মুখ গহ্বরের প্রদাহ চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি
যখন কোন অর্গানিজম (ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাসের) দ্বারা মুখগহবরে প্রদাহের সৃষ্টি হয় তখন উহাকে স্টমাটাইটিস বা মুখগহবরের প্রদাহ বলা হয়।
স্টমাটাইটিস (STOMATITIS)-একটি ইংরেজী শব্দ এর অর্থ হল মুখগহ্বরের প্রদাহ। গ্রীক শব্দ " Stoma" অর্থ " Mouth" আর " Itis" অর্থ Inflammation.
অর্থাৎ Stomatitis মানে Inflammation of the mouth. মুখ গহ্বরের মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহকে স্টমাটাইটিস বলা হয়।
আর প্রদাহ গলা, মাড়ী, ঠোঁটের ভেতরে প্রবং জিহ্বায় হতে পারে। Stomatitis সাধারনত তরুনদের মধ্যে বেশি হয়। প্রায়শই ১০-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে হয়ে থাকে।
মুখের ভিতরের মিউকাস মেমব্রেন লালবর্ণ, স্ফীত, বেদনাযুক্ত বা ক্ষতযুক্ত হয়ে কখনো কখনো পুঁজস্রাব নির্গত হয় তাহাকে স্টমাটাইটিস (Stomatitis) বলা হয়।
স্টমাটাইটিস শ্রেণীবিভাগঃ স্টমাটাইটিস তিন প্রকান। যেমনঃ-
২। কোল্ড সোর বা ফিভার ব্লিষ্টার (Cold sore or Fiver Blister)
৩। হারপেস স্টমাটাইটিস (Herpes stomatities)
১। ক্যানকার সোর বা এ্যাপথোয়াস স্টমাটাইটিস - কনকার (Konker sore or Aphthou Stomatitis) সোর বা ক্ষত হল একটি পিল বা এক দল ছোট গর্ত বা আলসার। সাধারনত এই ক্যানকার সোর ঠোঁটের ভেতরে, গালে, জিহ্বায় প্রদর্শিত হয়।
২। কোল্ড সোর বা ফিভার ব্লিষ্টার (Cold sore ev Fiver Blister) ঃ-কোল্ড সোর বা ক্ষত হল তরলে পরিপূর্ণ যা সাধারনত ঠোঁটের উপর বা ঠোঁটের চারপাশে প্রদর্শিত হয়।
৩। হারপেস স্টমাটাইটিস (Herpes stomatities) হারপেস স্টমাটাইটিস হল ভাইরাস ইনফেকশন এটার কারণে মুখে ক্ষত বা আলসার সৃষ্টি হয়।
স্টমাটাইটিস এর কারণ (Cause of stomatitis)-
প্রধান কারণ -
*সিফিলিস (Syphilis);
আনুষঙ্গিক কারণ -
* পুষ্টির অভাবে যেমন-ভিটামিন-বি১২, ফলিক এসিড, আয়রন বা জিঙ্ক।
* হঠাৎ ওজন কমানোর কারণে।
* খাবারে সংবেদনশীলতা যেমন-আলু, লেবু জাতীয় ফল, ষ্ট্রবেরি, চকলেট, ডিম, পনির বা বাদাম প্রভৃতি।
* প্রদাহজনিত পেটের রোগ (Inflammatory bowel disease).
* ওরাল সেক্স।
* HIV/AIDS.
* ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা।
* হরমোন পরিবর্তন।
* চাপ (Stress) বা ঘুমের অভাব।
* নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহারের কারণে যেমন-কেমোথেরাপি Diuretics, Anticholinergics, Antihistamines and dinecongestamts স্টেরয়েড (steroids), Antidepressants etc.
* এলার্জীর বিক্রিয়া।
* দুর্ঘটনাজনিত ক্ষত।
* তামাক চিবানো বা উৎত্তেজক খাবার বা রাসায়নিক পদার্থ।
* দুর্ঘটনাজনিত দাঁত দিয়ে ঘা জিহ্বা ও ঠোঁটে কামড় লাগার কারণে ছোট ক্ষত হতে পারে।
* ধারালো দাঁতের সংস্পর্শে মুখে ক্ষত হয়।
* উদর সম্বন্ধীয় রোগ।
* মাড়ির রোগ বা মুখে ইনফেকশন এর কারণে।
* ভাঙ্গা দাঁত থাকার কারণে।
* নির্দিষ্ট কিছু খাবার ও ঔষধে অত্যন্ত সংবেদনশীলতা।
* গরম খাবার এবং পানীয় হতে মুখে পোড়ানোর কারণে।
* নির্দিষ্ট অটোইমিউন রোগে ভোগার কারণে।
* অতিরিক্ত ঝাল ও ক্ষার বা এসিড জাতীয় খাদ্য খাওয়ার কারণে।
স্টমাটাইটিসের লক্ষণ -
স্টমাটাইটিস এর লক্ষণ বা উপসর্গ নিম্নে দেওয়া হলঃ-
* খাদ্য পানীয় গলধঃকরন করতে অসুবিধা।
* লালা (Drooling), ব্যথা এবং ফোলে যায়।
* জ্বালাকর বা বিরক্তিকর।
* জ্বর।
*লাল দাগ (Red patches)
* বিরক্তিকর এবং অস্থিরতা।
* মাড়ি ফোলা, যা হতে বিরক্তিকর রক্ত পড়ে।
* মুখের মধ্যে ব্যথা।
* দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস (Foul smelling breath)
* খাবার পরে মুখে, ঠোঁটে জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা অনুভব বিশেষত মাছ মাংস অথবা গুরুপাক খাদ্যের পর।
* মুখের ভিতরে খসখসে এবং শুষ্ক মনে হবে।
* মুখে, মাড়িতে ও ঠোঁটে ক্ষত দেখা যাবে।
* জিহ্বা নড়াচড়া করতে এবং মুখ হা করতে কষ্ট হবে।
* মুখের মিউকাস মেমব্রেনের রং অস্বাভাবিক হবে।
রোগানুসন্ধান (Investigation)-
* Viral Swabs.
* Tissue scrapings for mycology.
* Biopsy for histology and direct immune ofhuorescence.
* Patch tests to identify contact allergy.
* CBC.
* VDRL.
* TPHA.
* Stool RME, C/S
* Urine RME/C/S
স্টমাটাইটিসের জটিলতা -
* নিউমোনিয়া।
* সেপটিসেমিয়া
* মুখের ভেতরে ক্যান্সার।
স্টমাটাইটিস এর প্রতিরোধ (Prevention of stomatitis)- স্টমাটাইটিস এর প্রতিরোধ করা যায় যদি মুখের ভাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।
* ওরাল সেক্স পরিহার করা।
* ভাল খাদ্য তালিকার অভ্যাস করা।
* বাবা মা তাদের শিশুদেরকে যেমন-চুমু খাওয়া, খাবার শেয়ার করা, খেলা-ধুলা ও সংষ্পর্শে থাকা
ইত্যাদি নিরুৎসাহিত করতে পারে, যাদের সক্রিয় ইনফেকশন আছে।
* যাদের মুখে ক্ষত আছে তারা যেন শক্ত ট্রুথব্রাশ এবং রুক্ষ খাবার পরিহার করে। কারণ এগুলো থেকে ছোট খাট আঘাতের কারণে ক্ষত বৃদ্ধি পেতে পারে।
* পুষ্টিকর খাবারের অভাবের কারণ হলে শিশুদেরকে উপযুক্ত সম্পূরক খাবার খাওয়ার জন্য সুপারিশ করতে হবে।
* চাপপূর্ণ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে হবে এতে করে উপকৃত হবেন।
* অম্লীয় বা মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
* গালে কামড় লাগার কারণে ইনফেকশনের প্রাদুর্ভাব আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন।
ব্যবস্থাপনা (Management)-
ঔষধ (Medicine)-
লক্ষণ সাদৃশ নিম্নলিখিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
উপদেশ (Advice)-
* খাওয়ার পর ভালভাবে গরম পানি দিয়ে কুলি করতে হবে।
* প্রতিদিন সকালে ওঠার পর এবং রাত্রে ঘুমাবার পূর্বে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
* ভিটামিন এবং পুর্ষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
* তামাক, মদ্য পান ইত্যাদি নেশা জাতীয় খাদ্য বর্জন করতে হবে।
* ছোট মাছর ঝোল এবং চিকেন স্যুপ।
* সর ছাড়া ঠান্ডা দুধ।
* সবজী জাতীয় খাদ্য খেতে হবে।
সুত্রঃ- ডাঃ এ আর খান