মুখের স্নায়ু (Facial nerve) হঠাৎ দুর্বল বা অবশ হয়ে গেলে মুখের একপাশ নড়াচড়া করতে অক্ষম হয়। এটাকেই মুখের প্যারালাইসিস বলে। রোগীর হাসা, কথা বলা, চোখ বন্ধ করা বা গাল ফুলাতে সমস্যা হয়।
ইতিহাস
প্রাচীনকাল থেকে মুখ বেঁকে যাওয়া রোগ বর্ণিত হয়েছে। ১৮শ শতাব্দীতে Sir Charles Bell মুখের স্নায়ুর সাথে এর সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। এজন্যই সাধারণত Bell’s Palsy নামটি প্রচলিত।
প্রকারভেদ
Peripheral Facial Paralysis (Bell’s palsy)
Central Facial Paralysis (স্ট্রোক বা মস্তিষ্কজনিত কারণে)
মূল কারণ
ভাইরাস সংক্রমণ (Herpes simplex, Herpes zoster)
স্ট্রোক
কানের সংক্রমণ
মাথায় আঘাত
টিউমার বা স্নায়ুতে চাপ
আনুষঙ্গিক কারণ
হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসে পড়া
মানসিক শোক বা ভয়
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস
জেনেটিক বা পারিবারিক প্রবণতা
লক্ষণ
মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া
চোখ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারা
ঠোঁট নড়াতে অসুবিধা, খাওয়া বা পানি পান করতে সমস্যা
কথা জড়ানো
কানে বা চোয়ালে ব্যথা
স্বাদের পরিবর্তন
চিহ্ন
রোগী হাসলে বা দাঁত বের করলে মুখের একপাশে নড়াচড়া হয় না। আক্রান্ত দিকের চোখ আধখোলা থাকে, ভ্রু নিচে নেমে যায়।
রোগানুসন্ধান
ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা
Neurological পরীক্ষা
MRI / CT Scan (স্ট্রোক বা টিউমার সন্দেহ হলে)
রক্ত পরীক্ষা (ডায়াবেটিস, সংক্রমণ)
ভাবীফল
সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ রোগী ৩–৬ মাসের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী দুর্বলতা থাকতে পারে।
জটিলতা
চোখ শুকিয়ে যাওয়া ও কর্নিয়ার ক্ষতি
স্থায়ী মুখ বেঁকে থাকা
অভিব্যক্তি হারানো
মানসিক অবসাদ
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
রোগীর স্বতন্ত্র লক্ষণ অনুসারে ওষুধ নির্বাচন করা হয়।
Causticum: ঠান্ডায় বাড়ে, চোখ-মুখ একসাথে আক্রান্ত হয়।
Belladonna: হঠাৎ শুরু, মুখ লাল ও গরমে বাড়ে।
Aconite: ভয় বা ঠান্ডা বাতাসের পর।
Gelsemium: দুর্বলতা ও উদ্বেগের পর।
Ignatia: শোক বা মানসিক আঘাতের পর।
Rhus Tox: ঠান্ডায় বাড়ে, নড়াচড়ায় উপশম।
Dulcumara: স্যাঁতসেঁতে বা ঠান্ডা পরিবেশে হঠাৎ শুরু হওয়া মুখের প্যারালাইসিসে কার্যকর।
নিষেধ
হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসে বের হওয়া
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
স্বেচ্ছায় ওষুধ পরিবর্তন
সতর্কতা
প্রথমেই স্ট্রোক নাকি Bell’s palsy তা আলাদা করতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি।
পথ্য
পুষ্টিকর খাবার
পর্যাপ্ত পানি পান
ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাদ্য (ডাল, শাকসবজি, ডিম)
উপসংহার
মুখের প্যারালাইসিস রোগীকে ভয় না পেয়ে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা, স্নায়ু ব্যায়াম ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে, ইনশাআল্লাহ।
নোট: Dulcumara ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে হওয়া মুখের প্যারালাইসিসে বিশেষ উপযোগী।
# মুখের প্যারালাইসিস চিকিৎসায় হোমিও সফলতা
SMP ID-2412
ওজন: ৭৬ kg | বয়স: ২৯ | Blood Pressure: 120/30
প্রধান সমস্যা
ডান গাল ছোট ও ভার হয়ে যায়।
ডান হাত চিন চিন করে ব্যাথা, উপর থেকে নিচে নামে। রোদের তাপে বাড়ে, ঠান্ডায় উপশম।
এলার্জি: নাক চুলকায়, হাঁচি, পানি পড়ে, ডান চোখ বেশি চুলকায়।
মনে হয় ডান কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে, হঠাৎ চুলকায়।
অতীত রোগ ইতিহাস
টাইফয়েড হয়েছিল, Allopathic treatment এ ২/৩ মাস লেগেছিল।
শৈশবে চর্মরোগ, পুঁজ হতো।
ডান চোয়াল বাঁকানো, ডান চোখ ও নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়ত (৩ বছর)।
বংশগত রোগ ইতিহাস
বাবা-ভাই: Allergy, BP up-down, skin disease।
এক চাচার Vertigo (গাড়িতে উঠতে পারত না)।
চাচার Asthma।
মানসিক অবস্থা
হঠাৎ রাগ উঠে, সাধারণত শান্ত। কুকুর/গরু দেখে ভয় পায়।
খাদ্যাভাস
আগে আলগা লবণ চাইত।
গরুর মাংস ও ঝাল পছন্দ, মিষ্টি অপছন্দ।
দুধ খেলে প্রেসার বাড়ে।
পিপাসা কম।
শারীরিক লক্ষণ
মল: কষা।
প্রস্রাব: শুরুতে জ্বালাপোড়া, পানি খেলে উপশম।
ঘুম: স্বাভাবিক।
স্বপ্ন: সব মনে থাকে না; প্রস্রাব করতে দেখা, ভয় পেয়ে দৌড়ানো।
জিহ্বা: ফ্যাকাশে, থলথলে, দাঁতের ছাপযুক্ত।
হাত-পা: বাম হাতের করে আঙুল বাঁকানো, শীতে পায়ের তলায় ঘাম।
চামড়া: আঁচিল নেই।
প্রয়োগকৃত ঔষধ
31.8.18: Tub Bo 0/2 + Kalmia Lat 1M
20.9.18: Bryonia Alb 200 + Tub Bo 0/3
6.10.18: Naza T 200 + Lycopodium M/3
26.10.18: Naza T 1M + Lycopodium M/4
৬.১০.১৮ তারিখে: প্রধান লক্ষণ অপরিবর্তিত, তবে নতুন লক্ষণ— বসলে/উঠলে/নড়াচড়ায় পুচ্ছ (Coccyx) ব্যাথা, পিপাসা বাড়ছে, খাওয়ার পরও ক্ষুধা, দুর্বলতা।
চূড়ান্ত পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ
এত কিছুর পরও গাল বাঁকা ঠিক হচ্ছে না, তাই আবারো রোগিলিপি করতে লাগি,
যা পাই- ঢাকা গিয়েছিল সকালের দিকে, গাড়িতে জানালার কাছে বসে গেছে আর বিকালেও জানালার কাছে বসে এসেছে।