউযাতাইন** (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দুটি সূরা) নামেও পরিচিত।
সূরাটির প্রধান বিষয়বস্তু হলো: **আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা** করা। এটি মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা কামনা করার শিক্ষা দেয়।
মক্কা মু'আয্যমায় ইসলামী দাওয়াতের সূচনা পর্বে কাফেরদের তীব্র বিরোধিতা, হত্যার ষড়যন্ত্র, যাদু-টোনা এবং জিন ও মানুষদের মধ্যকার শয়তানদের প্ররোচনার মুখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়।
হযরত মূসার (আঃ) আশ্রয় প্রার্থনা:
وَ قَالَ مُوۡسٰۤی اِنِّیۡ عُذۡتُ بِرَبِّیۡ وَ رَبِّكُمۡ مِّنۡ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا یُؤۡمِنُ بِیَوۡمِ الۡحِسَابِ ﴿۲۷এবং
وَاِنِّیۡ عُذۡتُ بِرَبِّیۡ وَرَبِّکُمۡ اَنۡ تَرۡجُمُوۡنِ ۫—এর মতোই রাসূলকে (সাঃ) সকল অনিষ্টকারী ও দাম্ভিকের মোকাবেলায় আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মরহুম অধ্যাপক গোলাম আজম
প্রাথমিক কথা: এই পুস্তকটি ১৯৭৮ সালে ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’ নামে প্রথম প্রকাশিত এবং ১৯৮১ সালের তৃতীয় সংস্করণ থেকে “ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন” নামে লেখা পুস্তিকার দ্বিতীয় সিরিজ হিসেবে প্রকাশিত।
দ্বীনি দায়িত্ব পালনের দুটি দিক: ১. খিদমাতে দ্বীন, ২. ইক্বামাতে দ্বীন।
বিভিন্ন খেদমতে দ্বীন (যেমন: মাদ্রাসা, ওয়াজ, তাবলীগ ইত্যাদি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পরস্পর পরিপূরক। যারা নিজেদের খেদমতকেই শুধু মূল্যবান মনে করে, তাদের দ্বারা উম্মাতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে।
★ এ বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় ২টি: **১. ‘দ্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা, ২. “ইকামাতে দ্বীনের” মর্ম।**
আল্লার আনুগত্যের যে বিধান হিসেবে দ্বীন ইসলামকে পাঠানো হয়েছে, তা মানব জীবনের **সকল দিক ও বিভাগের জন্য** তৈরি করা হয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে যাতে মানুষ একমাত্র আল্লার সঠিক আনুগত্য করতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহ পাক স্বয়ং ইসলামী জীবন বিধান রচনা করেছেন।
لَقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ كَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللّٰهَ كَثِیۡرًا ﴿ؕ۲۱
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লার (সন্তুষ্টি) ও শেষ দিনের (মুক্তির) আকাংখা করে তাদের জন্য রাসূল (সঃ) এর মধ্যে **সুন্দরতম আদর্শ** রয়েছে। “-(সূরা আল আহযাব: ২১)
রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর গোটা জীবনটাই ইসলামী জীবন এবং আল্লাহর দ্বীন বা আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে শামিল। **ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে** বিশ্বাসী এবং **রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্মে** বিশ্বাসী—উভয় দলই রাসূল (সঃ)-এর আনীত দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল পথে আছেন।
এ অংশের মূল আলোচ্য বিষয়:
‘ইকামাত’ শব্দের সহজ অর্থ হলো **কায়েম করা, চালু করা, প্রতিষ্ঠিত করা** ইত্যাদি।
“ইকামাতে দ্বীন” এমন একটি পরিভাষা যার অর্থ হলো **“আল্লার দ্বীন কায়েম করা”** বা **“দ্বীন ইসলাম কায়েম করা”**।
কুরআনের নির্দেশ: “তোমরা পূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। ”-(সূরা আল বাকারা: ২০৮)
দ্বীনে হক বাংলাদেশে ততটুকুই বেঁচে আছে **যতটুকু দ্বীনে বাতিল অনুমতি দিয়েছে**। ইসলামকে যদি বিরাট একটি দালানের সংগে তুলনা করা হয়, তাহলে কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত সে বিরাট বিল্ডিং এর ভিত্তি মাত্র। বর্তমানে ইসলামের গোটা বিল্ডিং এর অস্তিত্ব নেই, শুধু ভিত্তিটুকুর অবস্থাই করুণ।
আল্লাহ পাক এ দায়িত্ব দিয়েই রাসূল (সঃ) কে পাঠিয়েছেন। এর প্রমাণস্বরূপ তিনটি আয়াত:
هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ كُلِّهٖ ۙ وَ لَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ ﴿۳۳ (সূরা আত তাওবা: ৩৩)
هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ كُلِّهٖ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیۡدًا ﴿ؕ۲۸ (সূরা ফাতহ: ২৮)
هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ كُلِّهٖ وَ لَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ ﴿۹ (সূরা আস সফ: ৯)
ফরিযায়ে ইকামাতে দ্বীন প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। রাসূলের দায়িত্ব পালনে পূর্ণভাবে শরীক হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী।
ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম, যুদ্ধ করা, সরকার গঠন, কুরআনের আইন চালু করা, ইনসাফপূর্ণ বিচার-ব্যবস্থা কায়েম, অর্থনৈতিক বিধান জারী করা—এসব **অগণিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজ** তিনি দ্বীনের দায়িত্ব হিসেবেই করেছেন। এসব কাজকে অবহেলা করলে দ্বীনদারীর ক্ষতি হবে।
বাস্তবে দ্বীনে হককে বিজয়ী করার দ্বীনি দায়িত্বই যে আসল কাজ, এ কথা না বুঝলে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব কারা পালন করবে?
দুনিয়ায় যে কোন আদর্শ কায়েমের এটাই একমাত্র স্বাভাবিক কর্মপদ্ধতি:
হক কায়েমের চেষ্টা করলে বাতিলের পক্ষ থেকে বাধা আসাই স্বাভাবিক, কারণ হক ও বাতিল একই সাথে চালু থাকতে পারে না। **ইসলামের প্রথম কথাই বাতিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।**
যে দেশে দ্বীনে হক কায়েম নেই সেখানে ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালালে কায়েমী স্বার্থ অবশ্যই বাধা দেবে। যদি কায়েমী স্বার্থ কোনো ইসলামী খেদমতকে বিপজ্জনক মনে না করে, তাহলে বুঝতে হবে যে, ঐ খেদমত যতই মূল্যবান হোক তা **ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন নয়**। মাদ্রাসা, তাবলীগ, ও খানকাসহ অন্যান্য খেদমতে দ্বীনের সাথে বাতিল শক্তির সংঘর্ষ হয় না, কারণ তাঁদের পদ্ধতির মধ্যে বাতিলের উৎখাতের কোনো কর্মসূচি নেই।
ইকামাতে দ্বীনের দাবী অনুযায়ী তারা ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় না হওয়ার পেছনে ৫টি কারণ:
আল্লাহ পাক একমাত্র **রাসূল (সঃ)-কে উসওয়াতুন হাসানা বা দ্বীনের মাপকাঠি** বানিয়েছেন। রাসূল (সঃ) যেহেতু ওহী দ্বারা পরিচালিত, তাই তিনি যেমন নির্ভূল, তেমন আর কেউ হতে পারে না।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ওলামাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য হলেও, সে সময়ে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল **ইংরেজ থেকে আজাদী হাসিল** অথবা **স্বাধীন মুসলীম দেশ কায়েম**। ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত ও কর্মসূচী নিয়ে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিনত করার আন্দোলন করাই যে দ্বীনের দাবী, তা উপলব্ধির অভাব ছিল।
পূর্ণাঙ্গ জামায়াত না পাওয়ার অজুহাতে ইকামাতে দ্বীনের কাজ না করলে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান-বুদ্ধি অনুসারে, জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে উন্নত কোনো জামায়াত পাওয়া যায়নি।
জামায়াত ফতোয়াবাজদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না, বরং তাদের দ্বীনি খেদমতকে স্বীকার করে। যদিও ঐসব ফতোয়া দেশে দ্বীনে বাতিলের পক্ষে কাজ করে, তবুও জামায়াত তাদেরকে বিরোধী শক্তি মনে করে না। জামায়াতে ইসলামীকে সংশোধন করার নিয়তে আলেমগণ ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে জামায়াত শুকরিয়া জানাবে।
মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর এত লেখালেখির মাঝে ভুল ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তার লেখা থেকে উদ্বৃতি নিয়ে **বিকৃত ব্যাখ্যা** করেছেন, যার ফলে লেখকের মূল বক্তব্যের সাথে সমালোচনার কোনো মিল নেই। যারা জ্ঞান চর্চায় নিযুক্ত, তারা যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে সমালোচনা করলে দ্বীনের উপকার হবে।
ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখে এযাম হলেন **নবীর ওয়ারিস**। আধুনিক শিক্ষিত লোকের পক্ষে ইসলামের ইলম ও আমল সম্বন্ধে শিক্ষা পেতে হলে ওলামা ও মাশায়েখের সাহায্য ছাড়া উপায় নেই।
সকল হাক্কানী ওলামা ও মাশায়েখের খেদমতে আরজ: মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর **“তাফহীমুল কুরআন”** ও **“রাসায়েল ও মাসায়েল”** নামক পুস্তকগুলো **পড়ে দেখুন**। শুধু অন্যের মন্তব্য শুনেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজে দেখে ফয়সালা করুন।