logo

HOMOEOPATHY DOCTOR



🌿 পিত্তথলির পাথর (Cholelithiasis)

গলব্লাডার এবং পিত্তরস পরিচিতি

গলব্লাডার (Gallbladder) ইংরেজি শব্দ যার অর্থ পিত্তাশয় বা পিত্তথলী। এটি নাশপাতির আকৃতির ফাঁপা অঙ্গ যা যকৃতের ডান খন্ডের নিম্নাংশে অবস্থান করে। এটি দৈর্ঘ্য প্রায় ৭-১০ সে.মি. এবং প্রস্থ ৩ সে.মি.। খাদ্য পরিপাকে ব্যবহারের জন্য একবারে প্রায় ৩০-৫০ মিলিমিটার পিত্তরস ধারণ করে রাখে। পিত্তের কারণে এটির রং গাঢ় সবুজ দেখায়। পিত্তাশয়কে গঠনগতভাবে ফান্ডাস, দেহ ও গ্রীবা এই তিন অংশে বিভক্ত করা হয়। এটি পিত্তনালীর মাধ্যমে লিভার ও ডিওডেনামের সাথে য্ক্তু।

পিত্তপাথর বা কোলিলিথিয়াসিস (Cholelithiasis)

পিত্তথলীর পাথর

পিত্তপাথুরী বা পিত্তাশয়ে পাথর হল পিত্তাশয়ের বা পিত্তথলীর একটি রোগ। গল্ডষ্টোন (Gallstone) ইংরেজি শব্দ যার অর্থ পিত্তপাথরী বা পিত্তাশয় পাথর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কোলিলিথিয়াসিস (Cholelithiasis) নামে পরিচিত। পিত্তথলীর মধ্যে থাকে পিত্তরস বা বাইল (Bile)। এই বাইলকে তৈরী করে লিভার। পিত্তথলী বাইল সল্ট, ইলেক্ট্রলাইট বিলিরুবিন, কোলেষ্টেরল এবং অন্যান্য চর্বি সঞ্চায় করে রাখে। পিত্তরস বিশেষত বিলিরুবিনের মাধ্যেমে ক্ষুদ্রান্ত্রে চর্বি হজম এবং বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। আমাদের খাবার খাওয়ার পূর্বে পিত্তথলী বাইল বা পিত্তরসে পূর্ন থাকে। খাবার খাওয়া শেষ হলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিটি চুপসে যায় অর্থাৎ পিত্তরস খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে। এই পিত্তরস সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে খাবার হজমে সমস্যা হয়। আর পিত্তশয়ে কোলেষ্টেরল, বাইল সল্ট ও বিলিরুবিনের পরিমান বেড়ে গেলে তৈরি হয় পিত্তথলীতে পাথর। অর্থাৎ পিত্তথলীতে পাথর হলে-পিত্তাশয়ে কোলেষ্টেরল, বাইল সল্ট ও বিলিরুবিনের সংমিশ্রনে গঠিত শক্ত সঞ্চিত পদার্থ।

উন্নত দেশে প্রায় ১০-২০% প্রাপ্ত বয়স্ক লোক এই রোগে আক্রান্ত। উন্নত বিশ্বে ৯০% পাথরসই কোলেষ্টেরল দিয়ে তৈরি বাদবাকি পিগমেন্ট পাথর। তবে অনেক সময় মিক্স পাথরও পাওয়া যায়। পিগমেন্ট পাথর এশিয়াতে বেশি পাওয়া যায়।

কলিলিয়াসিসের প্রকার ভেদ (Classification of Cholelithiasis)

কলিলিথিয়াসিস দুই প্রকার যথা-

  1. কোলেষ্টেরল পাথর (Stones made of cholesterol)
  2. বিলিরুবিন পাথর (Stone made of Bilirubin) - ইহা আবার Pigment tones নামে পরিচিত।

কলিলিথিয়াসিসের কারণ (Cause of Cholelithiasis)

প্রধান কারণ ঃ-

  • সোরা (Psora)
  • সিফিলিস (Shiphylish)
  • সাইকোসিস (Psychosis)
  • টিউবারকুলার ডায়াথেসিস (Tubercular diathesis)

আনুসাঙ্গিক কারণঃ-

  • মাত্রা অতিরিক্ত বিলুরুবিন তৈরীর কারণে।
  • বাইল-এ অস্বাভাবিক এসিড নিঃসৃত দেওয়ার কারণে।
  • বাইল-এ অস্বাভাবিক কোলেষ্টেরল নিঃসৃত হওয়ার কারণে।
  • বাইল-এ ক্যালসিয়াম, লবন জমা হওয়ার কারণে।
  • দীর্ঘদিন যাবৎ জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য খাবার বড়ি খাওয়ার কারণে।
  • অতিরিক্ত চর্বিয্ক্তু খাবার খাওয়ার কারণে।
  • স্থুল দেহ মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।
  • পিত্তথলীতে সংক্রমন ও প্রদাহজনিত কারণে।
  • লিভার সিরোসিসের কারণে।
  • রোগের জটিলতার কারণে যেমন-টাইফয়েড, ডায়াবেটিস।
  • গর্ভাবস্থায় হতে পারে।
  • পিত্তরসের ফিজিওক্যামিক্যাল পরিবর্তনের কারণে।
  • ওজনাধিক্য বা স্থুলতা।
  • রক্তে কোলেষ্টেরল বা চর্বি বেশি হলে।
  • অতিরিক্ত তেল বা চর্বিয্ক্তু খাবার গ্রহণ করার কারণ।
  • পিত্তথলীতে অতিরিক্ত সময় পিত্ত জমে থাকার কারণে।
  • পিত্ততন্ত্রের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে।
  • যদি পিত্তথলী সম্পূর্ণরুপে খালি না হলে পিত্ত খুব ঘনীভূত হতে পারে এবং এর ফলে পিত্তপাথর গঠন হতে পারে।
  • সেটাবলিক সিন্ড্রোম।
  • পিত্তথলীর স্থবিরতা।
  • হাইপার লিপিডেমিয়া সিন্ড্রোমস।
  • ক্রনিক হিমলাইটিক সিন্ড্রোম।
  • বিলিয়ারী ইনফেকশন।

কলিলিথিয়াসিসের লক্ষণ (Symptoms of Cholelithiasis)

  • হঠাৎ করে পেটের ডান অংশে তীব্র ব্যথা।
  • ডান কাঁধে ব্যথা।
  • পিত্তশয়-এর তীব্র প্রদাহ হয়।
  • জ্বর হয়।
  • বমি বমি ভাব হয় এবং বমি হয়।
  • বদহজম।
  • পেটফোলা ও পেটফাঁপা।
  • চর্বিজাতীয় বা চর্বিযুক্ত খাবার অসহিষ্ণুতা।
  • জন্ডিস।
  • ত্বক, চোখের সাদা অংশ, জিহ্বার নিচের অংশ হলুদ।
  • প্রচন্ড বেদনায় রোগী ছটফট করে এবং অস্থিও হয়ে পড়ে।
  • অনেক সময় বেদনার সঙ্গে বমি, পিত্তবমি হয়ে থাকে।
  • বেদনার সঙ্গে ঠান্ডা ঘাম দেখা দেয়।
  • নাড়ী দূর্বল।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • ক্ষুধামান্দ্য।
  • ঘাম।
  • সাধারনত ৪০ বৎসরের উর্ধ্বে লোকদের হয়।
  • পুরুষদের তুলনায় মহিলাদেও বেশি হয়ে থাকে।
  • ব্যথা হঠাৎ কমে যায়।
  • কাটিয়া ছিড়িয়া ফেলার ন্যায় তীব্র ব্যথা।
  • ব্যথা কয়েক মিনিট হতে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়।
  • শারীরিক দূর্বলতা।
  • পিত্তথলীর স্থান স্পর্শকাতর।
  • সার্ভিস সাইন পজেটিভ থাকবে।

রোগানুসন্ধান (Investigation)

  • Blood CBC.
  • LFT.
  • KFT.
  • AFP.
  • USG of whole abdomen.
  • X-ray.
  • CT Scan.
  • MRI.

ভাবীফল (Prognosis)

কলিলিথিয়াসিস এর ভাবীফল খারাপ নহে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক রোগ চিহ্নিত করে সঠিক চিকিৎসা করলে অধিকাংশ রোগী আরোগ্যলাভ করে। রক্ষনশীল চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে পাথরের সাইজ বড় হলে এবং রোগ জটিল প্রকৃতির হলে কলিসিসটেকটমী করতে হবে।

জটিলতা (Complication)

  • পারফোরেশন।
  • গ্যাংগ্রীন।
  • ফিষ্টুলা।
  • ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
  • হেপাটাইটিস।
  • একিউট কলিসিসটাইটিস।
  • ক্রনিক কলিসিসটাইটিস।
  • প্যান্ক্রিয়াটাইটিস।
  • কোলনজাইটিস।
  • পিত্তথলী সংক্রমন।
  • কমন বাইল ডাক্ট ব্লকেজ।
  • প্যানμিয়েটিক ডাক্ট ব্লকেজ।
  • পিত্তথলী ক্যান্সার।

ব্যবস্থাপনা (Management)

১) ঔষধ (Medicine) ঃ-

সাদৃশ্য লক্ষনানুসারে নিম্নবলিখিত ঔষধগুলো যোগ্যতাসম্পূর্ন হোমিওপ্যাথ এর পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে। যেমন- চেলিডোনিয়াম (Chelidonium M), চায়না (China), নাক্স ভমিকা (Nux v), কার্ডুয়াস মেরী (Carduas Mery), ক্যালকেরিয়া কার্ব (Calcerea Carb), বার্বারিস ভাল (Barbaris V), ভিরেট্রাম এলবাম (Viretrum Alb), ব্যাপ্টেশিয়া (Baptisia T), ফসফরাস (Phosphorus), সিপিয়া (Sepia), ইপিকাক (Ipicac), হাইড্রাসটিস (Hydrustis c), ব্রায়োনিয়া (Bryonia), ক্যামোমিলা (Chammomila), কলোষ্ট্রেনাম (Cholestrenum), ডায়াস্কোরিয়া ভিলোসা (Dioscorea V), নেট্রাম সালফ (Natrum Sulp) প্রভৃতি।

উপদেশ ঃ-

পালনীয়/করনীয় ঃ-

  • সম্পূর্ন বিছানায় বিশ্রাম নিতে হবে।
  • ব্যাথার স্থানে গরম সেক দিতে হবে।
  • প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
  • রোগের অবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষন-
    • পালস দেখতে হবে।
    • রক্তচাপ মাপতে হবে।
    • ডান হাইপোকোন্ডিয়ামে বার বার হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।

নিষেধঃ-

  • এলকোহল বা মদ্যপান করা।
  • ধুমপান বা তামাক চিবানো।
  • সকল প্রকার চর্বিয্ক্তু খাবার।
  • অধিক পরিশ্রম করা।
  • অতিরিক্ত ফাষ্টফুড, মশলাযুক্ত খাবার মারাত্মক ক্ষতিকর ।
  • দীর্ঘ বছর ধওে জন্মনিয়ন্ত্রনকারী বড়ি খাওয়া।
  • ব্যথার প্রচন্ডতার মুখে খাবার দেওয়া যাবে না।

পথ্যঃ-

  • ব্যথা যদি কম থাকে এবং যদি রোগী মাঝে মাঝে তীব্র বমি করে সেই অবস্থায় করনীয় -
    • বাইস টিউবের মাধ্যমে রোগীকে তরল খাবার দিতে হবে।
    • শিরাপথে তরল খাবার দিতে হবে।
  • বমি না থাকলে মুখে খাবার ও পানীয় পান করতে হবে।
  • টাটকা শাকসবজি ও টাটকা খাবার দিতে হবে।
  • ডাবের পানি খাওয়াতে হবে।
  • প্রচুর পরিমানে তিক্ত জাতীয় খাবার দিতে হবে।

[source: Dr.A R Khan]

🔼

হোম
"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM