গর্ভাবস্থা (গর্ভধারণ বা gestation) হলো এমন একটি অবস্থা বা সময় যখন কোনো নারীর শরীরের মধ্যে এক বা একাধিক সন্তান
বৃদ্ধিলাভ করে থাকে। গর্ভাবস্থা যৌনসঙ্গম অথবা অন্যান্য সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটতে পারে। শিশুর জন্ম সর্বশেষ
রজঃস্রাবের সময় থেকে প্রায় ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শিশু জন্মের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। মাত্র দশ মাস দশ দিনে মাসে এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে থাকে যেখানে প্রতি মাসে প্রায়
৩১ দিন হয়। এটি গর্ভ সঞ্চারের প্রায় ৩৮ সপ্তাহ পরে হয়ে থাকে। গর্ভধারণের পর প্রথম আট সপ্তাহের মধ্যে একটি ভ্রূণ সন্তান
হিসেব রূপলাভ করতে থাকে, পরবর্তীতে যা, জন্মের সময় গর্ভাবস্থার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। একাধিক গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একের বেশি সন্তান থাকে যেমন যমজ, তিন বা চার সন্তান।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণসমুহঃ-
গর্ভাবস্থা নয় মাসের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, এই সময় একজন মহিলাকে অনেক কিছুর যত্ন নিতে হয়। গর্ভধারণের প্রায় এক সপ্তাহ পরে,
একজন মহিলা কিছু লক্ষণ অনুভব করতে শুরু করেন যেমন-
- সময় মতো মাসিক না হওয়া: বিবাহিত অবস্থায় বা যৌন সংগম বা অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণের পর একজন নারী যদি হঠাত মাসিক বন্ধ হয়ে যায়
তবে বুঝতে হবে তিনি গর্ভধারণ করেছেন, এটি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ। তবে সময়মতো পিরিয়ড না হওয়ার অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, যেমন মহিলার মানসিক চাপ বা শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।
- স্তনে সংবেদনশীলতা: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে স্তনে সংবেদনশীলতা, স্তনের রঙের পরিবর্তন এবং সামান্য ব্যথা।
- ঘন ঘন প্রস্রাব: গর্ভধারণের প্রাথমিক অবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ দেখা দিতে পারে। এই সময় শরীরে রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে মূত্রাশয়ে তরল জমা হতে থাকে। অবশ্য গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসও দেখা দিতে পারে যা আপনার চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার
মাধ্যামে নিশ্চিত হবেন।
- স্তনে ভারী বোধ এবং ব্যথা: গর্ভাবস্থা হলে, একজন নারীর শরীরে হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে স্তনে ভারী বোধ এবং হালকা ব্যথা অনুভূত হয়। তবে হরমোনের ভারসাম্য থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই সমস্যাগুলো চলে যায়।
- বমি বমি ভাব এবং বমি: সারা দিন এবং বিশেষ করে সকালে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া। খাবারের গন্ধে বমি হওয়া গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
- জ্বর হওয়া: গর্ভাবস্থা হলে ক্ষুধামন্দা, বমি ভাবের কারণে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, সেজন্য মাঝে মধ্যে দুর্বলতা, ক্লান্তি, বদহজম এমনকি জ্বর দেখা দিতে পারে।
- পেটে হালকা ব্যথা: গর্ভাবস্থার পরে, কিছু মহিলার জরায়ুতে হালকা ব্যথাও হতে পারে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
- মুড সুইং বা হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তন: গর্ভাবস্থার শুরুতে, একজন মহিলার শরীরে হরমোনের বড় ওঠানামা হয়, যা মহিলার মেজাজকে প্রভাবিত করে। এই কারণেই গর্ভাবস্থার শুরুতে একজন মহিলা ছোট ছোট বিষয়ে খুশি বা দুঃখ অনুভব করতে পারেন। উপরন্তু, এটাও ঘটতে পারে যে মহিলা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বা বিষণ্ণ বোধ করেন।
- রুচির পরিবর্তন: গর্ভধারণের পর নারীর শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে তার রুচিরও পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা বাড়তে বা কমতে পারে। যদি একজন মহিলার স্বাদের পরিবর্তনের সাথে অন্যান্য উপসর্গগুলি অনুভব করে, তবে এটি সম্ভব যে তিনি গর্ভবতী। স্বাদ পরিবর্তনের সাথে সাথে একজন মহিলার ঘ্রাণশক্তিও পরিবর্তিত হয়। এটি ঘটে কারণ স্বাদ এবং গন্ধ একে অপরের সাথে যুক্ত।
বিভিন্ন মাসে গর্ভাবস্থার সম্ভ্যাব্য উপসর্গঃ-
গর্ভাবস্থার বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়, যা জানা জরুরি। আসুন জেনে নিই প্রতি মাসে কী কী লক্ষণ দেখা যায়-
- মাস-১: স্তন ফুলে যাওয়া এবং ব্যথার সাথে ক্লান্তি, অস্বস্তি এবং বমি হওয়া।
- মাস-২: খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং মেজাজের পরিবর্তন।
- মাস-৩: ওজন বেড়ে যাওয়া এবং পেট বেড়ে যাওয়া। এই অবস্থায় শারীরিক পরিবর্তন ঘটে।
- মাস-৪: পেটে শিশুর নড়াচড়া অনুভব করা এবং মুখে উজ্জ্বলতা দেখা যায়।
- মাস-৫: এই অবস্থানে, শিশুর নড়াচড়া আরও স্পষ্ট হবে এবং মহিলারা আরও ক্লান্তি অনুভব করবেন।
- মাস-৬: গর্ভাবস্থার কারণে শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়, যা কিডনিতে ব্যথা করে। এছাড়া অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসও গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ মাসের অন্যতম লক্ষণ।
- মাস-৭: তলপেটে ব্যথা হয়। এতে প্রসব ব্যথার মতো ব্যথা হয়। এই পর্যায়ে প্রসব ব্যথার মতো ব্যথা হয়। এই সময়ে আপনার শরীর আপনাকে প্রকৃত শ্রমের জন্য প্রস্তুত করে। এছাড়া পা, হাত ও মুখমন্ডলের মতো শরীরের অন্যান্য অংশে ফোলাভাব দেখা দেয়।
- মাস-৮: এই সময়ে নারীর শরীরে নড়াচড়ার কারণে স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পায়। এই সময়ের মধ্যে, আপনাকে আপনার ডাক্তারের সাথে অবিরাম যোগাযোগ রাখতে হবে।
- মাস-৯: এই সময়ে নিয়মিত প্রসব বেদনা হয়, যার মধ্যে কোমর ও পেটে ব্যাথা থাকে। এর সাথে, মহিলার যোনি থেকে তরল বের হওয়া ইঙ্গিত দেয় যে এটি সন্তানের জন্মের সময়।
গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্নসমূহ (Denger time in Pregnancy)
গর্ভাবস্থা একজন মায়ের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের খুব কম ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দেয়।
তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ নিয়ে আপনার আগে থেকেই জেনে নেওয়া দরকার। কারণ এসব লক্ষণ আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা গেলে তাৎক্ষণিক আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।
এসব লক্ষণকে গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্ন বলা হয়। এ লক্ষণগুলো জানা থাকলে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে এবং গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা যাবে।
বিপদ চিহ্নসমূহ
গর্ভাবস্থার বেশ কিছু বিপদ চিহ্ন রয়েছে। আপনি যদি বর্তমানে গর্ভবতী হোন কিংবা সম্প্রতি গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তবে এ লক্ষণগুলির ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখতে হবে
- রক্তস্রাব
- খিঁচুনি
- মাথা ব্যথা ও ঝাপসা দেখা
- ভীষণ জ্বর
- বিলম্বিত প্রসব
- পেট ব্যাথা
- গর্ভাবস্থার শেষ দিকে সারা গায়ে তীব্র চুলকানি
- চোখের সমস্যা
- হাত-পা ফুলে যাওয়া
- হঠাৎ পিপাসা বেড়ে যাওয়া
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া
- বাচ্চার নড়া-চড়া কমে যাওয়া
সতর্কতাঃ-
গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্নগুলো হয়তো সবসময় আগে থেকে টের পাওয়া সম্ভব নয়। তবে গর্ভাবস্থায় নিচের সহজ পরামর্শগুলো মেনে চললে এসব বিপদ চিহ্ন থেকে আপনি অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবেন—
১. নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করান:- গর্ভাবস্থায় আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা খুবই প্রয়োজনীয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩০ সপ্তাহে বা ৭ মাসে ন্যূনতম প্রতি মাসে একবার এবং ৩০ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে আপনার ডাক্তার দেখানো উচিত।
প্রতি চেকআপে ডাক্তার আপনার ওজন, রক্তশূন্যতা, পায়ে পানি আসা, রক্তচাপ এবং গর্ভের ভেতরে শিশুর পজিশন বা অবস্থান নিশ্চিত করবেন। সেই সাথে আপনার যদি গর্ভকালীন কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা (যেমন: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রি-এক্লাম্পসিয়া) থেকে থাকে, চিকিৎসক সেগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
২. সুষম খাবার গ্রহণ করুন:- গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি পরিমাণ খাবার দরকার হয়। কারণ এসময় আপনার পাশাপাশি আপনার গর্ভের শিশুর পুষ্টিও আপনার উপর নির্ভরশীল। গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
নিয়মিত বিরতিতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। প্রয়োজনে দৈনিক তিনবেলা বেশি করে খাবার না খেয়ে, অল্প অল্প করে ছয় বার খান। অথবা দৈনিক তিনবার খাওয়ার পাশাপাশি ক্ষুধা লাগলে পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ও হালকা নাস্তা খেতে পারেন।
এ ছাড়া অবশ্যই সকালে ঠিকমতো নাস্তা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। রাতে ঘুমানোর আগে কোনো হালকা খাবার খেয়ে নিবেন। এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন। দুধ ভালো ঘুমে সাহায্য করে।
৩. নিয়মিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ সেবন করুন:- এতে করে আপনার সময় ও অর্থ দুইই বাচবে। একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আপনার গর্ভ ধারণের ৫ম মাস থেকে নিয়মিতভাবে মেডিকেল চেক আপ এর নির্দেশনা সহ ঔষধ প্রেসক্রিপশন করবেন।
ফলে আপনাকে সাপ্লিমেন্টারীভাবে আয়রণ, ফলিক এসিড, ভিটামিন ইত্যাদি আলাদাভাবে গ্রহণ করতে হবে না।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:- গর্ভাবস্থায় যেকোনো ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। রাতে অন্তত ৭–৯ ঘণ্টা ভালোমতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে দিনের বেলাও কমপক্ষে এক ঘন্টা বিশ্রাম নিতে পারেন।
ঘুমের একটি রুটিন মেনে চলুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। খুব বেশি অথবা খুব কম না ঘুমিয়ে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৫. পূর্বের স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: আপনার আগে থেকেই ছিল এমন কিছু অসুখ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা তৈরি করতে পারে। যেমন—
- উচ্চ রক্তচাপ
- হৃদরোগ
- ডায়াবেটিস
- এইডস অথবা যৌনবাহিত অন্য কোনো রোগ
- অটোইমিউন রোগ
দৈনন্দিন কাজ ও অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা কমানো সম্ভব।
৬. প্রসব কালীন খরচের জন্য সঞ্চয় করুন: গর্ভাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার কারণে আপনার অতিরিক্ত খরচও হতে পারে। এজন্য আগে থেকেই প্রসবকালীন খরচের জন্য সঞ্চয় করুন।
৭. প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা রাখুন:- গর্ভাবস্থায় এসব বিপদ চিহ্ন দেখা গেলে সাথে সাথে আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। কাজেই আগে থেকে আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন ঠিক করে রাখুন।
INVESTIGATION
- Blood CBC with ESR
- RBS, FBS
- HbA1c
- Urine R/E
- VDRL
- Widal Test
- T3,T4 TSH
- HIV
- HCV
- HBsAg
- CRP
- USG for Pregnancy Profile
ব্যবস্থাপনা (Management)-
ঔষধ (Medicine) সাদৃশ্য লক্ষনানুসারে হোমিওপ্যাথি ঔষধ যোগ্যতাসম্পূর্ন হোমিওপ্যাথ এর পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। যেমন-
Cimicifuga, Pulsetilla , Ferum Met, Kali Mure, Thlapsi Barsa, Gossipium, Chaina, Apocynum Can etc.
source:[সহায়] online, google,