logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

📚 অনুশীলনী -১৬(আগষ্ট-৩য় সপ্তাহঃ)

# দারস তৈরী - সূরা আন-নাস (سورة الناس), # বই নোট: ইকামাতে দ্বীন # ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ সংক্রান্ত আয়াত # ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ সংক্রান্ত হাদিস #তাহারাত সংক্রান্ত সম্পর্কিত মাসায়েল

দারস তৈরী - সূরা আন-নাস (سورة الناس)


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيم
১.ِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
২. مَلِكِ النَّاسِ
৩. إِلَٰهِ النَّاسِ
৪. مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
৫. الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
৬. مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

দয়াময়, পরম করুনাময় আল্লাহর নামে (১) কুল আউযু বিরাব্বিন নাস। (অর্থ: বলো, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।) (২) মালিকিন নাস। (অর্থ: যিনি মানুষের অধিপতি।) (৩) ইলাহিন নাস। (অর্থ: যিনি মানুষের উপাস্য।) (৪) মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্না-স। (অর্থ: কুমন্ত্রণাদাতা শয়তানের অনিষ্ট থেকে, যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়।) (৫) আল্লাযি ইউয়াস ডিসু ফি সুদুরিন নাস। (অর্থ: যে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়।) (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস। (অর্থ: জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।)

নামকরণ 🏷️

সূরা আন-নাস (আরবি: سورة الناس) নামকরণ করা হয়েছে "নাস" (الناس) শব্দটি থেকে, যার অর্থ "মানুষ" বা "মানবজাতি"

  • এটি কোরআনের **১১৪তম ও সর্বশেষ সূরা**।
  • এই সূরায় **৬টি আয়াত** রয়েছে।
  • এটি **মদিনায়** অবতীর্ণ হয়েছে।
  • এই সূরাটিতে মানুষের প্রতিপালক, শাসক ও উপাস্যের কাছে **শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় চাওয়ার** কথা বলা হয়েছে।

শানে নুযুল (অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট) 📜

সূরা ফালাক ও সূরা নাস একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। এই দুই সূরা নাজিলের প্রেক্ষাপট হলো:

  • হুদাইবিয়ার ঘটনার পর **লাবীদ ইবনে আসাম এবং তার কন্যারা** রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর **যাদু** করেছিল, ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
  • আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে যাদুকরের নাম ও কোথায় যাদু করা হয়েছে (জারওয়ান কূপের তলদেশে) সে সম্পর্কে জানিয়ে দেন।
  • এই সূরাটি (এবং ফালাক) নাজিল হওয়ার পর কূপ থেকে যাদুর সরঞ্জাম তুলে এনে এই সূরাগুলো পড়ে গিরাগুলো খোলা হয়।
  • তৎক্ষণাত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সুস্থ হয়ে উঠেন।

এই সূরাটি পড়লে **অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাজতে থাকা** যায়। এই দুই সূরাকে একত্রে **মুআউযাতাইন** (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দুটি সূরা) নামেও পরিচিত।

প্রধান বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য 💡

আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা

সূরাটির প্রধান বিষয়বস্তু হলো: **আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা** করা। এটি মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা কামনা করার শিক্ষা দেয়।

  • আল্লাহর সার্বভৌমত্ব: সূরাটিতে বারবার আল্লাহর তিনটি গুণাবলী ব্যবহার করে তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে:
    1. রব্বিন নাস (মানুষের প্রতিপালক)
    2. মালিকিন নাস (মানুষের রাজা/মালিক)
    3. ইলা-হিন নাস (মানুষের উপাস্য)
  • কুমন্ত্রণার উৎস: শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে, যা মানুষের মনে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। শয়তান **জীন এবং মানুষের রূপেও** এসে কুমন্ত্রণা দিতে পারে।

ঐতিহাসিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট

মক্কা মু'আয্‌যমায় ইসলামী দাওয়াতের সূচনা পর্বে কাফেরদের তীব্র বিরোধিতা, হত্যার ষড়যন্ত্র, যাদু-টোনা এবং জিন ও মানুষদের মধ্যকার শয়তানদের প্ররোচনার মুখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়।

হযরত মূসার (আঃ) আশ্রয় প্রার্থনা:

وَ قَالَ مُوۡسٰۤی اِنِّیۡ عُذۡتُ بِرَبِّیۡ وَ رَبِّكُمۡ مِّنۡ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا یُؤۡمِنُ بِیَوۡمِ الۡحِسَابِ ﴿۲۷

এবং

وَاِنِّیۡ عُذۡتُ بِرَبِّیۡ وَرَبِّکُمۡ اَنۡ تَرۡجُمُوۡنِ ۫

—এর মতোই রাসূলকে (সাঃ) সকল অনিষ্টকারী ও দাম্ভিকের মোকাবেলায় আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফজিলত ✨

  • প্রতিদিনের আমল: প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই সূরা পড়ার গুরুত্ব হাদীস শরীফে এসেছে।
  • বিপদ থেকে নিরাপত্তা: যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা (ফালাক ও নাস) পড়বে, সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (জামে তিরমিজি, হাদীস: ২৯০৩)
  • ঘুমের পূর্বে আমল: হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় উভয় হাত একত্র করে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে দেহের যতটুকু সম্ভব বুলিয়ে নিতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। (সহি বুখারি ৫০১৭)
  • অনুপম সূরা: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমার ওপর কিছু আয়াত নাজিল হয়েছে, যা আমি এর মতো অনুরূপ দেখিনি— কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। (জামে তিরমিজি, হাদিস নং-২৯০২)

শিক্ষণীয় নির্দেশনা 💡

  1. আশ্রয় কামনা **একমাত্র আল্লাহর নিকট** করা, কারণ তিনি এই মহাবিশ্বের প্রতিপালক ও আশ্রয়দাতা।
  2. আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে থাকা **অনিষ্ট** থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
  3. মানুষের ক্ষতি সাধন করা (জান, মাল, ইজ্জত-আব্রু) অনেক বড় পাপ। এসব ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের পদ্ধতি এই সূরায় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
  4. **হিংসা** অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অপছন্দনীয় কাজ; হিংসা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
  5. **শয়তানের অস্তিত্ব সত্য।** সে মানুষকে আড়ালে থেকে ধোঁকা দেয় ও কুমন্ত্রণা দেয়। জিন শয়তান এবং **মানুষ শয়তানের** অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় হলো আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।

Top


বই নোটঃ ইকামাতে দ্বীন,

 মরহুম অধ্যাপক গোলাম আজম


‘ইকামাতে দ্বীন’ গ্রন্থের প্রাথমিক কথা ও বিশ্লেষণ

প্রাথমিক কথা: এই পুস্তকটি ১৯৭৮ সালে ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’ নামে প্রথম প্রকাশিত এবং ১৯৮১ সালের তৃতীয় সংস্করণ থেকে “ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন” নামে লেখা পুস্তিকার দ্বিতীয় সিরিজ হিসেবে প্রকাশিত।

দ্বীনি দায়িত্ব পালনের দুটি দিক: ১. খিদমাতে দ্বীন, ২. ইক্বামাতে দ্বীন

বিভিন্ন খেদমতে দ্বীন (যেমন: মাদ্রাসা, ওয়াজ, তাবলীগ ইত্যাদি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পরস্পর পরিপূরক। যারা নিজেদের খেদমতকেই শুধু মূল্যবান মনে করে, তাদের দ্বারা উম্মাতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে।

★ এ বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় ২টি: **১. ‘দ্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা, ২. “ইকামাতে দ্বীনের” মর্ম।**

★ ‘দ্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা

১. দ্বীন শব্দের অর্থ ৪ টি:

  1. প্রথম অর্থ (প্রতিদান বা বদলা): مَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ (সূরা ফাতেহা) অর্থ: “প্রতিদান দিবসের মালিক।”
  2. দ্বিতীয় অর্থ (আনুগত্য): “আল্লার প্রতি আনুগত্যকে নিরংকুশ (খাস) করে তার দাসত্ব কর। ” -(সূরা আয যুমার: ২)
  3. তৃতীয় অর্থ (আনুগত্যের বিধান বা পদ্ধতি): “নিশ্চয় আল্লার নিকট একমাত্র ইসলামই আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান) ”-(সূরা আলে ইমরান: ১৯)
  4. চতুর্থ অর্থ (আইন, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা): “ফিরাউন বললো, আমাকে ছাড়, আমি মূসাকে হত্যা করবো। ... আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলিয়ে দেবে অথবা (অন্ততপক্ষে) দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে। ”-(সূরা মুমিন: ২৬)

২. দ্বীনের ব্যাপকতা:

আল্লার আনুগত্যের যে বিধান হিসেবে দ্বীন ইসলামকে পাঠানো হয়েছে, তা মানব জীবনের **সকল দিক ও বিভাগের জন্য** তৈরি করা হয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে যাতে মানুষ একমাত্র আল্লার সঠিক আনুগত্য করতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহ পাক স্বয়ং ইসলামী জীবন বিধান রচনা করেছেন।

৩. রাসূলূল্লাহ (সঃ) এর জীবনই দ্বীন ইসলামের বাস্তব নমুনা:

لَقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ كَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللّٰهَ كَثِیۡرًا ﴿ؕ۲۱

“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লার (সন্তুষ্টি) ও শেষ দিনের (মুক্তির) আকাংখা করে তাদের জন্য রাসূল (সঃ) এর মধ্যে **সুন্দরতম আদর্শ** রয়েছে। “-(সূরা আল আহযাব: ২১)

রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর গোটা জীবনটাই ইসলামী জীবন এবং আল্লাহর দ্বীন বা আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে শামিল। **ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে** বিশ্বাসী এবং **রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্মে** বিশ্বাসী—উভয় দলই রাসূল (সঃ)-এর আনীত দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল পথে আছেন।

★ ইকামাতে দ্বীন

এ অংশের মূল আলোচ্য বিষয়:

  • “ইকামাতে দ্বীনের” মর্ম, ইসলামী আন্দোলনের চিরন্তন কর্মপদ্ধতি।
  • হক ও বাতিলের সংঘর্ষ অনিবার্য কেন, এবং দ্বীনি খেদমতের সাথে এ সংঘর্ষ হয় না কেন।
  • ওলামায়ে কেরাম কেন সবাই “ইকামাতে দ্বীনে” সক্রিয় নন।
  • জামায়াতবদ্ধ প্রচেষ্টার গুরুত্ব, জামায়াতের বৈশিষ্ট্য ও জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আলোচনা।

“ইকামাতে দ্বীনের” মর্ম:

‘ইকামাত’ শব্দের সহজ অর্থ হলো **কায়েম করা, চালু করা, প্রতিষ্ঠিত করা** ইত্যাদি।

“ইকামাতে দ্বীন” এমন একটি পরিভাষা যার অর্থ হলো **“আল্লার দ্বীন কায়েম করা”** বা **“দ্বীন ইসলাম কায়েম করা”**।

কুরআনের নির্দেশ: “তোমরা পূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। ”-(সূরা আল বাকারা: ২০৮)

বাংলাদেশে দ্বীনে হকের অবস্থা:

দ্বীনে হক বাংলাদেশে ততটুকুই বেঁচে আছে **যতটুকু দ্বীনে বাতিল অনুমতি দিয়েছে**। ইসলামকে যদি বিরাট একটি দালানের সংগে তুলনা করা হয়, তাহলে কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত সে বিরাট বিল্ডিং এর ভিত্তি মাত্র। বর্তমানে ইসলামের গোটা বিল্ডিং এর অস্তিত্ব নেই, শুধু ভিত্তিটুকুর অবস্থাই করুণ।

দ্বীনে হক কায়েম হলে বাতিলের অবস্থা কী হয়?

  • দ্বীনে হক কায়েম হলে বাতিলকেই হকের অধীন হতে হয়, তবে আল্লাহ পাক বাতিলকে খতম করার হুকুম দেননি, তিনি **হককে বিজয়ী করার** নির্দেশ দিয়েছেন।
  • দ্বীনে হক কায়েম হলে বাতিল ধর্ম খতম হয়ে যাবে না। যারা অন্য ধর্ম পালন করতে চায়, তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না।
  • মন্দির, গির্জা ইত্যাদির হেফাযত করতে হবে। কারণ ধর্মের উপর শক্তি প্রয়োগ কুরআনে নিষেধ।

★ ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব:

আল্লাহ পাক এ দায়িত্ব দিয়েই রাসূল (সঃ) কে পাঠিয়েছেন। এর প্রমাণস্বরূপ তিনটি আয়াত:

هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ كُلِّهٖ ۙ وَ لَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ ﴿۳۳
(সূরা আত তাওবা: ৩৩)

هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ كُلِّهٖ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیۡدًا ﴿ؕ۲۸
(সূরা ফাতহ: ২৮)

هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ كُلِّهٖ وَ لَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ ﴿۹
(সূরা আস সফ: ৯)

ফরিযায়ে ইকামাতে দ্বীন প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। রাসূলের দায়িত্ব পালনে পূর্ণভাবে শরীক হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী।

রাসূল (সঃ) কি দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ করেছেন?

ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম, যুদ্ধ করা, সরকার গঠন, কুরআনের আইন চালু করা, ইনসাফপূর্ণ বিচার-ব্যবস্থা কায়েম, অর্থনৈতিক বিধান জারী করা—এসব **অগণিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজ** তিনি দ্বীনের দায়িত্ব হিসেবেই করেছেন। এসব কাজকে অবহেলা করলে দ্বীনদারীর ক্ষতি হবে।

বাস্তবে দ্বীনে হককে বিজয়ী করার দ্বীনি দায়িত্বই যে আসল কাজ, এ কথা না বুঝলে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব কারা পালন করবে?

★ ইসলামী আন্দোলনের চিরন্তন কর্মপদ্ধতি

দুনিয়ায় যে কোন আদর্শ কায়েমের এটাই একমাত্র স্বাভাবিক কর্মপদ্ধতি:

  1. আদর্শ কায়েমের জন্য একদল নেতা ও কর্মী বাহিনী **মানব সমাজ থেকেই সংগঠিত করে গড়ে তুলতে হয়**।
  2. ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সাথে কায়েমী স্বার্থের সংঘর্ষ **প্রত্যেক নবীর জীবনেই দেখা গেছে**।
  3. আন্দোলনের যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী তৈরীর পদ্ধতি অবশ্যই সময় সাপেক্ষ।
  4. ব্যক্তি গঠনের পর্যায় অতিক্রম করার পরই সমাজ গঠনের সুযোগ হতে পারে।
  5. ইসলামের খেদমত ও ইসলামী আন্দোলনে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
  6. **ক্যাডার পদ্ধতি:** যে কোন আদর্শ বাস্তবে কায়েম করতে হলে সে আদর্শে মন, মগয ও চরিত্র বিশিষ্টি নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী তৈরী করতেই হবে। এ জাতীয় পদ্ধতিকেই ক্যাডার সিষ্টেম বলে।

হক ও বাতিলের সংঘর্ষ অনিবার্য কেন?

হক কায়েমের চেষ্টা করলে বাতিলের পক্ষ থেকে বাধা আসাই স্বাভাবিক, কারণ হক ও বাতিল একই সাথে চালু থাকতে পারে না। **ইসলামের প্রথম কথাই বাতিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।**

দ্বীনি খেদমতের সাথে এ সংঘর্ষ হয় না কেন?

যে দেশে দ্বীনে হক কায়েম নেই সেখানে ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালালে কায়েমী স্বার্থ অবশ্যই বাধা দেবে। যদি কায়েমী স্বার্থ কোনো ইসলামী খেদমতকে বিপজ্জনক মনে না করে, তাহলে বুঝতে হবে যে, ঐ খেদমত যতই মূল্যবান হোক তা **ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন নয়**। মাদ্রাসা, তাবলীগ, ও খানকাসহ অন্যান্য খেদমতে দ্বীনের সাথে বাতিল শক্তির সংঘর্ষ হয় না, কারণ তাঁদের পদ্ধতির মধ্যে বাতিলের উৎখাতের কোনো কর্মসূচি নেই।

★ ওলামা ও নেতৃত্ব প্রসঙ্গ

ওলামায়ে কেরাম সবাই “ইকামাতে দ্বীনে” সক্রিয় নন কেন?

ইকামাতে দ্বীনের দাবী অনুযায়ী তারা ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় না হওয়ার পেছনে ৫টি কারণ:

  1. যারা মাদ্রাসায় পড়তে আসে তারা প্রায় সবাই গরীবের সন্তান, ফলে উন্নত মানের আলেম কমই হচ্ছে।
  2. মাদ্রাসা শিক্ষায় দুনিয়ার উন্নতির আশা কম বলে ধনীরা ছেলেদেরকে মাদ্রাসায় পাঠাতে চায় না।
  3. যারা মাদ্রাসায় পড়তে বাধ্য হয় তারা শুধু আখেরাতের আশাই করে।
  4. মাদ্রাসা শিক্ষায় ইসলামকে একটি **বিপ্লবী আন্দোলন হিসেবে শেখাবার ব্যবস্থা নেই**।
  5. সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ: রাসূল (সঃ)-কে শ্রেষ্ঠতম আদর্শ মানা সম্পর্কে সঠিক ধরনার অভাব।

দ্বীনের মাপকাঠি একমাত্র রাসূল (স.)

আল্লাহ পাক একমাত্র **রাসূল (সঃ)-কে উসওয়াতুন হাসানা বা দ্বীনের মাপকাঠি** বানিয়েছেন। রাসূল (সঃ) যেহেতু ওহী দ্বারা পরিচালিত, তাই তিনি যেমন নির্ভূল, তেমন আর কেউ হতে পারে না।

উপমহাদেশের বড় বড় ওলামা ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন করেন নি কেন?

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ওলামাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য হলেও, সে সময়ে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল **ইংরেজ থেকে আজাদী হাসিল** অথবা **স্বাধীন মুসলীম দেশ কায়েম**। ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত ও কর্মসূচী নিয়ে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিনত করার আন্দোলন করাই যে দ্বীনের দাবী, তা উপলব্ধির অভাব ছিল।

★ জামায়াতবদ্ধ প্রচেষ্টার গুরুত্ব

  • ইকামাতে দ্বীনের কাজ কারো পক্ষে **একা করা কিছুতেই সম্ভব নয়**। শত যোগ্যতা সত্বেও কোনো নবীও একা দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেন নি।
  • সফরের সময় দু’জন একসাথে সফর করলেও একজনকে আমীর মেনে জামায়াতের শৃঙ্খলা মতো চলার জন্য রসূল (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।
  • জামায়াত ছাড়া ইসলামী জিন্দেগী সম্ভব নয় এবং আমীর ছাড়া ও জাময়াত হতে পারে না।

ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে গঠিত জামায়াতের বৈশিষ্ট্য:

  1. ইসলাম যতটা ব্যাপক, এ জামায়াতের দাওয়াতও ততটা ব্যাপক হবে।
  2. এ জামায়াত ইসলামের পূর্নাংগ শিক্ষাকে মানব সমাজের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করবে।
  3. পূর্ন দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে মানুষকে এ সংগঠনে শামিল করার চেষ্টা করবে।
  4. যোগ্য কর্মী বাহিনী সৃষ্টির জন্য তারবিয়াত বা ট্রেনিং ব্যবস্থা করবে।
  5. বাতিল নেজাম এ জাতীয় জামায়াতকে বিপদজনক মনে করে তার অগ্রগতি রোধ করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে।
  6. এ জাতীয় সংগঠনের কেউ নেতা হবার চেষ্টা করে না, বরং নেতার যোগ্যতা সম্পন্ন লোককে নেতৃত্ব গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

বাংলাদেশে এ জাতীয় জামায়াত আছে কি?

পূর্ণাঙ্গ জামায়াত না পাওয়ার অজুহাতে ইকামাতে দ্বীনের কাজ না করলে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান-বুদ্ধি অনুসারে, জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে উন্নত কোনো জামায়াত পাওয়া যায়নি।

★ জামায়াতে ইসলামী ও মাওলানা মওদূদী (রঃ)

  • মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদুদী (রঃ) আজীবন একথার উপর জোর দিয়েছেন যে, আল্লার রাসূল (সঃ) ছাড়া আর কোনো ব্যক্তিকে **অন্ধভাবে মানা উচিত নয়**।
  • এ জামায়াতে আহালে সুন্নাহ আল জামায়াতের যে কোনো মাযহাবের লোক শামিল হতে পারে।
  • জামায়াতের সবারই ইসলাম সম্পর্কে অতীত ও বর্তমান সকল লেখকের বই থেকে **স্বাধীনভাবে মতামত গ্রহন করার পূর্ন স্বাধীনতা** রয়েছে।
  • জামায়াতে ইসলামী মওলানা মওদূদী (রঃ)-কে ফেকাহ বা আকায়েদের ইমাম মনে করে না।
  • আরব দুনিয়াসহ বিশ্বের অনেক ব ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের **শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ** বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

জামায়াত বিরোধী ফতোয়া:

জামায়াত ফতোয়াবাজদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না, বরং তাদের দ্বীনি খেদমতকে স্বীকার করে। যদিও ঐসব ফতোয়া দেশে দ্বীনে বাতিলের পক্ষে কাজ করে, তবুও জামায়াত তাদেরকে বিরোধী শক্তি মনে করে না। জামায়াতে ইসলামীকে সংশোধন করার নিয়তে আলেমগণ ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে জামায়াত শুকরিয়া জানাবে।

মাওলানা মওদূদী (রঃ) বিরোধী ফতোয়া:

মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর এত লেখালেখির মাঝে ভুল ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তার লেখা থেকে উদ্বৃতি নিয়ে **বিকৃত ব্যাখ্যা** করেছেন, যার ফলে লেখকের মূল বক্তব্যের সাথে সমালোচনার কোনো মিল নেই। যারা জ্ঞান চর্চায় নিযুক্ত, তারা যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে সমালোচনা করলে দ্বীনের উপকার হবে।

★ ওলামা ও মাশায়েখে কেরামের খেদমতে

ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখে এযাম হলেন **নবীর ওয়ারিস**। আধুনিক শিক্ষিত লোকের পক্ষে ইসলামের ইলম ও আমল সম্বন্ধে শিক্ষা পেতে হলে ওলামা ও মাশায়েখের সাহায্য ছাড়া উপায় নেই।

সকল হাক্কানী ওলামা ও মাশায়েখের খেদমতে আরজ: মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর **“তাফহীমুল কুরআন”** ও **“রাসায়েল ও মাসায়েল”** নামক পুস্তকগুলো **পড়ে দেখুন**। শুধু অন্যের মন্তব্য শুনেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজে দেখে ফয়সালা করুন।

Top


মুখস্থঃ


ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ: আয়াত মুখস্থ (Go)

ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ: হাদিস মুখস্থ (Go)

Top


মাসআলাঃ তাহারাত সংক্রান্তঃ (Go)

Top

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM