ফ্যারিনজাইটিস (Pharyngitis)
কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস এর সংক্রমণের কারণে ফ্যারিনস আক্রান্ত হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি হলে তাকে ফ্যারিনজাইটিস বলা হয়। ফ্যারিন কথাটি ইংরেজি অর্থে গলবিল। ফ্যারিনস (Pharynx) শব্দটি গ্রীক শব্দ Throat থেকে এসেছে।
গলবিল বা ফ্যারিনস হল গলার একটি অংশ যা মুখ এবং নেসাল ক্যাভিটির পেছনে থাকে এবং খাদ্যনালী (Esophagus) ও শ্বাসনালী (Trachea)-র উপরে অবস্থিত। মানবদেহে ফ্যারিনস সাধারণত তিনটি ভাগে বিভক্ত:
- ন্যাজোফ্যারিনস (Nasopharynx)
- ওরোফ্যারিনস (Oropharynx)
- ল্যারিনগোফ্যারিনস (Laryngopharynx)
জিহ্বার গোড়ার দিকে গলার অভ্যন্তরভাগে পাশাপাশি দুইটি নালী থাকে। একটির মধ্য দিয়ে খাদ্য প্রবেশ করে এবং অন্যটির মধ্য দিয়ে বাতাস যাতায়াত করে। জিহ্বার উপর দিয়ে এসে খাদ্য বা পানীয় বস্তু প্রথমে যে থলির মধ্যে প্রবেশ করে সেটিই হলো ফ্যারিনস (Pharynx)। এটি দেখতে অনেকটা “A funnel shaped muscular cavity” এর মত।
ফ্যারিনজাইটিস শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Pharynx (Throat) ও itis (inflammation) থেকে। অর্থাৎ, ফ্যারিনস এর যে কোন প্রদাহকে ফ্যারিনজাইটিস বলা হয়। এটি সাধারণত গলার পিছনের অংশে ক্ষত, ব্যথা ও গিলতে কষ্টের কারণ হয়ে থাকে। American Osteopathic Association (AOA)-এর মতে, ফ্যারিনজাইটিস শীতকালে বেশি হয় এবং ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে।
ফ্যারিনজাইটিসের প্রকারভেদ
ফ্যারিনজাইটিস সাধারণত দুই প্রকার:
- একিউট ফ্যারিনজাইটিস (Acute Pharyngitis)
- ক্রনিক ফ্যারিনজাইটিস (Chronic Pharyngitis)
ক্রনিক ফ্যারিনজাইটিস আবার তিন ভাগে বিভক্ত:
- ফলিকুলার ক্রনিক ফ্যারিনজাইটিস (Follicular Chronic Pharyngitis)
- আলসারেটিভ ক্রনিক ফ্যারিনজাইটিস (Ulcerative Chronic Pharyngitis)
- ফাইব্রিনাস ক্রনিক ফ্যারিনজাইটিস (Fibrinous Chronic Pharyngitis)
ফ্যারিনজাইটিস এর কারণ (Causes)
প্রধান কারণ:
- সোরা (Psora)
- সিফিলিস (Syphilis)
- সাইকোসিস (Psychosis)
- টিউবারকুলার ডায়াথেসিস (Tubercular Diathesis)
আনুষঙ্গিক কারণ:
- হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমের সংস্পর্শ
- ভাইরাস সংক্রমণ: ঠান্ডা, ফ্লু, হাম, বসন্ত, কাশি ইত্যাদি
- ব্যাকটেরিয়া: স্ট্রেপ, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া ইত্যাদি
- এলার্জি, শুষ্কতা, উত্তেজক পদার্থ, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ
- HIV সংক্রমণ, গলায় টিউমার
- ওরাল সেক্স, ধূমপান, মদ্যপান
- ঠান্ডা পানি পান বা ঠান্ডা জলে গোসলের পর
- অতিরিক্ত কথা বলা, স্বর ভঙ্গ
- সংলগ্ন অঙ্গের সংক্রমণ
- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস জীবাণু আক্রমণ
ফ্যারিনজাইটিসের লক্ষণ (Symptoms)
- গলার ব্যথা, সামান্য ঠান্ডায় ব্যথা বৃদ্ধি
- গলায় যেন কিছু আটকে আছে অনুভূতি
- খাওয়া ও কথা বলায় ব্যথা
- স্বর ভঙ্গ
- গলার ভিতরে সূচ ফোটানোর মতো ব্যথা
- ঢোক গিলতে কষ্ট
- হাঁচি, সর্দি, কাশি
- মাথাব্যথা, মাথাঘোরা
- ক্লান্তি, শরীর ব্যথা
- জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য
- ঘাড় ও বগলের লিস্ফ নোড ফোলা
- চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি
- টনসিল ফোলা, গলায় পুঁজ অনুভব
- মুখ থেকে লালা নিঃসরণ
- মারাত্মক ক্ষেত্রে ফলিকুলার আলসার
রোগানুসন্ধান (Investigation)
- খালি চোখে দেখা যায়
- টর্চ ও টাং ডিপ্রেসরের সাহায্যে পরীক্ষা
- থ্রোট সোয়াব কালচারে জীবাণু সনাক্ত
জটিলতা (Complications)
- ব্রঙ্কাইটিস
- টিউবারকুলোসিস
- ক্যান্সার
- শ্বাসকষ্ট
- সেপটিসেমিয়া
- কানে সংক্রমণ
- সাইনোসাইটিস
- টনসিলের পাশে ফোঁড়া
ভাবী ফল (Prognosis)
সঠিক সময়ে উপযুক্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরোগ্য হয়। তবে পুরাতন বা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসা কঠিন হতে পারে।
প্রতিরোধ (Prevention)
- খাবার, পানীয় ও পাত্র শেয়ার না করা
- অসুস্থ রোগীকে আলাদা রাখা
- ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সাবান ও গরম পানিতে পরিষ্কার
- ধূমপান, মদ্যপান বর্জন
- খাওয়ার আগে ও কাশি-হাঁচির পরে হাত ধোয়া
- শিশুর খেলনা জীবাণুমুক্ত করা
ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা (Management & Medicine)
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপসর্গ অনুযায়ী ব্যবহৃত হতে পারে:
Apis Mel Ars Iod,
Belladonna, Hepar Sulph,
Calc Carb, Merc Bin Iod,
Phytolacca, Merc Podo Iod,
Bryonia, Merc Sol,
Spongia, Rumex,
Allium Cepa, Cicuta Verosa,
Drosera, Tuberculinum Bovinum,Bacilinum ইত্যাদি।
উপদেশ (Advice)
করণীয় (Should Do)
- গলায় সুতি কাপড় প্যাঁচানো
- গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া
- তরল পুষ্টিকর খাবার
- জুতা-স্যান্ডেল পরিধান
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম
নিষেধ (Should Not Do)
- এলকোহল ও ধূমপান
- শক্ত খাবার
- ওরাল সেক্স
- স্যাঁতসেঁতে স্থানে যাতায়াত
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
- খালি পায়ে ঠান্ডা মাটিতে হাঁটা
পথ্য (Diet)
- উষ্ণ জুস
- প্রচুর পানি পান
- টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল
- সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
Id - EL SM 62, উম্মে হাবিবা, বয়স ৫, বাবা- আবুল হাশেম, মা খালেদা আক্তার, ঠিকানা - মেলান্দহ, জামালপুর।
বিগত ২৯-৫-২০২৪ ইং তারিখে এলেংগা বাসস্ট্যান্ড চেম্বারে মেয়েকে নিয়ে আসেন।
প্রধান সমস্যা ছিল :
স্বাভাবিক।
লক্ষনসমুহ বিবেচনা করে ১৩-৬-২০২৪ ইং তারিখে Tuberculinum Bov 1M, ৭ দিন পর Phytolacc 1m দিয়ে ১৫ দিন পর দেখা করতে বলি, ১৫
দিন পর দেখা যায় অনেক কমে গেছে, রোগীকে অনৌষধী দেই, আবারও ১৫ দিন পর দেখা করতে বলি, কিন্তু রোগীর বাবা ১ মাস পর নিয়ে এসে বলে যে কমছে না,
পরবর্তীতে ২৮-৮-২০২৪ তারিখে রোগীকে Phytolacca 10m দেই, এর ১ মাস পর মোবাইলে কল দিয়ে জানতে পারি রোগী আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ, রোগী আর আসে নি।
চিকিৎসক:-