logo

HOMOEOPATHY DOCTOR



🌿মূত্রথলির পাথর (Urinary Bladder Stones)

মূত্রথলির পাথর (Urinary Bladder Stones): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ভূমিকা: মূত্রথলির ভেতরে ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড, ফসফেট ইত্যাদি লবণ ও খনিজ জমে স্ফটিক (crystal) তৈরি হলে এবং তা সময়ের সাথে শক্ত পাথরে রূপ নিলে সেটিকে Bladder Stone বলে। এটি একটি সাধারণ ইউরোলজিক্যাল সমস্যা, যা যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি সাধারণত মূত্রথলির অভ্যন্তরে গঠিত হয়। এটি সাধারণত কিডনিতে গঠিত পাথরের চেয়ে ভিন্ন, কারণ কিডনির পাথর মূত্রনালীর মাধ্যমে মূত্রথলিতে নেমে আসে, আর মূত্রথলির পাথর সরাসরি মূত্রথলিতেই সৃষ্টি হয়। এই পাথর ছোট থেকে অনেক বড় হতে পারে এবং এর আকার ও সংখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।


মূত্রথলির পাথর কেন হয়?

মুল কারণ: সোরা, সাইকোসিস

মূত্রথলির পাথর গঠিত হওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণ সমুহ:

  • মূত্রথলির সম্পূর্ণ খালি না হওয়া (Incomplete Bladder Emptying): এটি প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। যদি কোনো কারণে মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হয়, তাহলে অবশিষ্ট মূত্র ঘন হয়ে যায়। এই অবশিষ্ট মূত্রে থাকা খনিজ পদার্থ ক্রমান্বয়ে জমাট বেঁধে পাথরে পরিণত হতে পারে।
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ (Urinary Tract Infections - UTIs): বারবার মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে মূত্রথলির অভ্যন্তরে স্ফটিক জমা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা পরবর্তীতে পাথরে রূপান্তরিত হতে পারে।
  • প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া (Enlarged Prostate Gland): পুরুষদের মধ্যে, প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে মূত্রনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে মূত্র প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হতে পারে না।
  • কিডনির পাথর: কিডনিতে গঠিত ছোট পাথর মূত্রনালীর মাধ্যমে মূত্রথলিতে নেমে আসতে পারে এবং সেখানে জমা হয়ে বড় আকার ধারণ করতে পারে।
  • ডায়েট এবং পানীয় গ্রহণ: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করলে মূত্র ঘন হয়ে যায়, যা পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ প্রোটিন, লবণ এবং চিনিযুক্ত খাদ্যও ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • মূত্রথলিতে দীর্ঘ সময় মূত্র জমে থাকা, মূত্রনালীর বাধা (Prostate enlargement, stricture ইত্যাদি), ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), ব্লাডার ডাইভারটিকুলাম, বিদেশি বস্তু বা ক্যাথেটার দীর্ঘদিন ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া।
  • দীর্ঘমেয়াদি ডিহাইড্রেশন, ডায়াবেটিস বা গাউট, খাদ্যে অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন, কিডনি থেকে নামা ছোট পাথর।

লক্ষণসমূহ

মূত্রথলির পাথরের লক্ষণ নির্ভর করে পাথরের আকার, সংখ্যা এবং অবস্থানের ওপর। ছোট পাথর সাধারণত কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। তবে বড় পাথর বা যখন এটি মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি করে, তখন নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • পেটে বা পিঠের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা।
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব করা।
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা, বিশেষত রাতে।
  • প্রস্রাবের ধারা দুর্বল বা থেমে থেমে হওয়া।
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা বা প্রস্রাবের রঙ গাঢ় বা ঘোলাটে হওয়া।
  • মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়ার অনুভূতি।
  • প্রস্রাব করতে ব্যথা (Dysuria), প্রস্রাবে রক্ত (Hematuria), প্রস্রাব হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ ও ঘোলা ভাব, তলপেটে ব্যথা।

রোগ নির্ণয় (Investigation): Urine Routine & Culture Test, Ultrasound of KUB (Kidney, Ureter, Bladder), X-ray KUB, CT Scan (প্রয়োজনে)।

জটিলতা: বারবার ইউরিনারি ইনফেকশন, মূত্রথলির ক্ষতি বা প্রদাহ, প্রস্রাব আটকে যাওয়া (Urinary Retention), কিডনিতে ক্ষতি।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও ঔষধ: হোমিওপ্যাথিতে রোগীর সামগ্রিক লক্ষণ দেখে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। যেমন -
Berberis vulgaris – প্রস্রাবের পথে ব্যথা, প্রস্রাবের সাথে তীব্র জ্বালা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ।
Cantharis – প্রস্রাবে প্রচণ্ড জ্বালা, অল্প অল্প প্রস্রাব, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব।
Sarsaparilla – প্রস্রাব শেষে তীব্র ব্যথা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উপকারী।
Lycopodium – প্রস্রাব ধীরে ধীরে হওয়া, ডান দিকের কিডনি বা ব্লাডারের পাথরে কার্যকর।
Calcarea carb – ক্যালসিয়াম জাতীয় পাথরে ব্যবহৃত হয়।

in kent repartory
  • প্রচুর জল পান: ছোট পাথর থাকলে ডাক্তার প্রথমে প্রচুর পরিমাণে জল পান করার পরামর্শ দিতে পারেন, যাতে পাথর প্রাকৃতিকভাবে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।
  • ঔষধ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার কিছু ঔষধ দিতে পারেন যা পাথর ভেঙে দিতে বা এর আকার কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • লিথোট্রিপসি (Lithotripsy): এটি একটি অ-সার্জিক্যাল পদ্ধতি যেখানে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে পাথরকে ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর এই টুকরোগুলি প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।
  • সার্জারি (Surgery): বড় আকারের পাথরের জন্য সাধারণত সার্জারির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে সিস্টোলিথোলাপ্যাক্সি (Cystolitholapaxy), যেখানে মূত্রনালীর মাধ্যমে একটি ছোট যন্ত্র (Cystoscope) ঢুকিয়ে পাথর ভেঙে ফেলা হয় এবং এর টুকরোগুলি বের করে আনা হয়।
  • খোলা সার্জারি (Open Surgery): খুব বড় বা জটিল পাথরের ক্ষেত্রে সরাসরি মূত্রথলিতে ছেদ করে পাথর বের করে আনা হতে পারে, তবে এটি এখন কম ব্যবহৃত হয়।

মূত্রথলির পাথর প্রতিরোধের উপায়

মূত্রথলির পাথর প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত অভ্যাসগুলো মেনে চলা যেতে পারে:

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত জল পান করলে প্রস্রাব পাতলা থাকে এবং খনিজ পদার্থ জমা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ লবণ, চিনি এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার সীমিত করা উচিত।
  • নিয়মিত মূত্রথলি খালি করা: প্রস্রাবের বেগ হলে তা ধরে রাখা উচিত নয়, বরং সঙ্গে সঙ্গে মূত্রথলি খালি করা প্রয়োজন।
  • রোগের চিকিৎসা: যদি প্রস্টেট গ্রন্থির কোনো সমস্যা থাকে বা মূত্রনালীর সংক্রমণ হয়, তাহলে দ্রুত এর চিকিৎসা করানো উচিত।

ভাবীফল: চিকিৎসা না করলে পাথর বড় হতে পারে, ইনফেকশন ও কিডনি ড্যামেজের ঝুঁকি থাকে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।

করণীয়: পর্যাপ্ত পানি পান করা (প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার), ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার, লবণ ও প্রোটিন সীমিত গ্রহণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

নিষেধ: পানি কম খাওয়া, দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অতিরিক্ত মাংস, ভাজা ও ঝাল খাবার খাওয়া।

উপসংহার: মূত্রথলির পাথর একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচন এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে ভবিষ্যতে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

সূত্র: WHO, DGHS, হোমিও রেফারেন্স বইসমূহ থেকে সংগৃহীত;Gimini, ChatGPT (OpenAI)-এর সহায়তায় প্রস্তুতকৃত।

সংকলনে:ডাঃ ইবনে আসাদ আল মামুন,টাঙ্গাইল

মূত্রথলির পাথর চিকিৎসার রোগীলিপি

এস এম আই ডি: EL 26; 20-7-2024:
Case: UB stone Avatar লক্ষন: ১. তলপেটের ডান পাশে ব্যাথা।
২। সমস্ত পেটে গ্যাস হয়।
৩। ব্যথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথার সময় বমি হয়।
৪। খাবার পর বমি হয়। বমির পর পেট ব্যথা কমে।
৫। ব্যথা ঠান্ডায় উপশম।
মানসিক অবস্থা : রাগী স্বভাব, সূচীবাই আছে, মনে হয় মারা যাবে। আবহাওয়া
কাতরতা: গরম কাতর।
খাবার: ঝাল প্রিয়, মাংস প্রিয়, গরম খাবার প্রিয়, মিষ্টি প্রিয়, দুধ অপ্রিয়। পিপাসা কম। প্রস্রাব: ঘন ঘন, জ্বালা করে, প্রস্রাবের শেষে জ্বালা করে।
মল: নরম কিন্তু পরিস্কার হয় না। সকালে ১ বার হয়।
Prescription: 20-7-2024: Barberis Vul 200+ CP 12X+ Lyco 1M
10-8-2024: Berbaris Vul 1M + MP 200x+ Cantharis 30
31-8-2024: Sarsaparilla 200+ CP 12X+ Barberis Aq Q
আলহামদুলিল্লাহ, পাথর বের হয়ে গেছে।
-- ডাঃ মোঃ আল মামুন

হোম
"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM