আসুন আমরা ডায়াবেটিস সম্পর্কে জেনে নেইঃ-
অগ্ন্যাশয় (pancreas)- ইনসুলিন নামক হরমোন উৎপাদন ও রক্তে নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে। গ্লুকোজ রূপে শর্করা রক্তের প্রবাহের মাধ্যমে প্রতিটি কোষের মধ্যে প্রবেশ করে। “ইন্ট্রাসেলুলার” আন্তঃগ্লুকোজ হচ্ছে কোষের জ্বালানী স্বরূপ যা ছাড়া কোষ কাজ সম্পাদন করতে পারে না। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র হলে পেনক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের বিটা সেল বা কোষ এ বিপর্যয় ঘটে, ফলে ইনসুলিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে পারে না। তখন রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতি জনিত অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরী করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয় তা হলে যে রোগ হয় তা হল ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যে কোন একটি বা দুইটিই যদি না হয় তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রন না করা গেলে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস (Diabetes) ইংরেজি শব্দ যার অর্থ বহুমূত্র। ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংশ্লিট রোগ। আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ন বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোন রোগ নয়। বর্তমানে পৃথিবীর ২-৫ ভাগ লোক এ-রোগে আক্রান্ত।
📌 ডায়াবেটিস এর শ্রেনীবিভাগ (Classification of Diabetes):
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
- ডায়াবেটিস মেলিটাস। (Diabetes Mellitus)
- ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস। (Diabetes Insipidus)
১। ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) এর প্রধান শ্রেণীবিভাগ
১. প্রাইমারী ডায়াবেটিস (Primary Diabetes)
👉 যেখানে ডায়াবেটিস নিজেই একটি রোগ হিসেবে দেখা দেয়, কোনো নির্দিষ্ট বাহ্যিক কারণ ছাড়াই।
- Type 1 Diabetes Mellitus – শিশু বা তরুণ বয়সে, ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ
- Type 2 Diabetes Mellitus – ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, বয়সজনিত
- (Gestational Diabetes Mellitus (GDM) – গর্ভাবস্থায়
- MODY (Maturity Onset Diabetes of the Young) – জেনেটিক, তরুণ বয়সে
- LADA (Latent Autoimmune Diabetes in Adults) – প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ-১
২. সেকেন্ডারী ডায়াবেটিস (Secondary Diabetes Mellitus)
👉 ডায়াবেটিস যখন অন্য কোনো রোগ, ওষুধ বা শারীরিক অবস্থার কারণে হয়।
🏥 অ. অঙ্গপ্রত্যঙ্গজনিত কারণ:
- Pancreatitis (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ)
- Pancreatic cancer
- Hemochromatosis
💊 আ. হরমোনজনিত রোগ:
- Cushing’s syndrome
- Acromegaly
- Hyperthyroidism
- Pheochromocytoma
💉 ই. ওষুধজনিত কারণ:
- Steroids (Prednisolone ইত্যাদি)
- Thiazide diuretics
- Beta blockers
- Oral contraceptives
🧬 উ. জেনেটিক সিনড্রোম:
- Down syndrome
- Turner syndrome
- Klinefelter syndrome
🤰 ঊ. গর্ভাবস্থা সংশ্লিষ্ট:
- Secondary GDM (pre-existing endocrine বা hormonal abnormality থাকলে)
📌 সংক্ষেপে মনে রাখার পয়েন্ট:
- Primary: নিজেই রোগ (Type 1, Type 2, GDM, MODY, LADA)
- Secondary: অন্য রোগ, ওষুধ বা জেনেটিক কারণে (Pancreatitis, Steroids ইত্যাদি)
ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) এর প্রকারভেদ নিয়ে আরো তথ্য
1. টাইপ-১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes)
- শিশু বা কিশোর বয়সে শুরু হয়
- ইনসুলিন উৎপাদন হয় না (Autoimmune destruction of β-cells)
- ইনসুলিন নির্ভর
2. টাইপ-২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)
- সবচেয়ে সাধারণ ধরন
- বয়স বাড়লে বেশি হয়
- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও ইনসুলিন ডেফিসিয়েন্সি
- লাইফস্টাইল + জেনেটিক কারণে হয়
3. গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes)
- গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়
- সাধারণত ডেলিভারির পরে ভালো হয়ে যায়
- ভবিষ্যতে টাইপ-২ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
4. মডি (MODY - Maturity Onset Diabetes of the Young)
- জেনেটিক কারণে হয়
- সাধারণত ২৫ বছরের আগে শুরু হয়
- ইনসুলিন প্রয়োজন নাও হতে পারে
5. ল্যাডা (LADA - Latent Autoimmune Diabetes in Adults)
- টাইপ-১ এর মতো, কিন্তু ধীরে ধীরে হয়
- প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়
- ইনসুলিন প্রয়োজন হয় কিছু সময় পর
6. সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস
- অন্য রোগ বা মেডিসিনের কারণে হয়
- যেমনঃ Pancreatitis, Cushing’s syndrome, Steroid-induced diabetes
মনে রাখার মতো ফ্ল্যাশ পয়েন্ট
- Type 1: No insulin (young, sudden)
- Type 2: Resistant to insulin (old, slow)
- Gestational: Pregnancy-related
- MODY: Young + Genetic
- LADA: Adult onset + Autoimmune
- Secondary: Drug/disease-related
২। ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes Insipidus)
📖 সংজ্ঞা:
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (DI) হলো একটি বিরল অবস্থা, যেখানে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়
ADH (Antidiuretic Hormone) এর অভাব বা কার্যকারিতার ব্যর্থতার কারণে।
এটি Diabetes Mellitus থেকে ভিন্ন এবং রক্তের গ্লুকোজের সাথে সম্পর্কিত নয়।
🔬 মূল কারণ:
- ADH উৎপাদনের ঘাটতি
- কিডনির ADH প্রতিক্রিয়ার অক্ষমতা
🧩 প্রকারভেদ:
১. নিউরোজেনিক / সেন্ট্রাল DI (Central DI)/ক্রেনিয়াল ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Cranial DI)
- Hypothalamus বা Pituitary gland ADH তৈরি করতে পারে না
- উদাহরণ: Brain injury, Pituitary tumor, Head trauma,Pituitary surgery, Brain tumor, Meningitis
২. নিফ্রোজেনিক DI (Nephrogenic DI)
- ADH রয়েছে, কিন্তু কিডনি সেটিতে প্রতিক্রিয়া দেখায় না
- 👉 কিডনি সঠিকভাবে ADH এর প্রতি সাড়া দেয় না, যদিও ADH শরীরে থাকে।
- 🔹 কারণ: জেনেটিক বা ওষুধজনিত (যেমনঃ Lithium, Amphotericin B), কিডনির অসুখ।
- উদাহরণ: Chronic kidney disease, Lithium drug effect, Genetic mutation in V2 receptors
৩. জেস্টেশনাল DI (Gestational DI)
- গর্ভাবস্থায় placenta ADH নষ্ট করে দেয়
- উদাহরণ: Pregnancy-induced vasopressinase enzyme
৪. ডিপসোজেনিক DI (Dipsogenic DI)
- অতিরিক্ত পানি পানের অভ্যাস
- উদাহরণ: Psychogenic polydipsia
📊 তুলনামূলক টেবিল:
ধরন |
কারণ |
ADH অবস্থা |
প্রতিকারযোগ্যতা |
Central DI |
ADH তৈরি হয় না |
কম |
হ্যাঁ (ADH প্রদান) |
Nephrogenic DI |
Kidney ADH-এ সাড়া দেয় না |
স্বাভাবিক |
আংশিক |
Gestational DI |
ADH ভেঙে যায় |
কম |
হ্যাঁ (ডেলিভারির পর) |
Dipsogenic DI |
অতিরিক্ত পানি পান |
স্বাভাবিক |
আচরণগত চিকিৎসা |
🩺 উপসর্গসমূহ:
- ঘন ঘন প্রস্রাব (Polyuria)
- অতিরিক্ত পিপাসা (Polydipsia)
- রাত্রিকালীন প্রস্রাব বৃদ্ধি
- Dehydration এর ঝুঁকি
📌 মনে রাখার পয়েন্ট:
- DI ≠ DM (DI গ্লুকোজ-সম্পর্কিত নয়)
- মূল সমস্যা: ADH এর অভাব বা কিডনির সাড়া না দেওয়া
- চিকিৎসা নির্ভর করে DI-এর ধরন অনুযায়ী
British Diabetic Association (BDA) কর্তৃক ডায়াবেটিসের শ্রেণীবিভাগ
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes Mellitus)
- Autoimmune ধ্বংসের ফলে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়
- সাধারণত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে হয়
- সম্পূর্ণরূপে ইনসুলিন-নির্ভর
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes Mellitus)
- সবচেয়ে সাধারণ প্রকার
- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন ডেফিসিয়েন্সি
- প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়
- ডায়েট, ব্যায়াম, ওষুধ, প্রয়োজনে ইনসুলিন
৩. গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes Mellitus - GDM)
- গর্ভাবস্থায় প্রথমবার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে
- সাধারণত ডেলিভারির পর নিয়ন্ত্রণে আসে
- ভবিষ্যতে টাইপ-২ হবার ঝুঁকি থাকে
৪. অন্যান্য নির্দিষ্ট প্রকারভেদ (Other Specific Types of Diabetes)
এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত:
- জেনেটিক ডিফেক্ট: MODY, Neonatal diabetes
- প্যাংক্রিয়াটিক রোগ: Pancreatitis, Cystic fibrosis
- হরমোন সংশ্লিষ্ট: Cushing’s syndrome, Acromegaly, Pheochromocytoma
- ড্রাগ/রসায়নজাত: Steroids, Thiazide diuretics, Antipsychotics
- ইনফেকশন: Congenital rubella, Cytomegalovirus
- অটোইমিউন রোগ: Stiff-person syndrome
📌 সারসংক্ষেপ টেবিল
শ্রেণী |
বৈশিষ্ট্য |
লক্ষ্যগোষ্ঠী |
Type 1 |
Autoimmune, ইনসুলিন প্রয়োজন |
শিশু ও তরুণ |
Type 2 |
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ডায়েট ও ওষুধ |
প্রাপ্তবয়স্ক |
GDM |
গর্ভাবস্থায় শুরু |
গর্ভবতী মহিলা |
Other Specific |
জেনেটিক, হরমোন, ওষুধজনিত |
বিভিন্ন |
ডায়াবেটিসের কারণ (Causes of Diabetes)-
১) প্রধান কারণ -
- * সোরা (Psora)
- * সিফিলিস (Syphilis)
- * সাইকোসিস (Psychosis)
- * টিউবারকুলার ডায়াথেসিস (Tubercular Diathesis).
২) আনুষঙ্গিক কারণ -
- * জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
- * ওজনাধ্যিকের কারণে।
- * শারীরিক পরিশ্রম কম করলে।
- * বহুদিন ধরে ষ্টেরয়েড ঔষধ ব্যবহার করলে।
- * জন্মের পরপরই শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ালে।
- * ষ্ট্রেস বা টেনশানের কারণে।
- * অটোইমিউন ডিজিজ জনিত কারণে। যেমন-হাইপোথাইরোডিজম, হাইপারথাইরোডিজম, মাইক্সোডিমা প্রভৃতি।
- * ইনফেকশনজনিত কারণে- যেমন-রুবেলা ভাইরাস, ষ্টেফাইলো কক্কাস।
- * বয়স- যেমন- যেকোন বয়সে হতে পারে। প্রধানত মধ্য বয়সে এবং বার্ধক্যে অবস্থায় বেশি হয়। ৫০ বছর বয়সের পরে শতকরা ৫০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়।
- * লিঙ্গ -নারী পুরুষ উভয়েই এই রোগে সমান ভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সে পুরুষরা এবং অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সে মহিলারা বেশি আক্রান্ত হয়।
- * অতিরিক্ত আহার করা।
- * শারীরিক ও মানসিক আঘাত।
- * গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন বিরোধী হরমোন সিক্রেশন অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পেলে।
- *প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন সিক্রেশন করে এারূপ-সেলের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেলে রক্তের প্লাজমায় ইনসুলিনের মাত্রা অত্যন্ত কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস মেলিটাস দেখা যায়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ -
- * বেশি প্রস্রাব হয়।
- * রাতে ঘুম ভেঙ্গে প্রস্রাবের প্রবণতা।
- * খুব বেশি পিপাসা লাগা।
- * অত্যন্ত ক্ষুধা, রোগী সবসময় ক্ষুধা অনুভব করে।
- * যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
- * ক্লান্তি বা অবসাদ বোধ।
- * ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া।
- * খোস পাঁচড়া, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেয়া।
- * যৌনাঙ্গে চর্মরোগ ও চুলকানি।
- * চোখে ঝাপসা দেখা।
- * মাথা ঘোরা।
- * সমস্ত শরীরে প্রচন্ড চুলকানি।
- * কোন কাজে উৎসাহ না পাওয়া।
- * গলা ও মুখ শুকিয়ে যায়।
- * বার্ধক্য ছাড়াই যৌনক্ষমতা ক্রমেই কমে যাওয়া।
- * রোগের আক্রমন সাধারনত ধীরে ধীরে হয়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হঠাৎ হয়।
- *বিছানায় প্রস্রাব করে।
- * কোষ্ঠবদ্ধতা বা মলশক্ত এবং ২-৩ দিন পর পর মলত্যাগ হয়।
- * দ্রুত শীর্ণ বা দ্রুত ওজন হ্রাস পায়।
- * শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়।
- * জিহ্বা ময়লা লেপাবৃত এবং ঠোঁট ফাটা।
- * প্রস্রাবে গ্লুকোজ।
- * পালস্ এবং ব্লাড প্রেসার নিম্ন।
রোগানুসন্ধান (Investigation)-
- * Blood CBC.
- Blood Suger (2 hour after meal)
- FBS
- RBS.
- KFT
- LFT
- HBA1C
- GTT
- Lipid Profile
- Urine RME C/S, R/S
- Stool RME C/S
- USG of W/A.
- ECG
- Echo
- X-Ray-chest-P/A
ভাবীফল (Prognosis)- নিয়ন্ত্রিত ও দক্ষতার সাথে চিকিৎসা করিলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। ডায়াবেটিস জটিল আকার ধারন করিলে এবং গর্ভাবস্থায় ১ম পর্যায়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে এর ভাবীফল খারাপ।
জটিলতা (complication)-
(১) রক্তনালী সম্পর্কিত জটিলতা-
- ক) ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ।
- খ) গ্যাংগ্রিন।
২) কিডনী সম্পর্কিত জটিলতা-
- ক) কিডনীর প্রদাহ।
- খ) কিডনীর আর্টারী সরু।
- গ) এলবুমিনুরিয়া।
৩) নিউরোলজিক্যাল সম্পর্কিত জটিলতা-
- ক) পেরিফেরাল নিউরাইটিস।
- খ) ইমপোটেন্সী
- গ) রাত্রে উদারাময়।
৪) পালমোনারী-
- ক) নিউমোনিয়া।
- খ) ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া
- গ) টিউবারকুলোসিস।
৫) গর্ভাবস্থায় এবং নিউনেটাল সম্পর্কিত জটিলতা-
- ক) মিসক্যারিজ।
- খ) এবরশন।
- গ) টক্সিমিয়া অব প্রেগনেনসি।
- ঘ) হাইড্রোমোনিয়াম।
৬) চোখের সমস্যা-
- ক) ডায়াবেটিস ক্যাটার্যাকট।
- খ) রাইনাইটিস।
- গ) হেমোরেজ।
- ঘ) কনজাংটিভাইটিস।
- ঙ) দেখতে সমস্যা।
৭) চর্মের সমস্যা-
- ক) ফোড়া।
- খ) কার্বাঙ্কল।
- ৮) কোমা।
- ৯) মানসিক এবং সামাজিক।
- ১০) মাড়ীর রোগ হয়।
ব্যবস্থাপনা (Management)
ঔষধ (Medicine) সাদৃশ্য লক্ষনানুসারে হোমিওপ্যাথি ঔষধ যোগ্যতাসম্পূর্ন হোমিওপ্যাথ এর পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। যেমন-
Aceticum Acidum, Aconite Nap, Arsenic Album,
Aqua, Alfalfa , Anatherum,
Asclepias, Arsenicum Bromatum ,
Agaricus Muscarius , Ammonium Acet, Apocynum,
Argentum Muriaticum, Aurum Mur, Carlsbad,
Calcarea Cornuti, Coca, Cimicifuga Racemosa,
Codeinum , Crataegus Oxyacantha , Cuprum Arsenicosum ,
Chionanthus Virginica , Capsicum Annuum , Castanea Vesca,
Cahinca, Cannabis Indica, Causticum,
Chininum Sulphuricum, Cina, Convallaria,
Dulcamara, Euonymus Atropurpurea, Ecithinum,
Equisetum, Ferrum Muriaticum, Glycerinum,
Gelsemium, Glonoine, Heloderma Suspectum,
Iris Versicolor, Inula Helenium , Ichthyolum ,
Joanesia Asoca , Menyanthes Trifoliata, Phaseolus Nanus,
Urea Pura , Vanadium, Kali Iodatum,
Kreosotum, Kalium Nitricum , Kousso,
Ledum Pal, Lilium Tigrinum , Lithium Carbonicum,
Lycopodium Clavat, Medorrhinum, Mercurius Corrosiv, Murex,
Petroselinum Sativum , Pulex Irritans , Pulsatilla Pratensis ,
Physalis Peruviana, Picric Acid, Platina-mur-nat,
Pulsatilla, Phosphoricum Acidum,
Sambucus Nig, Sanguinaria Can, Santonium,
Sarsaparilla, Scilla, Veratrum Viride ইত্যাদিসহ যে কোন ঔষধ লক্ষণ সদৃশ ব্যবহার করা যায়।
-
উপদেশ (advice)-
ক) পালনীয়/করনীয় (should do)-
- রোগীকে রোগ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দিতে হবে।
- জীবন প্রণালী, নিদ্রা, হাঁটা-চলা এবং ব্যায়াম সম্পর্কে রোগীকে তার রোগ অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ ও উপদেশ দিতে হবে।
- খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে।
- রোগীর সাথে সব সময় একটি ঔষধ নির্দেশক কার্ড রাখতে হবে।
- রোগীর রক্তে শর্করার হ্রাসজনিত শক সম্পর্কে অবগত করতে হবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
- প্রতি ৩ (তিন) মাস অন্তর অন্তর ঐনঅ১প পরীক্ষা করতে হবে।
- প্রতি বৎসর এক বার হলেও হিমোগ্লোবিন, ঐনঅ১প , খালি পেটে ব্লাড সুগার, সকালের খাবারের পর ব্লাড সুগার, দুপুরে খাবারের ২ ঘন্টা পর ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল কোলেস্টেরল, এইচডিএল কোলেস্টেরল, ক্রিয়েটিনিন, প্রস্রাবের এলবুমিন, প্রোটিন, বিএমআই, খঋঞ, কঋঞ, এইঞ ইত্যাদি টেষ্ট সমূহ করিয়ে নেয়া উচিৎ।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- দৈনিক নিয়মিত ৪০-৬০ মিনিট হাঁটতে হবে।
- শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
- পরিমিত শর্করা, প্রোটিন, চর্বি জাতীয় খাবার।
খ) নিষেধ (should not do)-
- মিষ্টি, চিনি, মিষ্টি শাক-সবজি খাওয়া।
- মাটির নিচে জন্মে এরূপ সবজি, যেমন-আলু।
- ধুমপান, মদ্যপান এবং হোটেলের খাবার পরিপূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা করা।
সবুজ শাক-সবজি খেতে দিতে হবে।
টমেটো, লেবু, শশা খেতে দিতে হবে।
পানি জাতীয় সবজি বেশি করে খেতে হবে। এতে প্রচুর ভিটামিন থাকে ও কোন সুগার থাকে না।
লাউ, কুমড়া, পটল, করলা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি ভিটামিনের অভাব পূরণ করে।
সূত্র: WHO, DGHS,- এসেন্স ডায়াবেটিস নির্দেশিকা হোমিও রেফারেন্স বইসমূহ থেকে সংগৃহীত; ChatGPT (OpenAI)-এর সহায়তায় প্রস্তুতকৃত।
আরোগ্যের বিবরণ (০১)
আইডি নং- ৩০৬৮, মোঃ ........ইসলাম - বয়স- ৪৮ বৎসর , পিতা- ........ঠিকানাঃ ...., শিবনাথ স্কুলের উত্তর পাশে, সদর, টাঙ্গাইল। বিগত ২৫-০৬-২০১৯ ইং তারিখে চিকিৎসার আমাদের এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল সেন্টারে জন্য আসেন।
তাঁর রোগ বিবরণী নিম্নে দেওয়া হোল –
প্রধান উপসর্গ –
১। RBS- ৬.৮ সকালে খালি পেটে, ১১.৮, খানা খাবার ২ ঘন্টা পর। প্রায় ২ বৎসর যাবত ডায়াবেটিসে ভুগতেছেন।
২। কোমর এ ব্যাথা যেন আটকে আছে, চিন চিন করে ব্যাথা করে, ব্যাথা স্থির থাকে , গরম সেক দিলে উপশম, টিপে দিলে ভালো লাগে, এই ব্যাথা প্রায় ২০ বৎসর যাবত হয়েছে।
অতীত রোগ ইতিহাসঃ ছোট সময় শরীরে খোস-পাচরা দেখা দিয়েছিল, যা মলম ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় ভালো হয়েছেন। মাঝে মাঝে ফোট-ফাটি উঠে।
বংশগত রোগ ইতিহাসঃ দাদার যক্ষা ছিলো, বাবার ডায়াবিটিস ও ঠান্ডা ছিল, মায়ের ডায়াবিটিস ছিলো।
মানসিক তথ্য- শান্ত স্বভাব, অন্ধকারে ভয় পায়। কুকুর ভীতি আছে। বেশি লোকজন একত্রে দেখলে বুক ধরফর করে।
খাদ্য- মিষ্টি প্রচুর পছন্দ, মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে গেলে মিষ্টি যেন ডাকে, না খেতে পারলে মানসিক অশান্তিতে ভুগে সেই ছোট সময় থেকেই, প্রতিদিন মধু খাবার অভ্যাস আছে, গরুর গোস্ত প্রিয়। গরম খাবার পছন্দ।
পিপাসা- প্রচুর।
আবহাওয়ার অনুভুতি- গরমকাতর, ঠাণ্ডা পানিতে গোসলে আরাম লাগে।
মল – স্বাভাবিক।
প্রস্রাব- ঘন ঘন হয়, রাতের চেয়ে দিনে বেশি, ১০-১২ বার। প্রস্রাবে দুর্গন্ধ আছে, প্রস্রাব গরম মনেহয়।
চর্ম : ঘাম কম, শরিরে আঁচিল।
ঘুম- স্বাভাবিক।
স্বপ্ন- সাপ যেন তাকে তাড়া করে।
উপরোক্ত বিষয় সমুহ পর্যালোচনা করে তাকে বিভিন্ন সময়ে Hypericum M/2-3, Argent Nit M/3-5, Ars Alb M/2- 3, Agaricus 1M, Naja T 200, Tuberculinum 1M, Ruta 1M-10M, Sulphur M/2-4 , নিয়ম অনুযায়ী সেবন করানো হয়, এবং এর মাঝে বিভিন্ন সময়ে RBS 16, 12, 9, 5.5, 6.2 এভাবে রিপোর্ট পেতে থাকি। পরবর্তীতে গত ১৮-০৩-২০২০ তারিখে GTT test এর রিপোর্ট নিয়ে আসেন যাতে দেখা যায় Fasting - 6.4; 75 gram Glucose - 11.2; 2 hours After Lunch - 8.5;
এখন তিনি সাভাবিক জীবন-যাপন করে চলেছেন। সুস্থ মানুষের মতো মধু, মিষ্টি খাচ্ছেন।
আরোগ্যের বিবরণ (০২)
আইডি নং- ২৬৪৬
নামঃ সো....... বেগম, বয়স- ৩৮ বছর, স্বামী- মোঃ ...... হক, গ্রাম- চরহামজানী, থানাঃ কালিহাতি, জেলাঃ টাঙ্গাইল। বিগত ২৬/০১/২০১৯ ইং তারিখে চিকিৎসার জন্য আমাদের এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার, পটল বাজারে আসেন। নিম্নে তার রোগীলিপি ও চিকিৎসার বিবরণী দেওয়া হলোঃ
প্রধান উপসর্গ –
১। মাথা গরম থাকে ও ব্যথা করে, মাথা ঠান্ডা পানিতে ধুলে উপশমগ
২। পায়ের গোছায় ব্যথা হয়, ফলে হাটতে কষ্ট হয়।
৩। RBS সকালে খালি পেটে 2 m.mo/l প্রতিমাসে ৭ কেজি করে চিনি তাঁর একা খেতে হয়, সকালে চিনি না খেলে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ।
৪। কাশি – সকালে বেশি থাকে।
৫। আমবাত আছে- গরমে বৃদ্ধি পায়।
অতীত রোগ ও চিকিৎসার ইতিহাসঃ ১৭ বছর আগে বাত জ্বর হয়েছিল, টিকা নেওয়ার ইতিহাস আছে। ৮ বছর আগে ব্রঙ্কাইটিস হয়েছিল।
বংশগত রোগ ইতিহাসঃ বাবার বাতের সমস্যা ছিল, বাবা গুল ব্যবহার করত, ছোট ভাই ব্রেইন টিউমারে মারা গেছে।
মানসিক অবস্থাঃ শান্ত।
খাদ্যাভ্যাসঃ খাবারের সময় টোকা (আলগা) লবণ খেতে হয়। গরম খাবার, মাংস ও মিষ্টি প্রিয়।
পিপাসাঃ স্বাভাবিক।
আবহাওয়ার কাতরতাঃ গরম কাতর।
হাত-পা ঃ পায়ের তলায় জ্বালা ও ব্যাথা আছে, গোড়ালিতে ব্যাথা, ঠান্ডায় আরাম লাগে, ব্যাথা উপর দিকে উঠে ।
প্রস্রাব ঃ জ্বালা ছিল ২ বছর আগে।
মলঃ স্বাভাবিক ।
ঘুমঃ কম, স্বপ্নঃ দুর্ঘটনা দেখে।
তার রোগ বিবরণী পর্যালোচনা করে ১৬/১১/২০১৮ তারিখে Aurum Met 1m পরিবর্তনশীল পদ্ধতিতে সেবন করতে দেই, পরবর্তীতে প্রস্রাবের জ্বালা লক্ষনে Medorhin M/2-M/5 পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী সেবন করাই, এতে RBS 2m.mo/l থেকে RBS 3m.mo/l এ গিয়ে থেমে থাকে, আরো উন্নতির দিকে না যাওয়ার পরবর্তীতে Eupetorium Purpuram M/2 –M/5 সেবন করতে দেওয়া হলে তাঁর RBS Test করান এবং দেখা যায় যে তার RBS সকালে খালি পেটে 3m.mo/l থেকে 6 m.mo/l হয়ে গেছে, বর্তমানে গত ১২/০৩/২০১৯ তারিখে তার স্বামীর সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম যে তিনি আবার RBS Test করান এবং RBS 6 m.mo/l ই আছে, আর প্রতি মাসে ৭ কেজি চিনি লাগে না, স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
এটা আল্লাহ তা’লার অপার মেহেরবাণী যে, প্রচলিত ভাবে জানা যায় ডায়াবেটিস রোগ দুরারোগ্য, একবার হলে আর সারে না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে মহান রাব্বুল আ’লামীন উনাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য দান করেছেন। সুতরাং “ সব কিছুর মালিক আল্লাহ, আর উনি যা চান তাই করতে পারেন, আমাদেরকে তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে” ।
আল্লাহ আমাদের উপর তাঁর রহমত অব্যাহত রাখুন এই প্রার্থনা করি সব সময়।