নাক প্রাণী দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ, প্রাণী দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস পরিবহনের প্রথম গেট, বিভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ এর মাধ্যমে পেটের খাবারের চাহিদা বৃদ্ধির কার্যক্রম এই নাকই করে থাকে, আবার বিভিন্ন ধরনের গন্ধ সনাক্তকরণের মাধ্যমে নাক বিভিন্ন বিষয়ে প্রাণীকে সতর্ক করে থাকে। এই নাকের ভেতর যখন অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তখনকার অবস্থা, লক্ষণ ভেদে আমরা বিভিন্ন নামকরণ করে থাকি, যেমন- নাকের পলিপস, সাইনাস সমস্যা ইত্যাদি।
নাকের পলিপ (Nasal Polyps) হলো নাকের ভেতরে ব্যথাহীন বৃদ্ধি অথবা নাকের মাঝের হাড় (Cartilage) এর দুই পাশ ফুলে যাওয়া, বা মাঝের হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া বা মুখের হাড়ের ভেতরে ফাঁপা অংশ, যা সাইনাস নামেও পরিচিত, তার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে পরিবর্তন হওয়া। নাকের পলিপ ক্যান্সার নয়।
ছোট নাকের পলিপ লক্ষণ দেখা দিতে পারে না। বড় আকারের বৃদ্ধি বা নাকের পলিপের দল নাক বন্ধ করে দিতে পারে। এগুলো শ্বাসকষ্ট, গন্ধ না জানা এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
নাকের পলিপ যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে তরুণ এবং মধ্যবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। ওষুধ প্রায়শই নাকের পলিপ সঙ্কুচিত করতে পারে বা এগুলি থেকে মুক্তি পেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এগুলি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে চিকিৎসার পরেও, নাকের পলিপ প্রায়শই ফিরে এসেছে। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে প্রায় ৮০% রোগীর ক্ষেত্রে নাকের পলিপস আর ফিরে আসেনি।
মুল কারণঃ সোরা, সাইকোসিস, টিউবারকুলার ডায়াথেসিস।
আনুষঙ্গিক কারণঃ
১. চর্মরোগ চাপা পড়া।
২. বেশি করে ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
৩. শারিরীক পরিশ্রম কম করা।
৪. বংশগত কারণ যেমনঃ টিউমার, হাপানী, বুকে দীর্ঘদিন যাবৎ ঠান্ডা, ডায়াবেটিস, এলার্জি থাকা।
৫. অতিরিক্ত ধুলাবালি, জলীয়-স্যাতস্যাতে পরিবেশ, পশম জাতীয়-জুট জাতীয় কারখানায় দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে থাকা।
লক্ষণ সমুহঃ
১. নাক বন্ধ থাকা।
২. ঘন ঘন হাঁচি।
৩. সারাক্ষণ ঠান্ডা লেগে থাকা।
৪. নাক দিয়ে তরল সর্দি নির্গমন।
৫. কপালে ও মাথায় ব্যথা।
৬. ঘুমের মধ্য শ্বাস-কষ্ট।
৭. নাক ডাকা।
৮. ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া।
৯. জ্বর জ্বর অনুভুতি।
১০. খাবারের ঘ্রাণ না পাওয়া ও অরুচি।
১১. দেহ শুকিয়ে যাওয়া।
আরও অন্যান্য কারণসমূহও থাকতে পারে।
চিহ্নঃ পরীক্ষা করলে বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন দেখা যায়ঃ
১. নাকের পাতার দুই পাশ বা এক পাশ ফোলা।
২. নাকের মধ্যমা (ঈধৎঃরষধমব) দুই পাশ বা এক পাশ ফোলা।
৩. নাকের মধ্যমা (ঈধৎঃরষধমব) একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া।
ক্লিনিক্যাল/প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাঃ
- 1. Blood CBC with ESR
- 2. Urine RME
-
- 3. Biopsy test
-
- 4. FNAC
এছাড়াও
ইমেজিং স্টাডিজঃ
সিটি স্ক্যান পলিপের আকার, অবস্থান এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে, পাশাপাশি অন্যান্য সম্ভাবনাও বাতিল করতে পারে।
অ্যালার্জি পরীক্ষাঃ
যদি অ্যালার্জির সন্দেহ হয়, তাহলে অ্যালার্জি সনাক্ত করার জন্য ত্বকের প্রিক (skin prick) পরীক্ষা বা রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে।
অন্যান্য পরীক্ষাঃ
সিস্টিক ফাইব্রোসিসের (Cystic fibrosis) মতো অবস্থার জন্য পরীক্ষা বা অন্যান্য সম্পর্কিত অবস্থার জন্য রক্ত পরীক্ষাও করা যেতে পারে।
জটিলতাঃ সুচিকিৎসার অভাবে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমনঃ
- হাঁপানি (Asthma)।
- সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic fibrosis)
- দাঁতের সংক্রমণ (Dental infections)
- ভিটামিন ডি এর অভাব (Lack of vitamin D)
- সাইনাস সমস্যা।
- মানসিক অস্থিরতা।
- নাকের হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া।
ব্যবস্থাপনাঃ
১. সার্জারী।
২. ঔষধঃ বিভিন্ন ধরনের হোমিওপ্যাথি ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করতে পারলে সুস্থতা আশা করা যায়।
1st grade:
********* Tuberculinum, Calc-carb, Sanguneria Can, Sanguneria Nit, Acid Nitricum, Teucrium M,
Laccases. Opium,
2nd grade :
********* Allium-cepa, Apis Mel, Calc-phos , Carb-sulp, conium M, Graphities, kali-bice, kali-nit,
lemna-minor, merc-i-rub, phos, psorinum, sepia, silicia, sulphure, thuja OC, Cadmium Sulp, Aulmina,
Alumen, Aurum Met, Argent Nit. Iodium. Formica Rufa
নিষেধঃ
খাদ্যঃ এলার্জি জাতীয় খাবার যেমন- হাঁসের গোসত, হাঁসের ডিম, গরুর গোসত, পুঁই শাক, কচু শাক,
কচুর লতি, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, ঠান্ডা জাতীয় খাবার, ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার, কোল্ড ড্রিংস জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত
মশলা যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার ইত্যাদি।
পরিবেশঃ ধুলা-ময়লা, ধোঁয়া যুক্ত পরিবেশ, ঠান্ডা-স্যাতস্যাতে পরিবেশ, যে সকল ঘরে রোদের তাপমাত্রা পৌঁছায় না, ঝুট
এর কারখানায় খোলামুখে থাকা ইত্যাদি।
করণীয়ঃ
- মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।
- পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
- অতিরিক্ত চর্বি, মশলা ও ঠান্ডা জাতীয় খাবার পরিহার করা।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হতে নিয়মিত পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা।
এটা আল্লাহ তা’লার অপার মেহেরবাণী যে, মহান রাব্বুল আ’লামীন উনাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য দান করেছেন। উনি অনেক বছর যাবত চিকিৎসা
করে চলেছেন, শুধু কমে কিন্তু আরোগ্য লাভ হয় নি। হোমিও চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ মহান আল্লাহর একান্ত মেহেরবাণী। আল্লাহ আমাদের উপর তাঁর রহমত অব্যাহত রাখুন এই প্রার্থনা করি সব সময়।
চিকিৎসক:-
ডাঃ ইবনে আসাদ আল মামুন