শ্বেত প্রদর বা লিউকোরিয়া হলো মহিলাদের সাধারণ একটি সমস্যা, যেখানে যোনি থেকে পাতলা সাদা বা হলদে বর্ণের তরল নিঃসরণ হয়। এটি স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক – উভয় রকম হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত নিঃসরণ হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
বি.দ্র.: চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
ভূমিকা: ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা যোনিপথে স্রাব একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি নারীর প্রজননতন্ত্রের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে কখনো কখনো এই স্রাব অস্বাভাবিক হয়ে শ্বেত প্রদর বা অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
Note: " নারীদের মাঝে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ স্বাভাবিক একটি ফিজিওলজিক্যাল প্রক্রিয়া। অনেকেই ভাবেন সাদা স্রাব মানেই রোগ, আসলে বিষয়টি একেবারেই তা নয়। মাসিক চক্র চলাকালীন সময়ে শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হালকা সাদা বা স্বচ্ছ স্রাব স্বাভাবিক। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভ্যাজাইনাকে আর্দ্র রাখা, জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা এবং স্পার্মের মোবিলিটি সহজ করা। সাদা স্রাবের রং এর উপর ক্যারেক্টার দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন এটি নরমাল নাকি এবনরমাল। যদি ও অনেকে নরমাল সাদা স্রাবকে রোগ বানিয়ে ইনকাম করে খাচ্ছেন। 🤣🤣🤣 প্রকারভেদ: সাদা ডিসচার্জ (White): সব সময় সাদা স্রাব রোগ নয়। মাসিকের আগে-পরে, বিশেষ করে ওভুলেশনের সময়, হরমোনের প্রভাবে সাদা স্রাব বেড়ে যায়। এটি কোনো সমস্যা নয়। তবে যদি সাদা স্রাব ঘন হয়ে চিজের মতো হয়, সঙ্গে তীব্র চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকে, তবে সেটি ক্যান্ডিডা বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে হতে পারে। স্বচ্ছ ডিসচার্জ (Clear): স্বচ্ছ, পাতলা ও টানটান স্রাব ওভুলেশন সময় খুব স্বাভাবিক। এটি ওভুলেশনের সময়ের সংকেতও দেয়। এতে কোনো দুর্গন্ধ বা অস্বস্তি না থাকলে একে রোগ ভাবার প্রয়োজন নেই। হলুদ ডিসচার্জ (Yellow): হলুদ রঙের স্রাব সাধারণত ইনফেকশনের দিকে ইঙ্গিত করে। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া বা ট্রাইকোমোনাস সংক্রমণের কারণে হলুদ স্রাব হয়। সঙ্গে দুর্গন্ধ, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা থাকলে এটিকে অবশ্যই প্যাথলজিকাল ধরা হয়। সবুজ ডিসচার্জ (Green): সবুজ স্রাব বেশিরভাগ সময় গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণ। সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল বা ট্রাইকোমোনাস ইনফেকশনে এই ধরনের ঘন, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়। এটি সবসময় রোগের চিহ্ন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। source: Dr. Jakir Hosen"
সাধারণ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ: স্বাস্থ্যকর যোনি স্রাব স্বচ্ছ বা দুধের মত সাদা, হালকা গন্ধযুক্ত এবং এটি ডিম্বস্ফোটনের সময়, মাসিকের পূর্বে বা পরে স্বাভাবিকভাবে হতে পারে।
অস্বাভাবিক ডিসচার্জের বৈশিষ্ট্য: অস্বাভাবিক স্রাব সাধারণত দুর্গন্ধযুক্ত, হলুদ, সবুজ বা রক্তমিশ্রিত হয় এবং সাথে চুলকানি, জ্বালা বা ব্যথা থাকতে পারে।
কারণ: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যোনি বা সার্ভিক্সের সংক্রমণ, পুষ্টিহীনতা, মানসিক চাপ, পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি কারণে শ্বেত প্রদর হতে পারে।
আনুষঙ্গিক সমস্যা: চুলকানি, দুর্গন্ধ, তলপেটে ব্যথা, মূত্রত্যাগে জ্বালা, যৌনমিলনে অস্বস্তি ইত্যাদি থাকতে পারে।
জটিলতা: দীর্ঘমেয়াদী শ্বেত প্রদর অ্যানিমিয়া, যৌন অক্ষমতা, বন্ধ্যাত্বসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
রোগ নির্ণয়: রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও প্রয়োজনে ল্যাব টেস্ট (যেমন: ভ্যাজাইনাল সোয়াব কালচার) দ্বারা রোগ নির্ণয় করা হয়।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা: রোগীর সামগ্রিক উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়। সাধারণত ব্যবহৃত ঔষধসমূহঃ
করণীয়: ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ও চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা জরুরি।
নিষেধ: অস্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক, অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
উপসংহার: ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও অস্বাভাবিক হলে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। সময়মতো চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে শ্বেত প্রদর ও এর জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
বিষয় | ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ (Vaginal Discharge) | শ্বেত প্রদর (Leucorrhoea) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | যোনি থেকে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক স্রাব নিঃসরণ। | যোনি থেকে অতিরিক্ত সাদা বা দুধের মতো স্রাব নিঃসরণ। |
স্বাভাবিকতা | স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হতে পারে। | সবসময় অস্বাভাবিক বা রোগের লক্ষণ। |
রং ও প্রকৃতি | স্বচ্ছ, সাদা, হলুদ, সবুজ বা রক্তমিশ্রিত। | সাধারণত সাদা বা দুধের মতো ঘন স্রাব। |
কারণ | হরমোন পরিবর্তন, সংক্রমণ, ডিম্বস্ফোটন, গর্ভাবস্থা, যৌনরোগ। | হরমোন ভারসাম্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, দুর্বলতা, সংক্রমণ। |
উপসর্গ | কখনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে, বা দুর্গন্ধ, ব্যথা, চুলকানি হতে পারে। | দীর্ঘস্থায়ী হলে কোমর ব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি দেখা দেয়। |
স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব | সবসময় চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। | চিকিৎসা প্রয়োজন, না হলে জটিলতা তৈরি হয়। |
সূত্র: WHO, DGHS, হোমিও রেফারেন্স বইসমূহ থেকে সংগৃহীত; ChatGPT (OpenAI)-এর সহায়তায় প্রস্তুতকৃত।
সংকলনে:ডাঃ ইবনে আসাদ আল মামুন,টাঙ্গাইল
DHMS- (FHMCH),
BHMEC Reg No:- 36663