ক্রিওসোট একটি তেলজাত পদার্থ যা কাঠ সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত কাঠকয়লা বা টার থেকে তৈরি করা হয় এবং এর রঙ কালচে বাদামি বা কালো হয়ে থাকে।
ভূমিকা: ক্রিয়োজোট (Kreosotum) একটি সুপরিচিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ, যার মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তীব্র জ্বালা, ক্ষয় (ulceration) এবং অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত, কস্টিক/ক্ষয়কারী স্রাব। দাঁত-মাড়ির সমস্যা, নারী-রোগের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি, ত্বক ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির ক্ষত-রক্তপাত—এসব ক্ষেত্রে প্রোফাইলে এটি বিখ্যাত।
উৎস ও প্রকৃতি: ক্রিয়োজোট সাধারণত beechwood থেকে প্রাপ্ত tar-এর ভগ্নাংশ; হোমিওপ্যাথিকভাবে পর্যায়ক্রমিক ডাইলিউশনে প্রস্তুত হয়। এটি “putrid, acrid, excoriating discharges”—অর্থাৎ দূর্গন্ধযুক্ত, জ্বালাময় ও ত্বকক্ষয়কারী স্রাবের প্রতিকৃতি দেয়।
মানসিক লক্ষণ: খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা, তুচ্ছ বিষয়ে বিরক্তি; শিশুদের ক্ষেত্রে অকারণ কান্না, কোলে নিলে শান্ত হয় না, রাতের দিকে অস্বস্তি বাড়ে।
মুখ-দাঁত: দাঁত দ্রুত ক্ষয় হয়ে কালচে/গর্তযুক্ত হয়, বিশেষ করে শিশুদের টীথিং কালে; দাঁতে ঠাণ্ডা-গরমে ব্যথা, মুখে পচা গন্ধ; মাড়ি থেকে রক্তপাত ও জ্বালা—স্রাব ত্বক ক্ষয় করে।
পরিপাকতন্ত্র: টক/পচা ঢেঁকুর, বমি বা গন্ধযুক্ত বমিবোধ; অল্প খাবারেই পেট জ্বালা, পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া, মলদ্বারে জ্বালামূলক চুলকানি বা ক্ষত।
মূত্রতন্ত্র: তীব্র প্রস্রাবের জ্বালা; শিশুদের প্রথম ঘুমে বিছানা ভেজানো (enuresis) প্রবণতা দেখা যেতে পারে; প্রস্রাবের দুর্গন্ধ ও ত্বক জ্বালিয়ে দেয়।
নারী-রোগ: মাসিক সময়ের আগে বা মাঝামাঝি রক্তপাত হওয়া, রক্ত কালচে/দূর্গন্ধযুক্ত; সহবাস-পরবর্তী রক্তপাত বা জ্বালাপোড়া; শ্বেতপ্রদর ঘন, দূর্গন্ধযুক্ত ও ত্বক ক্ষয়কারী—যোনি ও ভূল্বায় তীব্র চুলকানি/জ্বালা; ছোট বালিকাদের অক্রিয়/জ্বালামূলক স্রাবেও প্রোফাইলটি মনে রাখা যায়।
শ্বাসতন্ত্র: কাশি বা কফে দূর্গন্ধ; গলায় জ্বালা, কণ্ঠে কাঁচা ক্ষতের মত অনুভূতি; রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা হতে পারে—রক্ত গাঢ় ও দুর্গন্ধযুক্ত।
ত্বক: সহজে ক্ষত/আলসারেশন; ক্ষত থেকে কালচে, দূর্গন্ধযুক্ত রস পড়ে যা আশেপাশের ত্বক জ্বালিয়ে দেয়; চুলকানি-খোঁচাখুঁচিতে রক্তপাত ও জ্বালা বাড়ে; শিশুর ডায়াপার এরিয়ায় excoriation।
রক্তপাত/হেমোরেজ: অল্প আঘাতেই গাঢ়, দূর্গন্ধযুক্ত রক্তপাত; বারবার রক্তক্ষরণে দুর্বলতা—ক্রিয়োজোটের একটি চিহ্নিত প্রবণতা।
মডালিটি (যা বাড়ায়/কমায়): রাতের দিকে ও উষ্ণ কক্ষে অস্বস্তি বাড়তে পারে; ঠাণ্ডা সেঁক বা ঠাণ্ডা বাতাসে সাময়িক আরাম পেতে পারেন—তবে ব্যক্তিভেদে পরিবর্তনশীল, তাই রোগীর সামগ্রিক চিত্রকেই অগ্রাধিকার দিন।
তুলনীয় ঔষধ: Sepia (নারী-রোগ ও শ্বেতপ্রদর), Nitric acid (জ্বালা ও রক্তপাত), Mercurius sol (দূর্গন্ধ/লালা/মাড়ির জটিলতা), Carbo veg (পচা-দুর্গন্ধ প্রবণতা), Sulphur (চুলকানি-জ্বালা, ত্বকক্ষয়)।
পোটেন্সি ও ডোজ (সাধারণ দিকনির্দেশ): ব্যক্তি-ভেদে 6C/30C থেকে 200C পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়; তীব্র, জ্বালামূলক স্রাব বা পুনঃপুন রক্তপাতের প্রতিকৃতিতে উচ্চ পোটেন্সি বিবেচ্য হতে পারে। বারবার রিপিটের ক্ষেত্রে উপসর্গের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ জরুরি। নিজে নিজে উচ্চপোটেন্সি প্রয়োগের আগে দক্ষ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সতর্কতা: তীব্র রক্তপাত, উচ্চ জ্বর, মারাত্মক জলশূন্যতা, শিশুর দীর্ঘস্থায়ী বমি/ডায়রিয়া, গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিক রক্তপাত ইত্যাদি জরুরি লক্ষণে দেরি না করে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন; হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চললেও জরুরি অলোপ্যাথিক সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে।
উপসংহার: ক্রিয়োজোটের মূল চাবিকাঠি হলো “দূর্গন্ধযুক্ত, কস্টিক/ক্ষয়কারী স্রাব + জ্বালা/রক্তপাত + দ্রুত ক্ষয়প্রবণতা (দাঁত/শ্লৈষ্মিক/ত্বক)”。 পূর্ণ রোগচিত্র মিললে এটি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে—তবে যথাযথ কেস-টেকিং ও পেশাদার পরামর্শই সেরা ফল নিশ্চিত করে।
in shortক্রিওসোট বিষাক্ত হতে পারে এবং এটি ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চর্মের সংস্পর্শ বা নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে।
সূত্র: WHO, DGHS, হোমিও রেফারেন্স বইসমূহ থেকে সংগৃহীত; ChatGPT (OpenAI)-এর সহায়তায় প্রস্তুতকৃত।
সংকলনে:ডাঃ ইবনে আসাদ আল মামুন,টাঙ্গাইল
DHMS- (FHMCH),
BHMEC Reg No:- 36663