ডেংগু হলো এডিস মশাবাহিত একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষকে আক্রান্ত করে। বর্ষাকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এটি সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা না নিলে প্রাণঘাতীও হতে পারে।
মূল কারণ
ডেংগু রোগ ডেংগু ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত হয়, যা মূলত Aedes aegypti নামক মশার কামড়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এই মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়, বিশেষ করে সকাল ও বিকেল বেলায়।
আনুষঙ্গিক কারণ
জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে মশার প্রজনন
পানি নিষ্কাশনের সমস্যাজনিত জলাবদ্ধতা
জনসচেতনতার অভাব
পরিত্যক্ত পাত্র, টায়ার, ফুলদানি ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি
ইমিউনিটির অভাব
স্যাতস্যাতে, জংলা স্থানে বসবাস
লক্ষণসমূহ
হঠাৎ করে জ্বর (১০৪°F পর্যন্ত)
মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা
গাঁট ও শরীরব্যথা
চামড়ায় র্যাশ
বমি বমি ভাব বা বমি
দুর্বলতা
নাক বা মাড়ি দিয়ে রক্তপাত
প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা
CBC: প্লাটিলেট ও হিমাটোক্রিট চেক
NS1 Antigen Test: প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত
IgM/IgG: সংক্রমণের ধাপ বোঝার জন্য
LFT, Electrolytes: জটিলতা পর্যবেক্ষণে
widal test: ম্যালেরিয়ার আক্রমণ পর্যবেক্ষণে
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা: উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন
4. Rhus Toxicodendron: জয়েন্টে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা ও চুলকানি।
5. Belladonna: হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা ভাব।
6. China Officinalis: শরীরে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা, মাথা ঘোরা।
7. Phosphorus: রক্তপাত, প্লাটিলেট হ্রাস, রক্তস্বল্পতা ও দুর্বলতা।
8. Ipecacuanha: বমি ও বমি বমি ভাবের জন্য উপযোগী।
8. China: প্লাটিলেট হ্রাসজনিত দুর্বলতা
8. Crotalus Horridus: রক্তপাতজনিত ডেংগুর জন্য উপযোগী ।
8. Ipecacuanha: বমি ও বমি বমি ভাবের জন্য উপযোগী।
8. Arnica Montana: অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এর জন্য উপযোগী।
8. Ferrum Phos: লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি রোধ করতে উপযোগী।
9. Carica Papaya (পেঁপে পাতার নির্যাস): প্লাটিলেট সংখ্যা বৃদ্ধিতে কার্যকর। হোমিওপ্যাথিতেও মাদার টিংচার আকারে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ঔষধ: Chininum Sulph, Chininum Ars, Arsenicum Sulph Flavum, Pyrogenium, Psorinum, Antipyrinum, Ledum Palustre ইত্যাদি উপসর্গ অনুযায়ী প্রয়োগযোগ্য।
বি.দ্র: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ অনুচিত।
জটিলতা ও উপসর্গসমূহ
ডেংগু হেমোরেজিক ফিভার
ডেংগু শক সিনড্রোম
রক্তপাত ও প্লাটিলেট ড্রপ
লিভার ও কিডনি জটিলতা
ডেঙ্গু শক সিনড্রমে উপসর্গগুলো আরও মারাত্মক রূপ নেয়, যেমন:
রক্তচাপ খুব কমে যাওয়া
ভেতরের অঙ্গ থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত (Internal bleeding), ফলে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া
তীব্র পেটব্যথা
ঘন ঘন বমি ও অচেতন হয়ে যাওয়া
শরীর ঠান্ডা ও ঘর্মাক্ত হয়ে পড়া
করণীয়
পর্যাপ্ত পানি পান করানো
খাবার স্যালাইন খাওয়ানো
ঘন ঘন রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ
ডিহাইড্রেশন বেশি হলে আইভি স্যালাইন প্রয়োগ
রোগীকে অবশ্যই মশারির মধ্যে রাখা
প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করানো
সতর্কতা
দিনে মশা থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকা
ফুলহাতা জামা-প্যান্ট পরা
মশারি ব্যবহার
পরিবেশ পরিষ্কার রাখা
পথ্য
ডাবের পানি, স্যালাইন, লেবুর শরবত
কমলা, আপেল, আঙুর
হালকা ও সহজপাচ্য খাবার
করণীয়
জ্বর হলে বিশ্রাম
পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ
প্লাটিলেট মনিটরিং
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
বর্জনীয়
নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া
এসপিরিন, আইবুপ্রোফেন ব্যবহার
চর্বিযুক্ত খাবার
শারীরিক পরিশ্রম
উপসংহার
ডেংগু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। জনসচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলেই এ রোগের প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসই ডেংগু নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।