উৎস:ডাল্কামারা উদ্ভিদ (Solanum Dulcamara), এটি সোলানাসি (Solanaceae)/ নাইটশেড পরিবারের একটি উদ্ভিদ, যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- সাধারণ নাম: বিটারসুইট (Bittersweet), উডি নাইটশেড (Woody Nightshade)।
- উৎপত্তি: এটি সাধারণত আর্দ্র ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় জন্মায়।
- প্রস্তুতকরণ: এর তাজা সবুজ ডগা এবং পাতা থেকে ওষুধ তৈরি করা হয়।
🧪 কি পয়েন্ট:
ডাল্কামারার রোগ লক্ষণগুলো সাধারণত ভেজা, ঠাণ্ডা, স্যাঁতসেঁতে বা আর্দ্র আবহাওয়ায় বৃদ্ধি পায়। (এটা মহা নির্দেশক লক্ষন) এর কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো:
- ঋতু পরিবর্তন: হঠাৎ ঠান্ডা, ভেজা আবহাওয়া, বিশেষত শরতের সময় রোগ সৃষ্টি বা পুরনো রোগ পুনরায় জেগে ওঠে। ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে উপসর্গ বেড়ে যায়।
- আবহাওয়াজনিত প্রভাব: ঠাণ্ডা, ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে যদি কোনো রোগ হয়, যেমন—বর্ষাকালে বা অতিরিক্ত শীতের কারণে ঠাণ্ডা লাগা।
- সর্দি ও কাশি: আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ঘন ঘন সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথা। এই সর্দি সাধারণত রাতে আরও খারাপ হয়।
- চামড়ার সমস্যা: ভেজা আবহাওয়ার কারণে চামড়ার সমস্যা, যেমন—আর্টিকেরিয়া (urticaria) বা চুলকানি।
- বাত: ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাতের ব্যথা বৃদ্ধি।
- ডায়রিয়া: ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বা ভেজা মাটিতে বসার পর যদি ডায়রিয়া হয়।
৪৫২ | হোমিওপ্যাথিক ড্রাগ পিকচার্স [ML Tylor] — ডালকামারা (Dalcamara)
১ম শ্রেনীর লক্ষণসমূহ
- মুখমণ্ডলে পুরু হলে হলদে-বাদামি মামড়ি... ক্রাস্টা ল্যাই।
- দেহ জুড়ে পুরু মামড়ি।
- মুখমণ্ডলে আঁচিল এবং উদ্ভেদ।
- আঙুলের পিঠে এবং হাতে আঁচিল।
- আঁচিলগুলো মাংসল বা বড়, মসৃণ, হাত দুটির পিঠে এবং মুখের ওপর।
- ঠাণ্ডায় জিহ্বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, তবু বিরামহীনভাবে কথা বলে।
- শূলব্যথা: মনে হয় ঠাণ্ডা লাগানোর কারণে, যেন ডায়রিয়া হবে।
- ভিজা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে সাধারণত শূল্যব্যথা।
- ডায়রিয়া: হলুদ, পানির মতো মল, প্রতিবার মলত্যাগের আগে ছিন্নকর এবং কেটে ফেলার মতো ব্যথা।
- শ্লেষ্মাযুক্ত ডায়রিয়া, পর্যায়ক্রমে হলুদ এবং সবুজাভ।
- ঠাণ্ডার কারণে ডায়রিয়া বা আবহাওয়া গরম থেকে ঠাণ্ডায় পরিবর্তিত হওয়ার কারণে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়।
- ঠাণ্ডা আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে সর্দির সমস্যা।
- ঠাণ্ডা আর্দ্র বায়ুমণ্ডলের কারণে কাশি, অথবা ভিজে যাওয়ার কারণে। কফ ফেলার জন্য অবশ্যই অনেকক্ষণ কাশতে হয়....
- খুব তরুন ব্যথা..... আকস্মিক আক্রমণে ব্যথা বাম বুকে বাণের মতো ঢুকে যায়।
- সমস্ত বুকে অনেক চাপযুক্ত ব্যথা, বিশেষ করে শ্বাস টানা এবং ফেলার সময়।
- অনেকক্ষণ ঝুঁকে থাকার পর পেছনে কোমরে ব্যথা।
- নিতম্বে ব্যথা, বাম উরুর ওপর অংশে, একটি খুঁড়ে ফেলা চিরিক মারা ব্যথা।
- উভয় উরুতে টেনে ধরার মতো, ছিন্নকর ব্যথা।
- পেছনে, কোমরে খঞ্জতা, যেন তা ঠাণ্ডা থেকে হয়েছে।
- সমস্ত শরীরে আমবাতের মতো উদ্ভেদ, জ্বর থাকে না।
- শৈত্য, পিঠ থেকে শুরু বা ছড়ায়, উত্তাপে উপশম হয় না, অধিকাংশ সময় সন্ধ্যায় দেখা দেয়। বাজে গন্ধযুক্ত ঘাম।
- নাভিদেশের ব্যথা বা উদ্ভেদের জন্য আমরা প্রায়ই সাফল্যের সাথে ডালকামারা প্রয়োগ করে থাকি — "নাভি রন্ধ্রে" ব্যথা, যেমনি ছোট্ট মেয়ে হাত দিয়ে তার ব্যথার স্থানটি দেখিয়ে দেয়। বনিং হাওসেনের কাছ থেকে অনেক বছর আগে এ বিশেষ তথ্যটি পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অবস্থানটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
- * এরপরও একটি প্রথম শ্রেণির লক্ষণ। কান ব্যথা, বমি বমি ভাব; গুনগুন শব্দ। রাতে বৃদ্ধি। সারারাত কর্ণশূলের ব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
🧠 মানসিক লক্ষণ:
- অস্থিরতা, বিরক্তি, খিটখিটে মেজাজ।
- ঠান্ডা ও আর্দ্রতা দ্বারা মানসিক অস্বস্তি বেড়ে যায়।
- রোগী মাঝে মাঝে জেদি বা খিটখিটে হতে পারে।
শারীরিক লক্ষণ:
- ত্বকে চুলকানি ও একজিমা, ভেজা আবহাওয়ায় বেড়ে যায়।
- সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডায় বেড়ে যায়।
- জয়েন্টে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া, বিশেষত বৃষ্টির দিনে।
- ফ্লু জাতীয় উপসর্গ – নাক বন্ধ, গলা ব্যথা।
🔍 যে সকল রোগে ব্যবহার হয়: সর্দি-কাশি, হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস, একজিমা, চর্মরোগ, সাইনুসাইটিস, সায়াটিকা, রিউমাটিজম ইত্যাদি।
হ্রাস (Amelioration): উষ্ণ স্থানে বা গরমে অবস্থান করলে উপসর্গ কমে যায়।
বৃদ্ধি (Aggravation): ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, বিশেষত বৃষ্টির দিনে উপসর্গ বেড়ে যায়।
ডোজ: সাধারণত 6C, 30C পোটেন্সিতে প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োজন অনুসারে রিপিট করা যেতে পারে।
তুলনীয় ঔষধ: Rhus Tox, Bryonia, Natrum Sulph, Pulsatilla।
শত্রুভাবাপন্ন ঔষধ: Belladonna।
ক্রিয়ানাশক ঔষধ: Camphor।
⚖️ : Calcarea Carb, Sulphur।
ক্রিয়াকাল: তুলনামূলক স্বল্পকালীন।
মনে রাখার মতো শর্ট নোট: “Cold & damp weather diseases” – ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের অসুখে ডাল্কামারা শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
⚠️ সতর্কতা: অতিরিক্ত মাত্রা এড়াতে হবে। রোগীর অবস্থা ও পরিবেশ বিবেচনায় সঠিক পোটেন্সি নির্বাচন করা জরুরি।
এই ওষুধটি ব্যবহারের আগে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ সঠিক লক্ষণ এবং রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত।